|
ইউনেস্কো চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের চি লিন প্রদেশের লিয়াও ইয়ান শহরের একজন নারীকে লোক কথা শিল্পী'র স্বীকৃতি দিয়েছে। এ নারীর নাম ছোং সু লান। তিনি তার মা'য়ের মুখে উচ্চারণ করা এক হাজারটি গল্পের মধ্য থেকে তত্পর্য্যপূর্ণ ১৫০টি গল্প বেছে নিয়েছেন এবং এ গল্পগুলো নিয়ে একটি গল্প সংকলন প্রকাশ করেছে। তিনি বলেন,
" অনেক দিন আগের কথা। তখন একজন যুবক ছিল। তার নাম ওয়াং ইং। সে তার মায়ের সঙ্গে বনাঞ্চলে থাকতো। এক দিন নীল আকাশে সুন্দর সুর্য ছিল। ওয়াং ইং কাঠ সংগ্রহ করছে। হাঠাত্ বনাঞ্চলে একজন লোক এসে তাকে জোর করে বললো, 'এসো এসো, কত বড় ডিম দেখো।
প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা আপনি যার কণ্ঠ শুনেছেন। তিনি হচ্ছে ছোং সু লান। তিনি যে গল্পটা বলেছে, তা হলো চীনের লোক কাহিনী "ভাগ্যে থাকলে অনেক দূরে গেলেও মিলন হবে"। তিনি এ গল্প বলেছেন।
ছোং সু লান চিন লিন প্রদেশের লিয়াও ইয়ান শহরে জন্ম গ্রহণ করেছেন। ছোটবেলা থেকে মায়ের মুখ থেকে গল্প শোনা তার সখ ছিল। গল্প শুনে শুনে তিনি বড় হয়েছেন। ১৯৮৫ সালে চি লিন প্রদেশের লোক সাহিত্য রক্ষার কাজ শুরু হয়। চিন লিন প্রদেশের বিখ্যাত রীতিনীতিবিদ ছাও পাও মিং, লিয়াও ইয়ান শহরে আসেন। তিনি ছোং সু লানকে তার মা'য়ের মুখ থেকে শোনা গল্পের একটি সংকলন প্রকাশ করতে উত্সাহিত করেছেন।
সে সময় ছোং সু লান লিয়াও ইয়ান শহরের একটি রেস্তোঁরার ক্যাশিয়ার ছিলেন। লোক কাহিনী সংগ্রহের জন্য তিনি অনেক চেষ্টা চালিয়েছেন।
তিনি বলেন,
"সে সময় আমি প্রতিটি সন্ধ্যায় বাচ্চাকে নিয়ে এক ঘন্টা হেঁটে মায়ের কাছে গল্প শুনতে যেতাম। শোনা শেষে আমি আমার মায়ের গল্প লিখে নিতাম। মাঝেমধ্যে রাত বারোটার পর বাড়ীতে ফিরতে পারতাম। সে সময় আমার মায়ের বয়স ছিল ৭০ বছরের বেশি। তিনি অসুস্থ ছিলেন। কিছু বলার পরপরই বিশ্রাম নিতে হতো। বিশ্রামের পর আবার বলতে শুরু করতেন।
ছোং সু লানের এত বেশি জ্ঞান ছিল না। সেজন্য তিনি প্রতিদিন বই পড়তে লাগলেন। ছোং সু লান তার মা'র বলা এক হাজারেরও বেশি গল্প থেকে তত্পর্য্যপূর্ণ ১৫০টি গল্প বেছে নিয়েছেন এবং একটি লোক কাহিনীর সংকলন প্রকাশ করেছেন। এ বই প্রকাশনার শেষ পর্যায়ে তাকে কঠিন অবস্থায় পড়তে হয়েছিল। তিনি বলেন,
"এক দিন আমি বাইরে বই প্রকাশনার জন্য যোগাযোগ করতে যাচ্ছি। অনেক ক্ষণ হাটাহাটি করার ফলে বলে আমার পা দিয়ে রক্ত বের হয়ে যায়। আমি জুতো খুল স্টেশন থেকে বাড়িতে ফিরে যাই। আমার বাচ্চা আমাকে দেখে কান্না শুরু করে দেয়। আমি হাঁসি মুখে তাদেরকে বলি, কান্না করো না, তোমরা দেখবে, মায়ের বই একদিন না এক দিন প্রকাশিত হবেই।
ছ'বছর ধরে চেষ্টার পর ১৯৯৩ সালে চি লিন-এর গণ প্রকাশনা সংস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে ছোং সু লান'র বই প্রকাশ করেছে। ১৯৯৪ সালে এ বই চিন লিন প্রদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার পেয়েছে।
১৯৯৪ সালের নভেম্বর মাসে ইউনেস্কো সারা বিশ্বে বিভিন্ন জাতির লোক সংস্কৃতির উত্তরাধিকারী খুঁজে বেড়ায়। সে বছরের শরত্কালে চীনের সাহিত্য সমিতি ও চীনের লোক শিল্পী সমিতি ছোং সু লানকে প্রার্থী হিসেবে নির্ধারণ করে। চীনের লোক শিল্পী সমিতির ভাইস-চেয়ারম্যান ছাও পাও মিং সে সময় লোক সাহিত্য পর্যবেক্ষণ দলের সঙ্গে লিয়াও ইউয়ানে আসেন। তিনি স্মরণ করে বলেন,
ছোং সু লানের বলা গল্পের বেশ কয়েক বৈচিত্র্য রয়েছে। একঃ ছোং সু লানের বলা গল্প সম্পূর্ণ। দুইঃ তার বলা গল্প খুব আব্যোপ্রবণ। তিনঃ গল্প বলার সময় তার কন্ঠ ও বিবরণীতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের গল্প শিল্পীদের বৈচিত্র্য রয়েছে।
এবারের পর্যবেক্ষণে ইউনেস্কো ছোং সু লানের বলা গল্প রেকডিং করে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া এ সংস্থা ছোং সু লানকেও গল্প শিল্পীর স্বীকৃতি দিয়েছে। ছোং সু লানের গ্রামের বাড়ীতে অনেকে ছোং সু লানের বলা গল্প শুনেছিলেন। সুন মেই হুয়া অনেকবার ছোং সু লানের বলা গল্প শুনেছেন। তিনি বলেন,
"আমি ছোং সু লানের গল্প শুনে বড় হয়েছি। তার গল্প থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি। আমি জেনেছি সৌন্দর্য, সত্যতা এবং আন্তরিকতার ওপরে কিছু নেই। এছাড়া আমি সে সব ধারণ করে সাধারণ জীবন কাটাচ্ছি।
২০০৫ সালের অক্টোবর মাসে ছোং সু লান "চীনের লোক কাহিনী সামগ্রী- চি লিন প্রদেশের লিয়াও ইউয়ান ভিশন" সংকলন শুরু করে। চার বছরের চেষ্টার পর এ বই প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে ছোং সু লান আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। কিন্তু তিনি সন্তুষ্ট নন। তিনি বলেছেন, তিনি তার সারা জীবন লোক সাহিত্য উদ্ধার ও রচনার কাজ করে যাবেন। (ওয়াং তান হোং)
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |