|
পর্যকরা শাং হাই-এ ভ্রমণ করলে ' ওয়েই থান' এবং 'নান চিং লু'সহ বিখ্যাত জায়গা ছাড়া, তাদের আরও একটি নতুন বাছাই করা প্রয়োজনীয়। কারণ শাং হাই'র পুরানো শিল্প এলাকায় ১৯ এবং ২০ শতাব্দীর স্থাপত্যগুলো আজকে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
শাংহাই শহরের শা চিন রোর্ডের ১০ নম্বর শিল্প ব্যুরোর জবাই খামার এর মধ্যে অন্যতম। ১৯৩৩ সালে স্থাপিত এ চারটি তোলার স্থাপত্য ছিল সে সময় বিশ্বে আধুনিকীকরণের মাত্র থেকে একটি সর্বোচ্চ এবং প্রথম জবাই খামার। ৭০ বছর কাটিয়েছে, এ স্থাপত্য বিভিন্ন কাজে লাগানো হয়েছিল। তবে এ পর্যন্ত তা আরও আগের রূপ বজায় রেখেছে।
২০০৬ সালে শাং হাই সৃজনশীল শিল্প ব্যবস্থাপনা লিমিটেড কোম্পানি এ জবাই খামারের পুনর্গঠনের কাজ শুরু করে। এখন যা সৃজনশীল ও আধুনিক শিল্পের সাথে মিলে-মিশে থাকার একটি বাণিজ্যিক এলাকায় পরিণত হয়েছে। এ বাণিজ্যিক এলাকার একজন কর্মকর্তা চৌ চিয়ে ইয়ান আমাদের সংবাদদাতাকে বলেন, এখানকার স্থাপত্যগুলো আরও আগের রূপ বজায় রেখেছে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন:
" এ সব স্থাপত্য ইতোমধ্যেই পুরাকীর্তি সংরক্ষণ ইউনিটে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। অবশ্যয়, এখানকার সংশ্লিষ্ট স্থাপত্যগুলোর পুনর্গঠনের কাজ সব পুরাকীর্তি রক্ষার নীতি অনুসারে কঠোরভাবে করেছে। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে স্থাপত্যগুলোর আগের কাঠামো ধ্বংস না করা। শুধু তার ভেতরের কিছু কিছু অংশের সমন্বয় করে।"
জানা গেছে, এ জবাই খামার পুনর্গঠনের আগে মোট ১০ কোটিরও বেশি ইউয়ান আর্থিক সাহায্য পেয়েছে। চৌ চিয়ে ইয়ান বলেন, পুনর্গঠনকাজ এবং বাণিজ্য ও পুঁজি আহরণ প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষ সব রক্ষার ধারণা কঠোরভাবে মেনে চলেছে। এ সম্পর্কে চৌ চিয়ে ইয়ান বলেন:
" একটি সৃজনশীল শিল্প এলাকা হিসেবে পুনর্গঠন এবং উন্নয়নের প্রক্রিয়ায় আমারা কঠোর ব্যবস্থা তুলে ধরেছি। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষ সবাই স্থাপত্যগুলোর কাঠামোর ওপর বেশ গুরুত্ব আরোপ করেছে।"
শিল্প উত্তরাধিকারের বৈশিষ্ট্য রক্ষা জোরদার করার ব্যাপারে অনেক ব্যবসায়ীও উপকৃত হয়েছে। এখানে এসে পর্যটকরা বলেছে যে, এখানকার নিজের স্ববৈশিষ্ট্যসম্পন্ন বিষয় রয়েছে। যা অন্যান্য সৃজনশীল শিল্প এলাকার সাথে একই রকম নয়। ইন্টারনেটে পর্যটদের কথা বলা হয়েছে যে, তারা এখানে পুনরায় আসতে আগ্রহী।
এ শিল্প উত্তরাধিকার এলাকার মত শাং হাই-এ আরও ৩ শ'রও বেশি পুরানোসংস্থা রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শাং হাই পৌর পুরাকীর্তি রক্ষা বিভাগের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে এ সব পুরানো শিল্প উত্তরাধিকারের ওপর ব্যাপকভাবে তদন্ত করা। প্রযুক্তিগত কর্মীরা আধুনিক পদ্ধতি নিয়ে এ অঞ্চলের মৌলিক তথ্য ও আঞ্চলিক পরিবেশ সংক্রান্ত পরিসংখ্যান সংগ্রহ করেছেন। যা পুরানো শিল্প উত্তরাধিকারের পুনর্গঠনে সুষ্ঠুভাবে চালানোর লক্ষ্যে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এ চূড়ান্ত সাফল্যজনক পরিসংখ্যান কীভাবে রক্ষা ও ব্যবহার সম্পর্কে শাং হাই শহরে ইতোমধ্যেই নিজের পুরানো শিল্প উত্তরাধিকার রক্ষা সংক্রান্ত তথ্য ভাগাভাগি ব্যবস্থা এবং বিশেষজ্ঞ পর্যালোচনা ও পরীক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। এ বিস্তারিত ব্যবস্থা বাস্তবায়নের মাধ্যমে শাং হাই'র পুরানো শিল্প উত্তরাধিকার এলাকা ইতোধ্যেই একটি আধুনিক বাণিজ্যিক এলাকায় পরিণত হয়েছে।
শাং হাই'র ' ইয়াং সু ফু' নামক পানি কারখানা হচ্ছে তাদের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত। এ কারখানা হলো ১৮৮৩ সালে ব্রিটেনের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত। এক শ'রও বেশি বছরে এ কারখানা সবসময় তার বৈশিষ্ট্য পালন করেছে। গত শতাব্দীর ৩০ দশকের শেষ দিকে এ কারখানার নিত্য দিনের পানি সরবরাহের পরিমান ছিল ৪ লাখ কিউবিকমিটার। যা হলো দূর প্রাচ্য অঞ্চলে ইতিহাসের দিক থেকে সবচেয়ে সুদীর্ঘকালীণ, পানি সরবরাহের দিকে সর্বোচ্চ এবং সাজ-সরঞ্জাম দিকে সর্বশ্রেষ্ঠ বৃহত্ আকারের পানি কারখানা। এ পর্যন্ত, এ কারখানা আরও ব্রিটেনের ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যের বৈশিষ্ট্য বজায় রেখেছে। উল্লেখ্য, এ কারখানা আরও প্রতিদিন শাং হাই'র পাঁচটি জেলার ২০ লাখ অধিবাসীর পানি সরবরাহের কাজ প্রদান করছে। এ সম্পর্কে এ কারখানার একজন কর্মকর্তা চিয়াং হুং লিন বলেন:
" ১৮৮৩ সালে এ পানি কারখানা খোলা হয়। তখন থেকে এ পর্যন্ত এ কারখানা কখনও কাজ বন্ধ করেনি। শিল্প পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এ কারখানাও ধাপে ধাপে তেজীয়ান হয়ে উঠেছে। বর্তমানে এ কারখানার পানি সরবরাহের পরিমান হয়েছে ১৪ লাখ ৫০ হাজার টনে। সুতরাং, এটি শাং হাই শহরের ২০ লাখেরও বেশি জনের পানি সরবরাহ করতে সক্ষম। এ পরিমান আমাদের শাং হাই'র মোট পানি সরবরাহের এক চতুর্থাংশে দাঁড়িয়েছে। এ কারখানা শুধু ভেতরের কিছু কিছু অংশ পরিবর্তন করেছে। কিন্তু বাইরের রূপ কখনও পরিবর্তিত হয়নি।"
শাং হাই ছাড়া, পেইচিংয়ের বিখ্যাত ৭৯৮ শিল্প অঞ্চল হচ্ছে পেইচিংয়ের পুরানো বেসরকারী শিল্প এলাকাগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি প্রতিনিধি। ৭৯৮ শিল্প অঞ্চল আগে ছিল একটি সরকারী ইলেকট্রোনিক পণ্যদ্রব্য তৈরীর কারখানা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সৃজনশীল শিল্পের ব্যাপক উন্নয়নের প্রক্রিয়ায় কিছু কিছু শিল্পপতি এ কারখানায় এসে তাকে একটি উল্লেখযোগ্য বেসরকারী শিল্প অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। এমন কি, তাকে ২০০৮ সালে পেইচিং অলিম্পিক গেমসের সাংস্কৃতিক পর্যটন স্থান বলে অভিহিত করা হয়।
এছাড়া, ৭৫১ পুরানো শিল্প কেন্দ্রও অনেক তেজীয়ান হয়ে উঠেছে। ৭৫১ শিল্প কেন্দ্র আগে ছিলো গত ৫০ ও ৬০ শতাব্দীতে চীন ও পূর্ব জার্মানীর যৌথ সহযোগিতায় স্থাপিত গ্যাস কারখানা। এখন এখানে এসে আরও গ্যাসের সাজ-সরঞ্জাম এবং পুরানো যন্ত্রপাতি দেখা যায়। তবে এ স্থাপত্যের ভেতরে সংশ্লিষ্ট বিষয় ইতোমধ্যেই ভিন্ন হয়েছে। এর মধ্যে আরও বিখ্যাত কাপড়-পোষাক কারখানা , মোডোল ব্যবসায়ীক কোম্পানি এবং বিজ্ঞাপন নকশা কোম্পানিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের মোট এক শ'রও বেশি কোম্পানি রয়েছে।
৭৫১ পুরানো শিল্প কেন্দ্রের পুনর্গঠনে অংশগ্রহণকারী পেইচিং শিল্প ত্বরান্বিত ব্যুরোর উচ্চ পর্যায়ের ইন্জিনিয়ার ছেন শি চিয়ে মনে করেন, শিল্প সম্পদের পুনঃব্যবহার্য আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বেশ অনেক সাফল্যজনক দৃষ্টান্ত রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন মাত্র উপলদ্ধি করেছে যে, শিল্প উত্তরাধিকারের মূল্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নতুন ধারণা ধাপে ধাপে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের স্বীকৃতি পেয়েছে। এ সম্পর্কে ছে শি চিয়ে বলেন:" এ সব পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ায় আগের পুরানো ও ব্যবহার অযোগ্য স্থাপনাকে পুনরায় ব্যবহার যোগ্য করা হয়। যদি পুরানো স্থাপত্য একটি নিরেট আবর্জনা হিসেবে ধ্বংস করবে , তাহলে এর ভেতরে কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং সাজ-সরঞ্জাম নিশ্চয় আপচয় করতে হবে। অবশেষে আমাদের যৌথ প্রচেষ্টায় এ পুরানো শিল্প কেন্দ্র পুনরায় একটি বেসরকারী শিল্প এলাকায় পরিণত হয়েছে। এভাবেই আগের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি আরও সুষ্ঠুভাবে বজায় রেখেছে।"---ওয়াং হাইমান
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |