|
প্রিয় বন্ধুরা, আপনারা এখন যে সঙ্গীত শুনলেন তা ডারবানের একটি সঙ্গীত হলের। ভারতের নৃত্যশিল্পীরা মঞ্চে ভারতের ঐতিহ্যবাহী নাচ পরিবেশন করছেন। কয়েক হাজার আসনসম্পন্ন সঙ্গীত হলে একটি আসনও খালি ছিল না। অধিকাংশ দর্শকই বাদামী রঙের। তাদের পূর্বপুরুষ সুদূর ভারত থেকে এখানে এসেছিলেন।
১৬৫২ সাল থেকে ১৭৯৫ সাল পর্যন্ত দাস প্রথা চালু থাকার সময় দক্ষিণ আফ্রিকায় দাস ব্যবসা খুব জনপ্রিয় ছিল। স্থানীয় শ্রমিকের অভাব বলে শ্বেতাঙ্গ খামার মালিক সস্তায় দাস কিনতে আগ্রহী ছিলেন। এসব দাসের মধ্যে অনেকেই ভারত থেকে এসেছিলেন। ১৯ শতাব্দীতে দক্ষিণ আফ্রিকায় দাস প্রথা বাতিল হওয়ার পর নাতাল উপনিবেশিক সরকার সেখানে চিনি চাষকারী শ্রমিকদের ঘাটতি মোকাবিলায় ভারতীয় অভিবাসীদের ব্যবহার করতে শুরু করেছিল। সে সরকার এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, এসব অভিবাসী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যার যার সেবা শেষ করার পর স্বাধীন সামাজিক মর্যাদা ভোগ করবেন এবং কিছু ভূমি ও অর্থ পাবেন। সেসময় এক এক দল ভারতীয় নাগরিক ভারত মহাসাগর পার হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় এসে বসবাস করতে শুরু করেন।
ডারবানের জাঁকজমকপূর্ণ রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে আপনি খুব সহজেই ঐতিহ্যবাহী পোশাক-পরা ভারতীয় বংশেদ্ভুতদের দেখতে পাবেন। ভারতের পোশাক, মসলা ও খাবার বিক্রির দোকান সবখানে দেখা যায়। রাস্তার যে কোন একটি কিনারে ছোট হোক বা বড় হোক একটি ভারতীয় রেস্তোরাঁ পাওয়া যায়। জানা গেছে, প্রায় ১০ লাখ ভারতীয় জনগণ ডারবানে বসবাস করছেন।
অ্যানিলিন হচ্ছেন স্থায়ী একটি ভারতের রেস্তোরাঁর মালিক। তাঁর প্রপিতামহ থেকে তাঁর পরিবার ডারবানে বসবাস করতে শুরু করেন। তাঁর রেস্তোরাঁ খুব বড় না। কিন্তু চার দেয়ালে দক্ষিণ আফ্রিকায় ভারতীয় জনগণের জীবন সম্পর্কিত ঐতিহাসিক ছবি ঝুলে আছে। এদের মধ্যে মহাত্মা গান্ধীর ছবিও রয়েছে, যিনি দশ বছরেরও বেশি সময় ডারবানে কাটান। অ্যানিলিন আমাদের সংবাদদাতা জানিয়েছেন, বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিকাংশ ভারতীয় বংশোদ্ভুতই ভালো শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। সমাজের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের জীবনযাত্রাও দিন দিন ভালো হচ্ছে। এখানের ভারতীয় বংশোদ্ভুতরা ব্যবসা ও শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাকরি করেন এবং কেউ কেউ সরকারে উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালন করেন। এক কথায় বলা যায়, এখানে ভাতরীয় বংশোদ্ভুতরা পরিশ্রম করে অর্জিত পরিবর্তিত জীবন উপভোগ করছেন। অধিকাংশ মানুষের মতো অ্যানিলিনও বর্তমানে চলামান বিশ্বকাপের প্রতি আবেগাক্রান্ত। তিনি বলেন,
"বিশ্বকাপ প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকা তথা প্রথমবারের মতো গোটা আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তাই আমরা অনেক উদ্দীপ্ত। আশা করি, সবকিছু সুষ্ঠুভাবে চলছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের কাজ খুবই সফল।"
কেপটন থেকে ডারবান এবং পোর্ট এলিজাবেথ থেকে জোহানেসবার্গ বিভিন্ন বর্ণ ও ধর্মবিশ্বাসের বহু দক্ষিণ আফ্রিকানের সঙ্গে দেখা হয়েছে। তারা কেউ ধনী আবার কেউ দরিদ্র। কেউ কেউ উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে জীবনের গুণগত মান অন্বেষণ করেন আবার কেউ কেউ বংশপরম্পরায় জমি চাষ করেন। এক বা দুই প্রবন্ধের মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকার বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি ব্যাখ্যা করা খুবই দুরূহ। আশা করি, শ্রোতারা আমাদের প্রতিবেদনের মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকার সংস্কৃতি সম্পর্কে আরো বেশি জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন।
দক্ষিণ আফ্রিকায় সাক্ষাত্কার নেয়ার সময় সব নাগরিকের মধ্যেই দেখা যায় বিশ্বকাপ নিয়ে ব্যাপক উত্সাহ উদ্দীপনা। তারা জানেন, বিশ্বকাপ এ দেশের উন্নয়ন ও পর্যটন শিল্পের প্রবৃদ্ধির গতি ত্বরান্বিত করতে, আরো বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে এবং সড়ক ও স্টেডিয়ামসহ অবকাঠামোর উন্নয়ন করতে ব্যাপকভাবে সাহায্য করবে। বিশ্বকাপ মাত্র এক মাস স্থায়ী হবে। একটি ক্রীড়া প্রতিযোগিতা একটি দেশের জন্য কতটা পরিবর্তন এনে দিতে পারে আমরা জানিনা।
আমাদের সংবাদদাতা সাক্ষাত্কার গ্রহণ শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের একটি ছোট গ্রামের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় একটি বরযাত্রী দলের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছে। আমাদের সংবাদদাতা বলেছেন,
"সেটি দক্ষিণ আফ্রিকার প্রত্যন্ত গ্রাম। বড় শহর জীবনের সঙ্গে সেখানকার অধিবাসীদের যোগাযোগ খুব কম। বিশ্বকাপতো তাদের জন্য অনেক দূরের ব্যাপার। কিন্তু আমি এ দলের প্রত্যেকের মুখের হাসি এবং তাদের আনন্দময় গান থেকে অনুভব করেছি, বিশ্বকাপ থাক বা না থাক সুখী জীবনের প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকার জনগণের আকাংক্ষা ও অন্বেষা কখনও থামবে না। (লিলি)
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |