Web bengali.cri.cn   
মানুষের দারিদ্রের জন্য দায়ী কারা
  2012-08-20 16:25:53  cri
সম্প্রতি ব্রিটেনের 'দ্যা গার্ডিয়ান' পত্রিকার এক খবরে বলা হয়েছে, বিভিন্ন দেশের অন্যায়সংগত অবস্থা দূর করা এবং দারিদ্র বিমোচনের উপায় খুঁজে বের করার লক্ষ্যে সম্প্রতি এক অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের খুব উচ্চ শ্রেণীর ব্যক্তি এবং রাজনীতিকরা অংশ নেন। সম্মেলনে কেউ কেউ এমন ধারণা প্রকাশ করেন যে, দারিদ্রের প্রধান কারণ দরিদ্র ব্যক্তিরা নিজেরাই।

ওই প্রতিবেদন বলা হয়েছে, অনেক উচ্চ শিক্ষিত মানুষ এবং ধনী মানুষ এমন একটি মন্তব্যের সঙ্গে একমত, তা হলো: গরিব মানুষ গরিব হতে চায়, অথবা তারা দারিদ্র দূর করতে সক্রিয় নয়।

সম্মেলনে অংশগ্রণকারী একজন কলা ব্যবসায়ী মনে করেন, গরিব মানুষ ব্যাপকভাবে এক রকমের গরিব সংস্কৃতিতে আত্মমগ্ন হয়। আরেকজন সুন্দরী প্রতিযোগিতার বিজয়ী ট্রাফিক সিগনালে দাঁড়িয়ে ভিক্ষাবৃত্তিকে তার গবেষণার একটি বিষয় হিসেবে দেখেন। তার মতামত হলো: ট্রাফিক সিগনালের কাছে দাঁড়িয়ে ভিক্ষা করা খুব সহজেই ভিক্ষা পাওয়ার একটি কৌশল। এ কৌশল অবলম্বন করা হয় সম্ভবত গরিব মানুষেরা খুব অলস বলে। তিনি দাতা সংস্থা 'ইউএস এইড'-এর একজন উপদেষ্টার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, কিছু গরিব মানুষ খুব সম্ভবত উন্নয়ন অর্জন এবং দারিদ্র দূর করতে চায় না।

কোনো কোনো লোক মনে করে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সামাজিক নীতি প্রণয়নে যে ভুল থাকে, তা দারিদ্র বিমোচনের একমাত্র বাধা নয়। ভোটার, রাজনীতিক এবং তথাকথিত উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ শুধু দারিদ্র এবং দারিদ্র বিমোচনের বাধাকে গুলিয়ে ফেলে। তাদের মতে, ওই উপদেষ্টার কথা হয়তো ঠিক, অনেক গরিব মানুষ উন্নয়নকে তাদের জীবনের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। তাই তারা উন্নয়ন চায় না। তবে কিছু গরিব মানুষের জন্য স্বাবলম্বী হওয়ার পথে বাধা আসলে আলস্য। একজন বিশেষজ্ঞ মনে করেন, কিছু কমিউনিটি বা সংস্থা হয়তো দারিদ্র দূরীকরণের জন্য টাকা পেতে অনেক আগ্রহী, তবে আসলে এ কাজে তাদের আগ্রহ যথেষ্ট নয়।

গরিব মানুষের জন্য তাদের সহানুভূতি নেই। এত বেশি ধনী মানুষ একসাথে বসে গরিব মানুষের জীবন নিয়ে আলাপ করেন, তারা কি গরিব মানুষের মনের কথা জানেন? না, আমার মনে হয়, না। যারা সমাজের উন্নয়নের জন্য কাজ করছেন, তারা কি সত্যি অনেক সময় নিয়ে গরিব মানুষের দিক থেকে অথবা গরিব মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিতে এই বিশ্বকে দেখেন? এই প্রশ্নের উত্তরও না। ভারতের মহাত্মা গান্ধীর গল্প বলেছিলাম, তিনি সব সময় ট্রেনের তৃতীয় শ্রেণীতে যাতায়াত করতেন। এভাবে তিনি দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ গরিব মানুষের সঙ্গে থাতে পারতেন এবং তাদের আসল জীবন জানতে পারতেন। তবে এখন, অনেক সামাজিক উন্নয়ন কর্মী বাইরে যেতে বিমানের ফাস্ট ক্লাসে আসন নেন এবং বিলাসবহুল হোটেলে থাকেন।

তবে কিছু কিছু সংস্থা দারিদ্র মোচনে সক্রিয়ভাবে চেষ্টা করছে এবং ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে। এটা খুব আনন্দের ব্যাপার। লন্ডনে 'এটিডি ফোর্থ ওয়াল্ড' নামক একটি সংস্থা আছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই সংস্থার সদস্য আছেন। এই সংস্থা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, দারিদ্রকে উপলব্ধি করার একমাত্র উপায় হলো দরিদ্র মানুষের সঙ্গে জীবনযাপন করা। এটিডি'র স্বেচ্ছাসেবকরা বিশ্বের গরিব মানুষের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। সংস্থার স্বেচ্ছাসেবক জলিন্ড রবার্ট বলেন, যারা অতি দরিদ্র জীবন যাপন করছে, তারা প্রতিদিন বিভিন্ন অবজ্ঞা, নিরুত্তাপ ও অস্বীকারের শিকার হয়। তাদের অর্জিত অভিজ্ঞতা, জ্ঞান ও বিশেষ কৌশল মানুষের স্বীকৃতি পায় না।

কারণ কিছু ধনী লোক হয়তো মনে করে, তারা গরিব মানুষ, তাদের কিছুই নেই, তারা কি করতে পারে? তাই তারা গরিব মানুষকে বিশ্বাস করে না এবং তাদেরকে সম্মান করে না।

এখন বিভিন্ন পক্ষ গরিব মানুষের চিন্তাধারা এবং অবস্থানকে সংশ্লিষ্ট বিভাগের নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়নে অন্তর্ভূক্ত করার জন্য চেষ্টা করছে। এবং আরো বেশি মানুষ এ বিষয়টিকে সমর্থন করে। বিশ্বব্যাংক ২০০০ সালে 'গরিব মানুষের কণ্ঠ' শীর্ষক একটি গবেষণা করেছে, যেটা খুব ভালো একটি উদাহরণ। তবে এর মধ্যে আরো অনেক সমস্যা রয়েছে। উচ্চ পর্যায়ের উপদেষ্টা ও উচ্চ পর্যায়ের মতামত অনেক বেশি এবং সমাজের নিম্নতম পর্যায়ের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ অপ্রতুল।

গরিব মানুষের চিন্তাধারা উপলব্ধি করতে চাইলে শুধু দলিল সংগ্রহ করা যথেষ্ট নয়। এটা হলো একজন মানুষের সারা জীবনের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। অনুকম্পাপরায়ণ হৃদয় ও নিরহঙ্কার মনোভাব পোষণ করতে হয়।

২০০০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘের সহস্রাব্দ সম্মেলনে 'সহস্রাব্দ ঘোষণা' গৃহীত হয়। ঘোষণায় ২০১৫ সাল নাগাদ ১৯৯০ সালের ভিত্তিতে বিশ্বের দরিদ্র মানুষের সংখ্যা অর্ধেকে নামানোসহ ৮টি লক্ষ্য বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করা হয়। এখন বিভিন্ন পক্ষ এ সহস্রাব্দ লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য চেষ্টা করছে। বিভিন্ন সংস্থা দরিদ্র মানুষের চিন্তাধারা সংগ্রহ করছে, যাতে সহস্রাব্দ লক্ষ্য অর্জনে তাদের মতামত জানা যায়।

দাতব্য সংস্থা 'এটিডি' বিশেষ করে একটি ওয়েবসাইট খুলেছে, যেটির নাম 'যে কণ্ঠ আগে কখনো শোনানো হয় নি'। এ ওয়েবসাইট দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্যে গরিব মানুষের মতামত সংগ্রহ করে। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো অতিদরিদ্র মানুষের জন্য সহস্রাব্দ লক্ষ্য যাচাই করা এবং ২০১৫ সালের পরবর্তী প্রকল্পের জন্য নিজের অভিজ্ঞতা প্রদানের সুযোগ দেওয়া।

দারিদ্র বিমোচন সংশ্লিষ্ট সব কর্তব্যের বিভিন্ন অঞ্চলের দরিদ্র এলাকার সঙ্গে কার্যকর এবং স্থিতিশীল সম্পর্ক ও যোগাযোগ বজায় রাখা দরকার। আমরাও আশা করি, বিত্তবান মানুষেরা এ ক্ষেত্রে আরো বেশি মনোযোগ দেবে এবং সত্যি গরিব মানুষের দিক থেকে সমস্যা বিবেচনা করবে এবং তাদের জন্য কার্যকর ও বাস্তবভিত্তিক ব্যবস্থা নেবে।

সামাজিক মর্যাদার পার্থক্যের কারণে এবং বিভিন্ন উপাদানের কারণে মানুষের চিন্তাধারা ভিন্ন, তবে সত্যি অন্যকে সাহায্য করতে চাইলে, গরিব মানুষের সঙ্গে থাকতে হয় এবং তাদের বন্ধু হতে হয়। এভাবেই তাদের আসল চিন্তাধারা জানতে পারা যায়।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040