|
লেমান হ্রদের দক্ষিণ –পশ্চিম দিকে অবস্থিত জেনিভা সুইজারল্যান্ডের তৃতীয় বড় শহর । প্রাচীনকাল থেকেই এ শহর পশ্চিম ইউরোপের এক গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ কেন্দ্র । অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থার সদর দপ্তর এ শহরে রয়েছে । তাই আন্তর্জাতিক মঞ্চে জেনিভা শহরের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে । গাই অলিভার সিগান্ড জেনিভার পার্লামেন্টের চেয়ারম্যান ও মেয়র ছিলেন । তিনি আমাদের সাংবাদিককে বলেন , দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর জেনিভার মোটর গাড়ি তৈরী শিল্পের দ্রুত প্রসার হয় । বিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে জেনিভা শহরে মোটর গাড়ির সংখ্যা এত বেশি ছিল যে রাস্তায় প্রায়ই যানজট দেখা যেতো । তাই জেনিভা পৌর সরকার পাবলিক যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নয়নের চেষ্টা করেছে । পাবলিক বাস ছাড়া জেনিভার ছোট বড় রাস্তায় ট্রাম ও ট্রলি বাসের ব্যবস্থা করেছে ।
পাবলিক যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নয়নের পাশাপাশি নাগরিকদের আবাসিক পরিবেশ রক্ষার জন্য জেনিভা পৌর সরকার শহরের বড় বড় রাস্তায় মোটর গাড়ির গতি ৩০ কিলোমিটারের নীচে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং গাড়ি পাকিং সমস্যা সমাধানের জন্য অনেক ভূগর্ভ গাড়ি পাকিং স্থান খুলেছে ।
এ সব ব্যবস্থা যাতায়াত অবস্থা ও বায়ুর গুণগত মান উন্নত করা এবং শব্দ দূষণ কমানোর ক্ষেত্রে ভালো ভূমিকা রেখেছে । স্থানীয় নাগরিকরা এ জন্য সন্তুষ্ট। জেনিভায় কর্মরত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও টেকসই উন্নয়ন কেন্দ্রের চীনা বিভাগের প্রধান ছেন সুয়াই হুয়া বলেন, আমি জেনিভার যাতায়াত ব্যবস্থা পছন্দ করি । চীনের ছোট ও মাঝারী শহরগুলো জেনিভার অভিজ্ঞতা শিখতে পারে । জেনিভায় পাবলিক বাসের জন্য আলাদা পথের ব্যবস্থা করা হয়েছে , শুধু পাবলিক বাস ও টেক্সি এ পথে যেতে পারে । এতে পাবলিক বাসের গতি নিশ্চিত হয়েছে । তা ছড়া জেনিভায় রাস্তাঘাটে পথ যাত্রীরা যথেষ্ট শ্রদ্ধা পান । জেনিভায় পথিকদের পা হলুদ রংয়ের এক লাইনের ভিতর থাকতে দেখে যে কোনো গাড়িকে থামতে হবে , গাড়ির ড্রাইভার পথিককে অপেক্ষা করতে দেখে সরাসরি গাড়ি থামবে । এ অবস্থায় দুর্ঘটনা ঘটলে ড্রাইভারকে সব দায়িত্ব নিতে হবে ।
জেনিভা শহরে নাগরিকদের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অভিজ্ঞতা হল পানি সম্পদের সদ্ব্যবহার । এ প্রসঙ্গে সিকান্ড বলেন , সুইজারল্যান্ডের অধিবাসীরা অনেক আগেই পানি সম্পদ সদ্ব্যবহারের জ্ঞান আয়ত্ত করেছেন । কৃষি জমিতে সেচ ব্যবস্থা , শহরের পানীয় জল আর জলবিদ্যুত উত্পাদন ক্ষেত্রে তারা অনেক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন । সাংহাই বিশ্বমেলায় জেনিভা জুরিগ ও বাসেলের সঙ্গে মিলে একটি প্রদর্শনী ভবন তৈরী করেছে । এ প্রদর্শনী ভবনের প্রতিপাদ্য হলঃ পানির গুণগত মান উন্নত করে শহরের জীবনকে আরো সুন্দর করে তুলে ।
জেনিভা শহর বায়ু , শব্দ ও পানি দূষণ নিয়ন্ত্রণ ছাড়া নাগরিকদের স্বাস্থ্যের মান উন্নত করার চেষ্টা করেছে । তিনি বলেন , জেনিভা শহর মদ ও সিগারেট নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিয়েছে । নাগরিকরা জেনিভার হাসপাতাল ও ওষুধের দোকানে বিনা পয়সায় রক্ত চাপ পরীক্ষা নিতে পারেন । জরীপ থেকে জানা গেছে , সুইজ্যারল্যান্ডের অধিবাসীরা নিজের জীবন সম্পর্কে সন্ত্তষ্ট । তাদের সন্তোষ প্রকাশের একটি গুরত্বপূর্ণ ও প্রধান কারণ হল সুইজারল্যান্ডে সামাজিক নিশ্চয়তা ব্যবস্থা পরিপূর্ণ । মাইকেল থিয়েবাউট জেনিভা শহরের সরকারী কর্মকর্তা ছিলেন । তিনি বলেন , সুইজারল্যান্ডের বেতন ও ভরতুকি ব্যবস্থা ভালো । এখানে সরকারী কর্মকর্তার বেতন অপেক্ষাকৃত বেশি , অবশ্য দ্রব্য মূল্যও কম নয় । তবে বেতন ও দ্রব্য মূ্ল্যের হার গ্রহণযোগ্য । দুর্ঘটনা বীমা ও চিকিত্সা বীমাসহ অনেক বীমা বাধ্যতামূলক । তাই সুইজারল্যান্ডের অধিবাসীদের জীবনে আশংকা কম ।
জেনিভার উন্নয়ন থেকে আমরা দেখেছি সুজারল্যান্ড দেশের আধুনিকায়নে নাগরিকদের জীবনের পরিবেশ রক্ষাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছে । এই কারণে নাগরিকরা তাদের জীবন সম্পর্কে আরো সন্তুষ্ট হচ্ছেন । সুইজারল্যান্ড আশা করে , সাংহাই বিশ্ব মেলার মাধ্যমে চীনের শহরগুলো জেনিভার অভিজ্ঞতা শিখতে পারবে । সিকান্ড বলেন , আমি চীনের গত ত্রিশ বছরের উন্নয়ন দেখেছি । আমি আশা করি , চীন সাংহাই বিশ্ব মেলায় অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা ও ব্যর্থতার শিক্ষা কাজে লাগাতে পারবে ।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |