Web bengali.cri.cn   
সিন ইয়াংয়ের চা সংস্কৃতি বিশ্বমুখী হচ্ছে
  2010-06-11 13:46:22  cri
চীনের হো নান প্রদেশের সিন ইয়াং শহর হু পেই, হো নান এবং আন হুই প্রদেশের সংলগ্ন। এ শহরটি হচ্ছে চীনের বিখ্যাত সবুজ চায়ের জন্মস্থান। এখানে উচ্চ গুণগত মানসম্পন্ন 'সিন ইয়াং মাও চিয়ে চা' উত্পাদিত হয়।

শত শত বছর ধরে এখানকার জনগণ চায়ের ওপর নির্ভর করে জীবন কাটিয়ে আসছেন। তাঁদের জীবনে একদিনও চায়ের অভাব হয়নি। উত্পাদনে ও তাঁদের জীবনযাত্রায় বিশেষ বৈশিষ্টসম্পন্ন সিন ইয়াং চা সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। কয়েকদিন আগে অনুষ্ঠিত 'সিন ইয়াংয়ের চায়ের আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক দিবস' দেশি-বিদেশী অনেক চা অনুরাগীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

এক হাজারের বছরেরও বেশি সময় আগে থাং রাজবংশের শাসনামলে সিন ইয়াংয়ের চা সম্পর্কিত লেখা পাওয়া যায়। থাং রাজবংশের লু ইউয়ের রচিত 'চা চিংতে' ই ইয়াং চাকে তখনকার নামকরা চায়ের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়। তখনকার ই ইয়াং শহরই বর্তমানের সিন ইয়াং। সিন ইয়াংয়ের চা বিশেষজ্ঞ চু খাই বলেন,

"সিন ইয়াং মাও চিয়ের চায়ের উত্পাদনের ইতিহাস সুদীর্ঘ। সিন ইয়াংয়ের কু শি জেলার মা ওয়াং তুই হান রাজবংশ আমলের সমাধি থেকে পাওয়া দ্রব্যের মধ্যে চাও রয়েছে। তাই বলা যায়, এখানকার চায়ের ইতিহাস অনেক সুদীর্ঘকালের।"

সিন ইয়াংয়ে বাড়িতে অতিথিরা বেড়াতে আসলে অবশ্যই তাঁদেরকে চা দেয়া হয়। আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের মধ্যে উপহার হিসেবে চা বিনিময় করা হয়। এটা সিন ইয়াংয়ে'র শত শত বছরের প্রচলিত রীতি। চু খাই মনে করেন, চা সংস্কৃতি এখনো পর্যন্ত প্রচলিত রয়েছে। এতে শ্রমজীবীদের অনেক অবদান রয়েছে। তিনি আরো বলেন,

"চা সংগ্রহ করার সময়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। উপযুক্ত সময়ের একদিন আগে বা একদিন পরে চা সংগ্রহ করলে তার গুণগত মানের ওপর প্রভাব পড়তে পারে। শ্রমজীবীরা উত্পাদন প্রক্রিয়ায় অব্যাহতভাবে চা চাষ ও সংগ্রহের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগান।"

১৯১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পানামার বিশ্বমেলায় সিন ইয়াং মাও চিয়ে চায়ের সুন্দর অবয়ব ও সুগন্ধ সেখানে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ীদের প্রশংসা কুড়ায় এবং বিশ্ব চায়ের স্বর্ণ পুরস্কার ও পদক অর্জন করে। ১৯৫৮ সালে সিন ইয়াং মাও চিয়ে চা চীনের দশটি বিখ্যাত চায়ের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়।

১৯৯২ সালে সিন ইয়াং প্রথমবারের মতো চীনের সিন ইয়াং চা উত্সবের আয়োজন করে। তারপর সিন ইয়াং চা উত্সব প্রতি বছরে একবার আয়োজিত হয় এবং এ পর্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে ১৮ বারের মতো তা আয়োজিত হয়েছে। এ উত্সব সিন ইয়াংয়ের বিশ্বমুখীনতার একটি গুরুত্বপূর্ণ জানালা। চা বিশেষজ্ঞ চু খাই বলেন,

"বহু আগে থাং রাজবংশে জাপানের দূত চীনের সংস্কৃতি জানার জন্য এদেশে এসেছিলেন। তিনি চেং চিয়াং চিন শা চায়ের পান সভায় অংশ নিয়েছিলেন। তারপর তিনি অর্জিত জ্ঞান নিয়ে জাপানে গিয়ে ধাপে ধাপে সেদেশের চা প্রক্রিয়া পদ্ধতি গড়ে তোলেন। আসলে চীনেই চা প্রক্রিয়ার উত্স্য । কিন্তু জাপান আরো ভালোভাবে এ প্রক্রিয়াকে বাঁচিয়ে রেখেছে এবং বংশপরম্পরায় তা চলছে। তারপর চা প্রক্রিয়া জাপানের সংস্কৃতিতেই মিশে যায়।"

প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আপনারা এখন যেটি শুনলেন তা হলো চা প্রক্রিয়ার পরিবেশনার সঙ্গীত। চীনা বাদ্যযন্ত্র কু চেংয়ের মধুর শব্দে ছিওং সাম পরা সুন্দর মেয়ে চমত্কারভাবে চা তৈরির প্রক্রিয়া প্রদর্শন করছেন। সবুজ চা-পাতা কাপের ভেতরে ধীরে ধীরে রং ছড়াতে থাকে। এ ধরণের দৃশ্য যেন চা সংস্কৃতির একটি প্রাণবন্ত দিক।

আজকের সবুজ চা মেলায় আমাদের সংবাদদাতা দেখেছেন যে, কয়েক জন শিশু চা তৈরির প্রক্রিয়া দেখছে। তাদের নির্দেশক লি ওয়েই হোং বলেন,

"সিন ইয়াং মাও চিয়ে চা সংস্কৃতির প্রচার ও জনপ্রিয়তা একটু ধীরে হয়েছে। তাই গত বছরে এ বিষয়টি শেখার জন্য আমরা বিশেষভাবে কয়েকজন তরুণ-তরুণী শিক্ষককে পেইচিংয়ে পাঠিয়েছি। ফিরে আসার পর আমরা স্কুলে চা সংস্কৃতি সম্পর্কিত বিষয়ে শিক্ষাদান শুরু করি। শিশুরা চা তৈরির প্রক্রিয়ার পরিবেশনা খুব পছন্দ করে - চা সম্পর্কিত অনেক প্রাচীন কবিতা মুখস্ত করতে পারে। ওয়াং ইয়েন ইউ নামে একটি শিশুর বয়স ৯ বছর। চা মেলায় তার পরিবেশনা অনেক দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। চা তৈরি প্রক্রিয়ার প্রতিটি পদক্ষেপের সঙ্গে সে সুপরিচিত।

 

চীনাদের জন্য উপভোগের বিষয় হলো গরম পানি দিয়ে চা তৈরি করা এবং তার স্বাদ গ্রহণ করা। (লিলি)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040