|
এত বেশি দিন কাটিয়ে এত লম্বা যাত্রা শেষ করে অবশেষে আমরা আমাদের ইচ্ছের প্রান্তিক স্টেশনে পৌঁছেছি। এখন আমি এত আনন্দিত যে, কাঁদতে চাই।
শ্রোতা বন্ধুরা, আপনারআ যে কথা শুনেছেন, তা হল ইঞ্জ স্ট্যাগনেট নামের এ যাত্রার একজন সদস্যের কথা। ৬৭ বছর বয়সী ইঞ্জ অবসর নেয়ার আগে প্রেইবার্গ সরকারের বৃদ্ধা কল্যাণ বিষয়ক একজন কর্মকর্তা ছিলেন। সবসময় স্বামীর সঙ্গে ভ্রমণে যাওয়া ইঞ্জ রোমাঞ্চ সন্ধানীদের জাহাজে করে বিশ্ব ভ্রমণের জীবনকে অনেক ভালো করেন। চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে তিনি শুনেছেন যে বাসে করে ইউরোপ ও এশিয়া মহাদেশ অতিক্রম করে চীনে যাওয়ার সুযোগ আছে। তাই তিনি খুব আবেগকম্পিতভাবে নিজের নাম অন্তর্ভূক্ত করেন। তিনি বলেন:
যখন আমরা ইরানে ছিলাম, তখন আমরা দেখেছি যে নারীরা সবাই কালো কাপড় পড়ে আছে, দেখতে একটু একঘেয়েমি লাগে। তবে মানুষজন অনেক অতিথিপরায়ন। তারা আমাদের সঙ্গে আড্ডা দিতে পছন্দ করেন। উজবেকিস্তানে আমরা হেঁটে হেঁটে একটি নদী অতিক্রম করেছি। যদিও দেখতে নদীর পানি বেশি, তবে আমরা খুব নিরাপদে তা অতিক্রম করেছি। পথে যখন আমরা বিশ্রাম নেই, আমরা দেখেছি খুব লম্বা একটি ট্রাক। আমরা এ ট্রাকে উঠে ড্রাইভারের সঙ্গে অনেক কথা বলেছি। বলা যায়, এ যাত্রায় আমরা খুব আনন্দের সংগে সময় কাটিয়েছি।
২৫ জন সদস্যের মধ্যে অধিকাংশই অবসর নেয়া বৃদ্ধ বৃদ্ধা। এ যাত্রায় তারা সুইজারল্যান্ড, ইতালি, গ্রীস, তুরস্ক, ইরান, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, কিরগিজস্তান, কাজাখস্তান অতিক্রম করেছেন। পরে তারা সিন চিয়াং দিয়ে চীনে প্রবেশ করেছেন। বাসটি রেশমি পথ অনুসারে থিয়েন শান পাহাড়ে এবং তারপর তাখলামা মরুভূমি অতিক্রম করে চীনের সি আন শহরে পৌঁছায়। অবশেষে চীনের ইয়াংসি নদী পথে উহান ও নান চিংসহ বিভিন্ন শহর পার হয়ে ৫ সপ্তাহ পর চূড়ান্ত স্টেশন শাংহাইয়ে পৌঁছতে সক্ষম হয়।
প্রেইবার্গকে "সবুজ শহর" হিসেবে বলা যায়। প্রেইবার্গ থেকে আসা যাত্রীদের বাসে বিশ্বের সবচেয়ে পরিস্কার ইঞ্জিন স্থাপন করেছে। এ অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা হল প্রেইবার্গের একটি বাস ভ্রমণ কোম্পানী। এ কোম্পানীর প্রধান হ্যান্স পিটার ক্রিস্টোফার জানান, প্রেইবার্গ শাংহাই বিশ্বমেলায় অংশ নেয়ার খবর জানার পর বাস চালিয়ে লোকজনকে নিয়ে বিশ্বমেলা পরিদর্শনের কথা ভেবেছে। এটি তার কাছে হঠাত্ আসা একটি পরিকল্পনা নয়, কারণ ২০০৮ সালের পেইচিং অলিম্পিক গেমসের সময় তিনি এমন একটি পেইচিং ভ্রমণ করার পরিকল্পনাও করেছিলেন। তিনি বলেন:
পর্যটন শিল্পের সম্মুখীন বৃহত্তম সমস্যা হল কার্বন ডাইঅক্সাইডের নির্গমন। আসলে পর্যটকের নিজের বাছাইয়ের মাধ্যমে এমন অবস্থার পরিবর্তন করা যায়। যেমন, ভ্রমণের পদ্ধতির মধ্যে বিমান হল সবচেয়ে বেশি কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গমনের একটি পদ্ধতি। তবে বাস হল সাইকেল ছাড়া দীর্ঘ যাত্রায় সবচেয়ে নিম্ন কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গমন এবং টেকসই পদ্ধতি। এর আরেকটি সুবিধা হল, এমন পদ্ধতিতে যাত্রীরা এবং স্থানীয় বসবাসকারীদের বিনিময়ের সুযোগ অনেক বেশি থাকে।
বাসে লোকজন কফি খেয়ে এবং সঙ্গীত শুনে প্রতিদিন দুই তিন শ' কিলোমিটার চলার পথ যাত্রায় পথের প্রাকৃতিক দৃশ্য ও বৈশিষ্টময় রীতিনীতি উপভোগ করেন। ইঞ্জ ১৯৮৫ সালে চীনে একবার এসেছিলেন। এবার আবার চীনে ভ্রমণ করে তিনি আবিস্কার করেছেন যে চীনা মেয়েদের কাপড় পরার স্টাইল আগের চেয়ে অনেক ফ্যাশন্যাবল হয়েছে। তার কাছে এবারের যাত্রার মাধ্যমে তিনি ভালোভাবে চীনের সাধারণ লোকজনের জীবন উপভোগ করতে পেরেছেন। তিনি বলেন, তা হল তার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান স্মৃতি।
সি আন আমার মনে গভীর দাগ কেটেছে। এ শহর অনেক সুন্দর। বিশেষ করে সন্ধ্যায় এ শহরের পরিবেশ অনেক ভালো। অনেকেই ঘুড়ি ওড়ায়। ঘুড়িতে ছোট ছোট বাতি লাগানো থাকে। আকাশে যেন তারকার মত ঝিক ঝিক করে, অনেক সুন্দর লাগে। আরো অনেকেই হাঁটাহাঁটি করে শরীর চর্চা করে, দেখতে অনেক আরামদায়ক। এ ছাড়া আমরা উরুমুচির চত্বরে দেখেছি অনেকেই উ সু চর্চা করে তাও অনেক মজা।
ইঞ্জের তুলনায় এ যাত্রী দলের অনেকেই আগে চীনে আসেন নি। হ্যান্স এবার প্রথমবারের মত ইউরোপের বাইরে ভ্রমন করেন। একজন প্রকৌশলী হিসেবে চীনের আধুনিকায়ন দেখে তিনি খুব অবাক হয়েছেন। তিনি বলেন:
শাংহাইকে আমার ছাপ ঠিক যেন চীনকে আমার ছাপের মত। সড়ক ও সেঁতুসহ বিভিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়নের মান ইউরোপের কিছু কিছু জায়গার চেয়েও উন্নত। শাংহাইয়ের পাতাল রেলের গতি অনেক দ্রুত। এ পাতাল রেল ব্যবস্থার ডিজাইন এত জটিল তবে এর নির্মাণ ছিল দ্রুত। তা হল শাংহাইয়ের আধুনিক দিক। এ ছাড়া আমরা শাংহাইয়ের কিছু কিছু বৈশিষ্টময় জায়গায়ও গিয়েছি। তা হল শাংহাইয়ের ঐতিহ্যের চেহারা। আমার মনে হয়, শাংহাই শহর ঐতিহ্য ও আধুনিককে নিখুঁতভাবে সংযোগ করেছে।
শাংহাই বিশ্বমেলা উদ্যানে যাত্রী দলের সদস্যরা হয়তো প্রত্যেকোই চমত্কার উপাদান দেখতে পারেন নি। তবে সব উদ্যান পরিদর্শন করা তাদের উদ্দেশ্য নয়। এ যেন ঠিক ১৮ শ'কিলোমিটার দূরের যাত্রার মত, যাত্রার প্রক্রিয়া উপভোগ করাটা সবচেয়ে তাত্পর্যপূর্ণ ব্যাপার। এ বিষয়টি ঠিক শাংহাই বিশ্বমেলার প্রতিপাদ্য—শহর, জীবনকে আরো সুন্দর করে তোলে এ কথার সঙ্গে মিল আছে। যখন অর্থনীতির উন্নয়ন হয়, আমাদের উচিত লোকজনের অনুভূতি আরো বেশি বিবেচনা করা এবং তাদের জীবনকে আরো সুখী করা।
হ্যান্স বলেন, যখন তার ছেলেমেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হবে, তখন তিনি তাদের নিয়ে আবার চীনে আসতে চান। তিনি বলেন:
শাংহাই বিশ্বমেলা বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে ঘনিষ্ঠভাবে সংযোগ করেছে এবং তাদের বিনিময় ও যোগাযোগকে ত্বরান্বিত করেছে। বিশ্বমেলায় আমি যা সবচেয়ে বেশি দেখেছি, তা হল বন্ধুত্বপূর্ণ লোকজন। আমি এ সুন্দর স্মরণকে সঙ্গে নিয়ে মাতৃভূমিতে ফিরে যাবো। আশা করি সুযোগ পেলে আবার চীনে আসতে পারবো।
যাত্রার পথ থেমে যায় নি। ২০১১ সাল পর্যন্ত এমন বাস যাত্রা পেইচিংয়ের উদ্দেশ্যে অব্যাহত থাকবে। ২০১২ সালে সিংগাপুর এসব ভ্রমণ প্রেমীদের স্বাগত জানাবে। (শুয়েই ফেইফেই)
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |