|
এটা হল সি ছুযান প্রদেশের ছেং তু শহরে চীন-জাপান মৈত্রী কেন্দ্রের একটি জাপানী ভাষা স্কুলের জাপানী ভাষা কোনার । প্রতি সপ্তাহের ছুটিতে এখানে জাপানী ভাষা শিখতে আগ্রহী এবং জাপান সম্পর্কে জানতে আগ্রহী এমন ছেং তু নাগরিকদের জন্য বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয় । যাতে জাপানের রীতিনীতি ও সংস্কৃতি অবহিত করতে পারে । আপনারা এ মাত্রই যে গানটি শুনছেন , তাহল ৭০ বছর বয়সী সাকামাটো শিজুকো সবাইকে জাপানী গান শেখাচ্ছেন ।
সাকামাটো শিজুকো এখন ছেং তু শহরে থাকেন । ২০০৪ সালে এ জাপানী ভাষা স্কুলে শিক্ষাদান শুরুর পর এখন পর্যন্ত তিনি ৫ বছর ধরে এ কাজ করেছেন । ১৯৮৮ সালে তিনি প্রথমবারের মত চীনে এসেছেন এবং ছেং তু শহরকে ভালোবেসেছেন । তখনকার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন :
তখন আমি একটি পর্যটন দলের সঙ্গে চীনে এসেছি । আমাদের প্রথম ধাপ হল পেইচিং , তারপর ছেং তু শহরে এসেছি । এরপর আমরা কুই লিন , কুয়াং চৌ ও হংকংয়ে গিয়েছিলাম । কারণ ছেং তুতে থাকার সময় বৃষ্টি পড়ে , তাই আমার মনে ছেং তু একটি ছাই রংয়ের শহর ।
তবে ছেং তু এ শহর সাকামাটোর মনে গভীর ছাপ ফেলেছে । কারণ ছেং তুয়ের একটি পর্যটন দোকানে তিনি সেখানে কাজ করা ছেং তু নাগরিক লি হুই ছুনের সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন । সাকামাটো মনে করেন লি হুই ছুনের হাঁসি খুব মুগ্ধকর , তাই তাকে একটি ছবি তুলেছেন এবং লি হুই ছুনের সঙ্গে ঠিক করেছেন যে জাপানে ফিরে যাওয়ার পর এ ছবিটি লি হুই ছুনকে পাঠাবেন । তবে জাপানে ফিরে যাওয়ার পর সাকামাটো আবিস্কার করেছেন যে ফিল্ম ভালোভাবে লাগানো হয় নি বলে ছবিটি তোলা হয় নি । সাকামাটো এর জন্য লি হুই ছুনকে একটি দুঃখিত জানানোর চিঠি লিখেছেন । তিনি বলেন :
কারণ তখন আমি চীনা ভাষা জানি না , তাই জাপানী ভাষায় চিঠি লিখেছি আমি , আশা করি কেউ এ চিঠি তার জন্য পড়ে শোনাবেন । এক মাসের পর আমি তার লেখা চিঠি পেয়েছি । যদিও আমি জানি না চিঠিতে তিনি কী লিখেছেন , তবুও আমি খুব খুশি হয়েছি । আমি অনেকের কাছ থেকে এ চিঠির বিষয় জানানোর সাহায্য চেয়েছি । প্রায় আধা বছরের পর আমি চিঠির বিষয় পুরোপুরিভাবে বুঝতে পেরেছি ।
এরপর সাকামাটো আবার লি হুই ছুনকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন , তবে এবার তিনি আর কোনো চিঠি পান নি । লি হুই ছুনের সঙ্গে তার যোগাযোগ বন্ধ হয়েছে । তিন বছর পর সাকামাটো জাপানের হিরোশিমায় লেখাপড়া করা একজন ছেং তু নাগরিকের মাধ্যমে আবার লি হুই ছুনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেন । এরপর তারা ভালো বন্ধু হয়েছে ।
এ অভিজ্ঞতা সম্পর্কে লি হুই ছুনের স্বামী সিয়ে চেং ফু সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন , এমন বিনিময় প্রথমে তার কাছে গ্রহণযোগ্য নয় । কারণ গত শতাব্দীর ৩০ ও ৪০ দশকে চীনে জাপানের আক্রমণ যুদ্ধে সিয়ে চেং ফুয়ের পরিবারের কয়েকজন যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে , কেউ কেউ প্রাণ হারিয়েছে । তাই প্রথমে নিজের স্ত্রী জাপানীর সঙ্গে বিনিময় করতে তিনি বিরোধিতা করেন । তবে পরে তিনি জানতে পেরেছেন যে সাকামাটোও যুদ্ধে বিরোধিতা করেন , তার মনোভাবের পরিবর্তন হয়েছে । তিনি বলেন :
চীনকে তার ভালোবাসা আছে । পরে আমি জানতে পেরেছি যে তার পরিবারও যুদ্ধের শিকার । যুদ্ধকে তিনিও গভীরভাবে ঘৃণা করেন । এ ছাড়াও তিনি হিরোশিমায় জাপান-চীন মৈত্রী সমিতির সদস্য , আস্তে আস্তে আমার মনোভাবের পরিবর্তন হয়েছে।
১৯৯২ সালে সামামাটো দ্বিতীয় বারের ত ছেং তুতে এসেছেন । ১৯৯৭ সালে তিনি ছেং তুতে কাজ করার একটি সুযোগ পেয়েছেন । তখন একটি পর্যটন এজেন্সীতে কাজ করা বন্ধুর আমন্ত্রণে তিনি ছেং তুতে এক বছর ধরে কন্সুলেটের কাজ করেন । তখন তার প্রধান কাজ হল পর্যটন এজেন্সীর জন্য সংশ্লিষ্ট দলিলের অনুবাদ করেন । তিনি বলেন :
সবচেয়ে কঠিন কাজ হল ব্যাংকে যাওয়া । ব্যাংকে কর্মীরা আমাকে বিভিন্ন ফোর্ম ব্যাখ্যা করেন , তবে তাদের ভাষা আমি কিছুই বুঝতে পারি না । পরে তারা আমাকে জেনেছেন এবং আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন ।
সামামাটো ছেং তু জীবন সম্পর্কে অনেক ভালোবাসেন । সম্ভব হলে তিনি সারা জীবন এখানে থাকতে চান । তবে এক বছর পর তার দেশে ফিরে যেতে হয় । জাপানে ফিরে যাওয়ার পর তিনি ছেং তুতে থাকার সময়কে খুব স্মরণ করেন , টি ভি অনুষ্ঠানে ছেং তু সম্পর্কিত খবর দেখে তিনিও খুব খুশি । তিনি জাপানে চীনা ভাষা শেখেছেন এবং স্বেচ্ছায় চীনা ছাত্রছাত্রীদের জাপানী ভাষা শেখান । ২০০৩ সালে লি হুই ছুন তাকে একটি ফোন করেছেন এবং জানিয়েছেন যে তিনি নতুন একটি বাড়ি কিনেছেন এবং তার জন্য একটি রুম সংরক্ষণ করেছেন ।
২০০৪ সাল সামামাটো ছেং তুতে দীর্ঘস্থায়ীভাবে থাকার একটি সুযোগ পেয়েছেন । ছেং তুয়ের একটি চীন-জাপান মৈত্রী সমিতির একটি জাপানী ভাষা স্কুলে ভাষা শেখানোর একটু চাকরি পেয়েছেন । তবে এ চাকরির কোনো বেতন নেই । এমন অবস্থায় সামাকাটো লি হুই ছুনকে তার বাসায় থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন । লি হুই ছুন বলেন :
তিনি আমার বাসায় থাকতে চান , আমরাও খুব খুশি । তিনি আমাকে এত বিশ্বাস করেন , আমিও তাকে বিশ্বাস করি । আমরা তাকে নিজের বড় বোনের মত দেখি । তিনি আমাদেরকে তার আত্মীয়স্বজন হিসেবে দেখেন । তিনি নিজের দেখ ছেড়ে ছেং তুতে এসেছেন , আমাদের উচিত তাকে যত্ন নেয়া ।
ছেং তু থাকার সময় সাকামাটো এ শহরের পরিবর্তনও স্বাচোখে দেছেন । তিনি বলেন :
এখানে উচ্চু ভবন অনেক বেশি , মোটর গাড়ির সংখ্যাও বেড়েছে । আমার মাতৃভূমি হিরোশিমা এসব বছরের পরিবর্তন বেশি নয় , তবে ছেং তু শহরের পরিবর্তন উল্লেখযোগ্য । যখন আমি প্রথমবার ছেং তু শহরে আসি , তখন এখানে যেন একটি ছোট থানার মত , তবে এখন একটি বড় আনুধনিক শহরে পরিণত হয়েছে । চীনের অর্থনীতির উন্নয়ন অতি দ্রুত এবং প্রাণচঞ্জল । তা হয়তো এসব পরিবর্তনের কারণ ।
সাকামাটো বলেন , সম্ভব হলে তিনি সবসময় ছেং তু শহরে থাকতে চান । তিনি বলেন :
আমি জানি না কেন , কিন্তু আমি ছেং তু শহরকে অনেক পছন্দ করি । আমি সি ছুয়ানের খাবর পছন্দ করি , এখানকার মানুষ ও এ শহরকে আরো ভালোবাসি ।
যদিও সাকামাটো ছেং তুকে অনেক ভালোবাসেন , তবে জীবনযাপনের সমস্যা এবং স্বাস্থ্যের সমস্যার কারণে তিনি আগামী বছর দেশে ফিরে যেতে হবে । এ সম্পর্কে তিনি বলেন :
আমি জানি না জাপানে ফিরে যাওয়ার পর আমি অনুতাপ করবো কি না । যতিও আমি বলেছিলেন যে চীনে ম্যৃতু হতে চাই । তবে আসলে তা সম্ভব হবে না । এখন আমি আশা করি ছেং তুতে থাকার সময় আরো বেশি হবে । এখানকার তরুণ তরুণীর সঙ্গে চীনা ভাষা ও জাপানী ভাষা শেখা হল আমার বৃহত্তম আশা ।
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |