Web bengali.cri.cn   
আন্তর্জাতিক বন্ধুত্বপূর্ণ শহর নির্মাণের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি
  2012-06-29 10:06:20  cri

'নতুন পরিবেশ, নতুন দিক, নতুন ব্যবস্থা' শীর্ষক ২০১২ সালের এক শ' শহর ফোরাম সম্প্রতি পেইচিংয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। চীনের প্রায় এক শ' শহরের প্রতিনিধিরা এতে অংশ নেন। চীন ও বিদেশি শহরের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা করে আন্তর্জাতিক বন্ধুত্বপূর্ণ শহর নির্মাণ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া-সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেন তাঁরা। ফোরামে প্রতিনিধিরা একমত হন যে, আন্তর্জাতিক বন্ধুত্বপূর্ণ শহর নির্মাণ কাজ হচ্ছে শহরের আন্তর্জাতিকীকরণ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়।

চীনের কুয়াং চৌ শহর হচ্ছে চীনের একটি বৈদেশিক বাণিজ্যিক শহর। বছরে এ শহরের আমদানি ও রপ্তানির পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কুয়াং চৌ শহর প্রবল উদ্যমে আন্তর্জাতিক বন্ধুত্বপূর্ণ শহর কৌশল বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিশ্বের ২৮টি দেশের ৩১টি শহরের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। কুয়াং চৌ নগর সরকারের উপ-মহাসচিব উয়েই উয়েই হান- মনে করেন, আন্তর্জাতিক বন্ধুত্বপূর্ণ শহরের মধ্যে বৈদেশিক বিনিময়ের প্রধান প্রতীক হিসেবে কুয়াং চৌ শহর বিশ্বমঞ্চে প্রবেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়ে পরিণত হয়েছে। উয়েই উয়েই হান বলেছেন,

"একটি শহরের বৈদেশিক বিনিময় উন্নয়নের জন্য একটি আন্তর্জাতিক বিনিময় প্ল্যাটর্ফম প্রয়োজনীয়। যদি আন্তর্জাতিক বন্ধুত্বপূর্ণ শহরের প্ল্যাটর্ফম না থাকে, তাহলে বিনিময় ও সহযোগিতা হবে না।"

চীনের বৈদেশিক মৈত্রী সমিতির চেয়ারম্যান লি সিয়াও লিন এক সাক্ষাত্কারে বলেন, আন্তর্জাতিক বন্ধুত্বপূর্ণ শহর কার্যক্রম চীনের শহরগুলোর 'বাইরে যাওয়া'র কৌশলে পরিণত হয়েছে। তাছাড়া এটি শহরের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটর্ফম এবং চীন ও বিদেশি সরকার ও জনগণের বন্ধুত্ব গভীর করার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়ে পরিণত হয়েছে।

ফোরামে অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধিরা নিজ নিজ দেশের আন্তর্জাতিক বন্ধুত্বপূর্ণ শহর নির্মাণ কাজের ভাল অভিজ্ঞতা এবং নতুন উপায় নিয়ে মত বিনিময় করেন। অনেক প্রতিনিধি জোর দিয়ে বলেন যে, বিভিন্ন পক্ষের উচিত নিজ দেশের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বিনিময় পদ্ধতি নবায়ন ও উদ্ভাবন করা এবং সহযোগিতা ও সহযোগিতার আকার বাড়ানো, যাতে চীনের শহরগুলোর আন্তর্জাতিকীকরণ হয়।

'ছোট পণ্যসাগর, ভোক্তাস্বর্গ' নামে চীনের চে চিয়াং প্রদেশের ই উ শহরে বিশ্বের বৃহত্তম পাইকারী বাজার আছে। জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য দেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক বিনিময় আছে এ শহরের। ২০১১ সালে ই উ শহর থেকে ৫.৭ লাখ কন্টেনার পণ্য রপ্তানি হয়। বর্তমানে ই উ শহর প্রায় ৫০টি বিদেশি শহরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ বিনিময় সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেছে। ই উ শহরের ভাইস-মেয়র মি পিন বলেন,

"আমরা আশা করি যে, বন্ধুত্বপূর্ণ শহর প্রতিষ্ঠা আমাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন এবং বাণিজ্যিক বিনিময়ের জন্য সহায়ক হবে। ই উ শহর আন্তর্জাতিকীকরণের অনুশীলনকারী, অনুপ্রেরণাকারী ও অংশীদার। ই উও আন্তর্জাতিকীকরণ থেকে উপকৃত হয়েছে।"

১৯৭৩ সালে চীনের থিয়ান চিন শহর জাপানের কোবে শহরের সঙ্গে প্রথম চীন ও বিদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ শহর সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে। ২০১১ সালের শেষ দিক পর্যন্ত চীনের ৩৮৩টি শহর ১২৯টি দেশের ১৮১৭টি শহরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেছে।

প্রায় ৪০ বছরের উন্নয়নের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক বন্ধুত্বপূর্ণ শহর কার্যক্রম দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক থেকে বহুপাক্ষিক সহযোগিতায় পরিণত হয়েছে। সহযোগিতার ক্ষেত্র রাজনীতি, অর্থনীতি ও বাণিজ্য থেকে সংস্কৃতি, শিক্ষা, প্রতিভা, শহর প্রতিষ্ঠা, পরিবেশ রক্ষা এবং নিম্ন-কার্বনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিস্তৃত হয়েছে। এতে তথ্যমাধ্যমও অংশ নেয়। যেমন চীন আন্তর্জাতিক বেতারের 'ইন্টারন্যাশনাল অনলাইন' ওয়েইবসাইট ২০১০ সালে 'বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি—চীন ও বিদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ শহরগুলোর মধ্যে সংলাপ' শীর্ষক ধারাবাহিক কার্যক্রম আয়োজন করে। বেতারের ৬১টি ভাষা বিভাগের সম্প্রচার সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে অনেক কার্যক্রম আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে চীনের একটি প্রাচীন শহর সি'আন, ইতালির প্রাচীন নগর পোমপেই, শাংহাই ও ক্রোয়েশিয়ার রাজধানী জাগরেবসহ বিভিন্ন শহরের মেয়র ও বিশেষজ্ঞদের মধ্যে নেট অডিও ও ভিডিও বিনিময় কার্যক্রম।

বর্তমানে শহরের প্রতিনিধিরা ভাবতে শুরু করেছেন যে, কীভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ শহরের ভূমিকা পালন করে শহরের আন্তর্জাতিকীকরণের প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। ছেন তু নগর সরকারের বৈদেশিক বিষয়ক অফিসের পরিচালক ছিউ হাই মিং বলেন, ছেন তু শহর ৩১ বছর আগে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক বন্ধুত্বপূর্ণ শহর সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা শুরু করে।

তিনি বলেছেন,

"ত্রিশ বছরের উন্নয়নের পর আমরা পরিপক্ক হয়েছি। চীনে মানুষ ৩০ বছর বয়স হলে তার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার একটা কথা আছে। মানে একজন মানুষ ৩০ বছর বয়স্ক হলে তার উচিত সাফল্য অর্জন করা। 'প্রতিষ্ঠিত হওয়ার বছরে বন্ধুত্বপূর্ণ শহর কাজ বাস্তবায়নে আরো দক্ষতা আসবে। (জিনিয়া ওয়াং)

চীন-ইউরোপ কার্বন-কর নিয়ে জটিলতা

ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে যে, ১৫ জুনের আগে বিভিন্ন দেশের এয়ারলাইন কোম্পানির উড্ডয়ন কার্বন-নিঃসরণের তথ্য দখিল করতে হবে। এর দশ দিন পরও চীন ই ইউকে কোনো কার্বন-নিঃসরণ তথ্য দেয়নি। ই ইউ'র উড্ডয়ন কার্বন-কর আদায় বিষয়ে চীনের মনোভাবের পরিবর্তন হয়নি। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বর্তমানে চীন ও ই ইউ'র মধ্যে উড্ডয়ন কার্বন-কর নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।

২০০৮ সালে নভেম্বরে ই ইউ একটি বিল পাস করে যে, আন্তর্জাতিক বিমান-পরিবহন শিল্প কার্বন-নিঃসরণের বাণিজ্য ব্যবস্থার একটি অংশ। ই ইউ ঘোষণা করে যে, ২০১২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এ আইন বলবত্ করা হবে। এ বিলে বলা হয়েছে, ই ইউ'র আকাশসীমার মধ্যে উড্ডয়ন ও অবতরণকারী বিদেশি বিমানগুলোকে কার্বন-নিঃসরণ চার্জ দিতে হবে। শুধু চীন ও ভারত এখনো পর্যন্ত ই ইউকে কার্বন-কর হিসাবের জন্য দরকারি বিমান পরিবহনের কার্বন নিঃসরণের তথ্য দেয়নি। ই ইউর একজন কর্মকর্তা বলেছেন, তথ্য না দেওয়া এয়ারলাইনগুলোকে মোটা অংকের জরিমানা করার বা তাদের ফ্লাইট বন্ধ করে দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চীনের বিমান-পরিবহন সমিতি জানিয়েছে যে, যদি জরিমানা আরোপ করা হয়, তাহলে তারা এর বিরোধিতা এবং ইউরোপীয় এয়ারলাইন বয়কট করবে। এর ফলে ই ইউ চীনের গুরুত্বপূর্ণ বিমান-পরিবহন ও পর্যটন বাজার হারাবে। চীন ও ই ইউর মনোভাব এত শক্ত যে,একটি কার্বন-কর যুদ্ধ হবে তাদের মধ্যে।

চীনের জ্বালানি সম্পদ সম্পর্কিত একটি ওয়েবসাইটের মূখ্য তথ্য কর্মকর্তা হান সিয়াও পিং একটি সাক্ষাত্কারে বলেন, ই ইউর মনোভাব মোকাবিলার জন্য চীন প্রস্তুত রয়েছে।

"আমাদের কোন বিকল্প নেই। কারণ যদি আমরা ই ইউর বিমান-পরিবহন কার্বন-কর মেনে নিই, তাহলে তা আমাদের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। এটা হচ্ছে একটি সূচনা। বিমান-পরিবহন কার্বন-করের পর সমুদ্রযাত্রা কার্বন-কর হবে। তারপর হয়তো বিভিন্ন দ্রব্য কর হবে। এভাবে চীন ও ভারতসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর দ্রব্য প্রত্যাখ্যান করবে ই ইউ।"

সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ইউরোপীয় ঋণ সংকট গুরুতর হওয়ার প্রেক্ষাপটে ই ইউ যদি কার্বন-কর আরোপের জন্য অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা ত্যাগ করে এবং চীন ও ভারতসহ গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার এবং সম্ভাব্য ঋণদানকারী দেশগুলোর সঙ্গে এ রকমের বাণিজ্যিক যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়, তাহলে তাতে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হবে।

গত মাসে অনুষ্ঠিত চীনের বেসামরিক যাত্রীবাহী উন্নয়ন ফোরামে ই ইউ বিমান-পরিবহন ও আন্তর্জাতিক পরিবহন নীতি বিভাগের পরিচালক ম্যাথিউ বল্দউইন বলেন, ই ইউ কোনো পক্ষের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ চায় না। শুধু পরস্পরিক সহযোগিতা আন্তর্জাতিক বিমান-পরিবহন শিল্পের ভবিষ্যত উন্নয়ন লক্ষ্যের স্বার্থের জন্য সহায়ক।

পেইচিং নোর্মল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের পরিবেশ আইন বিশেষজ্ঞ ইয়েন হো ফুর মনে করেন, বাণিজ্যযুদ্ধ এড়ানোর লক্ষ্যে চীন ও ই ইউর উচিত বিমান-পরিবহনের কার্বন-কর নিয়ে সৃষ্ট মতভেদ যথার্থভাবে দূর করা।

"বাণিজ্যযুদ্ধের ফলাফল হবে দু'পক্ষের জন্য ক্ষতিকর। এটা চীন ও ই ইউ'র প্রত্যাশা নয়। বর্তমানে গুরুতর ইউরোপীয় ঋণ সংকটের মধ্যে যদি বাণিজ্যযুদ্ধ হয়, তাহলে চীনের চেয়ে ই ইউ বেশি ক্ষতির শিকার হবে।"

তিনি আরো বলেন, ই ইউ'র একতরফা বিমান-পরিবহন কার্বন-কর আদায় আন্তর্জাতিক আইনের মৌলিক নীতির লঙ্ঘন। ই ইউ'র উচিত আন্তর্জাতিক বিমান-পরিবহন সমিতি এবং আন্তর্জাতিক বেসামরিক যাত্রী পরিবহণ সংস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে কার্বন-কর সমস্যা সমাধান করা।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক বিমান-পরিবহন সমিতির ৬৮তম বার্ষিক সম্মেলনে আন্তর্জাতিক বিমান-পরিবহন সমিতি জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক বেসামরিক যাত্রী পরিবহণ সংস্থা বর্তমানে বিমান-পরিবহন শিল্পের জন্য বিশ্বব্যাপী একটি অভিন্ন বাজার ব্যবস্থা প্রণয়ন করছে। আন্তর্জাতিক বেসামরিক যাত্রী পরিবহণ সংস্থার মহাসচিব রেমন্ড বেনিয়ামিন জানান, ২০১৩ সালের মার্চ মাসে এ সংস্থা বিমান-পরিবহন কার্বন-নিঃসরণ সম্পর্কিত একটি ব্যবস্থার প্রস্তাব পেশ করবে।

ইয়েন হো ফু বলেন,

"এ বার্ষিক সম্মেলনে একটি চুক্তিতে উপনীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ই ইউ'র কার্বন-কর বিষয়ক মনোভাবের বিরোধিতা করা ছাড়াও চীনের উচিত যথেষ্ট প্রস্তুতি নেওয়া।

তিনি বলেন,

"চীনের উচিত নিজের জ্বালানি সম্পদ সাশ্রয় ও দূষিত পদার্থ নির্গমন কমানো এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেশের কার্বন নিঃসরণের লেনদেন/বিনিময় এবং কার্বন-কর সংশ্লিষ্ট নীতি বিন্যাস করা, যাতে চীন ও ই ইউ'র মধ্যে এ রকম সম্ভাব্য যুদ্ধের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো যায়।

(জিনিয়া ওয়াং/এসআর)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040