|
শ্রোতাবন্ধুরা, পেইচিংয়ের জাঁকজমকপূর্ণ রাস্তা--'ওয়াং ফু চিং। হেঁটে চলা এ ব্যবসায়ীক রাস্তায় চীনের খুব বিখ্যাত একটি আলোকচিত্র স্টুডিও রয়েছে। এর নাম হচ্ছে চীনা আলোকচিত্র স্টুডিও । এ স্টুডিও'র উপ-মহাব্যবস্থাপক সিয়ে ছিয়ান ইয়ুন এখানে ৪৭ বছর ধরে কাজ করেছেন। তিনি আলোকচিত্র বা ছবি তোলা শিল্পের সঙ্গে প্রায় অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে সম্পৃক্ত রয়েছেন। চীনের আলোকচিত্র শিল্পের ক্ষেত্রে তিনি হচ্ছেন সারা দেশে শুধুমাত্র একজন আদর্শবান ব্যক্তি এবং বিশেষ পর্যায়ের আলোকচিত্র শিল্পী। বন্ধুরা, আজকের " সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব" অনুষ্ঠানে আমরা বিখ্যাত আলোকচিত্র শিল্পী সিয়ে ছিয়ান ইয়ুনের গল্প আপনাদেরকে শোনাবো এবং তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবো।
১৯৪৫ সালে সিয়ে ছিয়ান ইয়ুন পেইচিংয়ের একটি সাধারণ নাগরিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পরিবারে সাতজন ভাইবোন রয়েছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরিবারের ভার কমিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে শুধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া শেষ করেই সিয়ে ছিয়ান ইয়ুন চীনা আলোকচিত্র স্টুডিও -এর একজন কর্মচারী পদে যোগ দেন।
১৯৬২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে চীনা আলোকচিত্র স্টুডিওতে কাজ শুরু করেন। শুরুর দিকে তিনি ছবি তোলার বিষয়টি ভালভাবে জানতেন না। শুধু সহায়তা বা সমন্বয়ের কাজ করতেন। কিন্তু তাঁর ভাল নৈপুণ্যের কারণে এখানকার শিক্ষক তাকে বলতেন, নিজের কাজ শেষে তিনি এখানে আলোকচিত্র শিল্পীর কাছ থেকে ছবি তোলার বিষয়টি শিখতে পারেন।এ সম্পর্কে সিয়েন ছিয়ান ইয়ুন স্মরণ করে বলেন:
" সেসময় আমি আলোকচিত্র স্টুডিও -এর একটি কোণায় দাঁড়িয়ে শিক্ষকের সাথে ছবি তোলার বিষয়টি শিখতাম। রাতে স্টুডিও খালি হলে আমি শিক্ষকের ছবি তোলার ক্রিয়াকলাপ মনে মনে ভাবতাম এবং বহুবার চর্চা করতাম"
সময়ের সাথে তাল রেখে সিয়ে ছিয়ান ইয়ুনের নিরলস প্রচেষ্টা অবশেষে তাঁর কর্ম শিক্ষকের প্রচুর প্রশংসা পেয়েছে এবং স্টুডিও -এর ভেতরে ঝোলানো হয়েছে। এ সম্পর্কে সিয়েন ছিয়ান ইয়ুন বলেন:
" একবার আমি একজন পুলিশের ছবি তুলি। শিক্ষক আমার কর্ম দেখার পর আমাকে বলেছেন ' হ্যাঁ, চমত্কার'। যেমন ভাবা তেমন কাজ শিক্ষক এ ছবি বড় করে আমাদের স্টুডিও'র ভেতরে ঝুলিয়েছেন। স্টুডিও'র ছবি বদলের পর, অনেকেই আগ্রহ সহকারে স্টুডিও'র সামনে সমবেত হতে থাকেন"।
১৯৭৮ সালের শেষ দিকে চীনে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ শুরু হয়। এ ছোট্ট আলোকচিত্র স্টুডিওতে বসেই সিয়ে ছিয়ান ইয়ুন প্রত্যেক গ্রাহকের মাধ্যমে সমাজের মৌলিক পরিবর্তন সম্পর্কে জেনেছেন এবং এ সম্পর্কে তিনি বলেন:
" পরিবর্তন খুবই বিরাই। আগে সবার পোষকের রঙ খুবই কম ছিল। শুধু নীল বা সাদা রঙের থাকতো। আগে বিয়ের জন্য আমরা শুধু ৫টি ছবি তুলতাম। তবে এখন বিয়ের আলোকচিত্রের সংখ্যা কমপক্ষে কয়েক শ'রও বেশি।"
সিয়ে ছিয়ান ইয়ুন আরো বলেন, আগে শুধু জীবন বা কর্মকান্ডে ছবি প্রয়োজন হলে, লোকজন আলোকচিত্র স্টুডিওতে এসে ছবি তুলতো। তবে এখন সবাই এখানে আসে শুধু সুন্দর ছবি তোলার জন্য। এছাড়াও, প্রযুক্তি ও সাজ-সরঞ্জামের উন্নয়ন স্টুডিও'র কর্মকান্ডের পদ্ধতিকে পরিবর্তন করে দিয়েছে।
১৯৯৯ সালে সিয়ে ছিয়ান ইয়ুনের নেতৃত্বে কিছু কিছু নবীন আলোকচিত্র শিল্পী চীনের কমিউনিটি, বড় সংস্থা, শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং পেইচিংয়ের নিকটবর্তী অঞ্চলের মানুষের ছবি তুলেছেন। তাদের উচ্চ পর্যায়ের গুণগত মান ও সেবা সবার আন্তরিক স্বাগত পেয়েছে। এভাবেই আলোকচিত্র স্টুডিও'র উন্নয়নও বেশি তেজীয়ান হয়ে উঠেছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, চীনে অনেকেই নিজেদের আলোকচিত্র স্টুডিও খুলেছে। কোন কোন মালিক বেশি বেতন দিয়ে সিয়ে ছিয়ান ইয়ুনকে তাদের স্টুডিওতে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তবে সিয়ে ছিয়ান ইয়ুন তাদের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেন, তাঁর প্রযুক্তি ও অর্জিত সাফল্য সব চীনা আলোকচিত্র স্টুডিওতেই হয়েছে। তিনি তাঁর সারা জীবন এ স্টুডিওতেই কাটাতে এবং এ শিল্পে অবদান রাখবেন।
এখন সিয়ে ছিয়ান ইয়ুন একজন সফল মানুষ। তিনি হচ্ছেন সারা দেশে আলোচচিত্র ক্ষেত্রে শুধুমাত্র একজন দেশব্যাপী শ্রমিক আদর্শবান ব্যক্তি এবং বিশেষ পর্যায়ের আলোকচিত্র শিল্পী । তিনি রাজনীতিবিদ, শিল্পপতি, ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব এবং সামাজিক বিখ্যাত ব্যক্তিসহ অনেকেরই ছবি তুলেছেন। তাঁর শিল্প কর্মও বহুবার পুরস্কার পেয়েছে। একজন আলোকচিত্র শিল্পী হিসেবে সিয়ে ছিয়ান ইয়ুন এ কর্মকান্ডে নিজের অভিজ্ঞতার কথা ব্যাখ্যা করেছেন । এ সম্পর্কে তিনি বলেন:
" একজন মানুষের ৩৬০টি দৃষ্টিকোণ রয়েছে। সে কারণেই ছবি তোলার জন্য আলোকচিত্র শিল্পীর ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। অল্প সময়ের মধ্যে অতিথির পেশাসহ বিভিন্ন দিক থেকে আলোকচিত্র শিল্পীকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটি সবচেয়ে সুন্দর ছবি তোলা উচিত। সুতরাং, আলোকচিত্র শিল্পী একজন শিল্পপতি ও পরিচালক । ছবি তোলার কাজে প্রত্যেকেরই যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালানো উচিত।
সিয়ে ছিয়ান ইয়ুনের স্বাস্থ্য খুব একটা ভাল নয়। তবে ক্যামেরা ধরলে তাঁকে দেখতে বেশি শক্তিশালী মনে হয়। তিনি মনে করেন, আলোকচিত্র শিল্পীর আতিথেয়তার দিক না থাকলে ভাল ছবি তোলা সম্ভব হবে না। তাঁর এ প্রচুর আতিথেয়তা ব্যাপক অতিথির সাথে তার গভীর মৈত্রীর সঙ্গে সম্পর্কিত। এ সম্পর্কে তিনি বলেন:
" চুও চৌয়ে ছবি তোলার সময় আমি অসুস্থ হয়েছিলাম। দ্বিতীয় দিনে একজন বুড়ি স্টুডিওতে এসে জিজ্ঞেস করেন ' সিয়ে সাহেব আছেন?'। সহকর্মীর উত্তরে ' আজ সিয়ে সাহেব ছবি তুলতে পারবেন না'। তবে এ বুড়ি বলেন ' সিয়ে সাহাবের সাথে ছবি তুলবো না। আমি শুনেছি সিয়ে সাহেব অসুস্থ ছিলেন। আমি বিশেষ করে তাঁকে চিকিত্সা করার জন্য এসেছি।"
সিয়ে ছিয়ান ইয়ুন বলেন, ছবি তোলার মাধ্যমে অনেক অতিথির সাথে তাঁর গভীর মৈত্রী হয়েছে। পেইচিংয়ের অলি-গলি রাস্তায় গেলে অনেকেই তাঁর সঙ্গে পরিচিত হতে চান। একজন ডাক্তার, তাঁর জন্ম থেকে বিয়ে পর্যন্ত প্রায় অর্ধ বছরে সিয়ে ছিয়ান ইয়ুনের স্টুডিওতে ছবি তুলেছেন। এখন এ ডাক্তারের ছেলের জন্ম হয়েছে। আবার ছেলেকেও নিয়ে এখানে ছবি তুলতে এসেছেন।
চীনের বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম বহুবার সিয়ে ছিয়ান ইয়ুনের সাক্ষাত্কার নিয়েছে। তাঁকে সাধারণ জনগণের আলোকচিত্র শিল্পী বলে অভিহিত করেছে। এ সম্পর্কে সিয়ে ছিয়ান ইয়ুন বলেন:
" আমার শিক্ষক আমাকে কখনও প্রশংসা করেননি। কমপক্ষে আমার মুখোমুখি প্রশংসা করেননি। তবে একবার আমি আমার শিক্ষককে জিজ্ঞেস করি যে, ' শিক্ষক ,আমি কি আপনার মুখে ময়লা দিয়েছি' ? শিক্ষকের উত্তরে বলেছেন ' না ,কখনও'। হ্যাঁ, শিক্ষকের এ কথা শোনাই আমার জন্য এটি যথেষ্ট"। --ওয়াং হাইমান
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |