|
১৮৫১ সালের পয়লা মে ব্রিটেনের রাণী ভিক্টোরিয়ার স্বামী প্রিন্স অ্যালবার্টের উদ্যোগে সকল দেশের শিল্প ক্ষেত্রের পণ্যের আকর্ষণীয় প্রদর্শনী লন্ডনে অনুষ্ঠিত হয় । আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী ব্যুরো এ প্রদর্শনীকে প্রথম বিশ্বমেলা হিসেবে অভিহিত করে । বিভিন্ন দেশ মনে করে , শিল্প বিপ্লবের পর নিজ দেশের শক্তি প্রদর্শনের জন্য ব্রিটেন এ প্রদর্শনীর আয়োজন করে । তবে লন্ডনের ভিক্টোরিয়া ও অ্যালবার্ট যাদুঘরের প্রধান মার্ক জোন্স সি আর আই'র সাংবাদিককে বলেন , অন্য দেশের অভিজ্ঞতা শেখার জন্য ব্রিটেন প্রথম বিশ্বমেলা আয়োজন করে । তিনি বলেন , ব্রিটেন মনে করে , শিল্প পণ্য রপ্তানি ক্ষেত্রে নিজের প্রাধান্য বজায় রাখার জন্য ব্রিটেনকে ইউরোপের অন্যান্য দেশ , বিশেষ করে ফ্রান্সের কাছ থেকে শিখতে হবে , ফ্রান্সের সুন্দর সুন্দর ডিজাইন শিক্ষণীয় । তা ছাড়া ব্রিটেনকে ভারত , চীন , জাপান ও ইসলামি দেশগুলোর কাছ থেকে পণ্যের ডিজাইন শিখতে হবে ।
প্রথম বিশ্বমেলায় প্রদর্শিত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রায় ১৩ হাজার জিনিসপত্রের মধ্যে রয়েছে বাষ্পচালিত ট্রেনের ইন্জিন , দ্রুতগতির স্টীমার , ভার- উত্তোলন যন্ত্র ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাঠানো ফসলকাটার যন্ত্র । প্রথম বিশ্বমেলায় চীনের কোন প্রদর্শনী কক্ষ ছিল না । সেই সময় চীন- ব্রিটেন সম্পর্ক বিশেষ পর্যায়ে ছিল বলে প্রথম বিশ্বমেলায় চীনের জিনিসপত্র খুব কম ছিল । এ প্রসঙ্গে এ যাদুঘরের এশিয় বিভাগের উপপ্রধান মাদাম এনা জেকসোন বলেন , বিশ্বমেলার কার্যনির্বাহী কমিটি তখনকার ছিং রাজবংশের সরকারের কাছে চিঠি পাঠিয়ে বিশ্বমেলায় প্রতিনিধি দল পাঠানোর আমন্ত্রণ জানিয়েছিল । কিন্তু বিশ্বমেলা চীন ও ব্রিটেনের প্রথম আফিম যুদ্ধের পর অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে দু'দেশের সম্পর্ক তখন ভাল ছিল না । তাই চীন মেলায় প্রতিনিধি দল পাঠায় নি । কিন্তু মেলার কার্যনির্বাহী কমিটির খুব ইচ্ছা ছিল যে মেলায় চীনের পণ্য প্রদর্শিত হবে । তাই কমিটির নির্দেশে লন্ডনের উইলিয়াম হিউইট নামক এক ব্যবসায়ী চীনের কিছু পণ্য সংগ্রহ করে মেলায় পাঠিয়েছেন । তাছাড় ব্রিটিশ সরকারের কর্মকর্তা রাডফোর্ড অউককের সাহায্যে চীনা ব্যবসায়ীরা কিছু পণ্য লন্ডনে পাঠিয়েছিলেন ।
১৮৫১ সালের পয়লা মে থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত প্রথম বিশ্বমেলা অনুষ্ঠিত হয় । মোট ৬০ লাখ মানুষ এ মেলা পরিদর্শন করেছেন । এ সংখ্যা ব্রিটেনের জনসংখ্যার তিন ভাগের এক ভাগ ছিল । যাদুঘরের প্রধান মার্ক জোন্স বলেন , প্রথম বিশ্বমেলা তখনকার ব্রিটেনের সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে । প্রথম বিশ্বমেলায় ব্রিটেন এক লাখ ৮৬ হাজার পাউন্ড মুনাফা করেছে । এ অর্থ দিয়ে সরকার বিশ্বমেলার কাছাকাছি এলাকা -- লন্ডনের বিখ্যাত হাইড পার্কের দক্ষিণে ভূমি ক্রয় করে ব্রিটেনের বিজ্ঞান ও শিল্পকলা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে । ভিক্টোরিয়া ও অ্যালবার্ট যাদুঘর , বিজ্ঞান যাদুঘর এবং প্রকৃতি ও ইতিহাস যাদুঘরও সেখানে পর পর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । বিজ্ঞান ও শিল্পকলা ক্ষেত্রের উন্নয়ন তরান্বিত করার জন্য প্রথম বিশ্বমেলা থেকে পাওয়া মুনাফা দিয়ে একটি তহবিলও প্রতিষ্ঠিত হয় । ব্রিটেনের দৃষ্টান্ত দেখে অন্যান্য দেশও বিশ্বমেলা আয়োজন করতে শুরু করে । এখন পর্যন্ত শিল্পোন্নত দেশগুলোতে মোট ৪০টি বিশ্বমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে ।
মার্ক জোন্স বলেন , যুগ পরিবর্তনের পাশাপাশি বিশ্বমেলার বিষয়বস্তু ও আকারেরও অনেক পরিবর্তন হয়েছে । তবে বিশ্বমেলার শিক্ষাগত তাত্পর্য কখনও পরিবর্তিত হবে না । তিনি বলেন , প্রথম বিশ্বমেলায় অনেক নতুন নতুন উত্পাদন পদ্ধতি ও ডিজাইন প্রদর্শিত হয়েছে । এগুলোর বাস্তব শিক্ষাগত তাত্পর্য রয়েছে । বিংশ ও একবিংশ শতাব্দীতে অনুষ্ঠিত বিশ্বমেলাগুলোতে নতুন উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি ছাড়াও দর্শকরা এ সব উদ্ভাবন পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন , এতে দর্শকদের আনন্দ অনেক বাড়ে । ১৮৫১ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম বিশ্বমেলায় একটি প্রদর্শনী ভবন ছিল । এখন বিশ্বমেলার আকার অনেক বড় হয়েছে । অনেক দেশ নিজ দেশের প্রদর্শনী ভবন নির্মাণ করেছে । বিভিন্ন দেশের দর্শকরা বিশ্বমেলায় পরস্পরের অভিজ্ঞতা শিখতে পারেন । এ ধরনের সুযোগ ও পরিবেশ আধুনিক যুগের মানুষ খুব পছন্দ করেন ।
মার্ক জোন্স শাংহাই বিশ্বমেলায় ব্রিটেনের প্রদর্শনী ভবনের ডিজাইন উপদেষ্টা। তিনি বেশ কয়েকবার চীন সফর করেছেন । তিনি বলেন , আমি মনে করি , শাংহাই বিশ্বমেলা ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিশ্বমেলা , অংশগ্রহণকারী দেশ ও দর্শকের সংখ্যা দু' দিকেই বিশ্ব রেকর্ড সৃষ্টি করবে । শাংহাই বিশ্বমেলা দর্শকদের মনে গভীর ছাপ ফেলবে । শাংহাই বিশ্বমেলা অবশ্যই সাফল্যমন্ডিত হবে ।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |