|
১৯৭৮ সালে চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতি চালু হওয়ার পর কৃষি ও গ্রামের উন্নয়নে চীনের উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জিত হয়েছে । নওয়ান্জ যখন কৃষি উন্নয়ন তহবিলের উপ প্রধান ছিলেন , তখন তিনি চীন সফর করেছিলেন। চীনের গ্রামের উন্নয়ন ও পরিবর্তন সম্পর্কে তার গভীর অনুভূতি রয়েছে। চীন সাফল্যের সঙ্গে গ্রামীন এলাকার দারিদ্র বিমোচন ও উন্নয়ন বাস্তবায়ন করেছে । নওয়ান্জ চীনের কৃষি নীতির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন । তিনি বলেন :
আমার মনে হয় , এর প্রধান কারণ হল চীনের নেতারা এবং সরকার খুব দৃঢ়তার সঙ্গে কৃষি ক্ষেত্রের নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করেছেন । ১৯৭৮ সালে চীনের গ্রামাঞ্চলে দরিদ্র জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৩০ শতাংশ । তাদের প্রতিদিনের জীবনযাপনের ব্যয় ছিল ১ ডলারেরও কম । তবে ২০০৭ ও ২০০৮ সালে এ সংখ্যা ২ শতাংশের নীচে কমেছে । চীনের এমন উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করার প্রধান কারণ হল চীনের কৃষি বরাদ্দ নীতি । অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশ , বিশেষ করে আফ্রিকার দেশগুলোর তা থেকে শেখার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে । কৃষি ক্ষেত্রের বরাদ্দ অর্থনীতি ও সমাজের উন্নয়নের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ ।
সবাই জানেন , যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের অর্থনীতি ও সমাজের উন্নয়নে বিরাট সাফল্য অর্জিত হয়েছে । তারপরও চীন আঞ্চলিক উন্নয়নের ভারসাম্যহীন , শহর ও গ্রামের উন্নয়ন সমন্বয় নয় এমন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে । চীন কীভাবে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে এ বিষয়ে নওয়ান্জ বলেন , দেখা যায় চীন সরকার ইতোমধ্যেই উন্নয়নের প্রক্রিয়ায় ভারসাম্যহীন সমস্যাগুলোকে বিবেচনা করেছে । তা হলো চীনের কৃষি উন্নয়ন তহবিলের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বজায় রাখার একটি কারণ । নওয়ান্জ একই সঙ্গে বলেছেন , তিনি বিশ্বাস করেন , চীন অব্যশই এ সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারবে এবং দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবে । তিনি বলেন
কৃষি উন্নয়ন তহবিল এ ক্ষেত্রে চীনের চালানো প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে । এ পর্যন্ত কৃষি উন্নয়ন তহবিলসহ চীনের সঙ্গে যৌথভাবে ২৩টি প্রকল্পের উন্নয়ন করেছে । এ সব প্রকল্পের মূল্য ৬০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে । চীন ২০২০ সালের আগে দারিদ্র্য দূরীকরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে । গত ৩০ বছরে চীনের অর্জিত উল্লেখযোগ্য ও উজ্জ্বল সাফল্যের দিকটি বিবেচনা করার পর আমার বিশ্বাস , চীন অব্যশই এ লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবে ।
১৯৮০ সালে চীন আনুষ্ঠানিকভাবে কৃষি উন্নয়ন তহবিলের সদস্য দেশ হওয়ার পর দু'পক্ষের সহযোগিতা দিন দিন বেড়েই চলেছে । সহযোগিতার পর্যায়ও অব্যাহতভাবে সম্প্রসারিত হচ্ছে । কৃষি উন্নয়ন তহবিল ও চীনের ভবিষ্যতের সহযোগিতা সম্পর্কে নওয়ান্জ বলেন , কৃষি উন্নয়ন তহবিল চীনের সঙ্গে তার সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারণ করবে । দু'পক্ষের সহযোগিতার ভবিষ্যত অনেক উজ্জ্বল । তিনি বলেন :
বর্তমানে কৃষি উন্নয়ন তহবিলের অভ্যন্তরীণ প্রযুক্তি ও প্রকল্প বিভাগ চীনের সঙ্গে দু'টি প্রকল্পের কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণা করছে । যাতে দু'পক্ষের সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারণ করা যায় । এ দু'টি প্রকল্প খুব সম্ভবত দু'তিন বছরের পর শুরু হবে । প্রকল্পে ৭ কোটি থেকে ৮ কোটি মার্কিন ডলার বরাদ্দ করা হবে । এ ছাড়া আমি আশা করি চীনের সঙ্গে সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র সম্প্রসারণ করতে পারবো । তা হল দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা । চীন হল একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে নিজের চেষ্টার মাধ্যমে উন্নয়ন বাস্তবায়নের একটি ভালো দৃষ্টান্ত । চীন অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে পারবে এবং সহযোগিতা করতে পারবে ।
১৯৭৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠার পর আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল বিশ্বের গ্রাম উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচন ক্ষেত্রে বিশেষ এবং ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে । ২০০৮ সালে বিশ্বের খাদ্য শস্যের দাম দমা বৃদ্ধি এবং আর্থিক সংকট ছড়িয়ে পড়ার ফলে বিশ্বের খাদ্য নিরাপত্তা ও গ্রামের দারিদ্র্য বিমোচন নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয় । এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল ধারাবাহিক কিছু ইতিবাচক ও কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছে । নতুন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন তহবিল বিশ্বের কৃষি উন্নয়ন ও সহশ্রাব্দী উন্নয়ন লক্ষ্যের বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করার জন্য কী কী কৌশল ও ব্যবস্থা নেবে ? এ প্রশ্নের উত্তরে নওয়ান্জ বলেছেন , আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল অব্যাহতভাবে কৃষি সমস্যাকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচনা করার আহ্বান জানাবে । এর পাশাপাশি ছোট আকারের কৃষি উন্নয়নের বিষয়টিকে সমর্থন করবে । তিনি বলেন :
আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল কৃষি সমস্যাকে আন্তর্জাতিক ব্যাপারের মধ্যে গুরুত্বপুর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচনা করে এবং এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে । কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা , বিশ্বের স্থিতিশীলতা , রাজনৈতিক নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন এসব বিষয়ের সঙ্গে জড়িত । গ্রামের উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতা খাদ্য নিরাপত্তা বাস্তবায়নকেও ত্বরান্বিত করবে । আগামী কয়েক বছরে আমি অব্যাহতভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারকে কৃষি বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের আহ্বান জানাবো । তা হলেই কেবল গ্রামের স্থিতিশীল সমাজ ও অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে ।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |