|
শাংহাই বিশ্বমেলায় ইতালির প্রদর্শনী ভবন শুরু থেকেই দর্শকদের অন্যতম প্রিয় ভবনে পরিণত হয়। দর্শকরা ইতালির শিল্পকলা, ডিজাইন ও স্থাপত্য দেখা পছন্দ করেন। শাংহাই বিশ্বমেলার ইতালি দিবস উপলক্ষে ইতালির শ্রম ও সমাজ নীতি মন্ত্রী মাওরিজিও সাক্কোনি বিশেষভাবে চীনে এসেছেন । তার মতে, শাংহাই বিশ্বমেলার প্রতিপাদ্য বর্তমান যুগের বাস্তব অবস্থার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ । তাই তিনি বিশ্বমেলার সংশ্লিষ্ট কর্মসূচীতে অংশ নেয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, আমি চীনের প্রদর্শনী ভবন পরিদর্শন করতে পছন্দ করি। আমি মনে করি , ইতালির প্রদর্শনী ভবনের জনপ্রিয়তার মাত্রা চীনের নীচে। ইতালির প্রদর্শনী ভবন তৈরীর সময় স্বচ্ছ সিমেন্টসহ অনেক নতুন স্থাপত্য উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে। তাই আমি শাংহাইয়ের মেয়রকে বিশ্বমেলার সবচেয়ে সুন্দর ভবন ও স্থাপত্যকে ভবিষ্যতের শহরের দৃস্টান্ত হিসেবে বজায় রাখার অনুরোধ জানিয়েছি। শাংহাই বিশ্বমেলার প্রতিপাদ্য হলঃ শহর জীবনকে আরো সুন্দর করে তোলে । এ প্রতিপাদ্যের সুদূরপ্রসারী তাত্পর্য রয়েছে।
বিশ্বমেলার ইতালি দিবসের কর্মসূচীতে অংশ নেয়া ছাড়া সাক্কোনির নেতৃত্বাধীন ছয় শ'জন শিল্পপতি নিয়ে গঠিত ইতালির অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক প্রতিনিধি দল চীনের ছুনছিং ,পেইচিং ও শাংহাই শহর সফর করেছে। এ প্রতিনিধি দলের মধ্যে ইতালির ২৩০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও ১৮টি শিল্প সমিতির প্রতিনিধি রয়েছেন। সাক্কোনি সি আর আই সাংবাদিককে বলেন, চীন ও ইতালি সুষম সমাজ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একই মত পোষণ করে, অর্থনীতি ও বাণিজ্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং সামাজিক নিশ্চয়তা বিধানের ক্ষেত্রে দুদেশের সহযোগিতার ভবিষ্যত উজ্জ্বল। এ প্রসঙ্গে সাক্কোনি বলেন, এবারসহ ইতালির শিল্পপতিরা তিনবার চীন সফর করেছেন। আমরা আশা করি, এ সফরের মাধ্যমে চীন ও ইতালির অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের লক্ষণীয় উন্নতি হবে। ইতালির শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো অনেক বছর আগে থেকেই চীনের বাজারে প্রবেশ করেছে। ইতালি আশা করে, সহযোগিতার ক্ষেত্র আরো সম্প্রসারিত হবে। যেমন ইতালিতে চীন অর্থ-বিনিয়োগ করবে এবং পর্যটন ক্ষেত্রে দুদেশ সহযোগিতা করবে। আমাদের বর্তমান চীন সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হল চীনের বাজারের চাহিদা, বিশেষ করে চীনের মধ্যবিত্তদের চাহিদা মেটানোর পথ খুঁজে বের করা। সমাজ উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে চীনাদের গড়পড়তা আয় বেড়েছে। চীনে শুধু ধনী মানুষের নয়, বিপুল সংখ্যক মধ্যবিত্তের চাহিদাও বেড়েছে। তারা আরো উন্নত মানের পণ্য ভোগ ছাড়াও পরিবেশ রক্ষা এবং জ্বালানী সাশ্রয় ও দূষিত পদার্থ নির্গমন কমানোর ক্ষেত্রেও আগের চেয়ে বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন। তাই আমরা আশা করি , টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে দুদেশের মধ্যে সংলাপ ও বিনিময় বৃদ্ধি পাবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন ও ইতালির বাণিজ্যের লেনদেনের পরিমান দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আন্তর্জাতিক আর্থিক সংকটের প্রেক্ষাপটে চীন অপেক্ষাকৃত দ্রুত উন্নয়ন বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। চীনের বৃহত বাজার ইতালির শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর দৃষ্টি আকর্ষন করেছে। এবার প্রতিনিধি দল সর্বপ্রথমে পশ্চিম চীনের ছুনছিং শহর সফর করেছে। ইতালির শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্বাস করে, চীনের পশ্চিমাঞ্চলের মহা উন্নয়নের নীতি ইতালির শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সুযোগ বয়ে আনবে। সাক্কোনি বলেন, আমরা চীনের পশ্চিমাঞ্চলের মহা উন্নয়নের পরিকল্পনায় অংশ নিতে চাই। ছুনছিং সফরের সময় স্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে আমরা বুঝতে পেরেছি যে আমরা এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অংশ নিতে পারি এবং মিলিতভাবে উন্নয়নের সুফল উপভোগ করতে পারি।
এ বছর চীন ও ইতালির মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৪০তম বার্ষিকী। ২০০৪ সালে দুদেশের মধ্যে সার্বিক কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুদেশের বিনিময় এবং সহযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বছর চীন ইতালিতে চীনা সংস্কৃতি বর্ষের কর্মসূচী আয়োজন করবে। ইতালি ও চীনের সম্পর্কোন্নয়নের ব্যাপারে সাক্কোনি আশাবাদী। তিনি বলেন, ইতালি ও চীনের সম্পর্ক উন্নয়নে আমি আশাবাদী। কারণ বিশ্বের দুটি হাজার বছরের পুরনো দেশ হিসেবে দুদেশের সংস্কৃতিতে মিল রয়েছে। দুদেশের মধ্যে অনেক যোগাযোগ ও বিনিময় রয়েছে। দুটি দেশের নাগরিকরাই মার্কো পোলো ও ম্যাট্টেও রিক্কির কাহিনী জানেন। চীনে একটি প্রদর্শনী ভবন আছে , সেখানে দেশের জন্য বা ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন এমন মানুষের স্মৃতির জন্য তাদের প্রতিকৃতি সংরক্ষণ করা হয়। প্রদর্শিত বিখ্যাত মানুষের মধ্যে মাত্র দুজন বিদেশী এবং দুজনই ইতালিয়ান, তারা হলেন মার্কো পোলো ও ম্যাট্টেও রিক্কি। আমাদের দুদেশের সংস্কৃতি ভিন্ন হলেও পরস্পরকে আকর্ষণ করে। দুদেশের সংস্কৃতির একটি মিল হল , দুটি দেশ মনে করে সবার ওপরে মানুষ সত্য এবং সম্প্রীতিময় সমাজ গড়ে তোলা প্রয়োজন।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |