|
প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আপনারা এখন যে শব্দ শুনলেন তা পেইচিংয়ে সদ্য সমাপ্ত দেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ইংরেজি তর্কবিতর্ক প্রতিযোগিতা স্থলের। এ প্রতিযোগিতা এক হাজারেরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী এবং দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এ প্রতিযোগিতার বিতর্কের প্রতিপাদ্য হলো তরুণ-তরুণীদের অলিম্পিক গেমসে অংশ করা উচিত্ কিনা। পক্ষ-বিপক্ষের তার্কিকরা সাবলিল ইংরেজি ভাষা এবং পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যুক্তি ও চমত্কার বাকপটুতার মাধ্যমে প্রতিযোগিতায় এক একটি উত্তাল জোয়ার সৃষ্টি করেন। প্রতিযোগিতাস্থলে উচ্চহাসি ও তুমুল করতালির রোল পড়ে হয়।
সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ইংরেজি বিতর্ক প্রতিযোগিতা ১৯৯৭ সালে শুরু হয়। এখন পর্যন্ত এটি চীনের বৃহত্তম ইংরেজি বিতর্ক প্রতিযোগিতায়। এ প্রতিযোগিতা অভ্যন্তরীণ বিতর্ক অঙ্গনে নিজের স্বতন্ত্র স্থান তৈরি করে নিয়েছে। প্রতি বছর এ প্রতিযোগিতার বিজয়ীরা চীনের প্রতিনিধি হিসেবে এশিয়াসহ বিশ্বের নানা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও নানা ধরণের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার সুযোগ পান।
চলতি বছরের প্রতিযোগিতা বিদেশী ভাষা শিক্ষাদান ও গবেষণা প্রকাশনা এবং আন্তর্জাতিক বিতর্ক শিক্ষা সমিতিসহ বিভিন্ন সংস্থার যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়। চীনের মূল ভূভাগ, হংকং ও ম্যাকাওয়ের ১২৮টি প্রতিনিধি দল এবারের প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। প্রতিটি তার্কিক দল দু'জন সদস্য ও কয়েকজন কোচ নিয়ে গঠিত। তাদের মধ্যে অনেকেই ইংরেজি বিষয়ের ছাত্র-ছাত্রীয় নন। সেরা মানের ইংরেজি, দেশি-বিদেশী ঘটনা সম্পর্কে ধারণ ও বাকপটুতা হচ্ছে তাদের অভিন্ন বৈশিষ্ট্য। একটি লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো অধিকাংশ প্রতিনিধি দল প্রতিযোগিতার দুই বা তিন মাস আগে তাত্ক্ষণিক প্রশিক্ষণের আয়োজন করে।
এবারের প্রতিযোগিতার আয়োজকদের একটি বিদেশী ভাষা শিক্ষাদান ও গবেষণা প্রকাশনার মহাপরিচালক ইউ ছুন ছি বলেন, এবারের প্রতিযোগিতার লক্ষ্য হলো চীনা ছাত্রছাত্রীদের ইংরেজির মান উন্নত করার একটি মঞ্চ স্থাপন করা।
"প্রথমে আমরা এমন ধরণের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ইংরেজি শেখার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়াতে চাই। চীনে বিদেশী ভাষা শেখার একটি দুর্বল ক্ষেত্র হলো ভাষা শেখার পরিবেশের অভাব। আমরা এ ধরণের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদেরকে ভাষা শেখার একটি ভালো পরিবেশ সৃষ্টি করি। বিশেষ করে ইংরেজি ভাষা শোনা ও বলার ক্ষমতার ওপর জোর দেয়ার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের আগ্রহ বাড়াতে চাই। চলতি বছরের প্রতিযোগিতায় আগেকার প্রতিযোগিতার তুলনায় নতুন নিয়ম চালু হয়েছে। গতানুগতিক পক্ষ-বিপক্ষ দুই দলের প্রতিদ্বন্দ্বিতার নিয়ম বাদ দেয়া হয়। বরং 'বৃটেনের সংসদ ব্যবস্থার' পদ্ধতি অনুসরণ হয়। এ পদ্ধতিতে কোন প্রস্তাবের পক্ষে দুটি আর বিপক্ষ দুটি আলাদা দল গঠন করা হয়, ফলে প্রতিযোগিতা আরো উত্তেজনাময় ও তুমুল হয়।"
এ নতুন ব্যবস্থা প্রসঙ্গে ইউ ছুন ছি বলেন,
"আন্তর্জাতিক বিতর্ক প্রতিযোগিতায় "বৃটেনের সংসদ ব্যবস্থার" পদ্ধতি অনুসরণ হয়। আমরা তাদের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখার জন্য এ নতুন পদ্ধতি গ্রহণ করেছি। এখানে প্রস্তাবের পক্ষের দল দুটি প্রধানমন্ত্রী ও উপ-প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকায় আর বিপক্ষ দল দুটি বিরোধী দলীয় নেতা ও উপ-নেতার ভূমিকা অবতীর্ণ হয়। এটি ছাত্রছাত্রীদের আরো উচ্চ মানের বিতর্ক নিশ্চিত করে। এ পদ্ধতিতে একটি দল একদিকে বিপক্ষের তার্কিকদের সঙ্গে বিতর্ক করে, আবার অন্যদিকে প্রস্তাবে নিজেদের পক্ষের অন্য দলটির সঙ্গেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।"
এবারের প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বের বিচারকদের মানও অনেক উচ্চ। চীন, ইসরাইল, নেদারল্যান্ড, বতসোয়ানা ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের ১০ জনেরও বেশি সদস্য নিয়ে বিশ্বের প্রথম শ্রেণীর বিচারক দল গঠিত। দ্রুততার সাথে প্রতিযোগিতার নতুম নিয়মের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পর চীনা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের চমত্কার ভাষা ও যুক্তিক্ষমতা তাদের মনে গভীর ছাপ ফেলেছে। চূড়ান্ত পর্বের প্রধান বিচারক ও আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বিতর্ক সমিতির সচিব স্টিভান জনসন সংবাদদাতাকে বলেন,
"প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী ছাত্রছাত্রীদের দ্রুততার সাথে পরিবর্তন মোকাবিলার শক্তি আমার মনে সুগভীর ছাপ ফেলেছে। আমি মনে করি, প্রতি বছর এ প্রতিযোগিতার মান অব্যাহতভাবে বাড়ছে। গতানুগতিক বিতর্কের চেয়ে এ ধরণের প্রতিযোগিতার ফল আরো ব্যাপক ও সুগভীর। আমি এবারের প্রতিযোগিতার বিজয়ীদেরকে আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রদর্শনের প্রত্যাশা করছি। তাদের মান দেখে অনেকে অবাক হয়ে যাবেন।"
তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার পর থিয়ান চিন বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশগ্রহণকারী সোং ইন ই ও লি চিয়েন খাংকে নিয়ে গঠিত প্রস্তাবের বিপক্ষের দল চ্যাম্পিয়ন হয়। প্রতিযোগিতা মাধ্যমে ১২ দফার বাছাই পর্বে ও চূড়ান্ত পর্বে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর তারা অত্যন্ত আনন্দিত। এবারের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তারা দলগত স্পৃহার গুরুত্বও অনুভব করেছেন। তারা বলেন,
"আমরা কখনও ভাবিনি যে চ্যম্পিয়ন হবো। আমরা মনে করেছিলাম প্রথম ৩২-এ প্রবেশ করতে পারলেই সন্তুষ্ট থাকবো। আমরা দু'জনের মধ্যকার সহযোগিতা এবং শিক্ষকদের সাহায্যও খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের ভাগ্যও বরাবরই ভালো ছিল।"
বিদেশী ভাষা শিক্ষাদান ও গবেষণা প্রকাশনার মহাপরিচালক ইউ ছুন ছি বলেন,
"এ ধরণের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ক্যাম্পাসে ইংরেজি শেখার পরিবেশ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে। এটি ইংরেজি শেখার জন্য নির্দেকের ভূমিকা পালন করেছে। প্রতি বছর আমরা অংশগ্রহণকারীদের উন্নতি দেখতে পাই। তাদের জ্ঞানের আওতা অব্যাহতভাবে বাড়ছে।"
প্রতিযোগিতার আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, তর্কবিতর্ক প্রতিযোগিতার প্রভাব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিযোগিতাস্থলে কয়েকটি আন্তঃদেশীয় কোম্পানি ও দেশের বৈদেশিক সংস্থার দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা ধীশক্তি খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। এটি বিতর্ক প্রতিযোগিতার আরেকটি বিশেষ দৃশ্যেও পরিণত হয়। (লিলি)
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |