Web bengali.cri.cn   
যৌবনের শেষে নারীদের স্বাস্থ্য ও সৌন্দয রক্ষা সম্পর্কে
  2012-07-25 18:04:33  cri

প্রিয় শ্রোতা বন্ধুরা,জীবনের বিভিন্ন পযায়ের মধ্যে যৌবনের শেষ সময় হলো নারীবন্ধুদের জন্য সবচেয়ে কঠিন এক সময় । কারণ যৌবনান্তকাল যখন আসে তখন প্রমাণিত হয় যে তারা বয়োবৃদ্ধ হতে শুরু হয়েছে । এ সময় ভালভাবে স্বাস্থ্য ও সৌন্দয রক্ষা করা না হলে শারিরীক অবস্থায় বিরূপ প্রভাব পড়বে। বলাবাহুল্য যৌবনান্তকালে ভালভাবে স্বাস্থ্য রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।যৌবনান্তকালে নারীদের কী কী বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে?কেমন করে দুঃখ,নিঃসংগতা ও কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে এবং শান্তভাবে এ সময়কাল কাটিয়ে উঠতে পারা যাবে?আজকের স্বাস্থ্যের সন্ধানে এ বিষয় নিয়ে কিছু আলোচনা করা হবে ।

 

সাধারণত ৪৫ বছর বয়সের পর নারীবন্ধুদের যৌবনান্তকাল শুরু হয় এবং ৫০ বছর বয়সে তাদের রজোনিবৃত্তি শুরু হয়। দেহের স্ত্রীহর্মোন কমে যাওয়ায় নানা লক্ষণ দেখা দেয়। এর মধ্যে আরক্ত হওয়া সবচেয়ে বেশি । যা বিনা কারণে বুক থেকে মুখমন্ডল ও দুই বাহুর দিকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পাশাপাশি বুক ধরপড় করে এবং ঘাম হয়। কোনো কোনো রোগীর আরক্ততা রাতে হয়। তারা মাঝেমাঝে মধ্যরাতে ঘুম থেকে জেগে ওঠেন এবং সারা শরীরে ঘাম হয় বলে তাদের নিদ্রাহীনতা হয়।

যৌবনান্তকাল শুরু হওয়ার পর স্ত্রীলোকের মানসিক ও স্নায়ুগত লক্ষণ দেখা দেবে । যেমন উত্কন্ঠা, বিষন্নতা, অস্থিরতা, সহজে রাগ ও কান্না-কাটি,ক্লান্তি এবং ত্বকে পিপড়া চলাফেরার অনুভূতি । এছাড়া বুক ধড়পড় করাও যৌবনান্তকালের এক সবচেয়ে প্রচলিত লক্ষণ । কোনো এক আকস্মিক শব্দ হলে বুক ধড়পড় করতে পারে, হৃদপিন্ডের স্পন্দন দ্রুত হতে পারে এবং অনেক ক্ষণ পর ধড়পড় থেমে যাবে। কিন্তু ইলেক্ট্রো কারডিও গ্রাম পরীক্ষার ফলাফল প্রায় স্বাভাবিক হয় এবং হওয়ার সময় শুধু সাইনাস টাকিকার্ডিয়া হার্টবিট হয়।

 

বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে যে, যৌবনান্তকালীন নারী বন্ধুদের যদি প্রায়ই কোমর ব্যথা বা পিঠ ব্যথার অনুভূতি হয় তাহলে তাদের অস্টিওপরোসিস বা হাড় ভাংগা রোগ হতে পারে।

এসব শারীরবৃত্তীয় ও মনোবিদ্যাগত অভিব্যক্তি ছাড়া নারীদের আর কী কী স্পষ্ট শারিরীক পরিবর্তন দেখা যায় ? এ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ওয়েই চিয়েনআন বলেন,যৌবনান্তকালে প্রবেশ করার পর নারীদের শরীরের কিছু পরিবর্তন হতে পারে । এক, তাদের রজঃস্রাবের তারিখ এলোমেলো হয়। দুই,তাদের প্রসবক্ষমতা হ্রাস পায় আর তিন, তাদের যৌন ক্ষমতা ও যৌন অঙ্গ নিষ্ক্রিয় ও ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।

তাছাড়া যৌবনান্তকালীন নারীদের বৃত্তিগতসুলভ জরায়ু রক্তস্রাব হতে পারে । রক্তের পরিমান কখনো কম আবার কখনো বেশি। প্রফেসর ওয়েই বলেন,নারীর শারীরবৃত্তগত ক্ষমতা হ্রাসের সাথেসাথে তাদের শরীরে কোনো কোনো দীর্ঘকালীন ব্যাধি শুরু হবে। তিনি বলেন,যৌবনান্তকালের পর নারীদের অস্টিওপরোসিস, স্থূলতা এবং রক্ত ঘনত্বের মিট্যাবলিজমসহ নানা সমস্যা দেখা দেবে এবং হৃদ ও রক্তনালীর ব্যাধি বেড়ে যাবে । কোষ্ঠ কাঠিন্য, মুত্রনালীর ব্যাধি ও ক্যান্সারও বেড়ে যাবে।

প্রফেসর ওয়েই যেমন বলেছিলেন, রজনিবৃত্তির পর নারীদের এ্যাথেরোসক্লিরোসিস ও মাইওকার্ডিয়াল ইনফার্কশন স্পষ্টভাবে বেড়ে যায়। ৪০ বছর বয়সের আগে নারীদের মাইওকার্ডিয়াল ইনফার্কশন হওয়ার হার অতি কম, কিন্তু ৬৫ বছর বয়সে এ রোগের হার অতি বেশি হয়। তাছাড়া ৫৫-৬৪ বছর বয়সের মধ্যে স্ত্রীলোকের রক্ত-ঘনত্ব ধাপাধাপে বেড়ে যায়,যা রজনিবৃত্তির পরের দু বছরের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত বাড়ে। যৌবনান্তকালের আগে বা পরে নারীদের বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে । অসুস্থ হলে যথাসময় পরীক্ষা করতে হবে। পাশাপাশি দৈনদিন জীবনে বিশেষ করে খাদ্যের ব্যাপারে নিজের শারীরবৃত্তগত অবস্থা অনুযায়ী খাবার বেছে নিতে হবে।

প্রফেসর ওয়েই বলেন, যৌবনান্তকালের সঙ্গে নারীদের বার্ধক্য সম্পর্কিত হলেও মানুষের বার্ধক্য ত্বরান্বিত করে এমন খাবার বেশি খাওয়াও বার্ধক্য হওয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ কারণ । বৈজ্ঞানিকরা আবিস্কার করেছেন যে, সীসাপূর্ণ খাবার বেশি খেলে স্নায়ু সঞ্চালন বিঘ্নিত হতে পারে এবং যার ফলে স্মরণ শক্তি কমে যেতে পারে,চেহারা ম্লান হবে এবং অকালে বৃড়ো হবে। এল্যুমিনিয়ামও মানুষের বার্ধক্য দ্রুত করার এক উপাদান। এর সঙ্গে বার্ধক্যসুলভ ডিমেনটিয়া সম্পর্কিত । এল্যুমিনিয়ামসম্পন্ন খাবার বেশি খেলে মানুষরা দ্রুত বুড়ো হতে পারে।

গবেষণা থেকে জানা গেছে,সেল বার্ধক্যের ওপর অক্সিজেন বোঝার গভীর প্রভাব রয়েছে। যথাযথভাবে খাদ্যসেবন নিয়ন্ত্রণ করলে মানবদেহের অক্সিজেন-বোঝা হ্রাস পাবে, অক্সিজেন ফ্রি র্যাডিকলের পরিমান কমবে,বার্ধক্যের প্রক্রিয়া স্থগিত হবে এবং আয়ু বেড়ে যাবে। যথাযথভাবে খাদ্য নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ভিটামিন ই, ভিটামিন সি ও ভিটামিন এ সম্পন্ন খাদ্য গ্রহণ এবং যথাযথ শরীরচর্চা করলে বার্ধক্যের গতি মন্থর হতে পারে।

বলাবাহুল্য, যৌবনান্তকালীন নারীবন্ধুদের পক্ষে দৈনদিন জীবনে বিশেষ করে খাদ্যের ব্যাপারে বিশেষ মনোযোগ দেয়া ছাড়া যে বিষয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হল উদ্দেশ্যসুলভ চিকিত্সা নেয়া। এ সম্পর্কে ওয়েই বলেন, ঐতিহ্যগত চীনা চিকিত্সাবিদ্যার দিক থেকে বলতে গেলে ব্যাপক নারীবন্ধুকে স্ত্রী হরমোন ছাড়া কিছু চীনা ওষুধ ব্যবহার করার পরামর্শ দিতে চাই। প্রতিটি নারী বন্ধুর উচিত নিজের বাস্তব অবস্থা অনুযায়ী ওষুধ ব্যবহার করা।

হরমোন নারীর যৌবনান্তকালের লক্ষণ প্রশমিত করতে পারে । অল্প মেয়াদ হোক দীর্ঘমেয়াদ হোক নানা মেয়াদের লক্ষণ চিকিত্সা করতে হতে পারে। বিশেষ করে আরক্ত ও নৈশ ঘাম চিকিত্সায় এর ফলাফল দ্রুত হতে পারে এবং রজোনিবৃত্তি থেকে সৃষ্ট মানসিক সমস্যার চিকিত্সাও করতে পারে।

তাছাড়া কোনো কোনো খাদ্য যৌবনান্তকালীন নারীদের স্বাস্থ্য রক্ষায়ও সহায়ক।

 

যেমন ক্যালসিয়ামপূরণ করতে দুধ ও সিমজাত দ্রব্য,রক্ত-সুগার কমাতে সাদা ছত্রাক ও পদ্ম-বীজ,ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে কেল্প,মিষ্টি আলু,রসুন,রক্তের ঘনত্ব কমাতে গাজর,বেগুন,পিঁয়াজ,টমেটো,ভূট্টা এবং রক্তচাপ কমাতে চন্দ্রমল্লিকা ও পদ্ম-পাতা রয়েছে।

প্রফেসর ওয়েই জানান, ওটসে যে গলনশীল সেলুলোজ আছে তা আগেভাগে কলেস্টোরল গলাতে পারে বলে প্রত্যেক দিন কিছু ওটস খেলে কলেস্টোরল কমানো যায় । তাছাড়া লিনোলেসিক এসিডসম্পন্ন হয় বলে ওটস কলেস্টোরল বৃদ্ধি রোধ করার ভূমিকা পালন করতে পারে। ফুলকপিতে বিপুল পরিমানের ক্যান্সার বিরোধী এনজাইম এবং অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধ ক্যালসিয়াম সম্পন্ন হয় বলে ফুলকপি খাওয়া যৌবনান্তকালীন নারীদের পক্ষে উপকারী । এজন্য প্রফেসর ওয়েই বিশেষভাবে ব্যাপক নারীবন্ধুদের ওটিস ও ফুলকপি বেশি খাওয়ার প্রস্তাব করেন।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040