|
প্রফেসর কিম হেউং কিউ দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল বিশ্ববিদ্যালয়ে পররাষ্ট্র বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক বিষয়ের ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়েছেন । তিনি চীন ও উত্তর-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর রাজনীতি গবেষণা করে অনেক প্রবন্ধ লিখেছেন । নয়া চীনের সাফল্য সম্পর্কে তিনি বলেন , সংস্কার আসলে বিপ্লবের চেয়েও কঠিন কাজ । ১৩০ কোটি জনসংখ্যাসম্পন্ন চীনের পক্ষে সমাজতান্ত্রিক পরিকল্পনা অর্থনীতি থেকে বাজার অর্থনীতিতে রূপান্তর করা সহজ ব্যাপার নয় । কিন্তু চীন সাফল্যের সঙ্গে এ রূপান্তর কাজ সম্পন্ন করেছে । এটা চীনের সরকার , নেতা ও চীনা জনগণের অর্জিত বিরাট সাফল্য ।
২০০৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চীনের প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার ৬০তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত শীর্ষ সম্মেলনে ' স্থিতিশীল শান্তি ও অভিন্ন সমৃদ্ধির সুষম বিশ্ব গড়ে তোলার চেষ্টা করুন ' নামে একটি ভাষণ দিয়েছেন । তিনি তার ভাষণে সুষম বিশ্ব গড়ে তোলার নতুন তত্ত্ব পেশ করেন । প্রফেসর কিম হিউং কিউ মনে করেন , চীন দ্রুত উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সুষম উন্নয়নের নতুন পদ্ধতি পেশ করেছে । এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন , বিশ্বের ইতিহাসে সাধারণত নতুন শক্তিশালী দেশের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশ ও অন্যান্য শক্তিশালী দেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব বেশি , এমন কি যুদ্ধও বাধে । কিন্তু চীন প্রতিবেশী দেশ ও শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সুষম সম্পর্ক প্রসারের চেষ্টা করছে । এটা এক নতুন উন্নয়ন পদ্ধতি ।
চীন বরাবরই সুপ্রতিবেশীসুলভ নীতি অনুসরণ করে আসছে । সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা , এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলের অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংস্থা , আসিয়ানের আঞ্চলিক ফোরাম ও দক্ষিণ এশিয়ার সহযোগিতা সংঘের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উন্নয়ন ও আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর চেষ্টা করে । চীনের এ প্রচেষ্টা শুধু নিজের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাহিদা মেটানোর জন্য নয় , বরং তার কৌশলগত তাত্পর্যও রয়েছে । তাই চীনের পররাষ্ট্র নীতি , বিশেষ করে তার প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি নীতি প্রশংসার দাবিদার ।
বর্তমানে উত্তর-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি , বিশেষ করে কোরীয় উপদ্বীপের পরিস্থিতি সম্পর্কে অনেকেই চিন্তিত । চীন ছ'পক্ষীয় বৈঠকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে সহযোগিতা করে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে । তিনি বলেন , চীনের প্রচেষ্টা সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর অব্যাহত সংলাপের জন্য পরিবেশ সৃষ্টি করেছে এবং সমস্যা সমাধানের জন্য অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছে । চীন উত্তর-পূর্ব এশিয়ার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সম্ভাবনা দেখিয়ে দিয়েছে ।
১৯৯২ সালের আগষ্ট মাসে চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে কুটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয় । দু দেশের মিলিত প্রচেষ্টায় দুদেশের সম্পর্কের দ্রুত প্রসার ঘটেছে । দুদেশের উচ্চ পর্যায়ের সফর বিনিময়ের মাধ্যমে পারস্পরিক আস্থা বেড়েছে , অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা বাড়ছে এবং সংস্কৃতি , শিক্ষা এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রের বিনিময় ও সহযোগিতা দিন দিন গভীর হচ্ছে । ২০০৮ সালে দুটি দেশ কৌশলগত সহযোগিতার অংশীদারিত্বের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিয়েছে । বর্তমানে চীন হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রথম বাণিজ্যিক অংশিদার দেশ এবং দক্ষিণ কোরিয়া হল চীনের তৃতীয় বাণিজ্যিক অংশাদার দেশ । প্রতিদিন শতাধিক ফ্লাইট চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে যাতায়ত করছে । তিনি বলেন , চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার সম্পর্ক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ইতিহাসের একটি দৃষ্টান্ত । দুদেশের মধ্যে যোগাযোগ ও সহযোগিতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু সংঘর্ষ দেখা দেবে । এটা স্বাভাবিক ব্যাপার । স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেও দ্বন্দ্ব থাকে । ২০০৮ সালে দুদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত কৌশলগত সহযোগিতার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা সম্পর্কিত যুক্তবিবৃতি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পরিচালনার এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল ।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |