|
৭১ বছর বয়সী উইচিরো নিওয়া জাপানের আইচি প্রশাসনিক এলাকার নাগোয়া শহরে জন্মগ্রহণ করেন এবং নাগোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে স্নাতক হন। ১৯৬২ সালে তিনি ইতোচু কর্পোরেশনে যোগ দেন এবং ১৯৯৮ সালে এ কোম্পানির মহাপরিচালকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। উল্লেখযোগ্য যে, তিনি মাত্র চার বছরেরও কম সময়ের মধ্যে ৪০০ বিলিয়ন ইয়েন ঋণ নেয়া ইতোচু কর্পোরেশনকে ঘাটতি অবস্থা থেকে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেন। তাঁর এই সাফল্যের কথা এখনো জাপানের বাণিজ্য মহলের লোকজনের মুখে মাঝে মাঝে উচ্চারিত হয়।
৫ জুন জাপানের প্রধানমন্ত্রী নাওতো কান উইচিরো নিওয়াকে চীনে জাপানের রাষ্ট্রদূত নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু এর আগে গুরুত্বপূর্ণ দেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত নিয়োগের ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে বেছে নেয়া হতো। তাই নাওতো কান একজন অপেশাদার লোককে চীনে জাপানের রাষ্ট্রদূত হিসেবে বেছে নেয়া হচ্ছে একটি দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করা।
এ নতুন রাষ্ট্রদূত কি রকমের কূটনৈতিক স্টাইল অনুসরণ করবে সেটাই এখন লক্ষণীয় বিষয়। সাক্ষত্কারে জাপান ও চীনের সম্পর্ক প্রসঙ্গে তিনি নিজের ধারণা ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন,
আমি মনে করি, চীন ও অন্যান্য নিকটবর্তী দেশের সঙ্গে জাপানের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের সময় দু'হাজার বা তিন হাজার বছরকে একটি ইউনিট হিসেবে বিবেচনা করা উচিত্। তা ২০ বা ৩০ বছর নয়। আমরা নিজেদের "ঠিকানা"পরিবর্তন করতে পারবো না। তাই আমাদের পক্ষে সবসময় ঝগড়া-বিবাদ করা অসম্ভব। অবশ্য মাঝেমাঝে আমরা বিরোধে জড়িয়ে পড়ি বা পরস্পরের বিরুদ্ধে শত্রুভাবাপন্ন হই। কিন্তু দীর্ঘ দিনের এ সমস্যা অচিরেই শেষ হবে। কিন্তু একটি বিষয়ের কখনো পরিবর্তন হবে না। তা হলো আমাদের সুপ্রতিবেশীর মতো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নিয়ে বসবাস করা।
সংবাদদাতাদের সামনে এ নতুন রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য ও আচরণে সাধারণ মানুষের সাদর অনুভব করা যায়। রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বভার গ্রহণের পর তাঁর প্রথম কাজ কী হবে এ প্রসঙ্গে উইচিরো নিওয়া বলেন,
আমার প্রথম কাজ হলো জাপান ও চীনের মধ্যে স্বাধীন বাণিজ্য চুক্তিতে স্বাক্ষর করা। দ্বিতীয়টি হলো সংস্কৃতি ও ক্রীড়া ক্ষেত্রের বিনিময় জোরদার। তৃতীয়টি হলো চীন ও জাপানের জনগণের জন্য একটি বেসরকারী বিনিময় মঞ্চ প্রতিষ্ঠা করা। তাই আমি চীনের বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে চাই। আমি জাপানী জনগণের সংস্কৃতির সঙ্গে চীনা জনগণকে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই। আমি মনে করি, চীনের অনেকে জাপানীদের সঙ্গে মেলামেশার সুযোগ পান নি। আমি জানি না, আমি সকল জাপানীর প্রতিনিধিত্ব করতে পারবো কিনা, কিন্তু আমি মনে করি, অধিকাংশ জাপানী আমারই মতো।
গত শতাব্দীর ৮০'র দশকে চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতি চালু হওয়ার শুরুতেই উইচিরো নিওয়া ইতোচু কর্পোরেশনের প্রতিনিধি হয়ে চীনে এসেছিলেন। চীনে তাঁর অনেক বন্ধু আছেন। তিনি চীনের প্রায় সব জায়গায় গিয়েছেন এবং দুই দেশের বাণিজ্যের সঙ্গে সুপরিচিত। তাই তিনি দু'দেশের মধ্যে স্বাধীন বাণিজ্য চুক্তিতে স্বাক্ষর করার ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন,
বর্তমানে চীনে একটি বিশাল বাজার সৃষ্টি হয়েছে। ভবিষ্যতে এ বাজার আরো বিশাল হবে। তাই জাপানের বাজারের প্রসার ঘটাতে চাইলে চীনের বাজার প্রসারিত হতে হবে। চীনের বাজারে সমস্যা দেখা দিলে জাপান তথা বিশ্বের অর্থনীতিতে তার প্রভাব পড়বে। তাই চীনের গুরুত্ব এত বেশী যে, তা শুধু জাপান ও চীনের সঙ্গে নয়, বিশ্বের সঙ্গেও সম্পর্কিত।
অপেশাদার রাষ্ট্রদূতের এই পরিচয়ে উইচিরো নিওয়ার নিজের উপলব্ধিও রয়েছে। তিনি বলেন,
একজন অপেশাদার রাষ্ট্রদূত হিসেবে আমি জাপান ও চীনের সম্পর্কের স্থিতিশীল উন্নয়ন বাস্তবায়ন করতে চাই। আমি মনে করি, অর্থনীতির স্থিতিশীল উন্নয়ন দু'দেশের জনগণের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমি চীনের বিভিন্ন মহলের জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ করবো এবং তাদের মতমত গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করবো। (লিলি)
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |