Web bengali.cri.cn   
বেথুনকে গবেষণার পন্ডিত স্টেওয়ার্ত
  2009-12-01 21:13:55  cri

১৯৭২ সালে নর্মান বেথুনের মৃত্যুর পর কানাডা তাকে "বিশ্বব্যাপী প্রভাবশালী কানাডা বীরের" অবস্থান দিয়েছে । এরপর নর্মান বেথুনকে গবেষণার লোকজনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে । কানাডার লেখক রোডেরিক স্টেওয়ার্ত হলেন এসব পন্ডিতের মধ্যে অন্যতম । প্রায় ৪০ বছরের সশয়ের মধ্যে তিনি ও তার স্ত্রী শারোন স্টেওয়ার্ত পর পর বেথুন সম্পর্কিত অনেক বই প্রকাশ করেছেন । বলা যায় , তারা নিজের অর্ধেক জীবন বেথুন সম্পর্কিত গবেষণা কাজে অবদান রেখেছেন । একজন পেশাগত পন্ডিত হিসেবে স্টেওয়ার্ত বেশ কয়েক বার চীনে এসেছিলেন । এর ফলে বেথুন সম্পর্কে তার উপলব্ধি আরো গভীর হয়েছে ।

স্টেওয়ার্ত ও তারস্ত্রী ১৯৭৪ সালে বেথুন সম্পর্কিত তাদের প্রথম বই প্রকাশ করেছেন । এ বইয়ের নাম "নর্মান বেথুন" । ১৯৭৫ ও ১৯৭৭ সালে তিনি যথাক্রমে "বেথুন" ও "বেথুনের চিন্তাধারা" নামে দু'টি বই প্রকাশ করেছেন । বেথুন সম্পর্কিত তাদের সর্বশেষ বই "ফিনিক্স-নর্মান বেথুনের সারা জীবন" আগামী বছর প্রকাশিত হবে । ৩০ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে স্টেওয়ার্ত কখনই বেথুন সম্পর্কিত গবেষণা বন্ধ করেন নি । তার আগ্রহ কোথায় থেকে পাওয়া গেছে ? স্টেওয়ার্ত বলেন :

কেন আমি জীবনের এত বেশি সময় নিয়ে বেথুনকে গবেষণা করি এবং তার সম্পর্কিত বই লিখি ? আসলে ঠিক ৪০ বছর আগের এ মাসে আমি প্রথম বারের মত বেথুনের কাহিনী শুনেছি । তার জীবনে আমার মনে সবচেয়ে গভীর ছাপ ফেলার বিষয় হল তার বলি দেয়ার সাহ্যসী । তার গভীর আস্থা এছে । নিজের আস্থার জন্য তিনি মোন্ট্রিল হাসপাতালের চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন , নিজের বন্ধু ত্যাগ করেছেন , নিজের জীবনও বলি দিতে পারেন। ঠিক এ কারণে তিনি ১৯৩৬ সালে স্পেনের ফাসিস বিরোধী যুদ্ধে যোগ দিয়েছেন এবং যুদ্ধ চিকিত্সা ব্যবস্থা স্থাপনকরেছেন । জাপান বাহিনী চীনে আক্রমণের সশয় ১৯৩৮ সালে তিনি আবার চীনে এসেছেন ।

বেথুনকে গবেষণার জন্য স্টেওয়ার্ত বেশ কয়েক বার চীনে এসেছিলেন এবং বেথুন কাজ করার সব জায়গা গিয়েছিলেন । কারণ তিনি বেথুন গবেষণা করার পন্ডিত , তাই প্রতি বার তিনি চীনে আসেন , চীনারা খুব অতিধিপরায়ন করে তাকে অভর্থনা করে । এ জন্য তিনি খুব মুগ্ধ হয়েছেন । তিনি বলেন :

১৯৭২ সাল প্রথম বার চীনে আসা থেকে ২০০৫ সাল শেষ বার চীন সফর পর্যন্ত আমি চীনাদের সম্মান পেয়েছি । ১৯৭২ সালে বেথুন সম্পর্কিত তথ্য পাওয়ার জন্য তারা আমাকে নিয়ে অনেক জায়গায় গিয়েছে , ডাক্তার , নার্স ও বেথুনের সঙ্গে পরিচিত সৈন্যের সাক্ষাত্কার নিয়েছি এবং বেথুনের রোগীর সাক্ষাত্কারও নিয়েছি । ১৯৭৫ সাল ও ২০০৫ সালে চীনা বন্ধু আমার সঙ্গে বেথুন কাজ করার জায়গায় সাক্ষাত্কার নেয়ার জন্য গিয়েছে । প্রতি জায়গার দরজা আমার জন্য খোলা থাকে । প্রায় ৪০ বছরের সময়ে আমাকে সবসময় একজন পুরোনো বন্ধু হিসেবে মনে করা হয় ।

স্টেওয়ার্ত বলেন , বেথুনের কথা উল্লেখ করলে প্রত্যেক জন তাকে একই গল্প বলেছেন । চীনের নেতা নিয়ে রুং চেন চীনের সান সি , ছা হার ও হো পেই প্রদেশের সীমান্ত অঞ্চলের সেনাপতী ছিলেন । ঠিক এ অঞ্চল হল বেথুন কাজ করা এবং মৃত্যু হওয়ার জায়গা । স্টেওয়ার্তের চীনে এসে বেথুনের গল্প সংগ্রহের কথা শুনে নিয়ে রুং চেন স্টেওয়ার্তের সঙ্গে দেখা করেছেন এবং তাকে অনেক সাহায্য করেছেন । স্টেওয়ার্ত বেথুনের দোভাষী তুং ইউয়ে ছিয়ান ও বেথুনের অনেক সহকর্মীর সঙ্গে দেখা করেছেন এবং তাদের সঙ্গে বেথুনের গল্প নিয়ে আলাপ করেছেন । উল্লেখযোগ্য একটি কাজ হল , ২০০৫ সালে যখন স্টেওয়ার্ত আবার চীনের হো পেই প্রদেশে গিয়েছেন , ৮০ বছর বয়সী একজন বৃদ্ধা স্টেওয়ার্তকে বেথুনের গল্প বলেছেন । এ থেকে স্টেওয়ার্ত বুঝেছেন বেথুনকে চীনাদের গভীর অনুভূতি । তিনি বলেন :  

প্রথম থেকেই বেথুনকে লোকজনের অনুভূতির পরিবর্তন হয় নি । ১৯৭২ সালে আমার সাক্ষাত্কার নেয়া অনেক লোকের বয়স অনেক বড় । আমি শি চিয়া চুয়াং শহরে কয়েক দিন থাকি । বেথুনের তখনকার সহকর্মীর সঙ্গে দেখা করেছি , তারা আমাকে বেথুনের অনেক গল্প বলেছেন । বেথুনের মৃত্যু উল্লেখ করলে তারা সবাই কাঁটেন ।

একজন পেশাগত পন্ডিত হিসেবে স্টেওয়ার্ত মনে করেন , যদিও বেথুন চীনে শুধু দু'বছর থাকেন , তবে এ দু'বছর বেথুন অনেক কাজ করেছেন । চীনের বিপ্লবে তার অবদান ও প্রভাব এখনোও লোকজনের মনে থাকে । তিনি বলেন :

আমার মনে হয় বেথুনের সবচেয়ে বড় সাফল্য হল , তার প্রশিক্ষণ করা অধিকাংশ তরুণ তরুণী বিশ্বাস করে , তারা বেথুনের মত চমত্কার ডক্তার হতে পারে এবং ডক্তারের কাজ করতে সক্ষম হবে । যুদ্ধে এবং হাসপাতালে বেথুন এসব তরুণ তরুণীকে প্রশিক্ষণ করার সময় তিনি সবসময় তাদেরকে উত্সাহ দেন । বেথুনের উত্সাহ পাওয়া এসব ছাত্রছাত্রী পরে চীনের বিখ্যাত ডক্তার হয়েছেন ।

স্টেওয়ার্ত মনে করেন , বেথুন ও চীনের সঙ্গে এমন বিশেষ সম্পর্ক থাকার একটি বিশেষ কারণ হল তিনিও একজন কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য । স্টেওয়ার্ত বলেন , তিনি ও তার স্ত্রী বেথুন সম্পর্কে লোকজনের উপলব্ধি বাড়ানোর জন্য চেষ্টা করতে ইচ্ছুক । তিনি বলেন :

আমি ও আমার স্ত্রী বিশ্বাস করি , বেথুন সম্পর্কে লোকজনের আগ্রহ বেড়েই যাবে । গত শতাব্দীর ৭০ দশকে যখন আমি বই কিনি , তখন কানাডা মানুষ বেথুনকে প্রশংসা করতে অস্বীকার করে । কারণ তিনি একজন কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য । তখন স্নায়ু যুদ্ধের সময় । অনেক কানাডা মানুষ কমিউনিস্ট পার্টির বিরোধিতা করে । এখন ঠিক স্নায়ু যুদ্ধ শেষ হওয়ার ২০ বছর বার্ষিকী । আরো বেশি কানাডা যুবক বেথুনকে জানতে আগ্রহী । তবে কানাডা অথবা স্পেনে খুব অল্প যুবক বেথুনকে ভালোভাবে জানতে পারে । চীনকে বেথুনের অবদান সম্পর্কে তারাও জানে না । তাই আমি আশা করি আমাদের বইয়ের মাধ্যমে এমন পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে পারবো ।

এ ছাড়া , স্টেওয়ার্ত আরো বলেন , বেথুন চীন ও কানাডার মৈত্রীর জন্র একটি সেঁতু স্থাপন করেছেন । তিনি আশা করেন নিজের লেখা বইয়ের মাধ্যমে দু'পক্ষের জন্য একটি জানালা খুলতে পারবো ।  

আমি আশা করি আমাদের বইয়ের মাধ্যমে চীন ও কানাডার পারস্পরিক উপলব্ধি বাড়াতে পারি । যে কোনো বই , চলচ্চিত্র , টি ভি নাট্যক , দু'দেশের জনগণের মৈত্রী বাড়ানোর জন্য সহায়ক হলে সে সব বিষয় কাজে লাগানো যায় । চীন সম্পর্কে কানাডা পাঠকের উপলব্ধি বাড়াতে পারি বলে আমরাও খুব খুশি ।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040