|
শ্রোতাবন্ধুরা, আপনারা যে সুর এখন শুনেছেন, সেটি হচ্ছে লিউ ইয়ো এবং তার ছাত্রছাত্রীদের আফ্রিকার ট্যামবৌরিন দিয়ে সৃষ্ট সংগীত। প্রতি রবিবার বিকেলে লিউ ইয়ো হৌ হাই অঞ্চলে বিনা পয়সায় তার ছাত্রছাত্রীদের ট্যামবৌরিন বাজানো শিখান। ২০০৮ সাল থেকে তার শিক্ষাকার্যক্রমের শুরু। গত এক বছরের মধ্যে লিউ ইয়ো'র ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কয়েকজন থেকে শতাধিক জনে বেড়েছে। ফলে লিউ ইয়ো ৬জন শ্রেষ্ঠ ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে একটি দল গঠন করেছেন। দু'মাস পরিশ্রমের পর এ দলের সবাই সুন্দরভাবে দুটি সুর সৃষ্টি ও তা বাজাতে সক্ষম হয়েছে।
২৯ বছর বয়সী লিউ ইয়ো বিশ্ববিদ্যালয়ে বাদ্যযন্ত্র পিয়েনো'র ওপর লোখাপড়া করেছে। ২০০৪ সালে চীনের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের ইয়ুন নান প্রদেশের লি চিয়াং শহরে চাকরি করার সময় লিউ ইয়ো প্রথমবারের মত আফ্রিকার ট্যামবৌরিন বাদ্যযন্ত্রপিকে দেখতে পান। সে দিন থেকেই তিনি এ বাদ্যযন্ত্রটিকে পছন্দ করছেন। তিনি মনে করেন, অন্য ট্যামবৌরিন তুলনায় আফ্রিকার ট্যামবৌরিনের অনেক পার্থক্য রয়েছে। অন্যান্য ট্যামবৌরিনের বাজানোর সময় কিছুটা দুঃখময় অনুভূতি সৃষ্টি হয়। কিন্তু আফ্রিকার ট্যামবৌরিন বাজানোর সময় খুব আনন্দ অনুভব করা যায়। তিনি বলেন,
বাদ্যযন্ত্রের মধ্যে আমি ট্যামবৌরিন বাজাতে পছন্দ করি। অন্যান্য ট্যাবৌরিন বাজানোর ড্র্যামর দক্ষতা আমার কম। একটি ট্যামবৌরিন দু'টি সুর বাজানো যায়। কিন্তু আফ্রিকার ট্যামবৌরিন এ ক্ষেত্রে খুব শক্তিশালী। একটি ট্যামবৌরিন অনেক সুর বাজানো যায়।
২০০৮ সালে লিউ ইয়ো পেইচিংয়ে "ফান ইয়ে" নামের একটি আফ্রিকার ট্যামবৌরিনের দোকান খুলেছেন। তিনি ক্রেতাদের কাছে আফ্রিকা, ইন্দোনেশিয়া এবং থাইল্যান্ড থেকে আমদানিকৃত আফ্রিকার ট্যামবৌরিন সম্পর্কে বিস্তারিত জানান ও বিক্রি করেন। দোকান খোলার শুরুতেই ট্যামবৌরিন বিক্রির অবস্থা তেমন ভালো ছিলনা। খোলার দু'মাসের মধ্যে একটিও বিক্রি করা যায় নি। অনেকে দোকানে এসে দেখে ট্যামবৌরিনকে অন্য কিছু মনে করতেন। লিউ ইয়ো মনে করেন, ট্যামবৌরিন বিক্রি করতে চাইলে মানুষকে আফ্রিকার সংস্কৃতি সম্পর্কে জানানো উচিত। তখন থেকে লিউ ইয়ো ট্যামবৌরিন বাজানো শেখানোর বিষয়টি ঠিক করেন।
"তখন আমি চিন্তা করতাম, কী ভাবে বেশি লোককে আফ্রিকার ট্যামবৌরিনকে পরিচয় করিয়ে দেবো? আমি মনে করতাম, হৌহাই অঞ্চল একটি ভালো জায়গা। আমি কয়েকজন ছাত্রছাত্রী গ্রহণ করবো এবং প্রতি সপ্তায় এখানে ট্যামবৌরিন বাজানো শেখাবো।
সে সময় থেকেই লিউ ইয়ো হৌহাই অঞ্চলে ট্যামবৌরিন শেখানো শুরু করেন। শুরুতেই মাত্র কয়েকজন ট্যামবৌরিন আগ্রহী ক্রেতা তার ছাত্রছাত্রী। ধীরে ধীরে হৌহাই অঞ্চলে যাতায়াতকারী অনেকেই তাদের পরিবেশনায় আকৃষ্ট হয়েছেন। তারাও ট্যামবৌরিন শেখার দলে যোগ দিচ্ছেন।
কুও বিন নামের একজন কিশোর এক বছর ধরে ট্যামবৌরিন শিখছেন। তিনি হচ্ছেন এ দলে প্রথম যোগদানকারীদের মধ্যে একজন। তিনি বলেন,
"শুরুতেই শুধুমাত্র আমরা কয়েকজন ছিলাম। আস্তেআস্তে এ পর্যন্ত এ দলের সদস্য সংখ্যা শতাধিক জনে এসে দাঁড়িয়েছে। আমরা এখন আরও বেশি লোককে ট্যামবৌরিন শিখাতে চাই। আমরা চাই না শুধু কয়েকজন এখানে এসে নিজের মতো করে তা উপভোগ করুক। আমরা ট্যামবৌরিন বাজানোর আনন্দকে অন্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে দিতে চাই।"
এখন লিউ ইয়ো এবং তার ছাত্রছাত্রীদের ট্যামবৌরিন বাজানো হৌহাইয়ের সুন্দর দৃশ্য হয়ে উঠেছে। তাদের পরিবেশন যাওয়া আসা পর্যটকদের মুগ্ধ করেছে। পর্যটকরা এখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে এ বাজনা উপভোগ করেন। মিয়াও আও নামের একজন পর্যটক আনন্দের সঙ্গে বলেছেন,
"খুব চমত্কার। হৌহাই অঞ্চলে বিশেষ করেএ চীনের একটি বৈশিষ্ট্যময় স্থানে আফ্রিকার ট্যামবৌরিন বাজানো হচ্ছে। এটি খুব তত্পর্যপুর্ণ। তাতে চীন ও বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি যেন যেন এখানে এসে মিশেছে। আমি অনেকক্ষণ ধরে তাদের বাজানো সুর শুনেছি। খুবই শ্রুতি মধুর।
ত্যান্জানিয়া থেকে আসা পর্যটক ফদিলি মপুনচি লিউ ইয়ো ও তাদের ছাত্রছাত্রীদের পরিবেশনা দেখে খুব মুগ্ধ। তিনি বলেন,
"এত বেশী চীনারা এখানে ট্যামবৌরিন বাজাচ্ছেন অবাক লাগছে। আমি খুব আনন্দিত। আজকে অনেক ঠান্ডা। তারা এত ভালো বাজাচ্ছে যে, এটা আমার ধারণার বাইরে। তারা খুব মহান কাজ করছেন।
হৌহাই অঞ্চলে আফ্রিকার ট্যামবৌরিনের দ্রুত উন্নয়নের পর লিউ ইয়ো আবারও নতুন চিন্তাধারা শুরু করেছেন। তিনি একটি পেশাগত দল গঠন করবেন বলে ঠিক করেছেন। এ দল নিয়ে বিভিন্ন স্থানে ট্যামবৌরিণের অনুষ্ঠান পরিবেশন করতে যাবেন। একই সঙ্গে আরও বেশি চীনারা আফ্রিকার ট্যামবৌরিন সম্পর্কে জানতে পারবে এবং এ বাদ্যযন্ত্রটিকে ভালোবাসবে বলে তিনি আশা করেন।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |