Web bengali.cri.cn   
চীনের থান রাজবংশের বিখ্যাত কবি লো বিং হুয়াংএর জীবনী
  2012-08-21 14:49:54  cri
সুপ্রিয় শ্রোতা , চীনের থান রাজবংশ আমল এমন একটি সময়পর্ব যাতে চীনের ক্লাসিকাল কবিতা পুরোপুরি পরিণত হয় । থান রাজবংশে অনেক শ্রেষ্ঠ কবি আবির্ভূত হয়। তাদের কবিতার স্টাইলও বৈচিত্রময় ছিল। চীনের সাহিত্য ইতিহাসে থান রাজবংশ আমলের কবিতার অবস্থান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। থান রাজবংশের প্রথম দিকে চার কবির নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হবে। তারা এই সময়ের 'চার জন শ্রেষ্ঠ' কবি বলে আখ্যয়িত হতেন। তাদের নাম, ওয়াংবো, ইয়াং চিয়ং. লু চাও লিন এবং লো বিং হুয়াং। কিন্তু তাদের মধ্যে লো বিং হুয়াং জনসাধারণের মনে সবচেয়ে গভীর ছাপ ফেলেছেন। কারণ তার প্রসঙ্গে অনেক গল্প প্রচলিত রয়েছে। তা ছাড়া , তার জীবন অত্যন্ত রহস্যময় ছিল।

লো বিং হুয়াংয়ের জন্মস্থান বর্তমানের জেচিয়াং প্রদেশের ইউ। তার পরিবারের পটভূমি সম্পর্কে ইতিহাসের বইগুলোতে বিস্তারিতভাবে বনর্না করা হয়নি। কেবল জানা যায় যে, তাঁর বাবা স্থানীয় এলাকার একজন নিম্ন পদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। ছোটবেলায় লো বিং হুয়াং একজন মেধাবি ছেলে ছিলেন। যখন তার বয়স সাত বছর তখন তিনি কবিতা লিখতে শুরু করেন। এক দিন তিনি অন্য কয়েক জন ছেলের সঙ্গে একটি ছোট নদীর পারে খেলাধুলা করছিলেন। যখন অন্য ছেলেরা নদীতে সাঁতাররত কয়েকটি হাঁস দেখে। তখন তারা লো বিং হুয়াংকে এ সব হাঁস নিয়ে একটি কবিতা রচনা করার অনুরোধ করলো। লো বিং হুয়াং সঙ্গে সঙ্গে একটি কবিতা রচনা করে ফেলেন। সুতরাং ছোটাবেলায় তার মেধা অসাধারণ ছিল। তখন তিনি ছেলেদের মধ্যে প্রতিভাবান ছেলে বলে পরিচিত হতেন ।

কিশোরকালে লো বিং হুয়াং তার বাবার সঙ্গে বতর্মান জেচিয়াং প্রদেশের বোছাংয়ে আসেন । তার বাবা একজন স্থানীয় কর্মকর্তা ছিলেন। এক দিন তার বাবা কাজে অতিরিক্ত ক্লান্ত হয়ে কর্মস্থলেই মারা যান। বাবা মারা যাওয়ার পর তার পরিবারের অবস্থা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। কিছু দিন পর তিনি তার মায়ের সঙ্গে তার মামার বাসায় ওঠেন। সুতরাং কিশোরকালে লো বিং হুয়াং তার মামার বাসায় জীবন কাটিয়েছিলেন। আত্মীয়ের বাসায় থাকা তার পক্ষে অত্যন্ত কঠিন ব্যাপার ছিল।

লো বিং হুয়াং রাজনীতির পথে প্রবেশ করেন ৬৬১ খৃষ্টাব্দে। সে বছরে তিনি একটি জেলার গর্ভনরের সহকারি হিসেবে নিয়োগ পান। তার কাজ ছিল জেলার ঐতিহাসিক তথ্যের বন্দোবস্ত করা । আসলে তা খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ পদ ছিল না। তিন বছর পর রাজদরবারে দক্ষ ব্যক্তিকে গ্রহণ করা হয়। জেলার গর্ভনর লো বিং হুয়াংকে এই পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুপালিশ করতে চাইলেন। জেলার গর্ভনর ভালভাবে জানতেন লো বিং হুয়াং একজন যোগ্য মানুষ। লো বিং হুয়াংয়ের পক্ষে এটা সত্যিই একটি বিরল সুযোগ ছিল। এক দিন লো বিং হুওয়াং জেলার গভর্নরের সামনে একটি কড়া উপদেশ উত্থাপন করেন। লো বিং হুয়ারয়ের এই উপদেশ গভর্নর গ্রহণ করতে পারেন না। কিন্তু লো বিং হুয়াং সরল মানুষ। তিনি মনে করেন, তার এই উপদেশ গ্রহণ করলে গভর্নরের জন্য ভাল হবে। সুতরাং তিনি নিজের এই উপদেশ বিষয়ে জেদ করলেন। কিন্তু জেলার গভর্নরের সন্দেহ হলো লো বিং হুয়াংয়ের উচ্চাভিলাষ রয়েছে। তিনি মনে মনে ভাবছিলেন, ভবিষ্যতে এক দিন লো বিং হুয়াং তার স্থলাভিষিক্ত হতে চাইবেন। তখন থেকে গভর্নর সব সময় লো বিং হুয়াংয়ের উপর দোষারোপ করতে চেষ্টা করতেন। লো বিং হুয়াং বুঝতে পারেন যে, তিনি আর এই গর্ভনরের পাশে থাকতে পারবেন না। অচিরেই তাকে সরে যেতে হবে । তিনি একটি কৈফিয়ত নিয়ে জেলার গর্ভনরের কাছ থেকে বিদায় নিলেন। এর পর তিনি কোথায় গেলেন ইতিহাসের বইগুলোতে এখন পর্যন্ত এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায় নি । প্রায় তিন বছর পর তিনি সিছুয়াংয়ে গিয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। পরে সেনাবাহিনীর একজন মধ্য পর্যায়ের কর্মকর্তা হন। একটি ইতিহাসের বইতে ব্যাখ্যা করা হয়, লো বিং হুয়াং সিছুয়াংয়ে বেশ কয়েক বছর ছিলেন। সেনাবাহিনী ত্যাগ করার পর তিনি স্থানীয় প্রশাসনের অফিসে কাজও করেছেন। তার কাজ ছিলেন গ্রন্থাগারের ব্যবস্থাপনা করা । জানা গেছে, তার অনেক লেখা সিছুয়াংয়ে বসবাস করার সময় লেখা হয়েছে। লু সি গো নামে একজন ভদ্রলোক লো বিং হুয়াংয়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। এই ভদ্রলোক এক সময় সিছুয়াংয়ের শিংডু জেলার গর্ভনর ছিলেন। এই গর্ভনরের জন্মস্থান হোনানের লোইয়াং। সিছুয়াংয়ে তার একজন প্রেমিকা ছিলেন। এক দিন কোন একটি কাজের জন্য তাকে লোইয়াংয়ে ফিরে যেতে হবে। রোইয়াং রওয়ানা হওয়ার আগে তিনি তার এই প্রেমিকাকে বললেন, লোইয়াং থেকে সিছুয়াংয়ে ফিরে আসার পর তিনি তাকে বিয়ে করবেন। কিন্তু কাজের জন্য তিনি লোইয়াংয়ে দু'বছর থাকতে বাধ্য হন। দু'বছর পর তিনি আবার সিছুয়াংয়ে ফিরে আসেন। কিন্তু ফিরে দেখলেন, তার দু'বছর আগের প্রেমিকা অন্য একজন পুরুষের স্ত্রী হয়ে গেছে। আসলে এটা সেই মহিলার দোষ ছিল না। কারণ লোইয়াংয়ে যাওয়ার পর এই গর্ভনর তার প্রেমিকাকে একটি চিঠিও লেখেন নি। নিরুপায় এই মহিলা অন্য একজন পুরুষকে বিয়ে করেন। লো বিং হুয়াং এই ঘটনা নিয়ে একটি বিখ্যাত কবিতা লিখেছেন। এই কবিতায় গর্ভনরের সমালোচনা করা হয়। যদিও এই গভর্নর লো বিং হুয়াংয়ে বন্ধু ছিলেন। এই কবিতায় দু'জনের বিচ্ছেদ হওয়ার পর পুরুষের প্রতি নারীর ভালবাসা এবং আবেগ বিস্তারিতভাবে বণর্না করা হয়। কবিতাটি পড়লে লোকেরা চোখের পানি পড়ে।

লো বিং হুয়াং একজন অত্যন্ত আন্তরিক ও সরল লোক। তিনি অন্য অন্যায় চোখে দেখতে পারতেন না। তার জীবনের অনেক নিবন্ধ বা কবিতায় সমাজের অন্যায়ের সমালোচনা করা হয়। চীনের আধুনিক সাহিত্যিক ওয়েন ই ডুও বলেছেন, লো বিং হুয়াং একজন অত্যন্ত সরল মানুষ। তিনি অন্যদের ব্যক্তিগত ব্যাপারে মাথা ঘামাতে পছন্দ করতেন। তিনি কোন অন্যায় দেখতে পারতেন না। উপরোল্লেখিত এই ঘটনার মতো তিনি সিছুয়াংয়ে বসবাস করার সময় বেশ কয়েক বার নিবন্ধ বা কবিতা লেখেছিলেন। সে জন্য তার অনেক বন্ধু বা পরিচিত লোক পরে তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।

সিছুয়াং ত্যাগ করার পর লো বিং হুয়াং উগং জেলায় গেলেন। উগং জেলা আজকের সেনসি প্রদেশে । তিনি এই জেলার গর্ভনরের সচিব হিসেবে কাজ করতেন। সেই জেলায় অবস্থান করার সময় লো বিং হুয়াং তার প্রতিকীমূলক কবিতা সংগ্রহ ' ডিচিনপিয়েন' লিখেছেন। তখন উগং জেলা খুব ব্যস্ত একটি নগর। কিন্তু লো বিং হুয়াং এই সমৃদ্ধ নগরের মধ্যে ভিতরের দুর্নীতি দেখলেন। তিনি তার কলম দিয়ে এই বাস্তব সমাজের সমালোচনা করলেন। তার অনেক কবিতায় সমাজের দুর্নীতি ও অসত আচরণের নিন্দা করা হতো।

লো বিং হুয়াং উগং জেলার গর্ভনরের সচিব হওয়ার কিছু দিন পর তার মা মারা যান। তার মায়ের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য তিনি নগরের উপকন্ঠে বেশ কয়েক দিন ধরে শোক জ্ঞাপনের আসর পালন করতেন।

ঐতিহাসিক বইতে লো বিং হুয়াং সম্পর্কে এভাবে বর্ননা করা হয়। তখনকালীন রাজার সমালোচনা করার কারণে লো বিং হুয়াংকে জেলে পাঠানোহয়েছিল। রাজার বিরুদ্ধে তিনি একটি কবিতা লিখেছিলেন। তার এই কবিতায় তত্কালীন রাজার অক্ষমতা উল্লেখ করা হয়। রাজা এই কবিতা পড়ার পর অত্যন্ত রেগে যান। রাজা লো বিং হুয়াংকে জেলে আটকে রাখার নির্দেশ দিলেন। আসলে লো বিং হুয়াং এই কবিতায় একদম স্পষ্টভাবে রাজার সমালোচনা করেননি। তিনি কেবল কবিতায় কিছু ইঙ্গিত দেন। রাজার চারপাশের কর্মকর্তারা রাজাকে তোষামোদ করার জন্য লো বিং হুয়াংয়ের ওপর দোষারোপ করলেন।

জানা গেছে , জেলে লো বিং হুয়াং অনেক কবিতা লিখেছেন। এ সব কবিতায় নিজের জন্য আপিল করা ছাড়া দেশকে চাঙ্গা করে তোলার আশা-আকাংক্ষা ফুটে ওঠে। ইতিহাসের বইতে বলা হয়, লোক বিং হুয়াং অন্যদের সাহায্যে জেল থেকে পালিয়ে যান। এরপরে তিনি কোথায় গেলেন কোন ইতিহাসে বইতে তা লেখা নেই। সুতরাং লো বিং হুয়াংয়ের জীবন অত্যন্ত রহস্যময়। তিনি তাঁর শোচনীয় জীবন শেষ করলেন। পরর্বতীকালের লোক জানতে পারেনি তার মৃত্যুর দিন কবে। কিন্তু পরবর্তীকালের মানুষের জন্য তিনি যে সব কবিতা রেখেছেন সে সব কবিতা এক সমৃদ্ধ সম্পদ।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040