|
সুইজারল্যান্ডের রাজধানী বার্নে অবস্থিত খোর্নহাউস গ্রন্থাগার বিশ্বসংস্কৃতির উত্তরাধিকারের তালিকাভুক্ত বার্নের পুরনো শহরে রয়েছে । ১৮৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এ গ্রন্থাগারটির আগের নাম ছিল বার্নি পাবলিক গ্রন্থাগার । এ গ্রন্থাগারে নয়টি ভাষার তিন লাখ ২০ হাজার বইপত্র রয়েছে । পাঠকদের সুবিধার জন্য সেদিন এ গ্রন্থাগারে চীনের রীতিনীতি , পর্যটন , ইতিহাস , সংস্কৃতি ও চীনের আধুনিক সমাজ সম্পর্কিত বইপত্র সংগ্রহ করে প্রদর্শন করা হয় । ২৩ এপ্রিল দুপুরে আলোচনা সভাকক্ষে পাঠকদের ভীড় জমে । গ্রন্থাগারের মহাপরিচালক মাদাম ক্রিষ্টিন এগেনবার্গ আলোচনা সভা পরিচালনা করেছেন । তিনি পাঠকদের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপ্রধান ও চীনা রাষ্ট্রদূতকে প্রশ্ন করেছেন ।
সুইজারল্যান্ডের ফেডারেল চেয়ারম্যান দোরিস লিউথার্ড প্রথমে তার চীন সম্পর্কিত ধারণা তুলে ধরেন । তিনি বলেন , ভ্রমণ তার এক বড় শখ । তিনি বেশ কয়েকবার চীন সফর করেছেন । তিনি চীনের ইতিহাস ও সংস্কৃতি পছন্দ করেন । চীন সফরের সময় পাওয়া এক উপহারের কথা বর্ণনা করে তিনি বলেন , একবার চীন সফরের সময় উপহার হিসেবে আমি চীনা শিল্পীর লেখা একটি হস্তলিপি পেয়েছিলাম । এতে আমার নাম লেখা রয়েছে । হস্তলিপিটি অত্যন্ত সুন্দর । এখন সবাই ইন্টারনেটে প্রবন্ধ লিখেন , চীনের শিল্পীদের তুলির কলম দিয়ে লেখা হস্তলিপি আমি খুব পছন্দ করি । চীনের শিল্পীদের হস্তলিপির গুণগত মান ভালো ।
চীনা রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে মত বিনিময়ের সময় লিউথার্ড শ্রোতাদের চীন ও সুইজ্যাল্যান্ডের সম্পর্কের প্রসারের কথা বর্ণনা করেছেন । তিনি বলেন, চীন সুইজারল্যান্ড নির্ভরযোগ্য বন্ধু । দু'দেশের মধ্যে অনেক বিষয়ে যোগাযোগ রয়েছে এবং ব্যাপক সমঝোতা ও মতৈক্যে পৌঁছেছে । বর্তমানে দু'টি দেশের মধ্যে অবাধ বাণিজ্য অঞ্চল প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা নিয়ে যোগাযোগ চলছে । তিনি বলেন , সুইজারল্যান্ড উত্সাহের সঙ্গে সাংহাই বিশ্বমেলায় অংশ নিয়েছে । তিনি বলেন , সাংহাই বিশ্বমেলায় সুইজারল্যান্ডের প্রদর্শনী ভবন খুব সুন্দর । বিশ্বমেলার মাধ্যমে আমরা চীনের সঙ্গে সাংস্কৃতিক বিনিময় ত্বরান্বিত করার চেষ্টা করবো । আমরা চীনের সাংহাই বিশ্বমেলার সাফল্য কামনা করি ।
সুইজারল্যান্ডে চীনা রাষ্ট্রদূত তোং চিং ই দু' বছর ধরে সুইজারল্যান্ডে কাজ করে আসছেন । সুইজারল্যান্ডে তার দু'বছরের জীবনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে রাষ্ট্রদূত তোং চিং ই বলেন , চীনের প্রতি সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন মহলের নাগরিকদের বন্ধুপ্রতিম মনোভাব ও আগ্রহ দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি । সুইজ্যারল্যান্ডের জনগণের সৃজনশীল শক্তি প্রশংসার যোগ্য । সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সুইজারল্যান্ডে অনেকেই চীনা ভাষা শিখতে শুরু করেছেন । তারা মনে করেন , প্রাচ্যের এই অদ্ভুত ভাষা রহস্যময় । আলোচনা সভায় সুইজ্যারল্যান্ডের একজন নাগরিক রাষ্ট্রদূতকে এ প্রশ্ন করেছেন : চীনারা এত জটিল ভাষা আয়ত্ত করেছেন , তারা কি পাশ্চাত্যের দেশগুলোর ভাষাকে অত্যন্ত সহজ মনে করেন ? এ প্রশ্নের উত্তরে রাষ্ট্রদূত তোং বলেন , কোনো দেশের ভাষা আয়ত্ত করা সহজ নয় । প্রতিটি ভাষারই নিজের বৈশিষ্ট্য রয়েছে । চীনে একটি কথা রয়েছে , তা হল যারা এ ভাষা আয়ত্ত করেছেন , তাদের পক্ষে কঠিন নয় , কিন্তু যারা এ ভাষা জানেন না , তারা কঠিন মনে করেন । তার কথা শুনে উপস্থিত সবাই হেসে উঠেন ।
সুইজারল্যান্ডের ফেডারেল চেয়ারম্যান জার্মানী , ইংরেজী ও ফরাসী ভাষায় কাজ করতে পারেন । তিনি বলেন , সুজারল্যান্ডের কিছু মাধ্যমিক স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে চীনা ভাষার কোর্স খোলা হয়েছে , অনেকে চীনা ভাষা শিখতে আগ্রহী । চীনের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে আঞ্চলিক ভাষা বেশি , লিখিত ভাষা একই হলেও মৌখিক ভাষার তফাত্ বেশি । তাই চীনের বিভিন্ন স্থানের নাগরিকরা পরস্পরের কথা বুঝতে পারে না । সুইজারল্যান্ডে ভাষার বহুমুখীতা আমাদের সংস্কৃতির একটি অংশ । আমাদের আরো বেশি ভাষা শেখার প্রচেষ্টা চালাতে হবে। আমি মনে করি , যতবেশি ভাষা জানে , ততই ভালো । এতে আরো বেশি দেশ ও মহলের মানুষের সঙ্গে বিনিময় করা যায় ।
আলোচনা সভাশেষে গ্রন্থাগারের মহাপরিচালক এগেনবার্গ ফেডারেল চেয়ারম্যান ও চীনা রাষ্ট্রদূতকে বই উপহার দিলেন । তিনি বলেন , এ বছরের বিশ্ব বইপড়া দিবসের প্রতিপাদ্য হল: 'আমি আপনাকে একটি বই উপহার দিই'। চিন্তা ভাবনার পর আমি মাননীয় চেয়ারম্যানকে চীনা ভাষা শেখার পাঠ্যবই উপহার দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি । এ বই আপনার পরবর্তী চীন সফরের জন্য সহায়ক হবে । মাননীয় রাষ্ট্রদূত সাহেবকে আমি সুইজারল্যান্ডের পরিচিতি সম্পর্কিত একটি বই উপহার দেবো , এতে চীনা ভাষার ব্যাখ্যা রয়েছে । আমি একটি চীনা প্রবাদ দিয়ে আজকের আলোচনা সভা শেষ করছিঃ বই খুললেই উপকার পাবেন ।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |