|
গত শতাব্দীর আশির দশকে ব্রাসেলসে বেলজিয়াম-চীন অর্থনীতি ও বাণিজ্য কমিটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । এ কমিটি মুনাফা অর্জনকারী সংস্থা নয় । গত বিশ-বাইশ বছরে এ সংস্থা বেলজিয়াম ও চীনের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের বিনিময় কর্মসূচীর ব্যবস্থা করেছে এবং চীনে বেলজিয়ামের কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ ও ব্যবসা বাণিজ্যে সাহায্য করেছে । এই কমিটির চেয়ারম্যান বার্নার্ড ডিউয়িট বলেন , নয়া চীন প্রতিষ্ঠার পর , বিশেষ করে চীনে সংস্কার নীতি কার্যকর হওয়ার পর বেলজিয়াম ও চীনের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে । তিনি বলেন , গত ত্রিশ বছরে বেলজিয়াম ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যিক বিনিময়ের অনেক পরিবর্তন হয়েছে । চীনের সংস্কার নীতি যেমন চীনের জন্য কল্যাণকর , তেমনি এ নীতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে উন্নয়নের সুযোগ এনে দিয়েছে। বেলজিয়ামের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো চীনের বৃহত্ বাজারের সুযোগসুবিধা পাওয়ার পাশাপাশি ইউরোপের নাগরিকদের জন্য চীনের ভালো গুণগত মানের সম্তা পণ্য সরবরাহ করেছে । তাই আমি বলতে চাই চীনের সংস্কার ও উন্মুক্ত নীতি শুধু চীনা জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত করে নি , ইউরোপের নাগরিকরাও এতে উপকৃত হয়েছেন ।
ডিউয়িট আরো বলেন , চীন ইতোমধ্যে বিশ্বের অন্যতম বিনিয়োগকারী উপযুক্ত দেশে পরিণত হয়েছে । চীন সরকারের সমর্থনে বিদেশী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় সহজেই চীনে প্রবেশের সুবিধা পাচ্ছে । তিনি আরো বলেন , বেলজিয়ামের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো চীনে বিনিয়োগের সময় চীনের সরকারী বা বেসরকারী সংস্থার সাহায্য পায় , তারা চীনের সংশ্লিষ্ট আইনগুলো মেনে নেয়ার কথাও বিবেচনা করে ।
চীনের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমেই আরো বেশি চীনা শিল্প প্রতিষ্ঠান বিদেশে বিনিয়োগের চেষ্টা করছে । বর্তমানে হাইনান বিমান কোম্পানিসহ বেশ কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান বেলজিয়ামের বাজারে প্রবেশ করেছে । এ সব শিল্পপ্রতিষ্ঠান বেলজিয়ামের জন্য কর্মসংস্থান ও উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি করেছে । এ প্রসঙ্গে ডিউয়িট বলেন , চীনের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো বেলজিয়ামে বিনিয়োগ ও ব্যবসা করছে দেখে আমি আনন্দ বোধ করি । আশা করি , এ প্রবণতা বজায় থাকবে । কেননা , এটা দু'দেশের জন্য কল্যাণকর । ইউরোপের বাজারে চীনের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রবেশ ইউরোপের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে একটি ভালো সুযোগ । তারা চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সহযোগী হিসেবে কাজ করতে পারে , এতে দু'পক্ষই উপকৃত হবে ।
বাণিজ্যিক আদান-প্রদান ছাড়া সাংস্কৃতিক বিনিময়ও চীন ও ইউরোপের দেশগুলোর জনগণের পারস্পরিক সমঝোতা বাড়ানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু হয়ে দাঁড়িয়েছে । সিলভেইন প্ল্যাসেট ব্রাসেল ভ্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক চীন গবেষণাগারের সাম্মানিক প্রফেসর । তিনি চীনের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ স্থান ভ্রমণ করেছেন । তিনি মনে করেন , চীনের সংস্কার ও উন্মুক্ত নীতি কার্যকর বিংশ শতাব্দীতে মানব জাতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা । তিনি মনে করেন , চীন ও ইউরোপের জনগণের উচিত পরস্পরের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করা এবং বিনিময় জোরদার করা ।
তিনি বলেন , বাণিজ্যিক বিনিময় ছাড়া চীন ও ইউরোপের জনগণের সাংস্কৃতিক বিনিময়ও গুরুত্বপূর্ণ । যদিও আমাদের সংস্কৃতি ভিন্ন , তবে আমরা পরস্পর পরস্পরের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগির মাধ্যমে আমাদের সমঝোতা বাড়াতে পারবো । আমার বয়স বেশি হয়েছে , তবুও আমি চীনের সংস্কৃতি সম্পর্কিত তথ্য জানতে আগ্রহী । চীনাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে , তাই তারা সুযোগ পেলেই দেশের বাইরে ভ্রমণ করতে যান এবং বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি ও রীতিনীতি জানার চেষ্টা করেন ।
ভাষা হচ্ছে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের সবচেয়ে ভালো হাতিয়ার । আরো ভালোভাবে চীনের সংস্কৃতি জানার জন্য বেলজিয়ামে আরো বেশি নাগরিক চীনা ভাষা শিখছেন । বেলজিয়াম-চীন সমিতির চেয়ারম্যান হান্স ভান ডুইসেন এ প্রসঙ্গে বলেন , বেলজিয়াম –চীন সমিতি ১৯৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় । তখন থেকেই আমরা চীনা ভাষার কোর্স জনপ্রিয় করার কাজ শুরু করেছি। আমি বিশ্বাস করি , বেলজিয়ামে চীনা ভাষা শেখার মানুষের সংখ্যা আরো বেশি হবে । জেলজিয়াম-চীন অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য কমিটির চেয়ারম্যান বার্নার্ড ডেভিট বলেন , এখন বেলজিয়ামের আরো বেশি যুবকযুবতী চীন সম্পর্কে আরো বেশি জানতে আগ্রহী , তাই তারা চীনা ভাষা শিখতে শুরু করেছে ।
বেলজিয়ামে অনুষ্ঠিত ইউরোপালিয়া শিল্প উত্সবে চীন একমাত্র প্রধান অতিথি দেশ হিসেবে অংশ নিয়েছে । এ উত্সবে প্রদর্শনী , সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান , চলচ্চিত্র প্রদর্শন ও সাহিত্য কর্মের ওপর আলোচনাসহ প্রায় পাঁচ শ' কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়েছে । এ উত্সবে প্রাচীন চীনের ঐতিহ্যিক সংস্কৃতি ও আধুনিক চীনের শিল্পকলা দর্শকদের জন্য তুলে ধরা হয়েছে । এ শিল্প উত্সব চীন ও ইউরোপের বিনিময়ের মাইনফলক হয়ে থাকবে ।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |