|
'সায়া দিল্লি' ফ্রিগেট
একুশ জুলাই ভারতে নির্মিত সর্বশেষ ফ্রিগেট হস্তান্তর অনুষ্ঠানে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ. কে. অ্যান্টনি দক্ষিণ সাগর সমস্যা বিষয়ে চীনের প্রতি বন্ধুত্ব প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, দক্ষিণ সাগর সমস্যা নিয়ে চীনের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ ভারতের নীতি নয়।
'গ্লোবাল টাইমস' পত্রিকা ২২ জুলাই নয়াদিল্লির একজন বিশ্লেষকের উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, ভারতের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এর আগে খুব কম দক্ষিণ সাগর সমস্যা নিয়ে ইতিবাচক বক্তব্য রেখেছেন। অ্যান্টনির কথাকে ভারত সরকারের কথা বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি অ্যান্টনি বলেন, ভারতে একটি শক্তিশালী ও প্রগতিশীল নৌবাহিনী তৈরি হচ্ছে। একই দিন 'ইন্ডিয়ান টাইমস' পত্রিকা এ বিষয়ের যে বাঁকা অর্থ করেছে তা হলো, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের শক্তি-প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভারতকে 'ধৈর্যের সঙ্গে' নিজের ক্ষমতা গোপন রাখতে হবে সুযোগের জন্য অপেক্ষা করতে হয়।
ইন্ডিয়ান টাইমস বলেছে, দেশে তৈরি সর্বশেষ ফ্রিগেট 'সায়া দিল্লি'র হস্তান্তর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকালে দক্ষিণ সাগর সমস্যা বিষয়ে অ্যান্টনি বলেন, "এখন ঠিক পেইচিং নয়াদিল্লিকে দক্ষিণ সাগরের বিরোধ সতর্ক করার সময়'। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মধ্যে সংলাপের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করা উচিত।" অ্যান্টনি বলেন, "দক্ষিণ সাগরে ভারত চীনের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ করবে না। এছাড়া সকল আন্তর্জাতিক জাহাজের সমুদ্রে অবাধ যাতায়াতের অধিকার রয়েছে।"
বহু বছর ধরে দক্ষিণ সাগর সমস্যা চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ককে খুবই জটিল করে তুলেছে। একদিকে নয়াদিল্লি বলছে, সে সংঘাতে জড়ানোর জন্য মনস্তাত্ত্বিক প্রস্তুতি নেয়নি, অন্যদিকে হিন্দুস্তান টাইমস পত্রিকা বলেছে, দক্ষিণ সাগরে চীন শক্তিবৃদ্ধির পাশাপাশি ভারত সাগরের তার অবস্থান সম্প্রসারণ করবে বলে ভারতের আশংকা।
ইন্ডিয়ান টাইমস বলেছে, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের আচরণের ওপর ভারত খুবই মনোযোগ দেয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের চীনকে দমন করার 'বড় খেলা'য় নিজেকে জড়াতে চায় না। অ্যান্টনির ভাষ্য অনুযায়ী, 'বৈরীতা ভারতের নীতি নয়।" যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল পূর্ব দিকে এগোতে থাকা এবং চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অতি সূক্ষ্ম প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে ভারতের 'ধৈর্য বজায় রাখা' খারাপ না।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতের নৌবাহিনী 'ভারতের চালিকাশক্তি'র প্রতিনিধিত্বকারী ডার্ক ব্লু নৌবাহিনী প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছে। ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে ভারতীয় নৌবাহিনীর ব্যয় ৭৫ শতাংশ বেড়েছে। ইন্ডিয়ান টাইমস পত্রিকা জানাচ্ছে, আগামী ১৫ বছরে নৌবাহিনী ৩ ট্রিলিয়ন রুপি ব্যয়ে তার আকার সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছে।
এ পত্রিকার ভাষ্য মতে, চীন-যুক্তরাষ্ট্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার ভারসাম্যমূলক পরিস্থিতি সম্পর্কে ভারতের প্রতিক্রিয়া তুলনামূলকভাবে ধীর হলেও একটি শক্তিশালী ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনী প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ বন্ধ করে নি দেশটি। তার নৌবাহিনীটি 'পারস্য উপসাগর থেকে মালাক্কা প্রণালী পর্যন্ত' কৌশলগত ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ স্থান রক্ষা করবে।
যে ধৈর্যের কথা বলা হয়েছে, তা শুধু ভারতের বাইরের দৃষ্টিভঙ্গি, পিছনে রয়েছে 'উচ্চাভিলাষী আকাঙ্ক্ষা'। এ প্রেক্ষাপটে ভারতীয় নৌবাহিনীর উচ্চ পদমর্যাদা-সম্পন্ন অফিসারদের যথেষ্ঠ শক্তি ও দৃঢ় মনোভাব রয়েছে। একুশ জুলাই ভারতের 'ডেইলি নিউজ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস রিপোর্ট' পত্রিকার খবরে জানা গেছে, 'চীনের সঙ্গে ভারতীয় নৌবাহিনীর যুদ্ধ করার সামর্থ্য নেই' - এ বক্তব্য সম্প্রতি খন্ডন করেছেন ভারতীয় নৌবাহিনীর স্টাফ প্রধান জেনারেল ভেরমা। তিনি বলেন, "আমাদের সামর্থ্য সন্দেহাতীত।"
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |