Web bengali.cri.cn   
ভারতে 'বিনা খরচা চিকিত্সা ব্যবস্থার' প্রথম ধাপ
  2012-07-16 20:00:31  cri
ভারতে 'বিনা খরচা চিকিত্সা ব্যবস্থা' পরিকল্পনা চালু হলে শহরের বড় হাসপাতাল থেকে গ্রামের ছোট ক্লিনিক পর্যন্ত ভারতের সব সরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক রোগীদের জন্য বিনামূল্যে ওষুধ দিতে পারবে। এ সুবিধার আওতায় থাকবে ভারতের সকল নাগরিক। গত বছর স্বাস্থ্যখাতে ভারতে গণব্যয় ছিল মাথাপিছু মাত্র সাড়ে ৪ ডলার। তবে সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহে ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের সরকারি অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে। ভারত এখন 'বিনা খরচা চিকিত্সা ব্যবস্থা' চালুর পথে।

আগে ভারতের চিকিত্সা ব্যবস্থা নিয়ে কথা বললে একটি কথা প্রায় আসতো। সেটি হলো দেশটির চিকিত্সা ব্যবস্থা 'বিলাসি'। রাষ্ট্রীয় হাসপাতালের তুলনায় ব্যক্তিগত ক্লিনিকের চিকিত্সাব্যয় চার গুণ বেশি। অথচ ভারতে এখনো ৪০ শতাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে জীবনযাপন করছে। তাদের একদিনের সর্বোচ্চ আয় মাত্র ১.২৫ মার্কিন ডলারের মতো। ওষুধ কিনার অক্ষমতা ইতোমধ্যেই ভারতে একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ভারত সরকার পেটেন্ট ওষুধ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আসলে পেটেন্ট ওষুধের গুণগতমান বিখ্যাত ব্র্যান্ডের ওষুধের মতোই ভালো। তবে স্থানীয়ভাবে উত্পাদন করলে সেগুলোর দাম অনেক কম হবে।

গত মার্চ মাসে ভারত দেশের ওষুধ উত্পাদন কোম্পানিগুলোকে দেশের ইতিহাসে প্রথম বাধ্যতা অনুমোদন দিয়েছে। তারা জার্মানির বেয়ার কোম্পানির ক্যান্সার প্রতিরোধক ওষুধের মতো নিজ দেশে পেটেন্ট ওষুধ উত্পাদন করবে। একজন রোগীর এক মাসের ওষুধের হিসাব করি - জার্মানির ওষুধ ব্যবহার করলে যেখানে খরচ পড়বে ২ লাখ ৮০ হাজার রুপি সেখানে ভারতে তৈরি ওষুধ ব্যবহার করলে খরচ হবে মাত্র ৮ হাজার ৮ শ' রুপি। আকাশ-পাতাল পার্থক্য, তাই না?

আসলে এ পরিকল্পনা বিভিন্ন বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানিকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। নতুন অর্থনৈতিক সত্তাগুলোর বাজারে মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ সমস্যা তাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা বলে মনে হচ্ছে। তবে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর ওষুধের দাম থেকে আমরা অনুমান করতে পারি তারা কী পরিমাণ মুনাফা করে। তবে ভারতের ওষুধ প্রস্তুতকারীদের সংগঠন বা ও পি পি আই মনে করে, ওষুধের দাম জনগণের চিকিত্সা সেবার একটি খুব ছোট উপাদান। এসব পরিকল্পনার ফলে বড় ওষুধ উত্পাদনকারীরা তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। এ সংগঠনের ধারণা, ভারতে এখন বছরে ওষুধ বিক্রির পরিমাণ প্রায় ৬০০ বিলিয়ন রুপি। এর মধ্যে বড় আকারের ক্রয়ের পরিমাণ মাত্র ৪৮.২ বিলিয়ন রুপি। বর্তমানে দেশের ৬০ শতাংশ জনগণ 'বিনা খরচা চিকিত্সা ব্যবস্থার' আওতায় এসেছে। তাই এভাবে হিসাব করলে দেখা যায়, মাত্র ২৯ বিলিয়ন রুপি মূল্যের ওষুধ এ নীতি দ্বারা প্রভাবিত হবে। এছাড়া ব্যক্তিখাতের ক্লিনিক ও হাসপাতালের রোগীদের বিখ্যাত ব্র্যান্ড ওষুধের জন্য নিজেদের অর্থ ব্যয় করতে হবে।

ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনুমান করছে, বর্তমান 'বিনা খরচা চিকিত্সা ব্যবস্থা' থেকে হয়তো মাত্র ২৫ কোটি মানুষ, বা দেশটির মোট জনসংখ্যার মাত্র ২৫ শতাংশেরও কম, লাভবান হবে। 'বিনা খরচা চিকিত্সা ব্যবস্থা' চলতি বছর সীমিত আকারে চালু হবে। তবে সরকার অনুমান করছে, আগামী ২ বছরের মধ্যে তা সারা দেশে চালু করা সম্ভব হবে। আগামী ২০১৭ সালের এপ্রিল পর্যন্ত দেশের ৫২ শতাংশের জনগণ এ থেকে সুবিধা পাবে।

এ বিশাল পরিকল্পনার জন্য দেশটিকে ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের সংস্থান করতে হবে। তবে এর প্রথম কিস্তির অর্থ মাত্র ১ বিলিয়ন রুপি। এটা পরিকল্পনার তুলনায় খুব ছোট একটি অংশ। তা সত্ত্বেও ঘাটতির সম্মুখীন ভারত সরকারের জন্য এটা খুব বড় একটা সংখ্যা। তাই সার্বিকভাবে এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে আরো অনেক সময় লাগবে।

বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ করা ভারতের স্বাস্থ্য পরিস্থিতির উন্নয়নের প্রথম ধাপ। এর সঙ্গে সঙ্গে দেশের চিকিত্সা সেবার মান উন্নয়ত করতে হবে। তবে অর্থ সংগ্রহ করে বিনা খরচের রাষ্ট্রীয় ক্লিনিক বা হাসপাতাল স্থাপন করা এখন খুব মুশকিল।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040