|
যিনি অনুষ্ঠানের শুরুতেই তাঁর শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। তাঁর নাম রাশেদুল ইসলাম। তিনি পেইচিং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বাংলাদেশী ছাত্র। তার চীনে আসার মাত্র দু'বছর হলেও তিনি খুব সাবলীলভাবে চীনা ভাষায় কথা বলতে পারেন। এমন কী চীনের ঐতিহ্যবাহী প্রবাদ ও গল্পও বলতে পারেন।
শারদীয় উত্সব ইংরেজীতে 'মিডল অটমস ডে' চীনের ঐতিহ্যবাহী উত্সবের মধ্যে অন্যতম। চীনের চান্দ্রিক পঞ্জিকা অনুযায়ী প্রতি বছরের আগস্ট ১৫ই এ উত্সব উদযাপন করা হয়। আগস্ট ১৫ প্রতি শরত্কালের মাঝখানের দিন। সেজন্য এ দিনের নাম রাখা হয়েছে মিডে অটমস ডে। শারদীয় উত্সবের আরেকটি নাম পুনর্মিলনের দিবস। অতিকাল থেকেই এ দিবসে সবাই বাড়িতে ফিরে পুনর্মিলিত হওয়ার রীতিনীতি প্রচলিত রয়েছে। সারা বছরই যারা বাড়ি থেকে দূরে থাকেন। তারা বাড়িতে ফেরার চেষ্টা চালান। রাতের বেলায় পরিবারের সবাই একসাথে বসে আড্ডা মারার পাশাপাশি চন্দ্র উপভোগ ও মুনকেক খেতে থাকেন। বাইরে থেকে যারা বাড়িতে ফিরতে পেরেন না তারাও এ দিন চন্দ্রের দিকে তাকিয়ে থাকেন এবং দূরে থাকা আত্মীয়স্বজনকে স্মরণ করেন। আগামী তেসরা অক্টোবর চীনের শারদীয় উত্সব। প্রায় একই সময় নয়া চীন প্রতিষ্ঠার ৬০তম বার্ষিকীর ছুটির দিন। দু'উত্সব মিলিয়ে সবাই আট দিনের সরকারী ছুটি ভোগ করেন। যা উত্সবের জন্য আনন্দমন পরিবেশ সৃষ্টি করে। শারদীয় উত্সবের দিনটি যতই ঘনিয়ে আসছে। বিভিন্ন স্থানে জনসাধারণের মধ্যে শারদীয় উত্সব ততই আনন্দময় হয়ে উঠছে।
আসন্ন শারদীয় দিবসের উল্লেখ করে ইয়েমেনের আব্দুলাহ আলি সালেহ আনন্দের সঙ্গে আমাদের বলেছেন, "চীনের শারদীয় উত্সবের মজার রীতিনীতি রয়েছে। চীনে আসার পর, আমি প্রতি বছর শারদীয় উত্সবে চীনা ও অন্যান্য দেশের বন্ধুদের সঙ্গে মিলিত হয়ে চন্দ্র উপভোগ করি, মুনকেক খাই এবং আড্ডা মারি। এটা খুব আনন্দের।
অনেক বিদেশী চীনা ভাষা শেখার সময় চীনের অনেক ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিও জানতে পেরেছেন। যেমন তারা বিভিন্ন রীতিনীতি, দেবতার গল্প এবং কিংবদন্তী জানেন। শারদীয় উত্সবের গল্প উল্লেখ করে বাংলাদেশী ছাত্র রাশেদুল ইসলাম সাক্ষাত্কারে বলেছেন, শারদীয় উত্সবের কিংবদন্তী অনেক আছে। রাশেদুল ইসলামের উল্লেখিত "ছাং এ বেন ইয়ু" ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়। বলা যায় অতীতকালে হৌ ই নামের একজন বীর ছিলেন। তিনি মানুষের জন্য অনেক ভালো কাজ করেছেন। তার স্ত্রীর নাম "ছাং এ", তাঁরা সুখের জীবন কাটিয়েছিলেন। তারা অমর হয়ে থাকার জন্য হৌ ই অনেক কষ্ট করে স্বর্গের রানীর কাছ থেকে একটি মৃত সঞ্জিবনী সুধা উপহার পেয়েছেন। হৌ ই'র এক ছাত্র এ খবর জানতে পারে। ওই ছাত্র হৌ ই বাড়িতে না থাকার সময় এক দিন সে ওই বাড়িতে গিয়ে 'ছাং এ'কে এ ঔষধ সেবনে বাধ্য করে। 'ছাং এ' কোনো উপায় না দেখে এক চুমুক করে ঔষধটা খেয়ে ফেলেন। তখনই তার শরীর ধোঁয়ার মত হালকা হয়ে স্বর্গের দিকে উড়ে যায়। এর পর ছাং এ চন্দ্র প্রাসাদের দেবী হয়ে যান। এ দিন ছিল ১৫ আগস্ট। হৌ ই বাড়িতে ফিরে এ খবর জেনে খুব কষ্ট পান। তাঁর স্ত্রীর স্মরণে তিনি বাড়িতে ফলমুলসহ বিভিন্ন খাদ্য হাজির করেন এবং পূর্ণিমা চাঁদের দিকে তাকিয়ে প্রার্থনা করেন। হৌ ই'র একই অঞ্চলের অধ্যুষিত লোকেরা হৌ ই ও ছাং এ'র প্রতি শ্রদ্ধা জাননোর জন্য হৌ ই'র মতো চন্দ্র প্রার্থনা শুরু করেন। সময়ের কালক্রমে ১৫ আগস্ট সবাই পুনর্মিলিত হয়ে চন্দ্র উপভোগ করার এমন একটি উত্সবে পরিণত হয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলো চীনারা এ ঐতিহ্যবাহী উত্সবের ওপরে আরো বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। অনেকে মনে করেন যে, এ উত্সবের ছুটিতে পরিবারের সবাই ব্যস্ততা পাশে রেখে একসাথে বসে আড্ডা মারে, বা বাড়ির কাজ করেন, না হলে বাইরে বেড়াতে যায়। এ অনুভূতিটা ভালো হবে এবং সবাই সুখী অনুভব করবে। তাই গত বছর থেকে শারদীয় উত্সব, ড্রাগন নৌকা উত্সব এবং সমাধি পরিস্করন উত্সব চীনের সরকারী ছুটি হিসেবে নির্ধারিত হয়েছে। চীন সরকারের এ সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে কাজাখস্তানের আব্দুকরিমোভ আব্দুসালোম বলেছেন, "চীনের এ ঐতিহ্যিক দিবস সরকারী ছুটির দিন নির্ধারিত হলে তাতে উত্সবের জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্ট হবে এবং জনসাধারণ সহজে এ উত্সবের রীতিনীতি মনে রাখতে পারবে। বিশেষ করে বিদেশীদের ওপর তা আরও বেশি ছাপ ফেলবে। যেমন শারদীয় উত্সব যদি ছুটি থাকে, তাহলে আমরা জানতে চাইযে, কিসের ছুটি। এ্যা, শারদীয় উত্সবের ছুটি। শারদীয় উত্সব কেমন একটি উত্সব। সে সব প্রশ্ন আমাদের মনে জাগবে এবং এ সম্পর্কে জানতে আমাদের আগ্রহ বাড়বে। ফলে আমরা চীনের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি সম্পর্কে আরও বেশি জানতে পারবো।
সমাজিক অগ্রগতি এবং আধুনিক প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে শারদীয় উত্সব উদযাপনের পদ্ধতিও পরিবর্তিত হয়েছে। পরিবারের সঙ্গে মুনকেক খাওয়া এবং চন্দ্র উপভোগসহ ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিতে উত্সব উদযাপনের পাশাপাশি অনেক তরুণ তরুণী এস.এম.এসের মাধ্যমে শুভেচ্ছা বানী পাঠায় এবং নিজেদের গাড়িতে কোথাও না কোথায় চন্দ্র উপভোগ করতে যায়। এস.এম.এসের মাধ্যমে শারদীয় উত্সবের শুভেচ্ছা বানী প্রসঙ্গে অনেকে বলেছেন, এমন শুভেচ্ছা বানী পাঠানোর সময় এবং গ্রহণের সময়ে উভয়ই খুব আনন্দিত হয়। এ প্রসঙ্গে কাজাখস্তানের ইররালিয়ে আদিলজান আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন, প্রতিবছর শারদীয় উত্সবের শুভেচ্ছা বানী পেয়ে আমি খুব আনন্দ বোধ করি। তিনি বলেন, "বিদেশে থাকা সত্ত্বেও আমার একা একা লাগছে না। বিশেষ করে শারদীয় উত্সব ও বসন্ত উত্সবে। দু'উত্সবে আমি অনেক বন্ধুর কাছ থেকে এস.এম.এসের মাধ্যমে শুভেচ্ছা বানী পাই। এ উত্সবে আমিও আমার বাবামাকে এস.এম.এস পাঠাই। আমি চাই আমার বাবামাও যেন আমার সঙ্গে চীনের উত্সব উপভোগ করতে পারেন। তাছাড়া, অনেক এস.এম.এস খুব মজার। এখনো আমি তা সেভ করে রেখেছি। কারণ সে সব এস.এম.এসের মধ্য দিয়ে আমি চীনাদের আন্তরিকতা ও মৈত্রী অনুভব করছি।
ঠিক চীনাদের আন্তরিকতা এবং চীনের সমৃদ্ধ ও ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির জন্য সে সব বিদেশী বন্ধুরা চীনের সাংস্কৃতিক উত্সব কাটাতে পছন্দ করেন। তাঁরা সবাই বলেছেন, আসন্ন শারদীয় উত্সবে তারা অবশ্যই আনন্দের সঙ্গে ছুটি কাটাবেন। একই সঙ্গে তাঁরা আমাদের বেতারের মাধ্যমে বিদেশে তাঁদের আত্মীয়স্বজনকে উত্সবের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
শ্রোতা বন্ধুরা অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি, আমি সবাইকে এখন "কখন আর পুর্ণিমা চন্দ্র দেখা যায়' শারদীয় উত্সব সংক্রান্ত সংগীতটি শুনাবো। যাতে সবাই আমাদের উত্সবের জাঁকজমকপূর্ণতা উপভোগ করতে পারেন। একই সঙ্গে পেইচিং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ কয়েক জন বিদেশী ছাত্রছাত্রী আামাদের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্বদেশে তাঁদের আত্মীয়স্বজনকে উত্সবের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে।
"শারদীয় উত্সব পুনর্মিলিত হওয়া দিবস। আমি বাড়ীতে ফিরতে না পারা সত্ত্বেও বাবামাকে উত্সবের শুভেচ্ছা জানাই।
"বাবামা, আমি চীনে ভালো আছি। আপনারা ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |