Web bengali.cri.cn   
পাকস্থলী-অন্ননালীর ভাঁটা সম্পর্কে
  2012-08-01 16:43:40  cri
প্রিয় শ্রোতা বন্ধুরা,সাধারণত কাশি ও কঠিন শ্বাসপ্রশ্বাসকে হাপানির লক্ষণ হিসেবে মনে করা হত এবং হাঁচি দেয়া ও নাকের পানি পড়াকে এলার্জিজাতরিমিটিস হিসেবে সনাক্ত করা হত। কিন্তু আপনি কি জানেন , যখন আপনার দেহে এসব লক্ষণ দেখা দেয় তখন হয়ত আপনি পাকস্থলী অন্ননালীর ভাঁটা রোগে আক্রান্ত হয়েছেন । আজকের স্বাস্থ্যের সন্ধানে এ বিষয় নিয়ে কিছু আলোচনা করা হবে।

অজীর্ন রোগ নেই,পাকস্থলীর অসুখ নেই এবং পেট ফাঁপা নেই অর্থাত পাকস্থলী রোগের এসব স্পষ্ট লক্ষণ কিছু নেই । শুধু হঠাত গলায় অন্য কিছু থাকার অনুভূতি লাগে , হালকাভাবে বুক জ্বালা বা মুখ থেকে এসিড পানি ভাঁটার অনুভূতি লাগে । এগুলোকে কি পাকস্থলী রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রমাণ বলা যায়? ডাক্তার লিয়াং স্যুয়ে ইয়া সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন , এ সব লক্ষণ দেখা দিলে উপেক্ষা করবেন না । এটা পাকস্থলী-অন্ননালী ভাঁটা রোগ যা পাকস্থলী রোগের মধ্যে সবচেয়ে ছদ্মবেশসম্পন্ন । বুক জ্বালার অর্থ হল বুকে যে জ্বালার অনুভূতি লাগে তা কমাতে আইস খেতে ইচ্ছে করে। এসিড ভাঁটার পাশাপাশি হিক্কা তোলা হয় । এ সময় অত্যন্ত কষ্ট লাগে আর যখন গলায় স্বস্তি তখন বমির অনুভূতি হয়।

যদি এ ধরনের লক্ষণ সপ্তাহে দুবার এমনকি বারবার দৈনন্দিন জীবনে দেখা দেয় তাহলে সন্দেহ করতে পারেন যে,পাকস্থলী রোগে আক্রান্ত হয়েছেন কি না । যাকে"পাকস্থলী-অন্ননালীর ভাঁটা রোগ"নামে এক ধরনের ব্যাধি বলা হয়। সবার কাছে এ ব্যাধির নাম অপরিচিত হতে পারে ,কিন্তু পাশ্চাত্য দেশে এ রোগে আক্রান্তের হার ২০-৪০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এশীয় দেশে এর হার ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ রোগের হার বেড়েই চলেছে তবুও অধিকাংশ রোগী প্রথমে সংযম রাখার চেষ্টা করে থাকেন এবং অবশেষে কোনো উপায় না থাকায় বাধ্য হয়ে হাসপাতালে গিয়ে চিকিত্সা করেন। আসলে দীর্ঘকাল ধরে রোগটি যদি ভুল সনাক্ত করা হয় অথবা দীর্ঘকাল ধরে সঠিকভাবে চিকিত্সা করা না হয় তাহলে এর ফলাফল গুরুতর হবে। এ সম্পর্কে ডাক্তার লিয়াং বলেন, অন্ননালীর ভাঁটার সমস্যার সমাধান করা না হলে অন্ননালী সংকীর্ণ হতে পারে, ক্ষত হতে পারে এমনকি অন্ননালী ক্যান্সার হতে পারে।

যেমন ডাক্তার লিয়াং বলেছেন, রোগটি দীর্ঘকাল ধরে চিকিত্সা করা না হলে ধারাবাহিক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। যেমন বুক জ্বালা ও মুখ থেকে এসিড পানি ভাঁটায় অনিদ্রা সৃষ্টি হয়। রাতে যে এসিড ভাঁটা হয় তা শ্বাসরোধ করায় নিদ্রা ব্যাহত হয়।

তাছাড়া পাকস্থলী-অন্ননালী ভাঁটা অন্ননালীর ওপর পাকশয় এসিডের দীর্ঘকালীন বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে । যার ফলে শ্লৈষ্মিক ঝিল্লিতেক্ষত হবে, অন্ননালীরপ্রদাহ হবে এবং ক্ষত, রক্তস্রাব ও অন্ননালী সংকীর্ণ হওয়াসহ নানা জটিলতা ডেকে আনতে পারে । যথাসময় চিকিত্সা না নিলে অন্ননালীর গুরুতর ক্ষতিসাধন হবে। অন্ননালীএডিনোকারসিনোমা ,পাকস্থলীরক্যান্সার ও অন্নানালীরক্যান্সারের হার বাড়তে পারে।

ডাক্তার লিয়াং বলেছিলেন যে, ৬ ধরনের মানুষ সহজে পাকস্থলী-অন্ননালী ভাঁটার রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এক, স্থূল মানুষ এবং চর্বিজাত খাদ্য খেতে পছন্দ করে এমন লোক । দুই, অতিরিক্ত পরিশ্রমী এবং মানসিক অবস্থা সহজে পরিবর্তনশীল এমন লোক । তিন, মধ্য ও বয়োবৃদ্ধ মানুষ এবং নৈশ জল খাবার খেতে পছন্দ করে এমন লোক। তার পর যারা সিগারেট ও মদ বেশি খান এবং যারা দীর্ঘকাল ধরে কোনো এক ধরনের ওষুধ সেবন করেন তারাও সহজে রোগটিতে আক্রান্ত হতে পারেন।

ডাক্তার লিয়াং জোর দিয়ে বলেন,অনেক রোগীর লক্ষণ তেমন স্পস্ট নয় বলে আগেভাগে সনাক্ত করার সময় বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। বিশেষ করে রোগটি সম্পর্কে রোগীকে সচেতন হতে হবে। এ সম্পর্কে ডাক্তার লিয়াং বলেন, অনেক রোগীর লক্ষণ তেমন স্পষ্ট নয়। অনেক রোগীর বুক জ্বালা ও এসিড ভাঁটার লক্ষণ নেই । তাদের শুধু কিছু বুক টানাটানি,অল্প বুক ব্যথা,কাশি বা হাপানি আছে। রোগটি থেকে আরোগ্য হতে চাইলে আগে সনাক্ত করা ও সক্রিয়ভাবে চিকিত্সা করা ছাড়া রোগীকে নিজের খারাপ অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। তিনি বলেন, এক, খাদ্যের ব্যাপারে ভাল অভ্যাস তৈরি করতে হবে, অর্থাত সকাল, দুপুর ও রাতে নির্দিষ্ট সময় ও নির্দিষ্ট পরিমানে ভোজ করতে হবে।দুই, খাওয়া শেষে সঙ্গেসঙ্গে শুয়ে থাকবেন না। তিন, অতি মোটা হবেন না ।চার,সিগারেট ও মদ ছেড়ে দেন। পাঁচ,কিছু চুইং গাম খেতে পারেন। ছয়,জীবনে বা কাজে চাপের সম্মুখীন হলেও আনন্দের মনোভাব বজায় রাখতে হবে।

সোডাপানীয় গ্যাস তৈরি ও হিক্কা তোলার মাধ্যমে তাপ বের করে দেয় । কিন্তু হিক্কা তোলা পাকস্থলীর ক্ষমতার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে । তাই যদি বারবার বিপুল পরিমানে কারবোনেটেড বা সোডাপানীয় গ্রহণ এবং বারবার হিক্কা তোলা হয় তাহলে নিম্ন অন্ননালীর ক্ষমতার ওপর বাধা সৃষ্টি হতে পারে ।

তাছাড়া অনেকে ঘুমাবার আগে নৈশ জলখাবার খেতে পছন্দ করেন ।নিঃসন্দেহে এটা পাকস্থলীর বোঝা বাড়িয়ে দেয়। যার ফলে সহজে গ্যাস্ট্রোপটাসিসহয় । ভাঁটা রোধ করার অন্ননালীর ক্ষমতা হ্রাস পায় বলে ভাঁটার লক্ষণ বারবার দেখা দেয়।

ভাল অভ্যাস বজায় রাখা ছাড়া ডাক্তার লিয়াং পাকস্থলী রক্ষা সম্পর্কে কিছু পদ্ধতিও জানান। ধৈর্য ধরে তার পদ্ধতি অনুসারে অনুশীলন করলে ভাল ফল পাবেন বলে তিনি আশা করেন । যেমন ৫ মিনিট ধরে উচ্চস্বরে ডাকলে দৈহিকবৃত্তির পুনরুত্থান জাগিয়ে তোলার মাধ্যমে সেলুলাইটের হজম দ্রুত করা যায়, পাকস্থলীর রক্ত সঞ্চালন জোরদার করা যায়, পাকস্থলী খালি করাকে ত্বরান্বিত করা যায় এবং কার্যকরভাবে পাকস্থলী-অন্ননালীর ভাঁটা রোগ প্রতিরোধ করা যায়। নিজের অবস্থা অনুসারে ৫ মিনিট ধরে বাড়ির বাইরে উচ্চস্বরে গান গাইলে বা বনে উচ্চস্বরে ডাকলে পাকস্থলীর উপকার হবে।

তাছাড়া গাড়ির চালকের বসার আসনের ব্যাক ও সীটের মধ্যকার কোণ ৯৫ডিগ্রিতে আনা হলে চালকের স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকার হবে । খাশি মাংসের স্যূপ পাকস্থলী রক্ষায় সহায়ক বলে ভোজের আগে এক কাপ খাশি মাংসের স্যূপ খেলে পাকস্থলী গরম হবে এবং হজম জোরদার হবে।

ঘুমবার সময় মাথা যে দিকে থাকে বিছানার সে দিককে ১৫-২০ মিলিমিটার উচু করে রাখুন । ঘুমবার সময় মাথা ও কাঁধের অবস্থান পাকস্থলীর চেয়ে কিছু উচু হবে। যার ফলে পাকস্থলীর রক্ত সঞ্চালন অবাধে বজায় থাকে। নিজের জন্য মাথার দিকে কিছু নিচু ঘাড়ের দিকে কিছু উচু হয় এমন এক বালিশ প্রস্তুত করলে ঘুমবার সময়ে পাকস্থলী এসিডের ভাঁটা এড়ানো যায় বা প্রশমিত করা যায়। তাছাড়া ওষুধ সেবন দরকার হলে ডাক্তারের প্রস্তাব অনুযায়ী করলে ভাল হয়।

 

 

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040