|
প্রিয় শ্রোতা বন্ধুরা, বিপাকীয় রোগ কাকে বলে তা অনেকেই সঠিকভাবে জানেন না । বিপাকজাত রোগ প্রতিরোধকে গুরুত্ব দিতে হবে বলে একটি পরিসংখ্যান আমাদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে যে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনে প্রতি ১৩ মিনিট ৫৮ সেকেন্ডে বিপাকীয় রোগ থেকে সৃষ্ট পুরাতন রোগের কারণে একজন মারা যাচ্ছে। বিপাকীয় রোগ কাকে বলে?এর কী কী লক্ষণ আছে এবং রোগটি মানবজাতির স্বাস্থ্যের জন্য কী কী ক্ষতি ডেকে আনতে পারে ? আজকের স্বাস্থ্যের সন্ধানে ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিত্সা বিদ্যা ও পাশ্চাত্য চিকিত্সাবিদ্যার মাধ্যমে রোগটি চিকিত্সা করার বিষয় নিয়ে কিছু আলোচনা করা হবে।
এক কোম্পানির মহাপরিচালক, তার বয়স মাত্র ৪০ বছর পূর্ণ হয়েছে । সম্প্রতি প্রায়ই ক্লান্তি অনুভব করেন বলে তিনি হাসপাতালে গিয়ে সার্বিকভাবে শরীর পরীক্ষা করান । পরীক্ষার ফলাফল থেকে প্রমাণিত হয় যে, তার রক্ত সুগার, রক্ত ঘনত্ব,হিমোগ্লোবিন এবং রক্ত চাপ অপেক্ষাকৃত বেশি।ডাক্তার বলেন, দীর্ঘকাল ধরে কাজের চাপ ও অনিয়মিত জীবনের দরুণ দৈহিক বিপাকের সমস্যা হয় এবং ফলে বিপাকীয় রোগ হয়। যথাসময়ে চিকিত্সা না পেলে গুরুতর রোগ সৃষ্টি হতে পারে।
কোম্পানির সেই মহা পরিচালকের মতো এমন লোকের সংখ্যা চীনে কম নয় । অনেকে বিপাকীয় রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরও বুঝতে পারেননি, নিজের শরীরে কী হয়েছে । বিপাকীয় রোগ কাকে বলে?এ সম্পর্কে ডাক্তার মা চিয়েনওয়েই বলেন,বিপাকীয় রোগ বহুরোগের নাম । বহুমূত্র রোগ,স্থূলতা,বিপাকীয় সিনড্রোম,হাইপার লিপিডেমিয়া, হাইপার ইউরিকেমিয়া এবং গেঁটেবাত, চর্বিযুক্ত লিভার, ডিম্বাশয় সিনড্রোম, অ-আল্কোহলিক লিভার সিরোসিস ও নিদ্রা শ্বাসরোধ সিন্ড্রোমসহ বেশ কয়েকটি ব্যাধি বিপাকীয় রোগের আওতাধীনে রয়েছে।
ডাক্তার মা যেমন বলেছিলেন, বিপাকীয় রোগের অর্থ হল, বিপাকীয় বিশৃঙ্খলার কারণে সৃষ্ট সুগার, চর্বি, প্রোটিন, পুরিনে ও ক্যালসিয়ামসহ নানা দ্রব্যাদির বিপাকীয় বিশৃঙ্খলা থেকে উচ্চ রক্ত সুগার,স্থূলতা,চর্বিযুক্ত লিভার,অস্টিওপরোসিস,উচ্চ রক্ত ঘনত্ব ও হাই ইউরিক এসিড সৃষ্টি হয় এবং এ থেকে বহুমূত্র রোগ, গেঁটেবাত, উচ্চ রক্তচাপ, বিপাকীয় সিনড্রোম সৃষ্টি হয় । অবশেষে হার্ট ও রক্তনালী ব্যাধি, কিডনি বিকল, লিভার অস্বাভাবিক এবং পায়ের পচনসহ নানা ব্যাধির সৃষ্টি হয় ।এটা মানবজাতির মৃত্যু ও প্রতিবন্ধী হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ কারণ। মানব জাতির জীবনযাত্রার মান ও সামাজিক চাপ বেড়ে যাওয়ার সাথেসাথে এবং এ ধরনের ব্যাধি সম্পর্কে মানুষ কম জানে বলে ব্যাধিটিতে আক্রান্তের হার ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে মানবজাতির প্রাণহানির গুরুতর হত্যাকারীতে পরিণত হয়েছে।
প্রথম দিকে বিপাকীয় রোগ স্থূলতা, ক্লান্তি, দুর্বলতা ও নিদ্রাহীনতায় অভিব্যক্ত হয় । কোনো কোনো লোকের মাঝেমাঝে কাশি, ক্রুদ্ধ ও কোষ্ঠ কাঠিন্য হয় । শরীর পরীক্ষার ফলাফলে রক্ত সুগার ও রক্ত ঘনত্ব অপেক্ষাকৃত কিছু বেশি হতে পারে এবং কিছু কিছু লোকের হালকা চর্বিযুক্ত লিভার হতে পারে । তবে ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় কোনো রোগ সনাক্তা করা যায় না। যাদের এমন লক্ষণ আছে এসময় তারা সাব-স্বাস্থ্যযুক্ত অবস্থায় আছেন ।এলক্ষণগুলোর মধ্যে হার্ট ও মস্তিষ্ক-রক্তনালীসহ নানা গুরুতর রোগের সংকট লুকিয়ে থাকতে পারে। এর ওপর গুরুত্ব না দিলে লক্ষণগুলো ধাপেধাপে রোগে পরিণত হতে পারে।
এক সংশ্লিষ্ট জরিপ থেকে জানা গেছে, সাব-স্বাস্থ্যযুক্ত লোকের মধ্যে বেশি হলেন মধ্যবয়সী মানুষ । বিশেষ করে বুদ্ধিজীবী ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপকের মধ্যে এর অনুপাত বেশি। যথাসময় প্রতিরোধ না করলে এবং রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিত্সা করালে খরচ বেশি হবে এবং দেরী হবে। সুতরাং যখন শরীর সাব-স্বাস্থ্যযুক্ত অবস্থায় থাকে তখনই চিকিত্সা নিতে হবে। কি কি উপাদান বিপাকীয় রোগ সৃষ্টি করতে পারে? এ সম্পর্কে ডাক্তার মা বলেন, কারণের দিক থেকে বলতে গেলে পাঁচটা কারণ এ ধরনের রোগ সৃষ্টি করতে পারে।এক, জন্মগত কারণ,যা নিজের শরীর গঠনের সঙ্গে সম্পর্কিত । যাদের ফ্লেগম ড্যাম্পনেস কনস্টিটিউশন হয় তাদের মধ্যে বিপাকীয় রোগে আক্রান্ত হওয়ার অনুপাত অপেক্ষাকৃত বেশি। দুই, স্বোপার্জিত কারণ,যেমন খাদ্যনালী, বয়স ও মানসিকতা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
যেমন ডাক্তার মা বলেছিলেন, সিগারেট খাওয়া, খাদ্যের মন্দ অভ্যাস, শরীরচর্চার অভাব এবং বংশগত ব্যাধি সম্পর্কে কম জানাটা বিপাকীয় রোগ সৃষ্টি করার গুরুত্বপূর্ণ কারণ । দীর্ঘকাল ধরে সিগারেট খাওয়া এবং প্রয়োজনীয় ব্যায়াম না করার ফলে লাল রক্ত সেলে অক্সিজেনের অভাবে শরীর দুর্বল হয় । মানব দেহে অক্সিজেনের সরবরাহের সঙ্গে মেটানোর জন্য রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমান বেড়ে যাবে । যার ফলে রক্ত ঘন হয় এবং হার্টের স্পন্দন দ্রুত হয়। এসব সমস্যা কোরানারি হার্ট রোগ,রক্ত ঘনত্বের অস্বাভাবিক বিপাক, উচ্চ রক্ত চাপ, বহুমুত্র রোগ,আরিউথমিয়াসহ নানা রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত।
তাই যখন আপনার স্থূলতা দেখা দেয়,রক্ত সুগার ও রক্তচাপ বেশি হয় ,হার্টের রিট বিশৃঙ্খল হয়,মেজাজ খারাপ হয়, সহজে রাগ হয় এবং হাত পা ঠান্ডা হয় এমন ধারাবাহিক সমস্যা দেখা দিলে এবং কোনো রোগ সনাক্ত করা না হলে আপনি বিপাকীয় রোগ বিভাগে চিকিত্সা নিতে পারেন ।
বর্তমানে বিপাকীয় রোগ চিকিত্সার কাজ জীবনযাপনের অভ্যাস ও খাদ্যনালীর পুনর্গঠন থেকে শুরু হয় । তার পর চীনা ভেষজ ওষুধ দিয়ে শারিরীক অবস্থা উন্নত করা এবং ওষুধ দিয়ে রোগটি চিকিত্সা করা হয় । নিজের বহু বছরের ক্লিনিক্যাল অভিজ্ঞতা অনুযায়ী ডাক্তার মা বিপাকীয় রোগী বা সুপ্ত বিপাকীয় রোগীকে কিছু পরামর্শ দেন । তিনি বলেন,এক, জীবনযাপনের দিক থেকে আনন্দের মনোভাব বজায় রাখবেন। মন খারাপ হলে শুধু বিপাকীয় রোগ নয় অন্য রোগেও সহজে আক্রান্ত হতে পারেন । দুই,খাদ্যনালীর দিক থেকে যারা চর্বিযুক্ত খাদ্য খেতে পছন্দ করেন তাদেরকে চর্বিযুক্ত খাদ্য কম খেতে হবে। তিন,নিদ্রার সময়ও খুব গুরুত্বপূর্ণ । পর্যাপ্ত নিদ্রা দেহের বিপাকের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারে । চার,ব্যায়াম। ব্যায়াম না থাকায় দেহের ভেতরের বিপাক নিঃসরণ কঠিন হবে।
যাদের খাদ্যনালীর কাজ ঠিক নেই ডাক্তার মা তাদের জন্য এক বিশেষ মেনু তৈরি করেছেন । এক, জই । জইয়ের মধ্যে পানিতে গুলাতে পারে এমন খাদ্যের আঁশ পর্যাপ্ত রয়েছে , যা হজমনালীর মধ্যে যকৃতের কলেস্টরেল থেকে সৃষ্ট পিত্ত লবণ গ্রহণ করতে পারে, পিত্ত লবণকে আবার যকৃতে গ্রহণ করতে বাধা দিতে পারে । অবশেষে মলের সাথে পিত্ত লবণ বাইরে নিঃসরণ করে। যার ফলে রক্ত ও যকৃতের ভেতরের কলেস্টরেল হ্রাস পাবে। প্রত্যেক দিন ৬০ থেকে ১০০ গ্রামের জই খাওয়ার জন্য প্রস্তাব করেন তিনি ।
দুই, ই রেন অর্থাত পার্ল বালি খেতে হবে । গত বিশ-বাইশ বছরে পশু ও মানব-দেহের ওপর পরীক্ষা থেকে প্রমাণিত হয় যে, জিনিসটা ট্রাইগ্লিসারাইড ও নিম্ন ঘনত্বের কলেস্টরেলের পরিমান কমাতে পারে এবং উচ্চ ঘনত্বের কলেস্টরেলের পরিমান বাড়াতে পারে। কিন্তু গর্ভবতীরা এটা খেতে পারেন না। প্রত্যেক দিন ৫০ থেকে ১০০ গ্রাম খাওয়ার জন্য তিনি প্রস্তাব করেন। তার পর তিনি প্রত্যেক দিন ১০০ থেকে ৩০০ গ্রামের মিনি টমেটো খাওয়ার প্রস্তাবও করেন ।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |