Web bengali.cri.cn   
পশ্চিম চীনের লোকসংগীত রাজা ওয়াং লো পিং
  2009-10-28 19:58:40  cri

আজকের অনুষ্ঠানে চীনের একজন নামকরা লোকসংগীত রচয়িতার কাহিনী আপনাদের শোনাবো আমি ফোং সিউ ছিয়েন । এ লোকসংগীত রচয়িতার নাম ওয়াং লো পিং । তার জন্মস্থান পেইচিং হলেও তিনি দীর্ঘকাল পশ্চিম চীনের ছিংহাই প্রদেশে জীবনযাপন করেন । দীর্ঘ ৬২ বছরে ওয়াং লো পিং প্রায় এক হাজারটি গান লিখেছিলেন । তার রচিত ' চাই না ইয়াও ইউয়ে দে তি ফান ' , ' সিয়েন ছি নি দে কাই থৌ লা ' ও ' বান কে ইউ লিয়ান ফা শান লা'সহ প্রায় ৫০টি লোকসংগীত চীনাদের কাছে খুব প্রিয় গান , এখনও আবালবৃদ্ধবনিতা তার এ সব গান গাইতে পছন্দ করেন ।

১৯৪০ সালের বসন্তকালে ওয়াং লো পিং পশ্চিম চীনের ছিংহাই প্রদেশে থাকাকালে 'চাই না ইয়াও ইউয়েন দে তি ফান ' নামে একটি গান লিখেছিলেন । ছিংহাই প্রদেশের পর্বতমালা ,বিশাল তৃণভূমি এবং হ্রদের নীল স্বচ্ছ পানি দেখে নিসঙ্গ পশুপালক ওয়াং লো পিং মুগ্ধ হন । তিনি ছিংহাই হ্রদের ধারে বনে এ বিখ্যাত লোকসংগীতটি লেখেন । এ গান তার রচিত গানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত বলে তিনি গানটি তার কবরের স্মৃতিপ্রস্তরে খোদাইয়ের সিদ্ধান্ত নেন ।

১৯১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে ওয়াং লো পিং পেইচিংয়ের এক কর্মচারী পরিচারে জন্মগ্রহণ করেন । ১৯৩৪ সালে তিনি পেইচিংয়ের শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগে ভর্তি হন । ১৯৩৭ সালে জাপ- বিরোধী যুদ্ধ শুরুর পর ওয়াং লো পিং জাপ-আক্রমণ বিরোধী সংগ্রামে অংশ নেয়ার জন্য পশ্চিম চীনে যান । যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরেও তিনি ছিংহাই ত্যাগ করেন নি , কারণ তিনি মনে করেন পশ্চিম চীনের প্রাকৃতিক দৃশ্য ও পরিবেশ তার গান রচনার ক্ষেত্রে সাহায্য করে ।

ওয়াং লো পিং ছিংহাই প্রদেশের অনেক লোকসংগীত সংগ্রহ করেন । এসব লোকসংগীতের ভিত্তিতে তিনি তার গানের সুরের কিছু রদবদল করে লোকসংগীতটি আরো শ্রুতিমধুর করার চেষ্টা করেন । উইগুর জাতির লোকসংগীত ' আলামুহান ' এসব গানের মধ্যে অন্যতম । এ লোকসংগীতে দুজন নৃত্যশিল্পীর নাচের সঙ্গে সঙ্গে কথাবার্তার মাধ্যমে প্রেমিকার প্রতি প্রেমিকের ভালোবাসা চমত্কারভাবে ফুটে উঠেছে । এ গানের সুর চঞ্চল আর কথাগুলো রহস্যপূর্ণ । ওয়াং লো পিংয়ের ছাত্র চান শি ছাই বলেন , ওয়াং লো পিং তার সংগ্রহ করা স্থানীয় লোকসংগীতের পুনর্লিখনের কাজ করেন । সংখ্যালঘু জাতির লোকসংগীতগুলোর সঙ্গে তিনি হান জাতির সংস্কৃতি , হান জাতির ভাষার উচ্চারণ ও সুরের সমন্বয় করে স্থানীয় লোকসংগীতকে আরো শ্রুতিমধুর ও জনপ্রিয় করে তুলেছেন । লোকসংগীত ' আলামুখান ' তার পুনর্লিখিত গানের একটি দৃষ্টান্ত , পুনর্লিখনের পর গানটির সুর আরো ধীরস্থির ও শ্রুতিমধুর হয়েছে। 

অনেকে মনে করেন , ওয়াং লো পিং সারা জীবন গান রচনা করেছেন , তাই তিনি হয়ত সব সময় শ্রোতা ও সংগীত অনুরাগীর ফুল ও হাততালির মধ্যে জীবনযাপন করেন । প্রকৃতপক্ষে ওয়াং লো পিংয়ের জীবন অভিজ্ঞতা খুবই কষ্টকর । তার জীবনের প্রায় ২০ বছর তিনি তথাকথিত অভিযোগে জেলখানায় কাটিয়েছেন। কিন্তু তিনি জেলখানায়ও সৌন্দর্য্য খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন এবং অনেক গান রচনা করেন । ওয়াং লো পিংয়ের গানের গবেষণা কাজে নিয়োজিত পন্ডিত লিউ শু হুয়ান বলেন , যারা ওয়াং লো পিংয়ের জীবন অভিজ্ঞতা জানেন এবং তার গান পছন্দ করেন , তারা সবাই তাকে শ্রদ্ধা করেন । মিথ্যা অভিযোগে তাকে কয়েকবার জেল খাটতে হয়েছিল , তবুও তিনি নিরাশ হন নি । তিনি জেলখানায়ও অন্যদের গুন আবিষ্কার করার চেষ্টা করেছিলেন । মৃত্যুর আগে তিনি বলেন , আমি আমার গানের মাধ্যমে সবাইকে জীবনের সৌন্দর্য দেখাতে চাই । জেলখানায় তিনি বলেন , বন্দী হলেও আমি জানি আমি কোনো খারাপ কাজ করি নি । তাই আমি জেলখানায়ও প্রেমের গান লিখেছি । আমি গান লেখার মাধ্যমে সব ধরনের দুঃখকষ্টের মোকাবিলা করেছি ।

গত শতাব্দীর ষাটের দশকে জেলখানায় ওয়াং লো পিং ' সা আ তাই ' নামে একটি গান লিখেন । সা আ তাই উইগুর জাতির একটি মেয়ে , উইগুর ভাষায় সা আ তাইয়ের অর্থ সুখশান্তি । সা আ তাই জেলখানার একজন রক্ষী । একদিন সা আ তাই মাথায় রঙীন রুমাল আর গায়ে সুন্দর পোশাক পরে সবার সামনে হাজির হন । তাকে দেখে সব বন্দী মুগ্ধ হন । ওয়াং লো পিং কোনো মতেই জেলখানার এই সুন্দরী মেয়েকে ভুলতে পারেন নি । বেশ কয়েক বছর পর জেলখানা থেকে মুক্তি পেয়ে ওয়াং লো পিং নারী রক্ষী সা আ তাইয়ের উদ্দেশ্যে এই গানটি রচনা করেন ।

সিনচিয়াংয়ের অনুবাদক চাও কো তুং একসময় ওয়াং লো পিংয়ের সঙ্গে একই জেলখানায় ছিলেন । তিনি বলেন , জেল খাটা এক অপমানজনক ব্যাপার । তবে ওয়াং লো পিং জেলখানায় নিরাশ হন নি , ভেঙ্গে পড়া তো আরো দূরের কথা । জেলখানায় রচিত গানগুলো তার প্রমাণ। জেল থেকে মুক্তির পর তিনি আগের মতো গান রচনা করেন । দীর্ঘদিন ধরে সুবিধা ও অসুবিধাজনক অবস্থায় ওয়াং লো পিং মনের স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখার চেষ্টা করেছিলেন । এটা খুব একটা সহজ ব্যাপার নয়। 

পশ্চিম চীনের ছিংহাই প্রদেশে ওয়াং লো পিং অনেক বছর ছিলেন । সেখানে তিনি অনেক সুন্দর সুন্দর গান লিখেছিলেন । তার স্মৃতির জন্য এ বছরের ২৯ জুন ছিংহাই প্রদেশের সবচেয়ে মনোরম মৌসুমে ওয়াং লো পিংয়ের সংগীত শিল্পকলা ভবন হাইপেই বিভাগের সি হাই মহকুমায় উদ্বোধন করা হয়। এ ভবনে ওয়াং লো পিংয়ের অনেক ছবি , তার ব্যবহার করা দ্রব্যগুলো এবং গান ও গীতিনাট্যের পাণ্ডুলিপি প্রদর্শিত হয়েছে । চীনের কেন্দ্রীয় গীতিনাট্য থিয়েটারের সাবেক মহাপরিচালক , প্রখ্যাত সুরকার লিউ শি চিন বলেন , আরো বেশি মানুষের ওয়াং লো পিংয়ের রচিত গান চর্চা করাই ওয়াং লো পিংকে শ্রদ্ধা নিবেদনের সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি ।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040