Web bengali.cri.cn   
মাছ উপহারের পরিবর্তে মাছ চাষের কৌশল শেখানোই বেশি উপকারি
  2010-08-02 18:46:22  cri
চীনের প্রাচীন পন্ডিত লাওসিয়াস বলেছিলেন, কোনো মানুষকে সাহায্য করার জন্য মাছ উপহার দেয়ার পরিবর্তে মাছ চাষ করার কৌশল শেখানো বেশি উপকারি। কারণ মাছ উপহার দিলে শুধু একদিন বা কয়েক দিন খেতে পারবে, মাছ চাষের কৌশল আয়ত্ত করলে সে সারা জীবন উপকৃত হবে। সম্প্রতি আফ্রিকায় সি আর আইয়ের সাংবাদিক আফ্রিকায় চীনের অর্থনৈতিক সাহায্য সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন লিখেছেন, এর শিরোনামঃ আফ্রিকাকে সাহায্যের ব্যাপারে চীন মাছ উপহারের পরিবর্তে মাছ চাষের কৌশল শেখাচ্ছে।

জিম্বাবুয়ের সঙ্গে কৃষি যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম সহযোগিতা প্রকল্পে চীন জিম্বাবুয়েকে অনুকুল শর্তে ঋণ দেয়া ছাড়া যন্ত্রপাতি স্থাপন ও মেরামতের জন্য এক বছরের জন্য প্রযুক্তিবিদ জিম্বাবুয়ে পাঠায় এবং চীনে প্রযুক্তিবিদ্যা শেখার জন্য জিম্বাবুয়ের প্রযুক্তিবিদদের আমন্ত্রণ জানায়। জিম্বাবুয়ের ফার্মারস ওয়ার্ল্ড হোল্ডিংস কোম্পানির পরিচালক মন্ডলীর স্থায়ী সদস্য ম্যাথিউ রারাদজা বলেন, চীন ভাইয়ের মত জিম্বাবুয়ের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাহায্য দিচ্ছে। তিনি বলেন, চীন সরকার আমাদেরকে মাছ দেয়ার পরিবর্তে মাছের পোনা দেয় এবং আমাদের মাছ চাষের কৌশল শেখায়। এর মাধ্যমে আমরা নিজেদের উন্নয়ন করতে পেরেছি। আমি মনে করি,চীন আমাদের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে আন্তরিকভাবে জিম্বাবুয়েকে সাহায্য দিচ্ছে। চীনের চূড়ান্ত লক্ষ্য হল জিম্বাবুয়ের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।

মিসর সফরের সময় চীনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও রাজধানী কায়রোতে অবস্থিত চীনের হুয়া ওয়ে কোম্পানির প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিদর্শন করার সময় বলেছেন,একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মান এই শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শ্রমিক ও প্রযুক্তিবিদদের মানের ওপর নির্ভরশীল। এটা দেশের উন্নয়ন ও ভবিষ্যত এবং একজাতির মানও নির্ধারণ করে। তিনি আরো বলেন, আমি আশা করি চীনের শিল্পপ্রতিষ্ঠান বিদেশে কাজ করার সময় স্থানীয় আইনবিধি অনুসরণ এবং আন্তরিকতার সঙ্গে স্থানীয় শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দেয়। চীনের প্রাচীন পন্ডিত লাওসিয়াস বলেছিলেন,অন্যদের সাহায্যের জন্য মাছ উপহার দেয়ার পরিবর্তে মাছ চাষের কৌশল শেখালে তারা আরো উপকৃত হবে।

আফ্রিকায় চীনের সাহায্য আফ্রিকান জনগণের সমাদর পেয়েছে। চীন আফ্রিকান জনগণের বাস্তব অসুবিধা দূর করার জোর প্রচেষ্টা চালায়। কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবী থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরের কেয়োল নাইরোবীর অন্যতম সবচেয়ে দরিদ্র অঞ্চল। সেখানকার হাসপাতাল ও চিকিত্সা কর্মীর সংখ্যা খুব কম। সেখানে একটি হাসপাতাল স্থাপন করা স্থানীয় অধিবাসীদের প্রত্যাশা। চীনের সাহায্যে নির্মিত কেয়োল হাসপাতালের নির্মান কাজ শুরু হওয়ার পর স্থানীয় অধিবাসীরা খুব খুশি। স্থানীয় অধিবাসী এলিজাবেথ মুলি বলেন,অসুস্থ হলে আমাদের দশ –বারো কিলোমিটার দূরের হাসপাতালে যেতে হয়। আশংকাজনক রোগীর ক্ষেত্রে এটা খুবই বিপদজনক। তিনি আরো বলেন,চীনের কেয়োলে একটি হাসপাতাল স্থাপন করছে দেখে আমরা খুব খুশি, এতে আমরা সবাই উপকৃত হব। এ হাসপাতালের স্থাপত্য খুব সুন্দর,চীনা বন্ধুরা আমাদের জন্য একটি হাসপাতাল উপহার দিয়েছে বলে আমরা কৃতজ্ঞ।

আমরা জানি, গত কয়েক বছর ধরে পাশ্চাত্যের উন্নত দেশগুলোও আফ্রিকাকে সাহায্য দিচ্ছে। কিন্তু আফ্রিকা তাদের চেয়ে চীনকে বেশি পছন্দ করে। এর কারণ সম্পর্কে নাইজেরিয়ার ইগবিনেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর অলুফানমিলেদি বলেন, আফ্রিকার জনগণ জানে, চীনের সাহায্যের কোনো রাজনৈতিক শর্ত নেই,তাদের সাহায্য পরিস্থিতি পরিবর্তন হলেও বন্ধ হবে না। তিনি আরো বলেন, চীনের অর্থনৈতিক সাহায্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ও বিশ্ব ব্যাংকের মতো রাজনৈতিক অনেক শর্ত জড়িত থাকে না। চীন অনেক আগে থেকেই আফ্রিকাকে সাহায্য দেয়া শুরু করেছে। যেমন তাঞ্জানিয়া ও জাম্বিয়ার রেলওয়ে চীন নির্মাণ করেছে। সে সময় চীনের নিজের অবস্থাও তেমন ভালো ছিল না। এখন চীনের অর্থনীতি শক্তিশালী হয়েছে, আফ্রিকায় চীনের সাহায্য প্রকল্পের মূল্য কয়েক শ' কোটি মার্কিন ডলারে এসে দাঁড়িয়েছে।

চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা ফোরামের পেইচিং শীর্ষ সম্মেলনে পেশ করা আফ্রিকাকে সাহায্য দেয়ার আটটি প্রকল্প গত বছরের শেষ নাগাদ সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে, ২০০৯ সালের নভেম্বর মাসে চীন ও আফ্রিকার সহযোগিতা ফোরামের চতুর্থ মন্ত্রীপর্যায়ের অধিবেশনে চীনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও পরবর্তী তিন বছরের আটটি নতুন সাহায্য প্রকল্প পেশ করেছেন। তিনি বলেন, বিশ্ব আর্থিক সংকট উন্নয়নশীল দেশগুলো , বিশেষ করে সবচেয়ে অনুন্নত দেশগুলোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। কিছু কিছু দেশ আফ্রিকায় তাদের প্রদেয় ঋণের পরিমান কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ অবস্থায় চীন প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে আর্থিক সংকটের প্রেক্ষিতে আফ্রিকাসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোকে চীনের প্রদেয় অর্থনৈতিক ও আর্থিক সাহায্যের কোনো পরিবর্তন হবে না।

নাইজেরিয়ায় বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি ওন্নো রুল বলেন, আফ্রিকার দেশগুলো চীনের অনেক উন্নয়ন অভিজ্ঞতা শিখতে পারে, বিশ্ব আর্থিক সংকটের প্রেক্ষাপটে আফ্রিকায় চীনা বন্ধুর সাহায্য আগের চেয়ে আরো বেশি প্রয়োজন।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040