Web bengali.cri.cn   
সাহিত্যিক ব্যানগু সম্পর্কে
  2012-07-10 15:42:25  cri

ব্যানগু চীনের পূর্ব হ্যান রাজবংশের বিখ্যাত সাহিত্যিক ও ইতিহাসবিদ। তিনি জন্ম গ্রহণ করেন খৃষ্টিয় ৩২ অব্দে। তাঁর মৃত্যু হয় খৃষ্টিয় ৯২ অব্দে।

তিনি বড় হন একটি অভিজাত পরিবারে। তাঁর দাদা ও বাবা তত্কালীন রাজদরবারের কর্মকর্তা ছিলেন। তাঁর চাচা ছিলেন পশ্চিম হ্যান রাজবংশের বিখ্যাত পন্ডিত। যখন ব্যানগুর বয়স নয় বছর তখন তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ২৩ বছর বয়সে তিনি রাজপ্রসাদের একজন কর্মকর্তা নিযুক্ত হন। রাজা ব্যানগুর মেধার খুব প্রশংসা করতেন। তাঁর ওপর রাজার আস্থাও বেশি ছিল। রাজপ্রসাদে ব্যানগুর দায়িত্ব ছিল হ্যান রাজবংশের ইতিহাস লেখা। ' হ্যানসু ' মানে হ্যান রাজবংশের ইতিহাস সম্পর্কিত বই।

ব্যানগুর লেখা 'হ্যানসু' ছিল সিমাশিয়েনের সম্পাদিত ' সিজির' পর আরেকটি মহান ঐতিহাসিক বই। 'হ্যানসু' বইতে খৃষ্টপূর্ব ২০৬ অব্দ থেকে খৃষ্টপূর্ব ২৩ অব্দ পর্যন্ত সময়পর্বের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করা হয়। ঐতিহাসিক বই হিসেবে ' ব্যানগুর লেখা ' হ্যানসু' সিমাশিয়েনের সম্পাদিত ' সিসির' স্টাইল প্রতিফলিত হয়। কিন্তু ' সিজির'চাইতে ' হ্যানসুতে' যে তথ্য লিপিবদ্ধ করা হয় তা আরও সম্পূর্ণ ও সমৃদ্ধ। ' হ্যানসুতে যে ঘটনাপ্রবাহ বনর্ণা করা হয়েছে তা ' সিজির' তুলনায় আরও বাস্তব। যদিও ' হ্যানসু' লিখতে ব্যানগু সিমাশিয়েনের 'সিজি' থেকে অনেক তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন তবে তিনি অনেক সংস্কার কাজ করেছিলেন। ঐতিহাসিক সাহিত্য হিসেবে ' সিজি' 'হ্যানসু'র চেয়ে বেশি বিখ্যাত । কিন্তু ' হ্যানসুর' স্ববৈশিষ্ট্য ছিল।

ছোটবেলা থেকে ব্যানগু ঋষি কনফুসিয়াসের অনেক বই পড়তে শুরু করেন। তাঁর বাবা কনফুসিয়াসের ভক্ত পাঠক ছিলেন। সুতরাং ছোটবেলা থেকে তাঁর ওপর কনফুসিয়াসের প্রভাব ছিল প্রবল। তিনি সিমাশিয়েনকে সম্মান দিতেন। কিন্তু ইতিহাসের প্রতি সিমিশিয়েনের অনেক চিন্তাধারার সঙ্গে ব্যানগু একমত ছিলেন না। তাঁর অনেক লেখায় ব্যানগু তখনকার সামন্তবাদী সমাজের পক্ষে কথা বলেন। তবে তাঁর সম্পাদিত ' হ্যানসুতে' পশ্চিম হ্যান রাজবংশের ইতিহাস সার্বিক ও ষ্পষ্টভাবে প্রফলিত হয়। তা ছাড়া , 'হ্যানসুর' অনেক অধ্যায়ে শাসক শ্রেণীর নানা ধরনের অপরাধও উদ্ঘাটন করা হয়। সুতরাং পরবর্তীকালের মানুষ 'হ্যানসুর'মাধ্যমে সামন্তবাদী সমাজের অন্ধকার বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পারে।

'হ্যানসুতে' ঐতিহাসিক ব্যক্তিদের বর্ননা অত্যন্ত প্রানবন্ত । এ সব ব্যক্তির জন্য মূল্যায়নও যুক্তিযুক্ত। যখন ব্যানগু কোন একজন ব্যক্তি সম্পর্কে লেখেন তখন তিনি সে ব্যক্তির প্রকৃতি ও চিন্তাধারা বিশদভাবে ব্যক্ত করেন। পাঠকরা তাঁর বর্ননা থেকে এ সব ঐতিহাসিক ব্যক্তির চরিত্র ও ধারণা জানতে পারেন। 'হ্যানসুতে' যে সব শব্দ ব্যবহার করা হয় সে সব শব্দ চীনা ভাষার প্রাচীন সাহিত্য । পরবর্তীকালের অনেক সাহিত্যিক 'হ্যানসুর' ভাষা গবেষণা করতে পছন্দ করতেন। যেমন ঠান রাজবংশের বেশ কয়েক জন নাম-করা কবি 'হ্যানসু' নিয়ে গবেষণা করতেন। ' হ্যানসু' পড়ার মাধ্যমে তাদের সাহিত্যের মজবুত ভিত্তি স্থাপিত হয়। পড়তে খুব কঠিন বলে ঠান রাজবংশে অনেক পন্ডিত 'হ্যানসুর' বইতে অনেক কঠিন অংশের ব্যাখ্যা করতেন। বর্তমানে সংক্ষরিত 'হ্যানসুর' সংখ্যাগুলোর মধ্যে অনেকেই 'সংশোধিত' হ্যানসু।

ব্যানগু তাঁর জীবনে কেবন হ্যান রাজবংশের ইতিহাস বই ' হ্যানসু ' লিখেছেন তাই নয় তিনি অনেক কবিতাও লিখেছেন। তাঁর কবিতা সংগ্রহ ' লিয়েনপুফু' খুব বিখ্যাত । তাঁর কবিতা সংগ্রহে হ্যান রাজবংশের সমাজ উত্পাদনের উন্নয়ন, শহরাঞ্চলের সমৃদ্ধি ব্যাপকভাবে প্রতিফলিত হয়। হ্যান রাজবংশের অন্যান্য কবির লেখার তুলনায় ব্যাগুর লেখা অপেক্ষাকৃতভাবে বাস্তব। তাঁর' কবিতা সংগ্রহ ' সিডুফুতে' ছানআন শহরের ব্যস্ততা ও উপকন্ঠের সুন্দর দৃশ্য ভালভাবে ব্যক্ত করা হয়।

রাজদরবার থেকে অবসর নেয়ার পর ব্যানগু তাঁর জন্মস্থান অনলিন বতর্মানের সেনসি প্রদেশের হ্যানইয়ানে ফিরে যান। কিন্তু তিনি কবিতা লেখা বন্ধ করেননি। তখন থেকে তিনি প্রতি দিন চাষিদের সঙ্গে মেলামেশা করার সুযোগ পেতেন। তিনি চাষিদের জীবন সম্পর্কে ভালভাবে জানতেন। সুতরাং তিনি চাষিদের জীবন নিয়ে কবিতা লিখতে শুরু করেন। তাঁর জীবনের শেষ পর্যায়ে তিনি অনেক পল্লী কবিতা লিখেছেন। তার সমস্ত কবিতায় তত্কালীন চাষিদের পরিশ্রম ও সরলতা ফুটে ওঠে। তিনি সময় পেলে চাষিদের সঙ্গে কথাবার্তা বলতেন । মাঝে মাঝে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সঙ্গে আড্ডা মারতেন। চাষিদের সঙ্গে আড্ডা মারার পাশাপাশি তিনি তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু জানতে পেতেন। সুতরাং তাঁর পল্লী কবিতাগুলোতে যে সব কাহিনী বর্ননা করা হয়েছিল সে সব কাহিনী চাষিদের মধ্যে ঘটা বাস্তব ঘটনা। ঠান রাজবংশের বিখ্যান কবি লিও জন ইয়েন ব্যানগুর পল্লী কবিতাগুলোর খুব প্রশংসা করতেন।

এখানে উল্লেখ্য যে ইতিহাসের বেশির ভাগ বিখ্যাত কবির জীবন খুব কষ্টকর। তাদের মধ্যে অনেকের রাজনৈতিক পথ ততটা সুগম ছিল না। যৌবনে সাধারণত তাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা খুব বেশী ছিল। তাদের মধ্যে অধিকাংশই রাজদরবার বা স্থানীয় সরকারের কর্মকর্তা হতেন । কিন্তু পরে বিভিন্ন কারণে তাদের নিয়তি ভাল হয়নি। অবশেষে তারা রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এসে সাহিত্যের পথ অনুসরণ করতে শুরু করেন। কিন্তু ব্যানগু তাদের মত নন। তার রাজনৈতিক পথ খুব সুগম ছিল। যখন তিনি রাজপ্রসাদের কর্মকর্তা ছিলেন তিনি তার চারপাশের অন্যান্য কর্মকর্তার কাছ থেকে যথেষ্ট সম্মান পেতেন। যখন তিনি হ্যান রাজবংশের ইতিহাস বই ' হ্যানসু' লিখতে শুরু করেন তখন থেকে তিনি রাজপ্রাসাদের সমর্থন পেতেন। তত্পকালীন রাজা তাঁর জন্য অনেক সুযোগ-সুবিধা দিতেন। অবসর নেওয়ার পর তিনি সুখি জীবন যাপন করতেন। অবসর জীবন কাটানোর পাশাপাশি তিনি অনেক গ্রাম্য কবিতা লিখেছেন। সুতরাং চীনের ইতিহাসের অনেক নাম-করা কবির তুলনায় তিনি একজন ভাগ্যবান মানুষ।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040