Web bengali.cri.cn   
উ সি শহরের বৃদ্ধবৃদ্ধাদের বিচিত্র জীবন
  2012-07-30 09:37:19  cri

প্রতি সপ্তাহের মঙ্গলবার বিকেলে চীনের চিয়াংসু প্রদেশের উ সি শহরের ছিংইয়াং ক্রীড়া ও সংস্কৃতি কেন্দ্রের বৃহত্ প্রকোষ্ঠে সুন্দর পোশাক পরিহিত দশজনেরও বেশি মধ্যবয়সী ও বয়োজ্যেষ্ঠ নারীকে সংগীতের তালে তালে নানা রকম ভঙ্গিমা করে হাঁটতে দেখা যায়। তাঁরা সবাই উ সি শহরের খ্যাতনামা ছিংমিং মডেল দলের সদস্যা।

২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এ মডেল দলের অধিকাংশ সদস্যার বয়স ৫৫ বছরের বেশি। তরুণ বয়সেই তাঁদের নাচগান করার শখ ছিল। তরুণ-তরুণীদের মতো ইংরেজি বর্ণ 'টি' আকারের মঞ্চে সৌন্দর্য প্রদর্শনের প্রবল আকাংক্ষাও তাঁদের রয়েছে। অবসর গ্রহণের আগে সু পিং ছিলেন রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা বিভাগের একজন কর্মকর্তা। বান্ধবীদের উত্সাহে তিনি এ মডেল দলে যোগ দেন।

তিনি বলেন, "ফ্যাশন পোশাক পরে আমরা মঞ্চে হেঁটে নারীদের যে সৌন্দর্য প্রদর্শন করি, তাতে আমাদের জীবন তাত্পর্যবহ হয়ে ওঠে বলে আমরা মনি করি। চর্চা করতে করতে আমাদের মানসবৃত্তি নিরাময় হয়ে ওঠে এবং আমাদের মনে আসে তারুণ্য। বিশেষ করে সংগীত বেজে ওঠার সংগে সংগে মডেলদের মতো পা ফেলতেই নিজদের একান্ত সতেজ ও রূপবতী বলে মনে হয়। বয়স আমাদের ৫০ বছরের বেশি হয়েছে বটে, কিন্তু নিজেদের অনেক কম বয়সী মনে হয়।"

ইং আনা কোম্পানি থেকে অবসরগ্রহণকারী কুও সিও লি অতীতে ছিলেন ওই কোম্পানির অপেশাদার শিল্পী। এখন তিনি একজন অপেশাদার পোশাক মডেল।

তিনি বলেন, "মডেলের চর্চা করে আমাদের স্বাস্থ্যে, মনোবৃত্তিতে ও শারীরিক সৌন্দর্যে বিস্তর উপকার হয়েছে। মনে হয়,আমাদের জীবন বৈচিত্র্যময় হয়েছে।"

পেশাদার নৃত্যশিল্পী সু ইয়াও চুনের পরিচালনায় তাঁরা কঠোরভাবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।

লি সিন পিং অতীতে একজন শিক্ষিকা ছিলেন, কিন্তু এখন তিনি ছাত্রীর মতো পোশাক মডেলের পা-ফেলা শিখছেন।

তিনি বলেন, "পোশাক মডেলের মতো হাঁটা সহজসাধ্য নয়। প্রশিক্ষণের পর আমাদের যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। আমাদের শিক্ষিকা আমাদের প্রশংসা করে বলেন: 'আপনারা সবাই বার্ধ্যকে প্রবেশ করেছেন। কিন্তু যুবতীদের চেয়ে আপনাদের পদক্ষেপ কোনো অংশে কম সুন্দর নয়।' তাঁর কথা শুনে আমাদের মনে প্রত্যয় জেগে ওঠে।"

মাদাম লিউ হুই বলেন, "উ শি শহরের মডেল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ আমাদের হয়েছিল। তবে গণ মিলনায়তনের বৃহত মঞ্চে মডেলের মতো হাঁটতে পারব কি না - জানতাম না। সাহসের অভাবে কেউ কেউ এ সুযোগ ছেড়ে দেওয়ার কথাও ভাবছিল। কয়েক সপ্তাহ চর্চা করার পর আমরা এ প্রতিযোগিতায় অপ্রত্যাশিত সাফল্য অর্জন করেছি।"

গত তিন বছরে ছিংমিং মডেল দল প্রদেশ ও শহর পর্যায়ের মডেল প্রতিযোগিতায় একাধিকবার প্রথম ও দ্বিতীয় পুরস্কার পেয়েছে।

মাদাম কুও সিও লি আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, "পোশাক মডেলের পেশা আমাদের একেবার অজানা ছিল। আমরা নিজেদেরকে সৌভাগ্যবান মনে করি এ জন্য যে, তরুণী মডেলের মতো মঞ্চে উঠে চীন ও বিদেশের নানা রকম পোশাকের সৌন্দর্য প্রদর্শনের স্বপ্ন আমাদের সফল হয়েছে।"

সম্প্রতি উ সি শহরের হুয়াং সিয়ান আবাসিক এলাকায় অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিদের ডাকটিকিট প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। শ্রমিক উ ছি হুয়া সংরক্ষিত সাইকেল বিষয়ক যেসব ডাকটিকিট প্রদর্শিত হয়েছে তা বিশেষভাবে সমাদৃত হয়।

আটান্নটি দেশ থেকে সংগৃহীত এসব ডাকটিকিটে সাইকেলের উত্পত্তি, উত্পাদন, ব্যবহার ও সাইকেল চালান প্রতিযোগিতার ইতিহাস গ্রন্থিত হয়েছে।

উ ছি হুয়া ছিলেন উসি সাইকেল কারখানার শ্রমিক। গত সত্তরের দশক থেকে তিনি গভীর আগ্রহে ডাকটিকিট সংগ্রহ শুরু করেন। তিরিশ বছরে তিনি ৫৮টি দেশের যে একশটিরও বেশি ডাকটিকিট সংগ্রহ করেছেন সেগুলোর কোনো কোনোটি বিনিময় বা নিলামের মাধ্যমে পাওয়া গেছে এবং কোনো কোনোটি উপাহার হিসেবে পাওয়া গেছে। উ ছি হুয়ার চোখে এ সব ডাকটিকিট অমূল্য রত্ন। তিনি আমাদের সংবাদদাতার কাছে কয়েক সেট ডাকটিকিটের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেন।

তিনি বলেন, "আমার অধিকাংশ ডাকটিকিট অতি পুরনো। কোনো কোনোটা দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের আগেকার। বিষয়ের বৈচিত্র্য আমার ডাকটিকিটির দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য।

আমাদের সংবাদদাতাকে প্রতিটি ডাকটিকিটির বিষয় ও ইস্যুকারী দেশ সম্বন্ধে বিস্তারিত জানান তিনি।

তিনি বলেন, "যুক্তরাষ্ট্রে যখন জাতীয় পোস্ট অফিস ছিল না তখন ব্যক্তিগতভাবে ছোট ছোট ডাকটিকিট বিলি করা হতো। পোস্ট অফিসও বেসরকারিভাবে চালানো হতো। দেখুন, এই ডাকটিকিটটি ১৯০২ সালের। সাইকেল আবিষ্কারের পর সাইকেলের ভূমিকা প্রচারের জন্য ১৮৯৩ সালে ডাকমাসুল-সমেত খাম বিক্রি করা হয়। কানাডার একটি পোস্ট-কার্ডও দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের আগেকার। ১৯৪২ সালে ইটালির বিলি করা পোস্ট-কার্ড থেকে জানা যায়, যুদ্ধের সময় সৈনাবাহিনীতে সাইকেলের ব্যবহার ছিল খুব ব্যাপক। ১৯৫৩ সালে সড়ক পথে ইতালির সাইকেল চালানো প্রতিযোগিতা স্মরণে বিশেষ ডাকটিকিট প্রকাশিত হয়।"

বিশ-তিরিশ বছর ধরে উ ছি হুয়া সাইকেলের ওপর ডাকটিকিট সংগ্রহে আত্মনিয়োগ করেন। কখনো কখনো একটি ডাকটিকিট কিনতে পকেটের সমস্ত টাকা খরচ করতে দ্বিধাবোধ করেননি তিনি। গত আশির দশকের একদিনের কথা এখনো স্পষ্ট মনে আছে তাঁর। চিয়াংসু প্রদেশের উত্তরাঞ্চলে তিন-চার বছর কৃষক হিসেবে কাজ করে সরকারের নতুন নীতির কল্যাণে তিনি ফিরে আসেন উ সি শহরে।

তিনি বলেন, "একদিন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পকেটে চার শো ইউয়ান নিয়ে আমি রাস্তায় বের হই। হঠাত্ আমার চোখে পড়ে কয়েকটি ডাকটিকিট। সেগুলো আমার খুবই পছন্দ হয়। তাই ইতস্তত না করে টাকা বের করে ডাকটিকিটগুলো কিনে ফেলি। সাবান প্রভৃতি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অভাবে আমার দারুণ কষ্ট হয়েছিল ওই সময়। সে দুর্গতির কথা আর কখনো ভুলবার নয়।"

তবে এসব মূল্যবান ডাকটিকিট তাঁর জন্য অনন্ত আনন্দও বয়ে এনেছে। ডাকটিকিট উপভোগ করে তিনি জীবনের যে মাধুর্যের আস্বাদন পেয়েছেন অন্য কেউ বোধ হয় পায় নি।(বাই)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040