Web bengali.cri.cn   
শাংহাই বিশ্বমেলায় জার্মানী প্যাভিলিয়নের একজন জার্মানী যুবকের চীনের জীবন
  2010-08-13 19:54:12  cri
২৫ বছর বয়সী টিল ডিটক্রিস্ট জার্মানীর ট্রিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ বছর চীনা ভাষা শিখেছেন। চীনের প্রতি গভীর ভালোবাসা এবং চীন-জার্মানী মৈত্রীর জন্য নিজের অবদান রাখার জন্য তিনি শাংহাই বিশ্বমেলার জার্মানী প্যাভিলিয়নে এসে জার্মানী প্যাভিলিয়নের একজন চীনা ভাষার গাইড হয়েছেন। বিশ্বমেলা উদ্যানে কাজ করার অনুভূতি জানতে চাওয়া হলে ডিটক্রিস্টের মুখে সন্তুষ্টির হাসি ফুটে ওঠে। তিনি বলেন:

বিশ্বমেলা উদ্যানে কাজ করতে পেরে আমি খুব আনন্দিত। কারণ আমার মনে হয় এটা আমার জন্য খুব বিরাট একটি সুযোগ। প্রতিদিন পর্যটকদের সঙ্গে মত বিনিময় করতে পারি, অনেক কথা বলতে পারি এবং নতুন অনেক কিছু শিখতে পারি। এছাড়াও আমার মনে হয়, এটা চীন ও জার্মানীর মৈত্রীর ক্ষেত্রে অনেক সহায়ক। যখন আমাদের প্যাভিলিয়ন পরিদর্শনের পর পর্যটকদের মুখে হাসি দেখি, যখন তারা আমার কাছে আমাদের প্যাভিলিয়নের প্রশংসা করেন, তখন আমি এতে অনেক আনন্দ বোধ করি।

জার্মানী প্যাভিলিয়নের ডিজাইন খুব বৈশিষ্ট্যময়। প্রবেশের পর দর্শকরা প্রথমে একটি তির্যক রেখার দর্শনীয় স্থান দেখতে পাবেন। সেখানে জার্মানীর বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য এবং বিভিন্ন এলাকার তথ্য পাওয়া যায়। একটি সুরঙ্গপথ পার হওয়ার পর দর্শকরা যথাক্রমে ভবিষ্যত গবেষণা ঘর, মানব সংস্কৃতি বাগান, শহর বাগান, উদ্ভাবন কারখানা, শহর চত্বর এবং সামগ্রী বাগানে প্রবেশ করতে পারেন। এ অংশে শহর জীবন ও যন্ত্রের মাধ্যমে জার্মানীর শহর জীবনের প্রতিফলন ঘটানো হয়েছে। এতে "সুষম শহরের" প্রতিপাদ্যের প্রতিফলনও ঘটেছে। পরিদর্শন শেষে দর্শকরা খুব বিস্ময়কর "শক্তির উত্স" হলে প্রবেশ করেন। ডিটক্রিস্ট গর্বের সঙ্গে বলেন, "শক্তির উত্স" হলো জার্মানী ভবনের সবচেয়ে মূল্যবান এবং বৈশিষ্ট্যময় জিনিস।

দশর্করা আমাদের প্যাভিলিয়নের "শক্তির উত্স" দেখতে পছন্দ করেন। এর ভিতরে একটি বিরাট বল আছে। এ বলের ওজন ১ টনেরও বেশি। তার ওপরে ৪ লাখেরও বেশি এল ই ডি(L E D)আছে। তার একটির বৈশিষ্ট্য হলো দর্শকদের শব্দের প্রতিধ্বনী করতে পারে। যদি মানুষ একসাথে চিত্কার করে, তাহলে এ বলটি আন্দোলিত হয়। এ বিরাট বল আমাদের জানাতে পারে যে, ঐকবদ্ধ হয়ে পাহাড়ও স্থানান্তর করা যায়। যদি আমরা মানবজাতি একসাথে সহযোগিতা করি, তাহলে গোটা পৃথীবিকে ঝাঁকুনি দিতে পারবো। এই "শক্তির উত্স" হলো আমাদের দর্শকের সবচেয়ে স্মরণীয় অভিজ্ঞতা। আমি এটা অন্তত এক হাজার বার দেখেছি, তবে আমার এখনো মনে হয় তা খুব মজার।

শক্তির উৎস ছাড়া জার্মানী প্যাভিলিয়নে দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত হাইটেক পণ্য আছে। এর কারণেই জার্মানী প্যাভিলিয়ন দর্শকদের সবচেয়ে প্রিয় প্যাভিলিয়নের অন্যতমতে পরিণত হয়েছে। প্যাভিলিয়নের বাইরে দর্শকরা তিন, চার ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে প্রবেশ করতে পারেন। দর্শকদের লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করার অনুভূতি উপলব্ধি করার জন্য ডিটক্রিস্ট বিশেষ করে দর্শকদের মত একবার লাইনে দাঁড়িয়ে। তিনি বলেন:

দর্শকদের অনুভূতি উপলব্ধি করার জন্য আমি নিজেই জার্মানী প্যাভিলিয়নের বাইরে তিন ঘন্টা ধরে অপেক্ষা করেছি। এমন অনুভূতি সত্যি অনেক কঠিন এবং কঠোর। অবশেষে যখন আমি প্যাভিলিয়নের ভিতরে ঢুকেছি তখন আমি এত ক্লান্ত যে কিছুই শেখার আগ্রহ আর নেই। তাই আমি পর্যটকদের অনেক শ্রোদ্ধা করি, তারা এতক্ষণ অপেক্ষা করার পরেও প্যাভিলিয়নে ঢোকার পর আরো অনেক কিছুই শিখতে আগ্রহ প্রকাশ করে। খুব চমত্কার।

তিনি আরো বলেন, লাইনে অপেক্ষা করার সময় তিনি পর্যটকের মত একটি ছোট চেয়ার নিয়ে কিছুক্ষণ বসেছেন, তিনিও ভিটামিন পাওয়ার জন্যএকটি শসা খেয়েছেন। তিনি দেখেছেন যে অনেকেই বিশ্বমেলা পরিদর্শন করতে অনেক আগ্রহী। সিন চিয়াং থেকে আসা একটি উইগুর পরিবার তিন, চার দিনের ট্রেন ভ্রমণ করার পর বিশ্বমেলায় এসেছে। কারণ তারা মনে করেন বিশ্বমেলা হলো বিদেশকে জানার একটি খুব ভালো সুযোগ। তিনি আরো দেখেছেন যে একটি দশ বছর বয়সী শিশু একটি ছোট নোটবুক নিয়ে জার্মানীর ১৬টি অঙ্গরাজ্যের তথ্য লিখে নিচ্ছে। সে খুব মনযোগ দিয়ে নতুন জিনিস শিখেছে।

ডিটক্রিস্ট বলেন, দর্শক ছাড়া তিনি নিজেও বিশ্বমেলা থেকে অনেক কিছুই শিখেছেন। বিশেষ করে তার চীনা ভাষা বলার মান অনেকটা উন্নীত হয়েছে। তিনি বলেন:

এখন জার্মানী প্যাভিলিয়নে প্রতিদিন কাজ করার সুবাদে অনেক অনেক কিছু নতুন শব্দ শিখতে পারছি। দর্শনার্থীদের সঙ্গে কথা বলার মাধ্যমে বিস্তারিতভাবে অনেক বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারি। আমি এর মাধ্যমে অনেক শিখতে পেরেছি এবং অনেক চীনা শব্দ জানতে পেরেছি। তাই আমার মনে হয় এখানে কাজ করা যেন প্রতিদিন ক্লাসে লেখাপড়া করার মত, এ মেলা যেন চীনের একটি সামাজিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মত।

এখন ডিটক্রিস্টের চীনা ভাষার উচ্চারণ অনেক ভালো, তিনি সাবলিলভাবে চীনাদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। তবে আপনারা অবশ্যই এ কথা জানেন না যে, যখন ডিটক্রিস্ট প্রথমে চীনে আসেন, তখন তিনি চীনা ভাষার একটি বাক্যও বলতে পারতেন না। তিনি বলেন :  

আমি জার্মানীতে দু'বছর ধরে চীনা ভাষা শিখেছি। তবে সেসময় আমি ভালোভাবে শিখি নি। তাই যখন আমি প্রথমে চীনে আসি, তখন আমি কিছুই বলতে পারি নি। চীনের সিয়া মেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর আমার চীনা ভাষার মান আস্তে আস্তে উন্নত হয়েছে। কারণ জার্মানীতে চীণা ভাষা শেখার পরিবেশ নেই। আমার মনে হয় আমার চীনা বন্ধুর সঙ্গে কথা বলা এবং আড্ডা দেয়া আমার চীনা ভাষা শেখার ক্ষেত্রে অনেক সহায়ক হয়েছে। আমি বন্ধুর সঙ্গে খাই, গান গাই এবং পানশালায় যাই। আস্তে আস্তে অনেক শিখতে পেরেছি। আমি প্রতিদিন একটি নোটবুকে নতুন শব্দ লিখে রাখি। এভাবেই আমার চীনা ভাষার মান ক্রমাগতভাবে ভালো হয়েছে।

একজন বিদেশি এর আগে বলেছিলেন যে, চীনা ভাষার সঙ্গে তার সম্পর্ক যেন তার স্ত্রীর সঙ্গে তার সম্পর্কের মত। এ বিদেশি বলেন, এমন সম্পর্কের অর্থ হলো আমি চীনা ভাষাকে অনেক ভালোবাসি, তবে আমি তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। ডিটক্রিসটের চীনা ভাষা শেখার প্রক্রিয়ায় টিউনের কারণে অনেক হাসির গল্পের ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন:

এখন আমার চীনা ভাষার উচ্চারণও ততটা সুন্দর নয়। তাই মাঝে মাঝে ভুলবোঝাবোঝির সৃষ্টি হয়। চীনা ভাষায় একই শব্দের হয়তো দু'তিনটি অর্থ আছে। তাই যদি আপনার উচ্চারণ সঠিক না হয়, তাহলে এর অর্থও ভিন্ন হবে।

ডিটক্রিস্ট চীন এবং এশিয়ার দেশগুলোর জনগণ এবং খাবার অনেক পছন্দ করেন। তিনি শাংহাইয়ে একটি মেয়েকেও ভালোবেসেছেন। তিনি বলেন, যখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন, তখন থেকেই তার চীন অথবা অন্যান্য এশিয়ার দেশে জার্মানী কনসুলেটে একটি চাকরি খুঁজে বের করতে পারবেন এবং তার জীবন উপভোগ করতে পারবেন। তিনি বলেন:

আমি এশিয়ার অন্যান্য দেশকেও জানতে অনেক আগ্রহী। এখানকার খাবার খুব সুস্বাদু, মানুষ খুব অতিথিপরায়ন, জীবন খুব বাস্তবসম্মত এখানে জীবনযাপন করতে পারলে নিশ্চয়ই অনেক সুখী হবো।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040