Web bengali.cri.cn   
লাউস পরিবারের চীনের জীবন
  2009-11-23 21:01:04  cri
চীন ও লাউসের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উন্নয়নের পাশাপাশি দু'দেশের রাজনীতি , অর্থনীতি ও সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের সহযোগিতা বেড়েই চলেছে । দু'দেশের জনগণের বিনিময়ও আরো ঘনিষ্ঠ হচ্ছে । অধিকতর অধিক চীনারা লাউস জনগণের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে , এবং তাদের মধ্যে কেউ কেউ বিয়ে হয়েছে ।

শ্রোতা বন্ধুরা , আপনারা যে গানটি শুনছেন , তা হল চিং চিং নামে একজন ছোট মেয়ের গাওয়া চীনের তাই জাতীর লোকসঙ্গীত । তার গোলা খুম মধুর এবং তার চীনা ভাষার উচ্চারণ অনেক ভালো । তবে তার মা একজন লাউসের মানুষ । তার নাম পুখাম ওংভিচিত ।

পুখাম লাউসে জন্মগ্রহণ করেন এবং লাউসে বড় হয়েছেন । তিনি ও তার স্বামী ছেং সিয়াও ইয়াংয়ের পরিচয় হওয়া খুব রোমান্টিক । ১৯৯৬ সালে চীন ও লাউস সরকারের সঙ্গে একটি সহযোগিতা প্রকল্প ছিল । তখন ছেং সিয়াও ইয়াং বিশেষজ্ঞ হিসেবে লাউসে গিয়েছেন । প্রকল্পের কারণে ছেং সিয়াও ইয়াং ও পুখামের মায়ের সঙ্গে পরিচয় হয়েছেন । পরে পুখামের মা'র বন্ধুর মাধ্যমে ছেং সিয়াও ইয়াং ও পুখামের পরিচয় হয়েছে । পরে সহযোগিতা প্রকল্প শেষে ছেং সিয়াও ইয়াং চীনে ফিরে এসেছেন । দু'জনের মধ্যে অনেক দূরত্ব হলেও দু'বছর ধরে তারা চিঠির মাধ্যমে যোগাযোগ করেন । ১৯৯৯ সালে যখন ছেং সিয়াও ইয়াং আবার লাউসে গিয়েছেন , তখন তিনি মনের ভালোবাসা নিয়ে পুখামকে বিয়ের কথা বলেছেন । তখনকার কথা স্মরণ করে পুখাম বলেন :

১৯৯৯ সালে যখন তিনি আবার লাউসে গিয়েছেন , তখন আমাকে বিয়ের কথা বলেছেন । বিয়ে একটি বড় ব্যাপার । আমার পরিবারে শুধু আমি একজন মেয়ে আছে , আরো দু'ভাই আছে ।দুই ভাই তখন স্কুলে লেখাপড়া করত । যদিও আমি খুব খুশি , তবুও আমার মনে হয় বিয়ে এত বড় ব্যাপার , মায়ের অনুমোদন পাওয়া উচিত । পরে আমার পরিবার রাজি হয়েছে । কারণ আমার মনে হয় তিনি খুব ভালো মানুষ এবং খুব দায়িত্বশীল মানুষ । তিনি আমার মাকে বলেছিলেন যে , তিনি অবশ্যই ভালোভাবে আমার যত্ন নেবেন ।

ছেং সিয়াও ইয়াং স্কুলে আনুষ্ঠানিকভাবে লাউস ভাষা শেখেন নি । তবে সংবাদদাতার সঙ্গে তিনি সুন্দরভাবে লাউস ভাষা বলতে পারেন । তিনি বলেন , লাউসে কাজ করার সে কয়েক বছরে তার লাউস ভাষা শেখার আগ্রহ অনেক উচ্চু । তিনি বলেন :

আমার লাউস ভাষা তখন কাজ করার সে দুই , তিন বছরের মধ্যে শিখেছি । তখন কাজের জন্য আমরা প্রধানত চীনা ভাষা ও ইংরেজী ভাষা বলি । তবে পুখামের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর আমি অনেক পরিশ্রম করে লাউস ভাষা শেখতে শুরু করি । কারণ ভালোভাবে লাউস ভাষা বলতে না পারলে আমি পুখামের সঙ্গে বিয়ে করতে পারবো না ।

১৯৯৯ সালে দু'জন বিয়ের পর পেইচিংয়ে এসেছেন । লাউসের শান্ত জীবনের তুলনায় পেইচিংয়ের আন্তর্জাতিক বড় শহরের ব্যস্ততা পুখামের জন্য একদম আলাদা অনুভূতি । তিনি বলেন :

যখন প্রথমে পেইচিংয়ে আসি , তখন পার্কে বেতারে গিয়েছি , পার্কের সামনের দরজা থেকে পিছনের দরজায় পৌঁছার জন্য এক ঘন্টা লাগে এবং অনেক ভীড় । তবে লাউসে শুধু উত্সবের সময় রাস্তায় লোকেরা জমে থাকে । তবে পেইচিংয়ে যেন প্রতিদিন উত্সবের মত অনেক মানুষ দেখা যায়। এমন অনুভূতি এখনও ভুলে যাবে না ।

১৯৯৯ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত যেন এক মূহূর্তেই দশ বছর পার হয়ে গেল । এ দশ বছরে পুখাম স্বচোখে পেইচিংয়ের আকাশা পাতাল পরিবর্তন দেখেছেন এবং তার বাড়িতে একটি গাড়িও কেনা হয়েছে । তিনি বলেন :

আমি ১৯৯৯ সালে পেইচিংয়ে এসেছি । এ বছর পর্যন্ত ঠিক দশ বছর হয়েছে । পেইচিংয়ের পরিবর্তন অনেক বড় । শহরের নির্মাণ হোক , যোগাযোগ হোক , বিভিন্ন ক্ষেত্রের অনেক পরিবর্তন হয়েছে । অর্থনীতিও অনেক সমুদ্ধ । বিশেষ করে পেইচিং অলিম্পিক গেমসের জন্য পেইচিংয়ের শহরের নির্মাণ কাজের বিরাট উন্নয়ন হয়েছে । জীবনযাপনের মানেরও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে । যেমন , দশ বছর আগে বাস তেল ব্যবহার করে , তবে এখন বিদ্যুত্ ও প্রাকৃতিক গ্যাস চালিত গাড়ি অনেক বেশি । যদি দুই , তিন বছর এক জায়গায় না যাই , তাহলে পথ হারিয়ে যাবে । পরিবেশের অনেক পরিবর্তন হয়েছে । ব্যক্তিগত গাড়িও অনেক বেশি । পাবলিক যাতায়াত ব্যবস্থাও অনেক উন্নত ।

দশ বছর পার হয়ে গেল । এখন পুখাম দু'মেয়ের মা হয়েছেন । অনুষ্ঠানের শুরুতেই গান গাওয়ার সে মেয়ে হল বড় মেয়ে চিং চিং । তার বয়স ৮ বছর । এখন পেইচিংয়ের উ ই প্রাথমিক স্কুলে লেখাপড়া করে । ছোট মেয়ে চিয়া চিয়ার বয়স ৫ বছর ।পেইচিংয়ে গিংটারগার্ডেনে লেখাপড়া করে । স্কুলে লেখাপড়া করার ছাড়া তারাও পিয়েনো , গান গাওয়াসহ বিভিন্ন বিষয় শিখে ।

যদিও এখন এ পরিবার পেইচিংয়ে থাকে । তবে প্রতি বছর ছেং সিয়াও ইয়াং ও পুখাম দু'মেয়ে নিয়ে লাউসে গিয়ে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করেন ।

মাতৃভূমীর ছাপ সম্পর্কে দু'মেয়ের বিশেষ অনুভূতি আছে । তাদের মনের লাউস অনেক মজা । চিং চিং বলে :

আমি লাউসে বেশ কয়েক বার গিয়েছি । আমি লাউসকে পছন্দ করি । সেখানে অনেক ভিক্ষু আছে এবং অনেক মন্দির আছে ।

চিয়া চিয়া বলে :

আমি লাউসের হাতি পছন্দ করি , তাদের পেঠ অনেক বড় । তারা কাঠ পরিবহন করতে পারে ।

ছেং সিয়াও ইয়াং বলেন , তিনি আশা করেন তার দু'মেয়ে সবসময় লাউসে যেতে পারে । চীনে লেখাপড়ার পাশাপাশি লাউসের সংস্কৃতি উপভোগ করতে পারে । যাতে দু'দেশের জনগণের মৈত্রীর জন্য নিজের অবদান রাখতে পারে ।

চলতি বছর নয়া চীন প্রতিষ্ঠার ৬০তম বার্ষকী । এ সম্পর্কে এ পরিবারের সবাই নিজের মনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন । ছেং সিয়াও ইয়াং বলেন :  

আমরা আন্তরিকভাবে আশা করি চীন ও লাউসের উন্নয়নের মাধ্যমে দু'দেশের মৈত্রীও অব্যাহতভাবে উন্নয়ন হবে । আমরা আশা করি , যখন লাউসের ৪০তম , ৫০তম অথবা ৬০তম জাতীয় দিবসে আমরা লাউসের সমাজ ও অর্থনীতির দ্রুত উন্নয়ন দেখতে পারবো । আশা করি চীন ও লাউসের মৈত্রী সুদীর্ঘ , আশা করি দু'দেশের জনগণের জীবন সুখী হোক ।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040