Web bengali.cri.cn   
বিশ্বের রাজনৈতিক মঞ্চে চীন গুরুত্বপূণ একটি শক্তি
  2009-11-16 21:00:48  cri
৬০ বছরে নয়া চীন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে এখনকার বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ শক্তিতে পরিণত হয়েছৈ । নয়া চীন নিজের উন্নয়ন , অন্য দেশের সম্মান এবং সুষম বিশ্ব গড়ে তোলার ধারণা নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রশংসা পেয়েছে ।

নয়া চীন প্রতিষ্ঠার ৬০তম বার্ষিকী আগে জাতিসংঘের ৬৪তম সাধারণ সম্মেলনের সাধারণ তর্কবিতর্ক ২৩ থেকে ২৯শে সেপ্টেম্বর নিইউয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত হয়েছে । এবার তর্কবিতর্কের প্রধান আলোচ্যবিষয় হল কার্যকরভাবে বিশ্ব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা , বহুজাতিবাদ ও ভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যের সংলাপ জোরদার করা , আন্তর্জাতিক শান্তি , নিরাপত্তা ও উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা । চীনের প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও সম্মেলনের প্রথম দিনে তার ভাষণে আবারও বিস্তারিতভাবে "সুষম বিশ্ব গড়ে তোলার" ধারণা ব্যাখ্যা করেছেন । তিনি উল্লেখ করেছেন , বর্তমান বিশ্বের পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত হাতে হাত রেখে শান্তি , উন্নয়ন , সহযোগিতা , উভয় কল্যাণের চিন্তাধারায় দীর্ঘস্থায়ী শান্তি ও যৌথ সমৃদ্ধের সুষম বিশ্ব গড়ে তোলা । এর জন্য তিনি বিশেষ করে বলেছেন :

আরো ভবিষ্যতমুখী দৃষ্টিভঙ্গিতে নিরাপত্তার বিষয় যাচাই করা , বিশ্বের শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষা করা , আরো সার্বিক চিন্তাধারায় উন্নয়নের বিষয় বিবেচনা করা , যৌথ সমৃদ্ধ ত্বরান্বিত করা , আরো উন্মুক্ত মনোভাবে সহযোগিতা করা , পারস্পরিক উপকারিতা ও উভয় কল্যাণ ত্বরান্বিত করা এবং সুষম সহাবস্থান বাস্তবায়ন করা ।

প্রেসিডেন্ট হু চিন থাওয়ের কথা অনেক দেশের সমর্থন পেয়েছে । লোকেরা ভুলে যাবে না , ১৯৫৪ সালে তখনকার চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই বানদুং এশিয়া ও আফ্রিকা দেশগুলোর সম্মেলনে প্রথমাবারের মত "সহাবস্থানের পাঁচটি নীতি" উত্থাপন করেছেন এবং তৃতীয় বিশ্বের সমর্থন পেয়েছেন । তা আরো ন্যায়সংগত আন্তর্জাতিক শৃংখলা প্রতিষ্ঠার জন্য অবদান রেখেছে । লোকেরা ভুলে যাবে না , ১৯৭১ সালে বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশের যৌথ চেষ্টায় নয়া চীন পুনরায় জাতিসংঘে ফিরে গিয়েছে এবং সার্বিকভাবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে উঠেছে । লোকেরা ভুলে যাবে না , ১৯৮৫ সালে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির পরিবর্তনে তখনকার চীনের শীর্ষ নেতা তেং সিয়াও পিং "শান্তি ও উন্নয়ন হল যুগের দু'টি প্রধান বিষয়" এ কথা উত্থাপন করেছেন । লোকেরা ভুলে যাবে না , ২০০০ সালে তখনকার চীনের প্রেসিডেন্ট চিয়াং চে মিন জাতিসংঘের সহশ্রাব্দী শীর্ষ সম্মেলনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে , শান্তি ও উন্নয়ন বাস্তবায়ন করা হল বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জনগণের অভিন্ন আকাংখা , তাও আমাদের এ যুগের প্রধান বিষয় । লোকেরা ভুলে যাবে না , ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চীনের প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার ৬০তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত শীর্ষ সম্মেলনে "দীর্ঘস্থায়ী শান্তি , যৌথ সমৃদ্ধের সুষম বিশ্ব গড়ে তোলার জন্য চেষ্টা করা" শীরোনামে ভাষণ দিয়েছে । "সুষম বিশ্ব গড়ে তোলা" তখন থেকে চীনের কূটনীতির একটি প্রতিনিধিত্ব শব্দে পরিণত হয়েছে ।

রাশিয়া ও চীন মৈত্রী সমিতির চেয়ারম্যান , রাশিয়ার বিজ্ঞান একাডেমীর দূর পূর্ব গবেষণাগারের প্রধান মিখাইল তিতারেনকো বলেছেন , নয়া চীনের কূটনীতি নিজ অঞ্চল তথা গোটা বিশ্বের শান্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ তাত্পর্য রয়েছে । তিনি বলেন :

১৯৪৯ সালের ১লা অক্টোবর নয়া চীন প্রতিষ্ঠার পর নিজের সমস্যা সমাধান এবং বিশ্বে নিজের মর্যাদা পুনরুদ্ধারের জন্য দেশের নীতির প্রণয়নে চীন একটি কঠোর পথ অতিক্রম করেছে । চীন শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাঁচটি নীতি উত্থাপন করেছে । চীন বরাবরই প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী সহাবস্থানের সম্পর্ক স্থাপনের জন্য চেষ্টা চালিয়ে আসছে । এ দিক থেকে , চীন বিশ্বের শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য বিরাট অবদান রেখেছেন ।

চীন শুধু এসব গুরুত্বপূর্ণ কূটনীতি উত্থাপন করেছে তাই নয় , বরং চীন বাস্তব ব্যবস্থা নিয়ে তা বাস্তবায়ন করছে । একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে চীন বরাবরই বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশের সঙ্গে যৌথভাবে উন্নয়ন করে , যৌথভাবে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয় এবং অন্যান্য দেশকে যথাসাধ্য সাহায্য করে । নাইজেরিয়ার চীন নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত জে ও কোকের বলেছেন , নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি স্থায়ী সদস্য দেশের মধ্যে একমাত্র উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে চীনের ভূমিকা বিরাট । তিনি বলেন :  

চীন একটি উন্নয়নশীল দেশ । চীন হল দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার গুরুত্বপূর্ণ অংশ । চীন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে স্পষ্টভাবে উন্নয়নশীল দেশের স্বার্থ প্রতিনিধিত্ব করে । আমরা এতে কল্যাণকর । আমরা এর জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই ।

৬০ বছর নয়া চীন প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সহাবস্থান করে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের জন্য বিরাট অবদান রেখেছে । ২০০৯ সাল হল নয়া চীন প্রতিষ্ঠার ৬০তম বার্ষিকী , এ বছরও চীন ও রাশিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৬০তম বার্ষিকী । রাশিয়া চীন মৈত্রী সমিতির চেয়ারম্যান , রাশিয়ার বিজ্ঞান একাডেমীর দূর পূর্ব গবেষণাগারের প্রধান তিতারেন্কো বলেন :

স্থিতিশীল উন্নয়নের পরিপ্রেক্ষিতে চীন প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সহাবস্থান সম্পর্ক স্থাপনের জন্য চেষ্টা করছে। তা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সহাবস্থান সহযোগিতা সম্পর্কের একটি গুরত্বপূর্ণ অংশে পরিণত হয়েছে ।

আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি অব্যাহতভাবে পরিবর্তনের পাশাপাশি "শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থানের পাঁচটি নীতি"র ভিত্তিতে চীন আরো বেশি দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে । উল্লেখযোগ্য বিষয় হল , বিশ্বের বৃহত্তম উন্নয়নশীল দেশ ও বৃহত্তম উন্নত দেশ হিসেবে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র ১৯৭৯ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে । দু'দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপের ৩০ বছরেরও বেশি সময়ে যদিও অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয় , তবে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক এগিয়ে চলছে । ২০০৯ সালের শুরুতেই বারাক ওবামা যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন । চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক একটি নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করেছে । মার্কিন কংগ্রেসের একটি মার্কিন-চীন কর্মগ্রুপ এছে । এ গ্রুপের ৫৫ জন সদস্য চীন সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট নীতি প্রণয়নের জন্য প্রস্তাব দেন । এ কর্মগ্রুপের সদস্য বেন চন্দ্রার বলেন , চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক খুব ঘনিষ্ঠ , দু'দেশের সম্পর্ক বিশ্বের উন্নয়নের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ ।

তিনি বলেন :

আমার মনে হয় যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্পর্কের উন্নয়ন বিশ্বের ভবিষ্যতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ । আমরা আশা করি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সুষ্ঠু সম্পর্ক বজায় রাখা হবে । তাও আমাদের কাজের লক্ষ্য । কর্মগ্রুপের প্রধান কাজ হল যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্পর্কের সক্রিয় উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা , কংগ্রেসকে দু'দেশের মৈত্রী বাড়ানো জন্য সহায়ক এমন নীতি প্রণয়নের জন্য সাহায্য করা । যুক্তরাষ্ট্র ও চীন ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত , এ বিষয় উপলব্ধি করা খুব গুরুত্বপুর্ণ , এবং এমন সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরো ঘনিষ্ঠ হবে ।

বিশ্বের সঙ্গে চীনের সমন্বয় বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে চীনও আরো বেশি দায়িত্ব বহন করছে । আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ে চীনের দায়িত্বশীল মনোভাব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রশংসাও পেয়েছে ।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040