|
আর্থিক সংকটে চীনের বাজার অনেক বিদেশি শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য খুব সহায়ক। চীনের নেয়া ধারাবাহিক অর্থনীতি চাঙ্গা করার নীতিও বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ
কোন দেশ চীনের অর্থনীতি হ্রাস পাক তা আশা করে না। বর্তমানে আর্থিক পরিস্থিতি থেকে জানা যায়, চীন হল সবার আশার কেন্দ্র বিন্দু। যদিও ইউরোপ, আমেরিকা এবং জাপানসহ বিভিন্ন দেশ চীনের ওপর আরো বেশি নির্ভরশীল। তবে চীন এমন আশার সাড়া দেয়ার সময় নিজ দেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতার দিকটিতেও নজর দিতে হবে। বিশ্বের আকাংখার পাশাপাশি চীনের নিজের আস্থার দিকটিও জোরদার করাটা খুব প্রয়োজন। তবে আমার মনে হয়, এর জন্য নিজের উন্নয়নের পদক্ষেপ বন্ধ রাখার প্রয়োজন নেই।
চীনে আর্থনীতির দ্রুত উন্নয়নের কারণে সাধারণ নাগরিকের জীবনে বিরাট পরিবর্তন ঘটেছে। তবে এর জন্য আরো অনেক ক্ষেত্রকে সুসংহত করতে হবে। নিজের কাজের সুবিধার জন্য ওসামু সবসময় চীন ও জাপানের মধ্যে আসা-যাওয়া করেন। তিনি চীনের গণ অবকাঠামো নির্মাণের জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি বলেন :
আমরা দেখেছি, ব্যক্তিগত জীবনযাত্রার মান থেকে স্পষ্টভাবে চীনের অর্থনীতির দ্রুত উন্নয়ন উপলব্ধি করা সম্ভব। তবে আমার মনে হয় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গণ অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে । বর্তমানে চীনের গণ অবকাঠামো ব্যবস্থা ততটা উন্নত নয়। যেমন পেইচিং অলিম্পিক গেমস আয়োজনের কারণে পেইচিংয়ের গণ স্বাস্থ্যের মান অনেক বেড়েছে। তবে অন্যান্য শহরে কি পেইচিংয়ের মত এত ভালো গণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা দেখা যায় ? আমার মনে হয় এ প্রশ্নের উত্তর নেই। গণ অবকাঠামো ব্যবস্থা সুসংহত করতে চাইলে করসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে এবং প্রত্যেকের যৌথভাবে সমাজ উন্নয়নের চেতনাকে গড়ে তুলতে হবে। নইলে এ সমস্যার সমাধান খুব কঠিন হবে ।
কর ব্যবস্থা ও চেতনার জনপ্রিয়করণ চীনের উন্নয়ন প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। ওসামু বলেন , চীনের অর্থনীতি খুব দ্রুত গতিতে উন্নত হচ্ছে , চীনে করসহ বিভিন্ন ব্যবস্থার সুসংহতকরণ দেশের সার্বিক নির্মাণের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন :
অর্থনীতর উন্নয়নের গতির তুলনায় চীনের কর ব্যবস্থার উন্নয়ন পিছিয়ে রয়েছে। যদি অনেক আগেই চীনের কর ব্যবস্থার উন্নয়ন হতো, তাহলে সমুদ্রতীরবর্তী অঞ্চলের আয় অনেক আগেই কেন্দ্রীয় আর্থিক ব্যবস্থার অন্তর্ভূক্ত হতে পারতো। এর ফলে অন্যান্য প্রদেশের এতে কল্যাণ হতো। তবে আমরা দেখেছি, এ প্রক্রিয়া ততটা উন্নত নয়। অবশ্যই, চীনের নেতারা অর্থনীতির দ্রুত উন্নয়নের ক্ষেত্রের নেতিবাচক প্রভাব উপলব্ধি করেছেন। তারা প্রয়োজন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট নীতি সংশোধন করছেন। যেমন পশ্চিমাঞ্চলের মহাউন্নয়ন এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে চাঙ্গা করে তোলার কার্যক্রম গ্রহণ। যাতে অর্থনীতির ভারসাম্যহীনতা অবস্থার উন্নয়ন করা যায়। আমরা দেখেছি চীন সরকার এ ক্ষেত্রে নিরলস চেষ্টা চালাচ্ছে।
জাপানী ভাষায় , "বাহির" মানে যে কোনো বস্তুর বহির্ভাগ, তা লোকজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বেশি, তার মানে উন্নয়ন। "অন্তর" মানে কোনো বস্তুর ভিতরের অংশ, তা লোকজন সহজেই বুঝতে পারে না, তার মানে অনুন্নত। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রকে জাপানী লোকজনের উপলব্ধিতে এ দু'টি শব্দ প্রতিফলিত হয়েছে। ওসামু বলেন, চীনের অর্থনীতি উন্নয়নের পাশাপাশি এ ক্ষেত্রে জাপানী লোকজনের চিন্তাধারার পরিবর্তনও ঘটেছে। তিনি বলেন :
যখন আমি প্রাথমিক স্কুলে লেখাপড়া করতাম, তখন জাপান সমুদ্রে চীনেরর দিকে কাছা কাছি অঞ্চল হওয়ায় জাপানকে অন্তর জাপান বলা হয়, আর অপর দিকে যুক্তরাষ্ট্রমুখী অঞ্চল হওয়ায় জাপানকে বাহির জাপান বলা হয়। তবে আমরা এখন এ দু'অঞ্চলের পার্থক্য সম্পর্কে বলতে পারি না । কারণ জাপানীদের চিন্তাধারার পরিবর্তন হচ্ছে। তারা উপলব্ধি করেছে যে, এ দু'দেশের সঙ্গে জাপানের বিনিময় জোরদার করতে হবে । চীনের অর্থনীতি উন্নয়নের পাশাপাশি দু'দেশের মানব সম্পদ বিনিময়ও বৃদ্ধি পেয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন ও জাপানের রাজনৈতিক সম্পর্ক শীতকালের মত অচলাবস্থা থেকে এখন বসন্তকালের মত কিছুটা উন্নয়ন হচ্ছে। তবে এখনও জাপানসহ কিছু কিছু পাশ্চাত্ দেশে "চীনের হুমকি" এমন কথা শোনা যায়। ওসামু মনে করেন , জাপানের অর্থনীতি মহলের দৃষ্টিতে, এমন ভাষ্য চীন ও জাপানের সম্পর্ক উন্নয়নের প্রবণতার পরিবর্তন করতে পারে না। বিশেষ করে দু'দেশের অর্থনৈতিক বিনিময়ের সুষ্ঠু উন্নয়ন। তিনি বলেন :
ক্রেতা ও বিক্রেতা যদি উভয়েই কল্যাণের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে না পারে, তাহলে দু'পক্ষের দীর্ঘস্থায়ী সহযোগিতা সুস্ঠুভাবে হবে না। জাপান একটি বৃহত্ অর্থনীতির দেশ, তবে একটি ছোট রাজনীতিরও দেশ। জাপানে অর্থনীতি সমাজের উন্নয়নের দিক নির্দেশনা করে যা অর্থনীতির জন্য টেসকই উন্নয়ন খুব গুরুত্বপূর্ণ । তা লটারি'র মত নয়। তাই অর্থনীতি মহলের সুধীজনেরা সবসময় ঠান্ডা মাথায় চীন-জাপান সম্পর্কের কথা বিবেচনা করতে পারে। যদিও রাজনীতি ক্ষেত্রে সবসময় চীনের হুমকি এমন কথা শোনা যায়, যখন জুনিচিরো কোইজুমি সরকারের সময় , দু'দেশের সম্পর্ক সবচেয়ে খারাপ, দু'দেশের রাজনৈতিক সংঘর্ষ অনেক বেশি হচ্ছিল, তারপরও সে আমলেই দু'দেশের বাণিজ্যিক মূল্য ইতিহাসের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। তা জাপান-মার্কিন বাণিজ্যিক মূল্যকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
চীনের উপ প্রধানমন্ত্রী ওয়াং ছি শান এর আগে চীন-জাপান অর্থনৈতিক সংলাপে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ২০০৮ সালে চীন ও জাপানের বাণিজ্যিক মূল্য ২৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ২০০৭ সালে চীন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে জাপানের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশিদারে পরিণত হয়েছে। ২০০৯ সাল ছিল নয়া চীন প্রতিষ্ঠার ৬০তম বার্ষিকী, এ বছর চীন ও জাপানের পারস্পরিক কল্যাণমূলক সম্পর্কের উন্নতী হয়েছে এবং দু'দেশের সম্পর্কের উন্নতি অব্যাহত রয়েছে। লোকজন আরো স্পষ্টভাবে উপলব্ধি করেছে যে, চীনের উন্নয়ন হুমকি নয়, বরং তা সুযোগও বটে। নিজের উন্নয়ন বাস্তবায়নের পাশাপাশি নিজ অঞ্চল তথা গোটা বিশ্বের যৌথ উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা হল চীনা জনগণের অভিন্ন আকাংখা এবং তারা এ জন্য নিরলস প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, চীনের অর্থনীতির অব্যাহত উন্নয়নের পাশাপাশি আরো বেশি লোকজন বিশ্ব মঞ্চে চীনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা উপলব্ধি করেছে, চীনের উন্নয়ন সম্পর্কে তাদের উপলব্ধিও গভীর হয়েছে। ওসামু তাদের মধ্যে অন্যতম।
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |