Web bengali.cri.cn   
চীনে পোল্যান্ডের একজন বৃদ্ধার ৫০ বছরের অনুভূতি
  2010-04-23 17:16:35  cri
কামোস রেনি ৭৮ বছর বয়সী একজন পোল্যান্ডের বৃদ্ধা। ১৯৫৫ সালে তিনি প্রথমবারের মত চীন আসেন। তখন থেকেই চীন সম্পকর্কে তার বিশেষ অনুভূতি সৃষ্টি হয়। কখনই তা বিছিন্ন হয় নি। যদিও তার বহু বছর চীনে আসার আর সুযোগ হয় নি। তবে চীনের প্রতি তার ভালোবাসা কখনই কমে যায় নি। ৫৫ বছর ধরে তিনি চীনের শিল্পকর্ম সংগ্রহ করেন এবং চীনের সংবাদের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তার বন্ধুদের চোখে তিনি চীন সম্পর্কে অনেক অভিজ্ঞ।

যদিও গানের সুর স্পষ্টভাবে মনে নেই, তবে চীনে শেখা "চীনের মুক্তি ফৌজের গান" গাইতে পারেন এবং কিছু কিছু সহজ চীনা ভাষা বলতে পারেন। ১৯৫৫ সালের মে মাসে চীনকে সহায়তার জন্য পোল্যান্ডের বিমান প্রশিক্ষণ দলের একজন সদস্য হিসেবে ২৪ বছর বয়সী রেনি চীনের চাং চিয়া খৌ'র কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা ক্লাবের ক্রীড়া স্কুলে এসে চীনের প্রথম ব্যাচের বিমান সেনার প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। পোল্যান্ডের প্রশিক্ষণ দলের অন্যান্য সদস্যের সঙ্গে তিনি বেশ কয়েকবার চীনের নেতা ফাং দ্য হুয়াইয়ের সাথে দেখা করেছেন। ফাং দ্য হুয়াই'র সঙ্গে সাক্ষাতের কথা রেনি কখনই ভুলে যান নি এবং তাকে এখনও তিনি অনেক সম্মান করেন।

১৯৫৬ সালের জানুয়ারী মাসে প্রশিক্ষণ শেষে তিনি চীন থেকে চলে যান। চীনা থাকা প্রায় এক বছর সময়ের মধ্যেই একটি চীনা ছাত্রের সঙ্গে তার গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ঠিক এ কারণেই চীনের প্রতি তার এত বেশি ভালোবেসা। তিনি বলেন:

প্রশিক্ষণের শুরুতেই অনেক কষ্ট হতো। এর প্রধান কারণ ছিল ভাষার বাধা। আমরা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেছি। সর্বেশষ সমাধান উপায় ছিল, চীনা ছাত্রদের প্রতিদিন পোল্যান্ডের ভাষার দশটি শব্দ করে শিখে নেয়া। পোল্যান্ডের শিক্ষকের চীনা ভাষা শেখা। চীনা ছাত্ররা অনেক বুদ্ধিমান, শেখার দৃঢ় আগ্রহ আছে। অল্প সময়ের মধ্যে তারা অনেক ভালো ফলাফল অর্জন এবং খুব তাড়াতাড়ি বিমান চালিয়ে আকাশে কসরত করতে পারেন।

পোল্যান্ড ফিরে আসার পরও রেনি চীনের ওপর দৃষ্টি রাখতে থাকে। রেডিও, টি ভি, পত্রিকা ও বইসহ বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে তিনি চীনকে জানতে চেষ্টা করে যান। চীনে ঘটা বড় ও ছোট সব ঘটনা সাংবাদিকের চেয়ে তিনি ভালো জানেন। তিনিও চীন আন্তর্জাতিক বেতাতের পোল্যান্ড ভাষা অনুষ্ঠানের নিয়মিত শ্রোতা। তিনি চীনের সমাজ ও সংস্কৃতি সম্পর্কিত অনুষ্ঠান অনেক পছন্দ করেন। সি আর আই লিসননার্স ক্লাবের প্রবীন সদস্য হিসেবে তিনি কয়েকবার সি আর আইয়ের জ্ঞান যাচাই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন। তিনি ২০০৫ সালের "চীনের মূল্যবান দ্বীপ-তাইওয়ান" শীর্ষক জ্ঞান প্রতিযোগিতার প্রথম পুরস্কার পেয়েছেন। রেনির স্ত্রী চীনের প্রতি নিজের স্বামীর ভালোবাসা সম্পর্কে বলেন:

আমার স্বামী চীন আন্তর্জাতিক বেতারের নিয়মিত শ্রোতা। তিনি বহুবার সি আর আইয়ের জ্ঞান যাচাই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন। চীন সম্পর্কিত অনেক বই কিনেছেন এবং তিনি এসব বইয়ের মাধ্যমে জ্ঞান যাচাই প্রতিযোগিতার উত্তর খুঁজে বের করতে পারেন।

তার প্রভাবে স্ত্রীও আস্তে আস্তে চীনকে জানতে শুরু করেন এবং এ দেশকে ভালোবেসে ফেলেন। যখন তাদের বিয়ে হয় নি, তখন রেনি চীন থেকে কেনা একটি বেগুনি রংয়ের দামি পাথরের আংটি কেনেন, আর এ রিং পরেই তাদের বিয়ের এনগেজমেন্ট হয়। রেনি চীন থেকে চীনা নারীদের ঐতিহ্যিক পোষাক ছি পাও ও চন্দন কাঠের পাখা কিনেছেন। দৃষ্টি নন্দন চীনের এ বৈশিষ্টময় ছি পাও রেনির স্ত্রীর বন্ধুদের প্রশংসা পেয়েছে। এখন যদিও এখন চন্দন কাঠের পাখাঁয় ততটা সুগন্দ নেই, তবে রেনির স্ত্রী অনেক যত্নে তা রেখে দিয়েছেন। তার জন্য চীন থেকে আসা এসব কিছুই মূল্যবান উপহার, এসব উপহার হল তার ও তার স্ত্রীর তরুণ সময় ও সুন্দর ভালোবাসার প্রমাণ। তিনি বলেন:

রেনির চীনে যাওয়ার আগে আমি চীন সম্পর্কে খুব কম জানতাম। মাঝে মাঝে আমার বাবা মা'র কাছ থেকে আমি জানতে পেরেছি যে এ দেশ খুব রহস্যময় একটি দেশ। যেন রূপকথার কাহিনীর মত। চীন থেকে ফিরে আসার পর রেনি'র প্রভাবে আমিও চীন সম্পর্কে জানেত শুরু করি। এখন চীন ইতোমধ্যেই আমাদের একটি অবিচ্ছেদ অঙ্গে পরিণত হয়েছে।

হ্যাঁ, সত্যি, রেনির বাসার যে কোন স্হানেই চীনের বৈশিষ্ট অনুভব করা যায়। বইয়ের তাকে দেখা যায় চীন সম্পর্কিত অনেক বই ও ঘরে দেখা যায় খুব বড় একটি চীনের ম্যাপ। ঘরের চার দিকে চীনের ঐতিহ্যিক পদ্ধতিতে আঁকা ছবি আছে। চীনের সংস্কার ও উন্নয়ন সম্পর্কে রেনি অনেক জানেন। যদিও তিনি অনেক দূরের পোল্যান্ডে থাকেন, তবে চীনের যে কোন বিষয় তিনি জানতে পারেন।

রেনি বলেন: সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের বিরাট অগ্রগতি হয়েছে। তা চীনের সাবেক নেতা তাং সিয়াও পিংয়ের উত্থাপতি "উন্মুক্ত ও সংস্কার" নীতির সঙ্গে জড়িত। চীনের উন্নয়নের উজ্জ্বল সাফল্য অর্জিত হয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে চীনের দ্রুত গতির উন্নয়ন বজায় রয়েছে। চীনের স্বাধীন উন্নয়নের পদ্ধতি অনেকে দেশের জন্যই শিক্ষণীয়। চীনের মত এমন একটি বড় দেশের উন্নয়ন বিশ্বের উন্নয়নের জন্য তাত্পর্যসম্পন্ন।

রেনির বাসায় ঢুকেই দেখা যায় খুব সুন্দর চীনের হাং চৌ শহরের বৈশিষ্টময় হাতের কাজ। তিনি বলেন, তা হল যখন তিনি চীন থেকে চলে আসেন, তখন একজন ছাত্র তাকে এটি উপহার হিসেবে দিয়েছিল। ৫৫ বছর ধরে এ হাতের কাজ রেনির বাসায় রয়েছে। চীনের প্রতি এবং চীনে তার বন্ধুদের প্রতি তার ভালোবাসাও কমে যায় নি। এখনও তিনি অনেক ছাত্রের নাম বলতে পারেন। তিনি আশা করেন অর্ধ শতাব্দী ধরে না দেখা পুরোনো বন্ধুর সঙ্গে আবার দেখার সুযোগ পাবেন। তিনি বলেন :

আমার কাছে এখন এসব ছাত্রের তখনকার যোগাযোগের ঠিকানা আছে। তবে ৫০ বছরেরও বেশি পার হয়ে গেছে, এখন আমরা সবাই বৃদ্ধ হয়েছি। এখন তাদের সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পারি না। আমার চীনা ছাত্ররা সবাই খুব ভালো মানুষ। আমি তাদের খোঁজ খবর পেতে চাই, তাদের সঙ্গে আবার দেখা করতে চাই।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040