|
২০০৮ সালের এপ্রিল মাসের শুরুতেই যখন পেইচিং অলিম্পিক গেমসের পবিত্র মশাল তুরস্কের বৃহত্তম শহর ইসতানবুলে হস্তান্তর হচ্ছে , তুরস্কের একজন বৃদ্ধ যদিও তার পায়ের অসুবিধা রয়েছে, তারপরও তিনি মশালটি হস্তান্তরের কাজ সম্পন্ন করেছেন । এমন পরিস্থিতি দেখে সবাই মুগ্ধ হয়েছেন । চীন সম্পর্কে গভীর অনুভূতি থাকা এই বৃদ্ধা হলেন তুরস্ক-চীন মৈত্রী সমিতির চেয়ারম্যান কামাল বায়তাস । এখন বায়তাস সেদিনের সেই স্মৃতি থেকে স্মরণ করে আমাদের সংবাদদাতাকে বলেন :
২০০৭ সালের শেষ দিকে আমি তুরস্কে চীনা দূতাবাসের অলিম্পিক মশাল হস্তান্তরের বিজ্ঞপ্তি দেখি । আমি এর জন্য খুব গর্বিত । তবে মশাল হস্তান্তরের আগের মাসে আমার পায়ের হাড় দুর্ঘটনায় ভেঙে যায় । ডাক্তার আমাকে বিছানায় দু'মাস শুয়ে থাকার কথা বলেছেন । তবে আমি ডাক্তারের কথা শুনি নি । আমি মশাল হস্তান্তরে অংশ নিয়েছি । আমার মনে হয় , তুরস্ক-চীন মৈত্রী সমিতির চেয়ারম্যান হিসেবে মশাল হস্তান্তরে আমার অংশ নেয়া দু'দেশের জনগণের মৈত্রী বাড়ানোর জন্য সহায়ক হবে । অবশেষে আমি মশাল হস্তান্তর সম্পন্ন করেছি। আমি খুব গর্ব বোধ করি ।
বায়তাসকে পেইচিং অলিম্পিক গেমসের মশালধারী হিসেবে নির্বাচন করা হল তুরস্ক ও চীনের মৈত্রী বাড়ানোর ক্ষেত্রে তার রাখা অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ । ২০০৩ সালে তাকে চীনের গণ বিদেশ মৈত্রী সমিতি "জনগণের মৈত্রীর দূতের' পুরস্কার প্রদান করেছে । এসব পুরস্কারের পিছনে তিনি অনেক বছর ধরে দু'দেশের মৈত্রী বাড়ানোর জন্য নিরলস চেষ্টা চালিয়েছেন । তার এসব কাজ করার প্রধান কারণ হল চীনা জনগণের প্রতি তার গভীর ভালোবাসা । তিনি বলেন :
আমি মনের আগ্রহ ও চীনা জনগণের প্রতি আমার গভীর ভালোবাসা নিয়ে প্রতিদিন কাজ করি । সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের অর্জিত বিরাট অগ্রগতির জন্য আমি অনেক আনন্দ বোধ করি । চীনা জনগণের প্রতি আমার ভালোবাসা না থাকলে আমি প্রায় ২০ বছর ধরে এ কাজ করতে পারতাম না । দু'দেশের সম্পর্ক ত্বরান্বিত করার জন্য আমি এত বেশি অবদান রাখতেও পারতাম না ।
বায়তাস তুরস্কের পর্যটন মন্ত্রী ছিলেন । তিনি তুরস্কের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের জন্যও বিরাট অবদান রেখেছেন। তাকে তুরস্কের পর্যটনের পিতা হিসেবে বলা যায় । অবসর নেয়ার পর ১৯৯১ সালে তিনি তুরস্ক ও চীন মৈত্রী সমিতি স্থাপন করেছেন । প্রতি বছর তিনি তুরস্কের রাজনীতি , তথ্য মাধ্যম ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের বেশ কিছু উচ্চ পদস্থ ব্যক্তিদের নিয়ে চীন সফর করেন । তা শক্তিশালীভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দু'দেশের বেসরকারী বিনিময় ও সহযোগিতাকে ত্বরান্বিত করেছে । তথ্য মাধ্যম তার বন্ধু সফর প্রক্রিয়ার ওপর ভিডিও তৈরি করেছে । এ ভিডিও তুরস্কের বিখ্যাত সংবাদ চ্যানেলে প্রচার হয়েছ এবং দর্শকদের প্রশংসা পেয়েছে । গত বছরের জুলাই মাসে বায়তাস ১৩ বারের মত চীন সফর করেছেন । তিনি বলেন , ঘন ঘন চীন সফরের মাধ্যমে তিনি চীনের বিরাট সামাজিক পরিবর্তন উপভোগ করেছেন । তিনি বলেন :
১৯৮৫ সালে যখন আমি প্রথমবার চীনে আসি , তখন পেইচিংয়ে শুধু তিনটি হোটেল ছিল । পেইচিংয়ের সবচেয়ে বড় রাস্তায় দেখা যেতো অনেক সাইকেল । তবে এখন পেইচিংয়ে হোটেলের সংখ্যা অংসখ্য । রাস্তায় সবচেয়ে নতুন ধরনের মোটর গাড়ি দেখা যায় । শুধু পেইচিং নয় , সাংহাইসহ বিভিন্ন শহরেও বিরাট পরিবর্তন ঘটেছে । গত বিশ বছরে এসব শহরের পর্যটন , অর্থনীতি ও শিল্প প্রতিষ্ঠানেরও দ্রুত উন্নতি হয়েছে । বিশ্বের পাঁচশ সবচেয়ে শক্তিশালী কোম্পানীর মধ্যে ৪২৫টি চীনে শাখা প্রতিষ্ঠা করেছে । তাও চীনের অর্থনীতি উন্নয়নের একটি প্রমাণ ।
চীনের সঙ্গে ঘন ঘন বিনিময়ের ফলে বায়তাস চীনা জনগণকে আরো ভালোভাবে জানতে পেরেছেন । চীনের সংস্কৃতি এবং বৈশিষ্টময় হাতের কাজও তার পছন্দ হয়েছে । সাধারণ জীবনে তিনি চীনা অক্ষরের ছবি আছে এমন কাপড় পরতে পছন্দ করেন । তার পরিবারে চীনের বৈশিষ্টও উপভোগ করা যায় । যেমন , চীনের ঐতিহ্যিক ছবি ইত্যাদি । তার বাসায় ঢুকলে যেন একজন চীনা মানুষের বাসায় প্রবেশ করেছি বলে মনে হয় । বায়তা চীনের হাতের কাজ সম্পর্কে বলেন :
এখন পর্যন্ত আমি ১৩ বার চীনে এসেছি । প্রতিবারই আমি চীনের বৈশিষ্টময় এসব ঐতিহ্যপূর্ণ হাতের কাজ করা শিল্পকর্ম কিনি । অবশ্যই আমার বন্ধুরাও আমাকে অনেক উপহার দিয়েছেন । আমি বাসায় একটি বিশেষ কর্নারে এসব শিল্প কর্ম রাখি । যেন একটি চীনা কর্নার । আমার তুরস্কের বন্ধুরা আমার বাসায় এসে সবাই বলেন , তোমার বাসা যেন একটি চীনের যাদুঘর । আসলে এসব শিল্পকর্মের দাম ততটা মূল্যবান নয় । তবে এসব জিনিস আমার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ।
বায়তাস বলেন , বর্তমানে তুরস্ক ও চীনের মধ্যে রাজনীতি , আর্থ-বাণিজ্য , সংস্কৃতি ও তথ্য মাধ্যম ক্ষেত্রের বিনিময় ও সহযোগিতা অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে । এসব সহযোগিতার সুষ্ঠ উন্নয়নের প্রবণতা দেখা দিচ্ছে । তুরস্ক ও চীনের মৈত্রী সমিতির চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি দু'দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যতে সম্পর্কে অনেক আস্থাবান । তিনি বলেন ;
আমার মনে হয় , তুরস্ক ও চীনের সরকার ও জনগণের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উন্নয়ন এবং পরস্পরের উপলব্ধি ও বিনিময় জোরদার করা দু'দেশ ও দু'দেশের জনগণের মৌলিক স্বার্থের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ । আমাদের প্রেসিডেন্ট সম্প্রতি চীন সফর করেছেন এবং চীনের উরুমুচিসহ বিভিন্ন শহর পরিদর্শন করেছেন । তার সফরে ইতিবাচক সাফল্য অর্জিত হয়েছে । আমার বিশ্বাস , দু'দেশ অবশ্যই যৌথভাবে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে এবং দু'দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরো গভীর হবে ।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |