Web bengali.cri.cn   
জাপানের তিয়াও ইয়ু দ্বীপ কেনার উদ্যোগকে অনুমোদন করে না চীন
  2012-07-13 13:37:44  cri

জাপানের প্রধানমন্ত্রী নোদা ইয়োশিহিকো ৭ জুলাই ঘোষণা করেছেন যে, জাপান সরকার তিয়াও ইয়ু দ্বীপ কিনবে এবং এ দ্বীপের 'রাষ্ট্রায়ত্তকরণ' যাচাই করবে। ইতিহাসে ৭ জুলাই চীন ও জাপানের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি স্পর্শকাতর তারিখ। পঁচাত্তর বছর আগে এই দিনে জাপান চীনের ওপর আগ্রাসন শুরু করে। তিয়াও ইয়ু দ্বীপ সম্পর্কে নোদা ইয়োশিহিকোর ভাষ্যের পর পরই চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং চীনের তাইয়ান কর্তৃপক্ষ এর বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। চীনের ভূখণ্ডের কোনো কেনা-বেচা হবে না। চীনের সামরিক বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন যে, তিয়াও ইয়ু দ্বীপ কেনার এ জাপানি অপতত্পরতা তাত্ক্ষণিক নয়; এটা সযত্ন পরিকল্পনার মাধ্যমে একটি 'দ্বীপ কেড়ে নেওয়ার' ষড়যন্ত্র। চীন অব্যশই এটাকে অনুমোদন দেবে না।

তিয়াও ইয়ু দ্বীপ সাড়ে ৬ বর্গকিলোমিটারের একটি দ্বীপপুঞ্জ। চীনের ফু চিয়ান প্রদেশের পূবে এবং তাইয়ানের উত্তর-পূবে পূর্ব চীন সাগরে অবস্থিত এ দ্বীপ। তিয়াও ইয়ু দ্বীপ, হুয়াং উয়েই দ্বীপ, ছি ওয়েই দ্বীপ, ক্ষুদ্র দক্ষিণ দ্বীপ, ক্ষুদ্র উত্তর দ্বীপ এবং কয়েকটি প্রবাল দ্বীপ নিয়ে গঠিত এ দ্বীপপুঞ্জ।

চীনা জনগণ প্রথম তিয়াও ইয়ু দ্বীপ আবিষ্কার এবং তার নামকরণ করে। ষোড়শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে তিয়াও ইয়ু দ্বীপ চীনের ফু চিয়ান প্রদেশের সামুদ্রিক প্রতিরক্ষা সীমার একটি অংশ হয়। বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ তিয়াও ইয়ু দ্বীপের ওপর চীনের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে। এ ব্যাপারে কেউ কোনো আপত্তি জানায় নি।

চীনের প্রতিরক্ষা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৌশল গবেষণা বিভাগের বিশেষজ্ঞ সিনিয়র কর্নেল লিয়াং ফাং এক সাক্ষাত্কারে বলেন,

"১৩৭৩ সালে আমরা চীনারা প্রথম তিয়াও ইয়ু দ্বীপে পৌঁছাই। ইয়াং চাই নামের একজন চীনা এ দ্বীপের সন্ধান পান। চীনের মিং রাজবংশের ইয়ং লে আমলে 'সুন ফুং সিয়াং সুং' নামক সমুদ্রযাত্রা বিষয়ক একটি পথনির্দেশনা পুস্তকে তিয়াও ইয়ু দ্বীপের নাম লিপিবদ্ধ হয়। তিয়াও ইয়ু দ্বীপ চীনের ঐতিহ্যবাহী মত্স্য শিকার ক্ষেত্র। এ ব্যাপারেও কোনো মতবিরোধ নেই। তিয়াও ইয়ু দ্বীপের শাসনের ইতিহাস জাপানের চেয়ে চীনের পাঁচ শ' বছর বেশি। এ ব্যাপারে আমাদের অকাট্য প্রমাণ আছে।"

জাপান কেন তিয়াও ইয়ু দ্বীপের ব্যাপারে এত আগ্রহী? এর কারণ হলো টোকিওয়ের গভর্নর শিনতার ইশিহারার চাপ। এ বছরের এপ্রিল মাসে 'দ্বীপ ক্রয়' তত্পরতার প্রস্তাবক শিনতার ইশিহারা জাপান সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করে যাতে 'দ্বীপ ক্রয়' বিষয়ে সরকার উদ্যোগ নেয়।

লিয়াং ফাং এ ব্যাপারে মনে করেন যে, জাপান সরকারের তিনটি ভুল ধারণার কারণে বর্তমান অবস্থা ঘটেছে। তিনি বলেন,

"এ তিনটি ভূল ধারণার তথ্যগত ভিত্তি হচ্ছে: প্রথমত, জাপান মনে করে যে, চীন একটি কৌশলগত সুযোগের কাল অতিক্রম করেছে এবং আগামী শরতকালে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ১৮তম জাতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হচ্ছে ।এ সময়ের মধ্যে চীনে কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না। দ্বিতীয়ত, জাপান মনে করে যে, যুক্তরাষ্ট্রের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নীতি পরিবর্তিত হয়েছে এবং এর ফলে জাপানকে বেশি সমর্থন করবে যুক্তরাষ্ট্র। তৃতীয়ত, জাপান মনে করে যে, শিনতার ইশিহারার নেতৃত্বাধীন দক্ষিণপন্থীরা একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করবে।"

জাপানের 'দ্বীপ ক্রয়' তত্পরতার পর চীনের অনেক পণ্ডিত মনে করেন যে, এ তত্পরতা দু'দেশের নেতাদের মতামতের অভিন্নতা নস্যাত্ করেছে। লিয়াং ফাং জোর দিয়ে বলেন, চীনের উচিত সতর্ক থাকা। কারণ জাপানের এবারের চক্রান্ত-তত্পরতা ব্যক্তিগত আচরণ পর্যায় থেকে দেশের আচরণে পরিণত হয়েছে।

"নোদা ইয়োশিহিকো সরকার তিয়াও ইয়ু দ্বীপকে জাপানের একটি অংশে পরিণত করতে চায়। তিয়াও ইয়ু দ্বীপ যদি জাপানের একটি অংশে পরিণত হয়, তাহলে দেশটি দ্বীপে সৈন্য মোতায়েন করবে। এটা হচ্ছে আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।"

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখপাত্র লিউ ওয়েই মিন বলেছেন, চীন সরকার প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের মধ্য দিয়ে তিয়াও ইয়ু দ্বীপ ও এর আওতাধীন দ্বীপগুলোর সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে।

তিনি বলেন,

"তিয়াও ইয়ু দ্বীপ এবং এর আওতাধীন দ্বীপগুলো সবসময় চীনের ভূখণ্ডের একটি অংশ। 'দ্বীপ ক্রয়' উদ্যোগ চীন ও জাপানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককেই কেবল ক্ষতিগ্রস্ত করবে।"

'দ্বীপ ক্রয়' নিয়ে চীনের একজন সামরিক বিশ্লেষক - চীনের নৌবাহিনীর তথ্যায়ন বিশেষজ্ঞ কমিটির পরিচালক মেজর জেনারেল ইন জুও - বলেন, জাপানে দক্ষিণপন্থীকরণ এবং দেশটির অর্থনীতির দীর্ঘকালীন মন্দার কারণে সরকারের প্রতি সে দেশের জনগণের যে অসন্তুষ্টি সৃষ্টি হয়েছিল 'দ্বীপ ক্রয়' তত্পরতা ঘোষণার পর তা হ্রাস পেয়েছে।

ওই বিশেষজ্ঞ বলেন, চীনের অর্থনীতির দ্রুত উন্নয়নে অসন্তুষ্ট জাপান।

"বর্তমানে তিয়াও ইয়ু দ্বীপের ওপর চীন ও জাপান কারোরই কোনো বাস্তব নিয়ন্ত্রণ নেই। এ প্রেক্ষাপটে জাপানের একমাত্র উপায় হচ্ছে বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের জি ডি পি প্রবৃদ্ধি এত ভাল ছিল যে, জাপানকে পেছনে ফেলে চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।"

মেজর জেনারেল ইন জুও জোর দিয়ে বলেন, 'জাপান তিয়াও ইয়ু দ্বীপকে নিয়ন্ত্রণ' করে বলে যে দাবি করা হয়েছে তা সত্যি না। চীনের মত্স্য শিকারের পাহারা নৌকা এবং মহাসাগর নজরদারি জাহাজ তিয়াও ইয়ু দ্বীপে তাদের নিয়মিত টহল কখনো থামায় নি।"

"অবশ্যই আমাদের সামরিক শক্তি প্রয়োগের সম্ভাবনা আছে। জাপান যদি সামরিক অভিযান চালায়, তাহলে একটি সার্বভৌম দেশ হিসেবে আমাদেরকেও আত্মরক্ষামূলক সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যদিও বর্তমানে দু'পক্ষের বিরোধ সামরিক পর্যায়ে পৌঁছায় নি, তবে জাপান যদি 'সীমা অতিক্রম করে', আমরা তিয়াও ইয়ু দ্বীপের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে পারবো।"

চীনা গণমুক্তি ফৌজের এ মেজর জেনারেল আরো বলেন, আসলে চীন ও জাপান জানে যে, দু'দেশের সম্পর্ক নষ্ট করে দেওয়ার ক্ষেত্রে তিয়াও ইয়ু দ্বীপ যুক্তরাষ্ট্রের একটি কৌশলে পরিণত হয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, তিয়াও ইয়ু দ্বীপ নিয়ে সমস্যা গুরুতর হলে তা দু'দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো উপকারে আসবে না। যুক্তরাষ্ট্রই কেবল এ থেকে ফায়দা লুটবে। (জিনিয়া ওয়াং)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040