|
অনেকেই হয়তো নিউইয়র্কের ফ্লাশিং অঞ্চলের করোনা পার্কের নাম শোনেন নি, তবে যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক টেনিস প্রতিযোগিতার কথা নিশ্চয়ই অনেকে জানেন। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় টেনিস কেন্দ্র করোনা পার্কে অবস্থিত। ১৯৩৯ ও ১৯৬৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত দু'টি বিশ্বমেলা ঠিক করোনা পার্কে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ পার্ক আগে ছিল জরাজীর্ণ জলাভূমি, বিশ্বমেলা অনুষ্ঠানের কারণে এখন নাগরিকদের বিনোদন ও বিশ্রামের পার্ক ও টেনিস অনুরাগীদের টেনিস কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে ।
কার্টিস কেটস ও টেরি মার্লো একটি টি ভি অনুষ্ঠান তৈরী কোম্পানির কর্মী । তারা ১৯৬৪ সালে অনুষ্ঠিত নিউইয়র্কের বিশ্বমেলার কথা কোনো মতেই ভুলতে পারেন না। তাই নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিকে কেটস এ বিশ্বমেলার একটি টি ভি ছবি তৈরী করার সিদ্ধান্ত নেন এবং মার্লোর সক্রিয় সমর্থন পান। কোনো সংস্থার আর্থিক সাহায্য পান নি বলে এ ছবি তৈরীর কাজ ১৪ বছর পর ২০০৮ সালে সম্পন্ন হয়েছে। এ চৌদ্দ বছরে তারা ১৯৬৪ সালের বিশ্বমেলায় অংশ নেয়া এক শ'জন কর্মীর সাক্ষাত্কার নিয়েছেন। মার্লো আশা করে, এ ছবি দেখার মাধ্যমে নাগরিকরা প্রায় অর্ধ শতাব্দী আগে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত বিশ্বমেলার আড়ম্বরপূর্ণ দৃশ্যের কথা স্মরণ করতে পারবেন।
১৯৬৪ সালে নিউইয়র্ক বিশ্বমেলায় মোট দু' শ'টি প্রদর্শনী ভবন ছিল। সেই বৃহত্ বিশ্বমেলায় বিশ্বের সবচেয়ে নতুন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রদর্শিত হয়েছে। বিনিয়োগ বেশি বলে সাংগঠনিকরা এ সব বিনিয়োগ ফেরত পাওয়ার জোর চেষ্টা চালিয়েছেন। অতিরিক্ত ঘন বাণিজ্যিক পরিবেশের দরুণ অনেক দর্শক এ বিশমেলায় পরিদর্শন করতে সাহস পান নি। দু' বছর প্রদর্শনীর পর এ বিশ্বমেলায় ৫ কোটি মার্কিন ডলার লাভ হয়েছে। তবে বিনিয়োগের চেয়ে এ পরিমাণ অনেক কম। কিন্তু টেরি মার্লো মনে করেন, শুধু লাভের দিক থেকে একটি বিশ্বমেলার মূল্যায়ন করা ঠিক নয়। ১৯৬৪ সালের নিউইয়র্ক বিশ্বমেলা নিউইর্য়কে নতুন চিন্তা ভাবনা ও সংস্কৃতির জন্ম দিয়েছে এবং নিউইয়র্কে নতুন প্রাণ শক্তি যুগিয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিটি বিশ্বমেলাই বিভিন্ন সংস্কৃতির একটি সম্মিলন। দর্শকরা বিশ্বমেলায় বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি উপভোগ করার সুযোগ পান। ১৯৬৪ সালের পর বিশ্বমেলার অনেক কর্মী নিজের দেশে ফিরে না গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে থাকার সিদ্ধান্ত নিলেন। নিউইর্য়কের ফ্লাসিং অঞ্চল ধীরে ধীরে একাধিক সংস্কৃতিসম্পন্ন অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। ফলে নিউইর্য়কে নানা স্টাইলের রেস্তোরাঁ আগের চেয়ে বেশি হয়েছে।
টেরি মালোর বন্ধু কার্টিস কেটসও একই মত পোষণ করেন । তিনি বলেন, বিশ্বমেলা বাজারের মতো আকর্ষণীয় হতে হবে। বিশ্বমেলায় পরিদর্শনের সময় ব্যবসার চেয়ে আনন্দ পাওয়া বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ১৯৬৪ সালের নিউইর্য়ক বিশ্বমেলা পরিদর্শনকারী নাগরিকদের সঙ্গে আলাপের সময় তারা বলেন, এটা একটা চমত্কার বিশ্বমেলা । তারা সেখানে যা দেখেছেন, অন্য স্থানে তা দেখা সম্ভব নয়। এ অভিজ্ঞতা তারা কখনও ভুলবেন না। এ ধরনের মূল্যায়ন থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে ১৯৬৪ সালের বিশ্বমেলা সাফল্যমন্ডিত হয়েছিল।
বিশ্বমেলা নিউইর্য়কের নাগরিকদের জন্য আনন্দ আনার পাশাপাশি বিশ্বমেলার জন্য নির্মিত অবকাঠামো ব্যবস্থাগুলো থেকে নাগরিকরা উপকৃত হয়েছেন। আজকের মনোরম করোনা পার্ক ও টেনিস কেন্দ্র আগে ছিল জঞ্জালভরা জলাভূমি। বিশ্বমেলা আয়োজনের জন্য ফ্লাসিং অঞ্চল এখন নিউইয়র্ক শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে পরিণত হয়েছে।
সত্তর বছর বয়সী থমাস মার্ফি ছোট বেলা থেকেই ফ্লাসিং অঞ্চলে থাকতে শুরু করেন। তিনি নিজের চোখে ফ্লাসিং অঞ্চলের ঐতিহাসিক পরিবর্তন দেখেছেন। তিনি বলেন, বিশ্বমেলা আয়োজনের সময় বাইরের অনেকে সেখানে থাকতে শুরু করেন। এটা ফ্লাসিং অঞ্চলের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করেছে। ফ্লাসিং অঞ্চলের গঠনকাজ এখনও শেষ হয় নি, এটাই আমার স্থায়ীভাবে এখানে থাকার একটি প্রধান কারণ। থমাস মার্ফি ১৯৬৪ সালের বিশ্বমেলার স্মারক বস্তু সংগ্রহ করতে আগ্রহী। এখনও ১৯৬৪ সালের বিশ্বমেলার প্রতীক টাঙানো তার গাড়িতে বিশ্বমেলার অনেক স্মারক বস্তু রয়েছে। মার্ফির পক্ষে নিউইর্য়ক বিশ্বমেলা তার জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ পরিণত হয়েছে।
কার্টিস কেটস বলেন, বিশ্বমেলার প্রধান উদ্দেশ্য মানুষের বস্তুগত আকাংখা মেটানো নয়, বরং তাদেরকে বিভিন্ন সংস্কৃতি বিনিময় ও উপভোগ করার অভিজ্ঞতা দেয়া। বিভিন্ন দেশের মানুষ বিশ্বমেলায় অন্য দেশের সংস্কৃতি উপভোগের অভিজ্ঞতা মূল্যবান।
চীনের শাংহাই বিশ্বমেলা সম্পর্কে কার্টিস কেটস বলেন, আমি জানি অনেকে শাংহাই বিশ্বমেলা পরিদর্শন করতে যাবেন। আমি শুনেছি শাংহাই বিশ্বমেলার অনেক প্রদর্শনী ভবন মেলা শেষ হওয়ার পরও সংরক্ষিত রাখা হবে। শাংহাই তথা চীনের জন্য একটা একটি ভালো ব্যাপার। যুক্তরাষ্রেব র অনেকে চীনে যাওয়ার আশা রাখেন। কারণ তারা চীনের সংস্কৃতি জানতে চান এবং সেখানে বেড়াতে চান। বিশ্ববাসীর জন্য শাংহাই বিশ্বমেলা হবে তাদের জন্য চীনকে জানার একটি সুবর্ণ সুযোগ।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |