|
২০০৯ সালের পয়লা অক্টোবর নয়া চীন প্রতিষ্ঠার ৬০তম বার্ষিকী উপলক্ষে এ সুন্দর গান আবার সারা চীনে ছড়িয়ে পড়ে। যা আবারও মানুষকে আকৃষ্ট করে। এ গানের রচনাকারী হচ্ছেন শি চাং ইউয়ান।
শি চাং ইউয়ানের পুরো জীবন তার গ্রামীণ বাড়িতে কেটেছে এবং কখনও তিনি গ্রাম ছেড়ে কোথাও যান নি। নয়া চীন প্রতিষ্ঠার ৬০তম বার্ষিকীতে যোগ দিতে পেরে তিনি খুব আনন্দিত। অশ্রু সজল চোখে তিনি বলেছেন, "এমন সুখী জীবনে থাকতে পেরে আমি খুব আনন্দিত। আমি খুব উত্তেজিত।
তিনি বলেন, একজন সুর স্রষ্টা কৃষক হিসেবে প্রথমেই তিনি একজন ভালো কৃষক। কারণ তিনি এ মাটির মানুষ। শি চাং ইউয়ানের সঙ্গে শান সি প্রদেশের সংগীত শিল্প লুউ জোং ছি দশ বছর ধরে বন্ধুত্ব। তিনি বলেন, "শি চাং ইউয়ান একজন আদিবাসী শুরু স্রষ্টা কৃষক। তার গান বর্তমানে সারা চীনে খুব জনপ্রিয়। এমন কি বিদেশেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু তিনি আগের মতো কখনো এ মাটি ত্যাগ করে যাবেন না। এ চরিত্র খুব ভাল।
শি চাং ইউয়ান গ্রামাঞ্চলে পাহাড়, মানুষ ও তার রীতিনীতি নিয়ে লেখা অনেক গানের সুর সৃষ্টি করেছেন। পাশাপাশি তিনি গ্রামাঞ্চলের সাংস্কৃতিক দলেও যোগ দিয়েছেন। তার নেতৃত্বে গ্রামাঞ্চলে সাংস্কৃতিক জীবন খুব সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। চাষ করার সময় মানুষ গান গাইতে শুরু করে এবং গানের মধ্য দিয়ে জীবনের কষ্টকর দিনগুলো ভুল যায়।
শি চাং ইউয়ানের ১২টি সন্তান আছে। বেশি সন্তানের কারণে তার পরিবার অতটা ধনী নয়। গ্রীস্মকালে তার বাড়ীতে ভীষণ গরম লাগে। এ পরিবেশ সত্বেও শি চাং ইউয়ান এ পর্যন্ত দু'হাজারটিরও বেশি সুর সৃষ্টি করেছেন। এ সম্পর্কে লুউ জোং ছি বলেন,"আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তুমি ১২টি সন্তান লালনপালনের জন্য দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছো। ক্লান্ত তো লাগবেই। সে অবস্থায় সুর সৃষ্টির সময় কখন পাও? তিনি বলেছিলেন, সুর সৃষ্টি আমার নেশার মত।
১৯৫৯ সালে চীনের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে চীনের জাতীয় অ-পেশাগত সংগীত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। কৃষক শি চাং ইউয়ান "সুখী জীবন গাওয়া" গানটি বেছে নেন।
এর পর শি চাং ইউয়ান দিনের বেলা কৃষি কাজ করার পাশাপাশি কী বাজযন্ত্র দিয়ে এ গানের সুর সৃষ্টি করার কথা চিন্তা করতে থাকেন। রাতের বেলা তিনি দিনে যে চিন্তা করেছেন, সেটাকে লিখে নেন। শেষ পর্যন্ত তিনি শান সি প্রদেশের লোকজ সুরের সংমিশ্রণে এ গানটি গাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বলেন, "শান সি প্রদেশের লোকজ সংগীতকে ভিত্তি করে এ সংগীতের সুরাকোপ করে গাওয়া হয়েছে।
এ গানে সুর দেয়ার পর শি চাং ইউয়ান প্রথমে গ্রামাঞ্চলের সংগীত দলকে গানটি দেন। দলের সবাই এ সুর খুব ভালো হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। পরে এ সংগীত অ-পেশাগত সংগীত রচনা প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার পেয়েছে। সে সময় চীনের জাতীয় বেতারের মাধ্যমে এ গানটি সারা চীনে প্রচারিত হয়েছিল। চীনের ৪০ কোটি লোক বেতারের মাধ্যমে শি চাং ইউয়ানকে চিনতে পারেন। গত শতাব্দির ৬০-এর দশকে শি চাং ইউয়ান খুব সুখী জীবন কাটিয়েছিলেন। সে সময় শি চাং ইউয়ান পর পর "আমাদের পাহাড়ি বাগানে এসো"এবং "গ্রামাঞ্চলের পাহাড় ও নদনদী অত্যন্ত সুন্দর"সহ বিভিন্ন গান রচনা করেছে। চীনের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় তাঁকে সু স্রষ্টা খেতাব দিয়েছে।
২০০৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শি চাং ইউয়ান তার পুরো জীবনে সৃষ্ট সুরারোপিত দিয়ে রচিত গানের সমগ্র সংকলন "গ্রামাঞ্চলের নতুন গান" প্রকাশিত হয়। এতে দু'হাজারটিরও বেশি গান রয়েছে। এ বই প্রকাশিত হওয়ায় শি চাং ইউয়ানের ৫০ বছরের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে।
গত কয়েক বছরে সাংহাইয়ের একটি সাংস্কৃতিক দল "সুখী জীবন গাওয়া" শীর্ষক গানটি নিয়ে কনসার্ট করেছে। ফলে শি চাং ইউয়ান এক লাখ ইউয়ান আয় করেছেন। যা তার জীবনে সবচেয়ে বেশি আয়। কিন্তু শি চাং ইউয়ান পরের দিনই এ টাকা সরকারকে চাঁদা হিসেবে দিয়ে দেন। এ টাকা দিয়ে একটি প্রাথমিক স্কুল নির্মিত হয়েছে। শি চাং ইউয়ানকে যদি জিজ্ঞেস করেন তার আরও কি প্রত্যাশা আছে। তিনি বলবেন, তার আশা হচ্ছে বেঁচে থাকার সময় আবারও তার রচিত গান নিয়ে একটি কনসার্টের আয়োজন করা।
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |