|
হোপেই প্রদেশের ছাং লি জেলায় একজন বৃদ্ধ আছেন। তিনি ১৩ বছর বয়স থেকেই উচুঁ শ্রেণীর হওয়ার সুবাদে স্থানীয়ভাবে তার খুবই সুখ্যাতি রয়েছে। এখনো তিনি ছায়া চিত্রনাট্য পরিবেশনার মঞ্চে সক্রিয় রয়েছেন। যিনি নিজের উদ্যোগে গঠিত ছায়ানাট্য দলের নেতৃত্ব দিয়ে নিষ্ঠার সঙ্গে চীনের এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প পরিবেশনাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন, জনপ্রিয় করে তুলেছেন এবং এ ক্ষেত্রে নতুন নতুন উদ্ভাবন করেছেন। তিনি হচ্ছেন বিখ্যাত বেসরকারী ছায়া চিত্রনাট্য শিল্পী চাং সিয়াং তোং।
৬৩ বছর বয়সী চাং সিয়াং তোং বলেন, ছোটবেলা থেকেই তিনি ছায়া চিত্রনাট্য দেখা পছন্দ করতেন। সত্যিকারভাবে ছায়া চিত্রনাট্যের পরিবেশনা শেখা তাঁর প্রাথমিক স্কুলের স্নাতক হওয়ার পরেই শুরু হয়। তিনি বলেন,
"আমি ১৯৬০ সালে পরীক্ষার পর থাংশান শহরের ছায়া চিত্রনাট্য দলে যোগ দিয়েছি। তখন ছায়াচিত্রনাট্য অনেক জনপ্রিয় ছিল।
ছায়াচিত্র নাট্যের প্রতি গভীর কৌতুহল নিয়ে চাং সিয়াং তোং এর ওপর প্রশিক্ষণ ও পরিবেশনায় ঝাঁপিয়ে পড়েন। কিন্তু ১৯৬৮ সালে থাং শান শহরের ছায়া চিত্রনাট্য দল ভেঙ্গে দেয়া হয়। পরে তিনি ছাং লি জেলার একটি কোম্পানিতে একজন শ্রমিক হিসেবে চাকরি করতে বাধ্য হন। তিনি বলেন,
বাড়িতে ফিরে যাওয়ার পর আমি একটি গাড়ি দলে যোগ দিয়েছিলাম। সেখানে আমি ২০ বছর ধরে চাকরি করি।
গাড়ি দলে চাং সিয়াং তোং একজন শ্রমিক থেকে পরিচালকের পদে পর্যন্ত উন্নীত হন। এ বিশ বছর সময় তাঁর দ্রুত কেটে যায়। কিন্তু ছায়া চিত্রনাট্যের প্রতি তাঁর সেই গভীর আগ্রহ ও ভালোবাসার কখনও পরিবর্তন হয়নি। তিনি বলেন,
ছোটবেলা থেকেই আমি ছায়া চিত্রনাট্য পছন্দ করতাম। কিন্তু আমি অন্য কাজ করার কারণে ছায়া চিত্রনাট্যের অভাব অনুভব করেছি। ২০০১ সালে আমি অবসর গ্রহণ করি। এরপর বিশেষভাবে একটি ছায়া চিত্রনাট্য দল প্রতিষ্ঠা করি।
সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে আধুনিক চলচ্চিত্র ও শিল্পের সংঘাতে দর্শক ও পরিবেশনার বাজার দিন দিন কমে যাচ্ছে। ছায়া চিত্রনাট্যও ধীরে ধীরে লোক সমাগম শূন্য হয়ে পড়ছে। তিনি বলেন,
আমার ছোটবেলায় ছায়া চিত্রনাট্য অনেক জনপ্রিয় ছিল। সাংস্কৃতিক বিপ্লবের পর বিদেশী সংস্কৃতি এবং দ্রুত গতিসম্পন্ন সংস্কৃতি মূল-ভূভাগে এত জনপ্রিয় ছিল না। তখন ছায়া চিত্রনাট্য মানুষের সমাদর পেয়েছে। কিন্তু এখন ছায়া চিত্রনাট্যের প্রতি দর্শকদের আগ্রহ কমে গেছে।
এ অবস্থা দেখে চাং সিয়াং তোং দুঃখ প্রকাশ করার পাশাপাশি মনে করেন, এ ঐতিহ্যবাহী শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা তাঁর দায়িত্ব। এ কারণে অর্থের অভাব, পরিবারের সদস্যদের নাবুঝা এবং বন্ধুদের অসহযোগিতাসহ নানা ধরণের অসুবিধা চাং সিয়াং তোংকে পরাজিত করতে পারে নি। তিনি বলেন,
আমার এ ছায়া চিত্রনাট্য দল প্রতিষ্ঠার শুরুতেই অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছিল। ২০০৫ সালের আগে আমাদের এ দলের মাধ্যমে কোন অর্থ উপার্যন হয়নি। তাই আমার পরিবারের সদস্যরা এ কাজকে সমর্থন করে নি। তাঁরা মনে করে, অবসর হওয়ার পর আরামে জীবন যাপন করা দরকার।
এভাবে চাং সিয়াং তোং-এর নেতৃত্বে তাঁর ছায়া চিত্রনাট্য দল অব্যাহতভাবে অনুশীলন, পরিবেশন এবং নতুন নাটক সৃষ্টি করে। চীনের জাতীয় অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের সংশ্লিষ্ট নীতি চালু হওয়ার পাশাপাশি অনেক ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক শিল্প আবার গুরুত্ব পেয়েছে এবং সংরক্ষণ করা হয়েছে। চাং সিয়াং তোংয়ের ছায়া চিত্রনাট্য দলে বসন্তকালের বাতাস বইতে শুরু করে। তিনি বলেন,
২০০৫ সালে থাং শান শহরে অনুষ্ঠিত ছায়া চিত্রনাট্য বিষয়ক আন্তর্জাতিক শিল্প প্রদর্শনীতে আমরা অংশ নিয়েছি এবং অনেক পুরস্কার পেয়েছি। ২০০৯ সালে চীনের আর্ট গ্যালারীর সঙ্গে চেক প্রজাতন্ত্রে বন্ধুত্বমূলক সফর করেছি। আমাদের পরিবেশনা বিদেশী বন্ধুদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে।
কিছু দিন আগে চীনের পঞ্চম সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সম্পদ দিবসের আয়োজন করা হয়। দিবসের একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচী হিসেবে চাং সিয়াং তোং-এর ছায়া চিত্রনাট্য দল আমন্ত্রিত হয়ে পেইচিংয়ে পরিবেশন করেন। ছায়া চিত্রনাট্যের ঐতিহ্যবাহী বৈশিষ্ট্য বজায় রাখার পাশাপাশি চাং সিয়াং তোং সংস্কার ও নতুন উদ্ভাবন করেন। তিন দিনব্যাপী পরিবেশনায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়। চাং সিয়াং তোং বলেন,
ঐতিহ্যবাহী শিল্পের বাজার রয়েছে। কিন্তু সংস্কার ও আধুনিকায়নের দরকার। এভাবেই দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষন করা সম্ভব।
ছায়া চিত্রনাট্যের পরিবেশনার বাজার দিন দিন সমৃদ্ধশালী করার পাশাপাশি চাং সিয়াং তোং-এর মনে একটি পরিকল্পনা রয়েছে। তা হলো তরুণ-তরুনীদের এ শিল্পের ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া। তিনি বলেন,
এখন আমার বড় আশা হলো আরো বেশি তরুণ-তরুণীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আমাদের ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখবো।
বর্তমানে আমাদের ছায়া চিত্রনাট্য দলের অবস্থা দিন দিন ভালো হচ্ছে। চাং সিয়াং তোংও আগের চেয়ে আরো ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। কিন্তু ছায়া চিত্রনাট্য পরিবেশনায় নিজের ছাত্রছাত্রীদের নৈপুন্য আরো পরিপক্ক হচ্ছে দেখে তিনি মনে করেন, জীবন অনেক সুখী ও সুন্দর হচ্ছে। তিনি বলেন,
প্রতিদিন আমি ভোর ৫টায় বিছানা থেকে উঠি। সারাদিনে আমার অনেক কাজ। আমার ছেলেমেয়েরা বলে, অবসর গ্রহণের পর আমি চাকরি করার সময়ের চেয়েও আরো ব্যস্ত হয়ে পড়েছি।
চাং সিয়াং তোং তাঁর নিজস্ব পদ্ধতিতে ছায়া চিত্রনাট্যের বহিঃপ্রকাশ করছেন। তিনি বলেন, ছায়া চিত্রনাট্যের সঙ্গে থেকে আমি তৃপ্তি বোধ করছি। (লিলি)
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |