Web bengali.cri.cn   
পাকিস্তান ক্রীড়া অঞ্চলে 'হান ভাষা সেতু'নামক চীনা ভাষা প্রতিযোগিতা
  2010-05-28 14:17:46  cri
পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের জাতীয় আধুনিক ভাষা বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলনায়তনটি করতালি আর হর্ষধ্বনির মধ্য দিয়ে ১৪ মে মুখরিত হয় উঠেছিল। "হান ভাষা সেতু" নামক বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের নবম চীনা ভাষা প্রতিযোগিতার পাকিস্তান ক্রীড়া অঞ্চলের চূড়ান্ত বাছাই পর্ব এখানে অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। সেদিন কয়েক দফা প্রতিযোগিতার পর ৮ জন ছাত্রছাত্রী "রাষ্ট্রীয় সীমান্তরেখার মৈত্রীর সেতু" এ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন এবং যার যার নৈপুন্য প্রদর্শন করেছেন।

"হান ভাষার সেতু" শীরোনামে বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের চীনা ভাষার প্রতিযোগিতা হচ্ছে চীনের কু চিয়া হান বানের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ব্যাপকতম আন্তর্জাতিক হান ভাষার প্রতিযোগিতা। ২০০২ সাল থেকে এ প্রতিযোগিতা সাফল্যের সঙ্গে আটবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং এর প্রভাবও দিন দিন সম্প্রসারিত হচ্ছে। ১৪ মে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব হাসান জাভেদ উপস্হিত থেকে প্রতিযোগিতা উপভোগ করেন এবং হান ভাষা শেখার জন্য তরুণ-তরুণীদের অনুপ্রেরণা দেন। গত শতাব্দীর ৮০ দশকের প্রথম দিকে চীনে লেখা পড়া করা জাভেদ সাবলিলভাবেই চীনা ভাষায় কথা বলতে পারেন। তিনি বলেন,

ভাষা একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু। হান ভাষা হচ্ছে বিশ্বের এক-চতুর্থাংশ লোকের মাতৃভাষা। বর্তমানে চীনা ভাষা বিশ্বে খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের প্রায় ৬০ লাখ লোক চীনা ভাষা শিখছেন। চীনা ভাষা শেখা শুধুমাত্র একটি বিদেশী ভাষা শেখা নয়, বরং চীনা সংস্কৃতি সম্পর্কে জানা ও শেখা। পাকিস্তানী তরুণ-তরুণীদের চীনা ভাষা শিখতে হবে। কারণ, পাকিস্তান ও চীনের সম্পর্ক অতি আপন।

পাকিস্তানে চীনের সাংস্কৃতিক কাউন্সিলার ইয়াং লিন হাই রাষ্ট্রদূতের প্রনিতিধিত্ব করে বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের চীনা ভাষার উচ্চ মানের প্রশংসার পাশাপাশি তিনি বলেন, "হান ভাষা সেতু" ইতোমধ্যেই বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের চীনা ভাষা শেখা ও চীনের সংস্কৃতিসহ চীনকে জানার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্লাটফর্ম। তিনি বলেন,

১৩০ কোটি জনগণের ভাষা হিসেবে হান ভাষা হচ্ছে জাতিসংঘের কাজকর্মের একটি অন্যতম ভাষা। এ ভাষা পাঁচ হাজারেরও বেশি বছরের সাংস্কৃতিক ইতিহাসের বাহক। তাই 'হান ভাষার সেতু' নামক চীনা ভাষার প্রতিযোগিতা বিশ্বের জনগণের সঙ্গে চীনা জনগণের সম্পর্ককে আরো কাছাকাছি এনে দিয়েছে, ফলে বিশ্ব আরো ভালোভাবে চীনকে জানতে এবং চীনের বিশ্বকে আরো বেশি জানা সম্ভব হচ্ছে।

সেদিনের চূড়ান্ত বাছাই পর্বে নৈপুন্য প্রদর্শনের জন্য চীনা ভাষার পরীক্ষা ও চীনের বাস্তব জ্ঞান সম্পর্কিত প্রশ্নের তিনটি অংশ ছিল। প্রতিযোগিতায় ২৩ বছর বয়সী সাগির আহমেদ শীর্ষস্হান অধিকার করেন। তিনি পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করে চলতি বছর চীনে অনুষ্ঠেয় বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের চীনা ভাষা প্রতিযোগিতার ফাইনালে অংশ নেবেন। ভবিষ্যত প্রসঙ্গে তিনি একজন দৃঢ় ও নিষ্ঠাবান ছাত্র। তিনি বলেন,

আমি এখন মাস্টারস ডিগ্রির জন্য আবেদন করেছি। আমি আশা করি, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে চীনে মাস্টারস ডিগ্রি কোর্সে পড়তে পারবো। তারপর আমি নিজের দেশে ফিরে সেখানকার কনফুসিনিয়াস ইন্সটিটিউটে বা অন্যান্য স্কুলে শিক্ষক হিসেবে কাজ করবো। আমি চীনা ভাষা প্রচার করতে চাই। কারণ আমাদের নবী হযরত মোহাম্মদ (স:) ১৪০০ বছরেরও বেশি আগে বলেছিলেন যে, 'জ্ঞান অর্জন করতে চাইলে চীনে যাও'। কারণ চীনের সংস্কৃতি অনেক বৈচিত্র্যময়। এখন পর্যন্ত চীন নিজের সংস্কৃতিকে ধারণ করে আসছে। এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ।

সেদিনের বাছাই পর্বে এ পাকিস্তানী তরুণটি অনেক সক্রিয় ছিলেন। তিনি চীনাদের সঙ্গে দেখা হলে উত্সাহব্যঞ্জকভাবে চীনা ভাষায় সালাম দেন। তাঁর মানদন্ড সম্পন্ন চীনা ভাষা শুনে অনেক চীনা সংবাদাতা অবাক হয়েছিলেন। এ তরুণটি হচ্ছেন গত বছর পাকিস্তানের চ্যাম্পিয়ন। তিনিও গত বছরে চীনের ফাইনালের শ্রেষ্ঠ বাকপটুতা পুরস্কার বিজয়ী। তাঁর নাম হাসিব। তিনি নিজের প্রত্যাশার কথা বলেছেন। তিনি বলেন,

বর্তমানে আরো তরুণ পাকিস্তানী বন্ধুরা চীনা ভাষা শিখছে। চীনা ভাষার প্রতি তাদের আগ্রহও দিন দিন বাড়ছে। আমি মনে করি, এটা খুব ভালো। কারণ, ভবিষ্যতে চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে আরো বেশি সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হবে। তাই চীনা ভাষা জানে এমন ধরণের প্রযুক্তিবিদের দরকার হবে। পাকিস্তানী তরুণ-তরুণীরা চীনা ভাষা শিখে সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞতা গ্রহণ করে ভবিষ্যতে এ সব প্রকল্পের জন্য অবদান রাখতে পারবেন।

পাকিস্তানের কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক কো লি শেং আগে পেইচিং ভাষা ও সংস্কৃতি ইউনিভার্সিটিতে কাজ করেছেন। চীনা ভাষা শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে তাঁর বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতা আছে। এবারের প্রতিযোগিতার জন্য তিনি অংশগ্রহণকারীদেরকে প্রায় এক মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। এর লক্ষ্য হলো তাদের চীনা ভাষার মানের উন্নতি করা এবং চীনা সংস্কৃতির প্রতি তাদের জ্ঞান বাড়ানো। কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউটের ভবিষ্যত উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি আস্থাশীল।

আমরা শুধুমাত্র স্কুলে শিক্ষাদান করি না। লাহোর, উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, অর্থাত্ খাইবার পাখতুনখয়া ও পেশাওয়ার বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইসলামাবাদের প্রায় ৫-৬টি মধ্যমিক ও প্রাথমিক স্কুল আমাদের সঙ্গে সহযোগিতার বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে। বর্তমানে আমাদের ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা এক হাজারেরও বেশি । আমার মনে হয়, ভবিষ্যতে উন্নয়ন আরো ভালোভাবেই হবে। (লিলি)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040