|
২০০৯ সালের নভেম্বর মাসে যদিও তখন পেইচিংয়ের আবহাওয়া অনেক ঠান্ডা , তবে পেইচিং বিদেশি ভাষা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশ বিদেশের অনেক প্রতিনিধি "চীনা ভাষার বিদেশি শিক্ষক বৃত্তি" নামে একটি প্রশিক্ষণ কোর্স শুরুর অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন । এ কোর্স শুরুর অনুষ্ঠানে কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউটের সদর দপ্তর আনুষ্ঠানিকভাবে এক হাজারেরও বেশি বিদেশি তরুণ তরুণীকে "চীনা ভাষার বিদেশি শিক্ষক বৃত্তি"প্রদান করেছে । যাতে চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ে দু'বছরব্যাপী মাস্টার্স ডিগ্রী কোর্স সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে সাহায্য করা যায় । তারা এ চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স ডিগ্রী পাওয়ার পর নিজের দেশে ফিরে চীনা ভাষা শেখানোর কাজ করবেন । ২১ বছর বয়সী রুশ তরুণী সোফিয়া স্মিনেভা এ বৃত্তি পাওয়া এক হাজার তরুণ তরুণীর অন্যতম । সে চার বছর ধরে চীনা ভাষা শিখেছে । তার রুশ শিক্ষকের সাহায্যে সে এ বৃত্তি পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে । উন্নত মানের চীনা ভাষা দিয়ে সে সংবাদদাতাকে বলেছে , চীন ও রাশিয়ার বিনিময় ঘনিষ্ঠ হওয়ার পাশাপাশি রুশ জনগণ চীনা ভাষা শেখা এবং চীনকে জানার আগ্রহ দিনে দিনে বেড়েই চলেছে । চীনে লেখাপড়ার সুযোগ পেয়ে সে খুব আনন্দিত । সে বলে :
চীন সরকার আমাদেরকে এমন ভালো সুযোগ দেয়ার জন্য আমি খুব কৃতজ্ঞ । চীন ও রাশিয়ার সম্পর্ক দ্রুতভাবে উন্নত হচ্ছে । যেমন , পূর্ব রাশিয়া এবং চীনের হে লুং চিয়াং খুব কাছাকাছি । অনেক রুশ মানুষ চীনা ভাষা শিখছে । তা আমাদের দু'দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে অনেক সহায়ক ।
আসলে চীনের এ বৃত্তি প্রদানের প্রধান একটি কারণ হল এখন বিশ্বে চীনা ভাষা শেখার প্রতি আগ্রহ এবং চীনা ভাষা শিক্ষকের অভাব । যেমন যুক্তরাষ্ট্রে , এখন চীনা ভাষার কোর্স চালু হওয়া প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের সংখ্যা ৪ হাজারে এসে দাঁড়িয়েছে ।চীনা ভাষা শিখছে এমন ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার । অনেক স্কুল উপযুক্ত চীনা ভাষার শিক্ষক খুঁজে না পাওয়ার কারণে বাধ্য হয়ে চীনা ভাষার কোর্স বাতিল করেছে । যদিও প্রতি বছর চীন কনফুসিয়াস ইন্সটিটউটের মাধ্যমে বিশ্বের এক শ'রও বেশি দেশে ৫ হাজার চীনা ভাষার শিক্ষক ও স্বেচ্ছাসেবক পাঠায় , তবে তা আসল চাহিদা মেটাতে পারে না । এ ছাড়াও চিন্তাধারা , সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে জাতক শিক্ষকের সুবিধা আছে । তারা চীনের পাঠানো চীনা ভাষা শিক্ষককে সাহায্য করতে পারে ।
চীনের রাষ্ট্রীয় কন্সিলার , কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউট সদর দপ্তরের নির্বাহী পরিষদের চেয়ারম্যান লিউ ইয়ান তুং বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজিত অনুষ্ঠানে বলেছেন , বিদেশে জাতক চীনা ভাষা শিক্ষক প্রশিক্ষণ করা হল যুগের চাহিদা , তা চীন ও বিদেশের বিনিময়ের ইতিহাসে একটি বড় ঘটনায় পরিণত হবে । তিনি বলেন :
চীনা ভাষা শেখার লোকসংখ্যা বৃদ্ধি থেকে বুঝা যায় , চীনের সংস্কৃতির প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জনগণের ব্যাপক আগ্রহ । তা চীনের ভবিষ্যত উন্নয়নের প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মনোযোগের প্রতিফলন ঘটেছে । চীন ও বিদেশের বিভিন্ন দেশ মনে করে , বিভিন্ন দেশে আরো বেশি জাতক চীনা ভাষা শিক্ষক প্রশিক্ষণ দেয়া উচিত্ । চীন সরকারের সমর্থনে কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউট প্রথমবারের মত "চীনা ভাষার বিদেশি শিক্ষক বৃত্তি" প্রবর্তন করেছে । এটা হল চীনের প্রথম বারের মত ব্যাপকভাবে বিদেশের জন্য জাতক চীনা ভাষা শিক্ষক প্রশিক্ষণের জন্য নেয়া উদ্ভাবনী ব্যবস্থা । চীন সরকারের আমন্ত্রণে অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত হার্ভে লাডসোয়াস এসব প্রশিক্ষার্থীদের প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন । তিনি বলেন :
বিশ্বে চীনা ভাষা সমৃদ্ধ করা হল আমাদের এক যুগের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষা উন্নয়নের প্রবণতা । আজকে আপনাদের এ বৃত্তি পাওয়া তা প্রমাণ করেছে । চীন একটি সুষম এবং উন্মুক্ত দেশ । আমার মনে হয় , চীনা ভাষা ভবিষ্যতে একটি আন্তর্জাতিক ভাষায় পরিণত হবে । আমি আবার আপনাদের এ বৃত্তি পাওয়ার জন্য অভিনন্দন জানাই । ভবিষ্যতে আপনাদের বিভিন্ন দেশের সাংস্কৃতিক বিনিময় ও মৈত্রী বাড়ানোর জন্য রাখা অবদানের জন্য আপনাদের ধন্যবাদ জানাই ।
চীনা ভাষার বিদেশি ভাষা শিক্ষক বৃত্তি প্রকল্প ২০০৯ সালের জুন মাস থেকে শুরুর পর ৫০টিরও বেশি দেশের ১৮ শ' ছাত্রছাত্রী সক্রিয়ভাবে এ বৃত্তি পাওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছে । যারা অবশেষে এ বৃত্তি পেয়েছে , তাদের চীনা ভাষার মান অনেক ভালো এবং তারা চীনের সংস্কৃতি সম্পর্কে অনেক জানে । পরিকল্পনা অনুযায়ী , তারা চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক শিক্ষা বিষয়ক মাস্টার্স ডিগ্রীতে লেখা করবে । স্নাতকোত্তর হওয়ার পর তারা নিজের দেশে ফিরে অতন্ত ৫ বছর স্থায়ী চীনা ভাষা শেখানোর কাজ করবে ।
শিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিত করার জন্য চীনের ৫০টি প্রথম শ্রেণীর বিশ্ববিদ্যালয় এ সব ছাত্রছাত্রীকে প্রশিক্ষণ দেয়ার কাজ করবে । এসব বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ করে বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের জন্য বৈশিষ্টসম্পন্ন কোর্স প্রণয়ণ করেছে । প্রশিক্ষণ কোর্সে চীনা ভাষা শিক্ষকের পেশাগত চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখে প্রধানত বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের চীনা ভাষা শেখানোর সামর্থ্য , চীনের সংস্কৃতি উপলব্ধির সামর্থ্য এবং আন্তসংস্কৃতি বিনিময়ের সামর্থ্যের ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হবে । বৃত্তি পাওয়া ছাত্রছাত্রীদের প্রশিক্ষণ কাজে অংশ নেয়া পেইচিং বিদেশি ভাষা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ওয়াং লু চিয়াং সংবাদদাতাকে বলেছেন :
এশিয়ার ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে চীনা অক্ষর দেখা এবং পড়ার ক্ষেত্রে মান বেশ ভালো। তাই আমরা তাদের মৌখিক ভাষার ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ জোরদার করবো। ইউরোপ ও আমেরিকা দেশের ছাত্রছাত্রীরা চীনা ভাষা বলতে সাহসী । তবে অক্ষর লেখার ক্ষেত্রে ততটা ভালো নয় । তাই আমরা তাদের জন্য চীনা অক্ষর সম্পর্কিত কোর্স বেশি নেবো । এর পাশাপাশি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় দেশ বিদেশের চীনা ভাষা স্কুলে পাঠিয়ে তাদের অনুশীলনের সুযোগ দেবে ।
বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠান শেষে এসব স্বপ্ন পোষণকারী তরুণ তরুণীরা যুবকরা চীনের বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে নিজেদের লেখাপড়া শেখানোর যাত্রা শুরু করেছে । চিয়াং সি নর্মাল বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া নাইজেরিয়ার তরুণ ফ্রেড্রিক বলে , তার বৃহত্তম স্বপ্ন হল স্নাতক হওয়ার পর নিজের দেশের জনগণকে চীনকে জানা এবং উপলব্ধি করার ক্ষেত্রে সাহায্য করা । সে বলে :
আমি খুব খুশি চীন সরকার আমাকে বৃত্তি দিয়েছে । এ বৃত্তি আমাকে চীনা ভাষার মান উন্নত করার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে । নাইজেরিয়ায় অনেক ছাত্রছাত্রী চীনা ভাষা শিখতে আগ্রহী । তবে তাদের চীনে এসে চীনা ভাষা শেখার সুযোগ নেই এবং সেখানে তাদের জন্য চীনা ভাষা শেখানোর শিক্ষকও নেই । স্নাতক হওয়ার পর আমি দেশে ফিরে চীনা ভাষা শেখাবো এবং তাদের বলবো , চীন দেশ অনেক ভালো । (শুয়েই ফেই ফেই)
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |