|
৩৭৪টি প্যাভিলিয়নের মধ্যে সবচেয়ে প্রিয়টি বাছাই করা ইয়ামাদা মনে করেন তা খুব কঠিন ব্যাপার। জাপানী হিসেবে প্যাভিলিয়নের কথা উল্লেখ করলে ইয়ামাদা জাপান অনেক আনন্দিত। তিনি বলেন:
আমি জাপান প্যাভিলিয়ন দু'বার পরিদর্শন করেছি। জাপান প্যাভিলিয়নের বাইরে লাইন করে অপেক্ষা করার পর্যটকের সংখ্যা অনেক বেশি। নইলে আমি তৃতীয় বারের মত এ প্যাভিলিয়ন পরিদর্শন করবো। এত বেশি পর্যটক জাপান প্যাভিলিয়ন দেখতে চান, জাপানী হিসেবে এমন অবস্থা দেখে আমি অনেত গর্বিত এবং আনন্দিত।
জাপান প্যাভিলিয়ন পরিদর্শনের অনুভূতি সম্পর্কে "বিশ্বমেলা দাদী" বলেন:
চীনা পর্যটক হয়তো জাপানের রবার্ট ও হাইটেক বেশি পছন্দ করেন। আসলে জাপানী বৈশিষ্টের চা কক্ষ, চীনের প্রাচীনকালের থাং রাজবংশের বৌদ্ধ ধর্মের মহাভিক্ষু চিয়ান চেনের জাপান ভ্রমণসহ জাপানের ঐতিহ্যিক শিল্প এবং জাপান-চীন সংস্কৃতি বিনিময়ের ইতিহাসের প্রদর্শনী এলাকা আমার কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং আমাকে মুগ্ধ করেছে। শাংহাই বিশ্বমেলা উদ্বোধনের আগে আমি বিশেষ করে জাপানে ফিরে মহা ভিক্ষু চিয়ান চেনের স্মৃতি মন্দিরে গিয়েছি। আমার মনে হয়, মানুষ এবং মানুষের বিনিময়, শিক্ষা ও যোগাযোগ হল বিশ্বমেলা আমাদেরকে দেয়া সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ।
বিভিন্ন প্যাভিলিয়নের মধ্যমে ইয়ামাদার মনে সবচেয়ে গভীর দাগ কেটেছে এমন প্যাভিলিয়ন হল চীনের প্যাভিলিয়ন। একটি কারণ হল চীনের প্যাভিলিয়নের বৈশিষ্টময় চেহারা। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল পুরো প্যাভিলিয়নের ডিজাইন এবং ধারণা। ইয়ামাদা চীনের প্যাভিলিয়নের নির্মাণ থেকে তা সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত দেখেছেন। তিনি বলেন:
চীনের প্যাভিলিয়নের চেহারা অনেক উজ্জ্বলদিপ্তি। তবে আমি তার ডিজাইন আরো বেশি পছন্দ করি। বিভিন্ন প্রাদেশিক স্টল প্যাভিলিয়নের নীচ তোলায় অবস্থিত। যেন পুরো দেশের ভিত্তির মত। আমি চীনের বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতির স্টল অনেক পছন্দ করি। চীনে এত বেশি উপজাতি আছে। প্রত্যেক জাতির নিজস্ব সংস্কৃতি আছে। তবে সবাই একসাথে থাকে এবং খুব ঐকবদ্ধ। আমি চীনের প্যাভিলিয়নের ডিজাইন ও ধারণা অনেক পছন্দ করি। অবশ্যই, আমি চীন প্যাভিলিয়নের নির্মাণ থেকে তা দেখেছি। তাই প্রত্যেক বার এ প্যাভিলিয়ন দেখে অনেক আন্তরিক মনে করি।
২০০৫ সালে জাপানে আয়োজিত আইচি বিশ্বমেলায় ইয়ামাদা ১৮৫ দিনের মধ্যে ২৪৩ বার বিশ্বমেলা বাগানে ঢোকার রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন। তাই তাকে আইচ বিশ্বমেলার পুরস্কার দেয়া হয়েছে। বিশ্বমেলাকে তার আগ্রহের জন্য পুরস্কার দেয়ার কারণে শাংহাই বিশ্বমেলা জাপানে বিক্রি করা প্রথম টিকিট উপহার হিসেবে ইয়ামাদকে দেয়া হয়েছে। শাংহাই বিশ্বমেলায় পুরস্কার পাওয়ার জন্য চেষ্টা করবেন কী না এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন:
যদি আমার শরীর অবস্থা ভালো, তাহলে আমি সত্যি প্রতিদিন বিশ্বমেলা বাগানে বেড়াতে যেতে চাই। এখন আমার জন্য এমন পুরস্কার পাওয়া ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। শাংহাই বিশ্বমেলা আয়োজনের কারণে এ শহরের সঙ্গে আমার বিশেষ এক রকমের সম্পর্ক স্থাপন হয়েছে। বিশ্বমেলার কারণে আমি এবং আমার পুরো পরিবার এ শহরকে গভীরভালে ভালোবেসেছি। আমার বিশ্বাস, বিশ্বমেলা শেষের পর আমি সময় পেলে সবসময় এ শহরে ফিরে দেখবো। আমি এমন সম্পর্কের ওপর গুরুত্ব দেই। যদি কোন দুঃখের কথা বলি, আমি বলতে চাই, শাংহাইয়ে যদিও আমি প্রায় এক বছর আছি, তবে আমার চীনা ভাষার মান ততটা ভালো নয়। শাংহাইয়ে এসে বিশ্বমেলা পরিদর্শনের জন্য জাপানে আমি বিশেষ করে একটি চীনা ভাষা শেখার ক্লাসে ভর্তি করেছি। আমার মনে হয় ভবিষ্যতে আমি অব্যাহতভাবে চীনা ভাষা শিখবো।
বিশ্বমেলা দাদী হিসেবে অনেক দর্শক জানতে চায় ইয়ামাদার বিশ্বমেলা পরিদর্শনের বিশেষ অভিজ্ঞতা কী? এ সম্পর্কে ইয়ামাদা বলেন, তার বিশেস অভিজ্ঞতা হল সহজেই ছেড়ে দেবে না। তিনি বলেন:
প্যাভিলিয়নের বাইরে লাইন করে অপেক্ষা করা সত্যি অনেক ক্লান্তি ব্যাপার। তবে যদি আপনার কোন স্বপ্ন আছে, কোন আকাংখা রয়েছে, তাহলে সহজেই তা ছেড়ে দেবেন না। বিশ্বমেলা পরিদর্শনের জন্য বাগানে ঢোকার আগে নিশ্চয়ই সংশ্লিষ্ট তথ্য জানতে হবে। এমন প্রস্তুতি নিতে হবে। আপনার জানতে হবে কী কী বিষয় আপনার জানতে সবচেয়ে আগ্রহী। যদি কিছু বিষয় সম্পর্কে আপনার জানার আগ্রহ নেই, তাহলে এর জন্য লাইন করে অপেক্ষা করা সময় নস্ত হবে। তবে যদি আপনি কিছু কিছু প্যাভিলিয়ন দেখতে অনেক আগ্রহী, তাহলে বেশি সময় অপেক্ষা করারও আনন্দের ব্যাপার। অপেক্ষা করার পর অর্জিত সাফল্য এবং আনন্দ আরো মূল্যবান।
ইয়ামাদার কাছে বিশ্বমেলা একটি কৃতজ্ঞতার ব্যাপার। তার স্বাস্থ্য অনেক খারাপ ছিল। ২০০৫ সালের আইচি বিশ্বমেলায় তিনি প্রতিদিন বাগানে ঢুকে বেড়াতে যান। তখন বিশ্বমেলা বাগান পরিদর্শন করা হল তার স্বার্মী তাকে দেয়া একটি প্রস্তাব। তার স্বামী আশা করে এমন পদ্ধতিতে তার মানসিক অবস্থা ভালো হবে। তবে তারা দু'জনই কল্পনা করতে পারেন না যে, বিশ্বমেলা দেখার মাধ্যমে ইয়ামাদা জ্ঞান ও স্বাস্থ্য সবই অর্জন করেছেন। "বিশ্বমেলা দাদী" জানিয়েছেন, তিনি বিশ্বমেলায় তোলা সব ছবি নিয়ে একটি এলবাম তৈরি করেছেন। তিনি তাকে জাপানের মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্কুলে এ ছবি এলবাম উপহার হিসেবে দান করবেন। যাতে শিশুদের ছোটবেলা থেকে বিশ্বমেলা সম্পর্কে জানা, প্রকৃতি ও পৃথীবিকে আরো বেশি ভালোবাসা, জীবনকে আশা পোষণ করা এবং চীন-জাপান মৈত্রী সুসংবদ্ধ করার জন্য সহায়ক হয়। তিনি বলেন:
আমি বিশ্বমেলাকে ধন্যবাদ জানাই। কারণ আইচি বিশ্বমেলার আনন্দময় অভিজ্ঞতার কারণে আমি রোগকে পরাজিত করেছি এবং পুনরায় সুস্বাস্থ্য হয়েছি। জীবনকে আমি আবারও আস্থাবান হয়েছি। আমার স্বামী এবং আমি আগে চিকিত্সা করার টাকা নিয়ে আরো বেশি শিশুকে বিশ্বমেলা জানার জন্য সাহায্য করবো। যাতে বিশ্বমেলা আরো বেশি লোকজনকে উত্সাহ দেয়া যায়।
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |