|
এবারের সংস্কৃতি মন্ত্রীদের বৈঠকের আলোচ্যবিষয় ছিলো সাংস্কৃতিক শিল্পের সহযোগিতা এবং শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার সদস্য দেশগুলোর বিনিময় ও সহযোগিতার নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করা। শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার বিভিন্ন সদস্য দেশ আশা করে, এবারের বৈঠক ভবিষ্যত সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রের সহযোগিতা উন্নয়নের নতুন কৌশল ও দিক নির্ধারণ করতে পারবে।
বৈঠকে অংশগ্রহণকারী তাজিকিস্তানের সংস্কৃতি মন্ত্রী মিরজোশোহরুহ আসরোরি মনে করেন, ভবিষ্যতে সাংস্কৃতিক শিল্প শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার সদস্য দেশগুলোর সহযোগিতার গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হবে। এ লক্ষে বিভিন্ন দেশের যৌথ প্রচেষ্টা চালানো উচিত্। তিনি বলেন,
প্রথমত: সাংস্কৃতিক শিল্পের উন্নয়ন আমাদের বিভিন্ন দেশের সহযোগিতার ক্ষেত্রে নতুন প্লাটফর্ম এনে দিয়েছে। তা বিভিন্ন দেশের সম্পর্কের উন্নয়নকে আরো উচ্চ মানে উন্নিত করবে। কয়েকটি দেশের মন্ত্রীরা তাদের বক্তব্যে বলেন, যার যার দেশের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক মূল্যবোধকে মূল্যায়ন করা উচিত্, যাতে সংস্কৃতির বৈচিত্র্যময়তাকে বাঁচিয়ে রাখা যায়। এ প্রসঙ্গে আমি মনে করি, সাংস্কৃতিক শিল্পের উন্নয়নের পাশাপাশি যার যার দেশের ঐতিহ্যকেও মূল্যায়ন করা উচিত্। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয়ত্ব: বিভিন্ন দেশের সাংস্কৃতিক শিল্পের উন্নয়নের মানও ভিন্ন ভিন্ন। এটা খুবই স্বাভাবিক। আমাদেরকে অন্যান্য দেশের কাছ থেকে শিখতে হবে এবং তাদের অভিজ্ঞতাকে গ্রহণ করতে হবে।
শাংহাই সহযোগিতা সংস্থা ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর সদস্য দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে চীন, রাশিয়া, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান ও উজবেকিস্তান। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ফলপ্রসূ সাংস্কৃতিক বিনিময় হয়েছে । ২০০৭ সালের আগষ্ট মাসে শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার বিভিন্ন সদস্য দেশ "সংস্থার সদস্য দেশগুলোর আন্তঃসরকারের সাংস্কৃতিক সহযোগিতা চুক্তি" স্বাক্ষর করেছে। তা এ সংস্থার সাংস্কৃতিক সহযোগিতার আইনগত ভিত্তি স্হাপন করেছে। ২০০৯ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সদস্য দেশের সাংস্কৃতিক সহযোগিতার একটি পরিকল্পনা ২০০৮ সালের জুন মাসে গৃহীত হয়েছিল।
চীনের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক যোগাযোগ ব্যুরোর ইউরোপ ও এশিয়া বিষয়ক অফিসের মহাপরিচালক ইয়ান চিয়ান উ বলেন, শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার সদস্য দেশগুলোর বহুপক্ষীয় বিনিময় কার্যক্রম ধীরে ধীরে নিয়মিত হয়ে উঠছে। তিনি বলেন,
প্রতি বছর শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার উদ্যোগে প্রচুর সাংস্কৃতিক কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ২০০৮ সাল থেকে চীনের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ২০০৮ সালে পেইচিং অলিম্পিক গেমস উপলক্ষে চীনের আমন্ত্রণে জাতীয় থিয়েটারে শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার সদস্য দেশগুলোর আয়োজিত কন্সার্ট। এ কন্সার্ট খুবই জাঁকজমকপূর্ণ ছিলো। তা ছাড়া, ২০০৯ সালে চীনের আমন্ত্রণে এ সংস্থার সদস্য দেশগুলোর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা চীন সফর করেন এবং পেইচিং, শাংহাই ও সু চৌসহ বিভিন্ন শহরের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, সাংস্কৃতিক বাজার ও সাংস্কৃতিক শিল্পের উন্নয়নের দিকগুলো পরিদর্শন করেন। ২০০৯ সালের অক্টোবর মাসে চীনের উদ্যোগে এ সংস্থার সদস্য দেশগুলো চীনের নান নিং শহরে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক লোকসঙ্গীত শিল্পী দিবসে অংশ নিয়েছে। রাশিয়া, কাজাখস্তান ও তাজিকস্তানের কয়েকজন লোকসঙ্গীত শিল্পী এ দিবসে অংশ নিয়েছেন। তাঁদের পরিবেশনা সবাইকে মুগ্ধ করেছে এবং দারুণ প্রশংসা পেয়েছে।
বিভিন্ন সদস্য দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের মান ভিন্ন বলেই বিভিন্ন দেশের সাংস্কৃতিক শিল্পের অবস্হানও ভিন্ন। পরস্পরের কাছ থেকে শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা গ্রহণের ব্যাপারে মন্ত্রীদের মধ্যে মতৈক্য হয়েছে। উজবেকিস্তানের সংস্কৃতিক ও ক্রীড়া বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রথম উপমন্ত্রী বাহতিয়ার সাইফুলায়েভ বলেন, তাদের দেশে সাংস্কৃতিক শিল্প অনুধাবন করতে পারে এমন ধরণের বিশেষজ্ঞের অভাব রয়েছে। তিনি বলেন,
সাংস্কৃতিক শিল্পের মধ্যে রয়েছে সংস্কৃতি ও শিল্পসহ নানা ধরণের ক্ষেত্র। শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার জন্য সাংস্কৃতিক শিল্পের সহযোগিতা এবারই প্রথম শুরু হলো। প্রথমে আমাদের এ ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের প্রশিক্ষণ দেয়া উচিত্।
আসলে চীন ও রাশিয়া ইতোমধ্যেই বাস্তব সহযোগিতার প্রকল্পের কাজ শুরু করে দিয়েছে। প্রতি বছর অনেক তরুণ শিল্পী ও বিখ্যাত শিল্পীদল সফরের জন্য পরস্পরের দেশে যাতায়াত করছে। গত বছর চীনের উদ্যোগে 'চীনাদের রুশ ভাষায় গান গাওয়া' অনুষ্ঠান রুশ ভাষার অনুরাগীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। চীনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও ও রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ভ্লাদিমির পুতিন বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। চলতি বছর রাশিয়ায় 'হান ভাষা বর্ষ' অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে, যাতে চীনের সংস্কৃতির প্রতি রুশদের জানাশোনাকে আরো গভীর করা যায়।
রাশিয়ার সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী আলেক্সান্ডার গোলুতভা সংবাদদাতাকে বলেন, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে রাশিয়া ও চীনের সহযোগিতা ইতিবাচক এবং দু'দেশের মধ্যে অনেক সহযোগিতার প্রকল্প রয়েছে। তিনি বলেন,
আমাদের দু'দেশের বিশেষজ্ঞদের বিনিময় শুরু হয়েছে এবং এ ধরণের বিনিময় আরো উচ্চ পর্যায়ের দিকে এগুচ্ছে। দ্বিতীয়ত: রাশিয়া ও চীনের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক বিভাগের সরাসরি যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। তৃতীয়ত: সাংস্কৃতিক শিল্পের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে আমাদের সহযোগিতার প্রকল্প রয়েছে, যেমন আমাদের সহযোগিতায় চলচ্চিত্র নির্মাণ করা।
বর্তমানে সাংস্কৃতিক শিল্পকে সহায়তার জন্য চীন সরকার অনেক নীতি প্রণয়ন করেছে। চীনের সাংস্কৃতিক মন্ত্রী ছাই উ বলেন, চীনের সাংস্কৃতিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর পুঁজি বিনিয়োগের চ্যানেল বহুবিধ এবং বেসরকারী পুঁজি বিনিয়োগ সক্রিয় রয়েছে। তা শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার অন্যান্য সদস্য দেশের সঙ্গে চীনের সহযোগিতা গভীর করার জন্য অনুকূল হবে। তিনি বলেন, চলতি বছর শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার সদস্য দেশগুলো ফোরাম আয়োজনের মাধ্যমে প্রদর্শনী, চলচ্চিত্র ও কার্টুনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সহযোগিতা চালাবে। তিনি বলেন,
শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার সাংস্কৃতিক শিল্পের প্রথম ফোরাম চলতি বছরের শেষার্ধে চীনে অনুষ্ঠিত হবে। ফোরামের কাঠামোয় বিভিন্ন দেশের সরকার, বেসরকারী সাংস্কৃতিক সংস্থা ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান যার যার অভিজ্ঞতা বিনিময় করবে এবং সহযোগিতার একটি নতুন প্লাটফর্ম তৈরি করবে। (লিলি)
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |