Web bengali.cri.cn   
ব্রিটিশ উপস্থাপক ও চীনে তার নতুন রেডিও অনুষ্ঠান
  2010-04-16 17:44:34  cri

 ব্রিটিশ উপস্থাপক সুসান ওসম্যান তিনি আগে ব্রিটেনের বি বি সি'তে অনেক বছর ধরে কাজ করেছেন। এখন তিনি চীন আন্তর্জাতিক বেতারের একটি নতুন সংবাদ অনুষ্ঠান—দি নিউস আওয়ারের উপস্থাপক হয়েছেন।

সুসানের ৩০ বছরেরও বেশি কর্মের অভিজ্ঞতা আছে। তিনি একজন ইংরেজী ভাষার শিক্ষক ছিলেন। পরে তিনি বি বি সি'তে একজন সংবাদ অনুষ্ঠানের উপস্থাপক হিসেবে যোগদেন। এ ছাড়া তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানেও কাজ করেছেন। রেডিও সংবাদ ক্ষেত্রে তার যথেষ্ট অভিজ্ঞতার পাশাপাশি তার আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গীও আছে। সুসান নিজের কর্মকে অনেক ভালোবাসেন। তবে বয়স বেশি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দর্শকের দৃষ্টিও তার থেকে অনেক দূরে চলে যাচ্ছে। বি বি সি তার সঙ্গে আর চুক্তি স্বাক্ষর করতে চায় না। তিনি বলেন :  

সংবাদের প্রতি আমার প্রবল অনুরাগ আছে। আমি আমার চাকরিকে অনেক ভালোবাসি। তবে যখন আপনার বয়স বাড়বে, লোকজন আপনার মুখের ভাঁজ দেখতে পাবে, আপনার ফিগার তখন ততটা সুন্দর নয়, ফলে তরুণকালের চেয়ে আপনার কর্মের সুযোগও কমে যাবে প্রতিদিন। নিজের সামর্থ্য প্রমাণ করা আরো কঠিন হয়ে পড়বে। আমার নিজের একটি কোম্পানী আছে, বি বি সি'র সঙ্গে আমার শুধু কর্ম সংক্রান্ত চুক্তি রয়েছে, বয়সের কারণে যখন আমি দর্শকদের আকর্ষণ করতে সক্ষম নই, ঠিক তখন বি বি সি আমার সঙ্গে তার চুক্তি বাতিল করে দিয়েছে।

সুসান বলেন, ব্রিটেনে অভিজ্ঞ কর্মীরা খুব বেশি বেতন পায়। অভিজ্ঞতা ও জনপ্রিয়তা খুব মূল্যবান। ৩০ বছরের কর্মের অভিজ্ঞতার কারণে সুসানের বেতন এখন অনেক বেশি। কিন্তু বি বি সি'র মত বিশ্ব বিখ্যাত তথ্য মাধ্যমের জন্য খুব সহজেই একজন তরুণ কর্মী খুঁজে নিয়ে সুসানের জায়গায় কাজ করানো যায় তবে তরুণী কর্মীটির বেতন হয়তো হবে সুসানের বেতনের তিন ভাগের এক ভাগ। তাই ব্রিটেনে মহিলাদের কাজ করা খুব কঠিন। এর একটি কারণ হল বয়স, আরেকটি কারণ হল লিঙ্গ। তিনি বলেন:

গত ৩০ বছরে তথ্য মাধ্যমে নারীদের মর্যাদার অনেক উন্নয়ন হয়েছে। তবে মহিলা, বিশেষ করে বয়স্ক মহিলাদের জন্য বৈষম্য এখনো রয়েই গেছে।

ব্রিটেনে নিজের চাকরির সুযোগ খুঁজে বের করা কঠিন। সুসানও দ্বিধা করেছিলেন। তবে তার ছেলের প্রস্তাব সুসানকে সাহায্য করেছে। তিনি বলেন:

আমার ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছে। গত বছর গ্রীষ্মকালে সে সাংহাইয়ে ছিল। সে আমাকে বললো, তুমি কেন চীনে আসো না?

ব্রিটেনে সুসানের একটি তথ্য মাধ্যম কন্সুলেট কোম্পানী আছে, এ কোম্পানী লোকজনকে প্রশিক্ষণ সেবা দেয়। তাদেরকে কীভাবে তথ্য মাধ্যমে কাজ করতে হয় সে সম্পর্কে এবং ভাষা ব্যবহারের পদ্ধতি সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। যাতে রেডিওতে কাজ করার সামর্থ্য তাদের বেড়ে যায়। তিনি বলেন, চীনে এসে নিজের পুরোনো কাজ করতে পেরে তিনি খুব ভাগ্যবান।

গত বছর অক্টোবরে সুসান সি আর আইয়ের ওয়েবসাইটে জানতে পেরেছে যে সি আর আইয়ের ইংরেজী বিভাগে কর্মের সুযোগ আছে। তিনি সি আর আইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং নিজের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগত তথ্য, ছবি ও তার উপস্থাপনার অভিজ্ঞতা সি আর আইতে পাঠিয়ে দেন।

তিনি বলেন :

ইমেলে আমাদের যোগাযোগ হয়। পরে সি আর আই আমাকে জিজ্ঞেস করে, আপনার বয়স কত? আমি ইমেলে জবাব দিয়ে বলি, আমি খুব অভিজ্ঞ, ব্রিটেনের মত যদি আপনি আমার বয়স জিজ্ঞেস করেন এবং আমি আপনাকে সত্যি কথা বলি, তাহলে হয়তো আপনি ফোন রেখে দেবেন এবং আমার সঙ্গে আর যোগাযোগ করবেন না।

সুসান মনে করছিলেন যে চীনের তথ্য মাধ্যমও বয়স্ক মহিলাদের প্রতি বৈষম্যের মনোভাব পোষণ করে। তবে পরে সি আর আই ইংরেজী বিভাগের কর্মীর কথা শুনে তার সব উদ্বেগ দূর হয়ে যায়। তিনি বলেন:

সে কর্মীটি বলেছিলেন, চীনে আমরা অভিজ্ঞ কর্মীদের সম্মান করি। এমন কর্মী গোটা কর্মী দলের অভিজ্ঞতা বাড়াবে। তাই আমাদের মতে, বয়স নিয়ে সমস্যা হবে না।

সি আর আই ও সুসান তাদের কাজের সম্ভাবনা নিয়ে মত বিনিময় করেছেন। অনুষ্ঠান তৈরি, সুসানের কাজের বিস্তারিত বিষয় এবং কীভাবে সি আর আই'র তরুণ কর্মীদের সাহায্য করা যায়সহ বিভিন্ন বিষয়ে দু'পক্ষ একমত হলে পর দু'পক্ষের মধ্যে কর্ম চুক্তি স্বাক্ষর হয়। শেষ পর্যন্ত সুসান চীনে তার নতুন কাজ শুরু করতে পেরেছে। সি আর আই তার জন্য বিশেষ একটি নতুন অনুষ্ঠান শুরু করেছে, এর তার নাম হল 'পেইচিং আওয়ার' (beijing hour), সুসানের জন্য এটি একটি খুব ভালো খবর। তিনি বলেন:

যদিও আমি খুব ভোরে বিছানা থেকে উঠতে চাই না, তবে এখনকার এ অনুষ্ঠানকে আমি অনেক ভালোবাসি। প্রতিদিন আমার রাত দু'টায় উঠতে হয় এবং ভোর চারটায় কাজ শুরু করার জন্য প্রস্তুতি নিতে হয়। আমি মনোযোগ দিয়ে শ্রেষ্ঠমানের একটি অনুষ্ঠান তৈরি করতে চাই। কারণ "পেইচিং আওয়ার" অনুষ্ঠান সত্যি আমার কাজে উত্সাহ সৃস্টি করেছে। এ অনুষ্ঠান তৈরি করতে পেরে আমি নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করি। আর একটি কথা হল আমার প্রতি সি আর আই'র বিশ্বাস। তাই পেইচিংয়ে আমি কীভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছি তা আমার কাছে কিছুই না। আমার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এ অনুষ্ঠান ভালো কি না, আর শ্রোতা বন্ধুদের এ অনুষ্ঠান পছন্দ কি না আর ভালোভাবে আমার সহকর্মীদের সঙ্গে সহযোগিতা করছি কি না।

পেইচিং আওয়ার হল একটি সরাসরি প্রচারিত সংবাদ অনুষ্ঠান। ২৫শে জানুয়ারী থেকে প্রতিদিন পেইচিং সময় সকাল ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত প্রচারিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রতিদিন থাকে গুরুত্বপূর্ণ খবর, সংবাদ বিশ্লেষণ, আর্থিক খবর, ক্রীড়া খবর ও পত্রিকার প্রকাশিত খবর। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে দেশ বিদেশের বিশ্লেষকরা প্রধান প্রধান খবরের পর্যালোচনা করেন। সুসান বলেন , তিনি আশা করেন তার বহু বছরের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সি আর আই'র এ অনুষ্ঠান তৈরি করবেন।

তিনি বলেন:

আমার মনে হয়, আমি যে জিনিস সি আর আইকে দিতে পারি, তা হল সরাসরি সংবাদ প্রচারের চিন্তাধারা। কারণ পেইচিং আওয়ার হল বিশ্বজুড়ে সরাসরি প্রচারিত একটি অনুষ্ঠান। চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে একই সময়ে এ অনুষ্ঠান শোনা যায়। আমরা আশা করি ভবিষ্যতে আমাদের অনুষ্ঠানে স্টুডিওতে আসা অতিথিরা সংবাদের পাশা পাশি তা বিশ্লেষণ করতে পারবেন। যেমন সাংহাই বিশ্বমেলা ঘনিয়ে আসছে, আমরা আশা করি সাংহাই থেকে পাঠানো সর্বশেষ খবর আমরা প্রচার করতে পারবো।

সুসান বলেন, চীনে কাজ করা তার জন্য খুব ভালো একটি সুযোগও বটে। তিনি নিজের চোখে এ দেশ এবং এ দেশের উন্নয়ন ও পরিবর্তন দেখতে পারবেন। তিনি চীনাদের দৃষ্টিভঙ্গীতে এ বিশ্বকে দেখা, চীনের নিজের ভাবমূর্তি ও উন্নয়নের দিক দেখার চেষ্টা করবেন। তাই সুসান বলেন, এ সব ক্ষেত্রে তাকে চীনা কর্মীদের কাছ থেকে শিখতে হবে। তিনি বলেন:  

ব্যক্তিগত দিক থেকে, মানুষ কখনই লেখাপড়া বন্ধ করতে পারে না। যদিও আমার অনেক অভিজ্ঞতা আছে, তবে এখানে আরো অনেক বুদ্ধিমান সহকর্মী আছে, চীনাদের জীবনযাপনের পদ্ধতি ও সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা আমার চেয়ে আরো বেশি অভিজ্ঞ। তাদের কাছ থেকে শিখলে আমি এ অনুষ্ঠানকে আরো ভালোভাবে তৈরি করতে পারবো।

সুসান এখন কাজে অনেক ব্যস্ত। সময় পেলে তিনি নিজের জীবন সমন্বয়ের ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি বই পড়তে, লিখতে এবং শরির চর্চা করতে পছন্দ করেন। তিনি বলেন, নিজের যত্ন নেয়া এবং সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা হল সব কাজের ভিত্তি। বর্তমানে সুসান সময় পেলেই চীনা ভাষা শিখছেন। যাতে আরো ভালোভাবে চীনকে জানতে পারেন। ২০১০ সালের জন্য সুসান নিজের লক্ষ্যও নির্ধারণ করেছেন। তিনি বলেন:  

২০১০ সালে প্রথমেই আমি চীনা ভাষা শিখবো। সি আর আই ইংরেজী বিভাগের একজন শ্রেষ্ঠ কর্মী হবো । এছাড়া, চীন সম্পর্কে আমার অনেক জানতে হবে। তাই সুযোগ পেলে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে এ দেশের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখবো ও রীতিনীতি সম্পর্কে জানবো।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040