|
জোসেফ নিদাম গবেষণাগার ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কোণে অবস্থিত। তার স্থাপত্য রীতিতে কিছুটা প্রাচ্যের ছাপ পাওয়া যায় । গবেষণাগারে চীনের ঐতিহ্যিক আসবাবপত্র রয়েছে । জোসেফ নিদাম গবেষণাগারের বর্তমান মহাপরিচালক প্রফেসর খ্রীষ্টোফার কুলাম বলেন , নিদামের গবেষণা প্রাচীন চীনের বিজ্ঞান ও সভ্যতা সম্পর্কে বিশ্বের বিজ্ঞানী মহলের মনোভাব পরিবর্তন করেছে । তিনি আরো বলেন , এ বছরের গ্রীষ্মকালে আমি বুদাপেস্টে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রের একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নিয়েছি । সম্মেলনে চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে । ৫০ বছর আগে হলে পশ্চিমা দেশগুলোর বিজ্ঞানীরা হয়তো মনে করবেন চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা একটি অদ্ভুত ব্যাপার । সেই সময়কার চীনের বিজ্ঞানীদের বিশ্বের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে চীনের অবদানের কথা জিজ্ঞেস করলে তারা হয়ত বলবেন এতে চীনের কোনো অবদান ছিল না । তারা হয়ত তাদের লেখা প্রবন্ধে বলবেন চীনের ইতিহাসে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উন্নয়নের কোনো প্রয়োজন ছিল না। নিদামের প্রচেষ্টার ফলে প্রাচীন চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ওপর বিশ্বের বিজ্ঞান ক্ষেত্রের মনোভাব পরিবর্তিত হয়েছে ।
জোসেফ নিদাম ১৯০০ সালে ব্রিটেনের একটি বুদ্ধিজীবী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । তিনি ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেইয়াস কলেজে লেখাপড়া করেন । প্রথম দিকে রসায়ন ও জীববিদ্যা ক্ষেত্রে তিনি সুনাম অর্জন করেন । ১৯৪১ সালে বৃটেনের সাংস্কৃতিক কমিটি চীন ও ব্রিটেনের বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা ভবনের মহাপরিচালক হিসেবে জোসেফ নিদামকে চীনে পাঠায় । সেই সময় চীনের জাপ –আক্রমণ বিরোধী যুদ্ধ শুরু হয়েছে মাত্র । তবুও নিদাম বিপদ ও অসুবিধা উপেক্ষা করে চীনের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে প্রাচীন চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উন্নয়নের তথ্য ও সংশ্লিষ্ট বইপত্র সংগ্রহ করার চেষ্টার কোনো ত্রুটি করেন নি । ব্রিটেনে ফিরে যাওয়ার পর নিদাম তার জীবনের বেশির ভাগ সময় নিয়ে প্রাচীন চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উন্নয়নের ইতিহাস গবেষণা করে 'চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ইতিহাস' নামে একটি বই লিখেছেন । প্রফেসর কুলান বলেন , চীন থেকে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যাওয়ার পর তিনি প্রথমে চীনের বিজ্ঞান , প্রযুক্তিবিদ্যা ও চিকিত্সা ক্ষেত্রের অগ্রগতি সম্পর্কিত একটি বই লিখেন । কিন্তু তার সংগ্রহ করা তথ্য বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি এ আস্থা অর্জন করেন যে পাশ্চাত্য দেশগুলোর মধ্যে তিনিই প্রাচীন চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার ইতিহাস লেখারএকমাত্র উপযুক্ত মানুষ । ২৮ খন্ডের এই বইয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যা ক্ষেত্রে প্রাচীন চীনের অবদান উপলব্ধি করতে সাহায্য করেছে ।
গত বছর বৃটেনের নামকরা জীবনী লেখক সাইমন উইনছেস্টার ' চীনের প্রতি ভালোবাসা' নামে জোসেফ নিদামের জীবনী গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন । জীবনীতে তিনি নিদামের উচ্চ মূল্যায়ন করেছেন । তিনি বলেন , জোসেফ নিদাম একজন পরিশ্রমী সেতু নির্মাণকারী । তার গবেষণার বই পড়ার আগে পশ্চিমা দেশগুলো চীনকে তুচ্ছ করতো । নিদাম তার সংগ্রহ তথ্য দেখিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর চীন সম্পর্কিত মনোভাব তুচ্ছ থেকে শ্রদ্ধাশীলে পরিণত করেছেন ।
১৯৯৫ সালে ৯৪ বছর বয়সে জোসেফ নিদাম পরলোকগমন করেন । তার সহকর্মী প্রফেসর কুলান নিদাম সম্পর্কে বলেন , আমি মনে করি তার চরিত্রে দুই ধরনের শক্তি রয়েছে । তার আন্তরিকতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাবের জন্য অনেকে তাকে ভালোবাসেন এবং শ্রদ্ধা করেন । তিনি গবেষণায় তার সর্ব শক্তি নিয়োগ করেছিলেন । এ জন্য তিনি ছাত্রদের ক্লাস নেয়া পর্যন্ত প্রত্যাখ্যান করেছিলেন । হয়ত কিছু মানুষ এ জন্য তাঁকে নিমর্ম বলে মনে করতে পারেন , তবে তার নিরলস প্রচেষ্টা ও অধ্যবসায়ের সঙ্গে কাজ করা অনেকের প্রশংসা কুড়িয়েছে । তার গবেষণা ও বই লেখা তার জীবনের সব । প্রফেসর কুলান বলেন , আপনি তার পথে বাধা হয়ে দাড়ালে নিদাম জোর করে আপনাকে দূরে ঠেলে দেবেন ।
নিদাম চীনকে ভালোবাসেন । যুদ্ধের সময় তিনি নিজের নিরাপত্তার কথা উপেক্ষা করে তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন । একবার তিনি স্থান ত্যাগ করার কয়েক ঘন্টা পরই জাপানী আগ্রাসী বাহিনী তাকে ধরতে আসে । বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যাতে চীনের প্রকৃত অবস্থা ও ইতিহাস জানতে পারে , সেজন্য নিদাম তার জীবনের সব শক্তি নিয়োগ করেছিলেন । চীনের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব পোষণ করে তিনি এ সব কাজ করেছেন । জোসেফ নিদাম আজীবন প্রাচীন চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাফল্য প্রচার করেছিলেন , তিনি চীনা জনগণের একজন প্রকৃত বন্ধু ।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |