|
ডক্টর মালেনা আর্জেন্টিনার সরকারী সালভাদর বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক চীন বিভাগের ডিন । তার বাবা ছিলেন একজন কুটনীতিক । শৈশবে তিনি তাঁর পিতার সঙ্গে চীনে জীবনযাপন ও লেখাপড়া করেছিলেন । তাই চীন সম্পর্কে তার বিশেষ অনুভূতি রয়েছে । তিনি বলেন , ৩০ বছর আগে আমি বাবার সঙ্গে চীনে এসেছি । সেখানে আমি তিন বছর কাটিয়েছি । তখন থেকে আমি চীন সম্পর্কে জানার চেষ্টা শুরু করেছি । তিনি সাংবাদিককে বলেন , ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত আমি চীনে ছিলাম । তখন চীনের অর্থনীতি পশ্চাতপদ ছিল । চলতি বছরের এপ্রিল মাসে তিনি যখন আবার পরিচিত দেশ- চীনে আসার সুযোগ পান , তখন তিনি দেখে অবাক হয়েছেন যে চীনাদের জীবনের আমূল পরিবর্তন হয়েছে । তিনি বলেন , আমি চীনের আমূল পরিবর্তনের জন্য আনন্দ বোধ করি । এ সব পরিবর্তন প্রমাণ করেছে যে চীনের দারিদ্র ও পশ্চাদপদ অবস্থা চিরকালের জন্য বিদায়ী হয়েছে । চীন উন্নয়নের মাধ্যমে জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে পেরেছে ।
মালেনা বলেন , ত্রিশ বছর আগে তিনি পেইচিংয়ের ৫৫ নম্বর মাধ্যমিক স্কুলে পড়েছিলেন । সেই সময় তার সহপাঠীদের আর্থিক অবস্থা খারাপ হলেও প্রাণশক্তিতে ছিল ভরপুর ও বন্ধুত্বপূর্ণ । তাদের সঙ্গে আমি তিন বছরের আনন্দময় শৈশব জীবন যাপন করেছি । তিনি বলেন , প্রথম দিকে আমি চীনা ভাষা বলতে পারতাম না বলে আমি সহপাঠীদের সঙ্গে ভাববিনিময় করতে পারতাম না। তবে তাদের ব্যবহার ছিল খুব ভালো , তারা আমাকে সাহায্য করতে ছিল আগ্রহী । আমার চীনা ভাষার মান উন্নত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের বিনিময় বেড়ে যায়। আমার চীনা সহপাঠীদের সাহায্যে আমি টেবিল –টেনিস শিখেছি । আমি তাদেরকে ফুটবল খেলার নিয়ম ব্যাখ্যা করেছি , আমাদের সম্পর্ক ছিল খুব মধুর ।
মালেনা বলেন , চীনে তিন বছরের জীবনে চীনাদের বুদ্ধি ও সরলতা আমাকে মুগ্ধ করেছে । তাই আমি আর্জেন্টিনা ফিরে যাওয়ার পরেও চীন সম্পর্কে আরো বেশি জানার সিদ্ধান্ত নিয়েছি । আমি মনে করি , বেশির ভাগ আর্জেন্টিনার নাগরিক চীন সম্পর্কে কম জানেন । বিশেষ করে চীনের রাজনীতি , অর্থনীতি ও সমাজের উন্নয়ন সম্পর্কে জানেন না । অনেকে পাশ্চাত্য দেশের তথ্য মাধ্যম থেকে চীন সম্পর্কিত তথ্য পান । এ সব তথ্য চীনের বাস্তব অবস্থার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় । আর্জেন্টিনার নাগরিক যাতে চীনের বাস্তব অবস্থা জানতে পারেন , সে জন্য মালেনা চীন সংক্রান্ত গবেষণাকে তাঁর আজীবনের কাজ হিসেবে গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন । প্রায় ত্রিশ বছরের প্রচেষ্টায় তিনি এখন আর্জেন্টিনার বিশ্ববিদ্যালয়ে চীন সম্পর্কিত গবেষণা বিভাগের দায়িত্বশীল ব্যক্তি হিসেবে কাজ করছেন ।
মালেনা চীনের উন্নয়ন ও নীতিমালা নিয়ে গবেষণা করেন । তিনি চীনের গ্রামাঞ্চলের বাধ্যতামূলক শিক্ষা ব্যবস্থা এবং পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে চীনের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন । বিশ্ব আর্থিক সংকট মোকাবিলা প্রসঙ্গে মালেনা বলেন , আর্থিক সংকট মোকাবিলার জন্য চীন সরকার অর্থবরাদ্দ বাড়ানোসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা নিয়েছে । ব্যক্তিগত ও বিদেশী বিনিয়োগের হ্রাস থেকে সৃষ্ট নেতিবাচক প্রভাব কমানোর জন্য চীন সরকার সরকারী বরাদ্দ অনেক বাড়িয়েছে । এর পাশাপাশি বিদেশের চাহিদার ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর জন্য চীন সরকার অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ানোর ব্যবস্থা নিয়েছে । আর্থিক সংকট মোকাবিলার এ সব ব্যবস্থাগুলো কার্যকর হয়েছে ।
২০০৪ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও আর্জেন্টিনা সফর করেছেন । সেই সফরের সময় থেকেই আর্জেন্টিনায় চীনা ভাষা ও সংস্কৃতি শেখার হিড়িক পড়েছে । চীন সম্পর্কে আলোচনার সময় আর্জেন্টিনার নাগরিকদের মুখে চীনা কুংফু , নারীদের পোশাক ছি ফাও ও চীনা রেস্তোঁরা ছাড়া চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথাও প্রায়ই শোনা যায় । তিনি বলেন , আর্জেন্টিনার যুব সমাজের চীন সম্পর্কে জানার আগ্রহ খুব বেশি । তারা জানতে চায় , কীভাবে চীনের জি ডি পি ১৯৭৮ সালে সংস্কার নীতি কার্যকর হওয়ার ১৫ বছরে দ্বিগুন বেড়েছে । আবার কীভাবে পরবর্তী দশ বছরের মধ্যে আরো দ্বিগুন বেড়েছে । চীনের জনসংখ্যা বেশি , অর্থনীতির ভিত্তি দুর্বল , চীন সরকার কীভাবে ১৩০ কোটি মানুষের খাওয়া ও পরা সমস্যার সমাধান করেছে । মালেনা বলেন , ত্রিশ বছর আগে আমি চীনে তিন বছর ছিলাম , সেখানে আমি চীনের ভাষা ও সংস্কৃতি শিখেছি। আমি বিশ্বাস করি , পরবর্তীকালে চীনের উন্নয়ন আরো দ্রুত হবে , চীনের জনগণ আরো সুখী ও সমৃদ্ধ হবেন ।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |