Web bengali.cri.cn   
চীন ও রাশিয়া জ্বালানি সম্পদ সহযোগিতার বিষয় নিয়ে আলোচনা
  2012-06-08 09:51:25  cri

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ভ্লাদিমির পুতিন ৩১ মে তাঁর প্রথম বিদেশ সফর শুরু করেছেন। এবার প্রায় দশ দিনের ইউরোপ ও এশিয়া সফরে, পুতিনের চীন সফর বিশেষভাবে বিশ্বের বিভিন্ন পক্ষের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। ৫ জুন পেইচিংয়ের মহা গণভবনে পুতিন তাঁর নতুন কার্যমেয়াদে প্রথম বারের চীন সফর শুরু করেছেন। এবারের সফরকে চীনে রাশিয়ার 'ঐতিহাসিক' সফর বলে অভিহিত করা হয়েছে। জ্বালানী সম্পদে সহযোগিতার ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যাগুলোর কীভাবে মোকাবিলা করবে দু'দেশ? এবারে রয়েছে সে সম্পর্কে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন:

১২ বছর আগে, ২০০০ সালের জুলাই মাসে পুতিন প্রথম বারের মত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হন। এর পরই তিনি চীন সফর করেন। সে সফরটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল এই কারণে যে, এর মাধ্যমেই চীন-রাশিয়া সম্পর্ক ইয়েলেত্সিন যুগ থেকে পুতিন যুগে প্রবেশ করে। ২০০১ সালে চীন ও রাশিয়ার নেতারা 'চীন-রাশিয়া সুপ্রতিবেশীসুলভ বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতামূলক চুক্তি'স্বাক্ষর করেন। এ ঐতিহাসিক চুক্তিতে দু'দেশের ব্যাপক সহযোগিতার জন্য নীতি ও দিক নির্ধারণ এবং শক্তি প্রদান করা হয়েছে। এর পর চীন-রাশিয়া সম্পর্ক দীর্ঘমেয়াদী সুস্থ এবং স্থিতিশীল উন্নয়ন বজায় রাখে। ২০১১ সালে 'চীন-রাশিয়া সুপ্রতিবেশীসুলভ বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতামূলক চুক্তি'র ১০ম বার্ষিকীর সুযোগ কাজে লাগিয়ে, দু'দেশের সম্পর্ক 'ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্কে'পরিণত হয়। ভবিষ্যতের ১০ বছরের উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে দু'দেশ। বর্তমানে চীন ও রাশিয়ার সম্পর্ককে 'প্রধান শক্তিগুলোর সম্পর্কের দৃষ্টান্ত'বলা যায়।

চীন ও রাশিয়ার গত ১২ বছরের সম্পর্কের উন্নয়নে পুতিনের প্রভাবকে আলাদা করে দেখার অবকাশ নেই। এবারে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরই পুতিনের আবার চীন সফর প্রমাণ করে যে রাশিয়ার জন্য চীন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু রাষ্ট্র। চীনের সমাজ বিজ্ঞান অ্যাকাডেমির রাশিয়া, পূর্ব ইউরোপ আর মধ্য এশিয়া ইনস্টিটিউটের একজন গবেষক চিয়াং ই বলেছেন,

চীন ও রাশিয়ার নেতারা গত বছরে দু'দেশের বাণিজ্যিক লক্ষ্য হিসাবে ২০২০ সালের দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক পরিমাণ ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার নির্ধারণ করেছেন। ২০১১ সালে দু'দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক পরিমাণ ছিল ৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি। এখন থেকে ২০২০সাল পর্যন্ত আগামি ৮ বছরে চীন ও রাশিয়ার অর্থনৈতিক সহযোগিতা উন্নয়নের বিপুল সম্ভাবনা আছে। বিশ্ব ব্যাপী আর্থিক সংকটের পর, কয়েকটি আন্তর্জাতিক সমস্যার সমাধান করা হয় নি এবং বেশ কিছু নতুন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। সেজন্য জটিল সমস্যা মোকাবিলায় দু'দেশের বিনিময় ও কৌশলগত সহযোগিতা আরো বাড়াানো প্রয়োজন।

উল্লেখ্য যে ,দু'দেশের নেতারা কয়েকটি যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করবেন। যাতে চীন ও রাশিয়ার মধ্যে ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারত্বের সম্পর্ককে বৃদ্ধি করা যায় । বিবৃতিতে চীন ও রাশিয়ার নেতারা এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে পরস্পরিক আস্থা, কল্যাণ, সমতা ও সহযোগিতামূলক নতুন নিরাপত্তা ধারণা প্রতিষ্ঠার আহবান জানাবেন।

জ্বালানি সম্পদ সহযোগিতা হচ্ছে চীন ও রাশিয়ার সহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। গত বছরে দু'দেশের অশোধিত তেল পাইপের বার্ষিক তেল বহনের পরিমাণ হচ্ছে ১৫ মিলিয়ন টন। তবে তেলের দাম নিয়ে দু'দেশের মতভেদ রয়েছে। চীন ও রাশিয়ার প্রাকৃতিক গ্যাস সহযোগিতার অনেক সমস্যা আছে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ বলেছেন, পুতিনের সাম্প্রতিক চীন সফরে প্রাকৃতিক গ্যাস ক্ষেত্রে সহযোগিতার সম্ভাবনা খুব বেশি নেই। তবে দু'দেশের প্রাকৃতিক গ্যাস ক্ষেত্রের সহযোগিতার ভবিষ্যত সম্ভাবনা বিপুল।

গত দশ বছরে চীন ও রাশিয়ার কৌশলগত অংশীদারী বন্ধুত্বেের সম্পর্কের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্র রয়েছে। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে প্রায় ৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে বাড়ানো গেছে। এই নতুন পুতিন যুগে, এবারের সফরের ফলাফল হলো, চীন-রাশিয়া সম্পর্কের আকর্ষণীয় উন্নয়ন।

'রেশম পথ' বরাবর অবস্থিত শহরগুলোকে আন্তর্জাতিক পর্যটন স্থানের মানে উন্নয়নের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা ।

২০১২ সালের 'রেশম পথ'শহরসমূহের মেয়র পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেয়া প্রতিনিধিরা ২৯ মে চীনের সি আন শহরে এক ঘোষণায় জানিয়েছেন যে, রেশম পথ বরাবর যৌথভাবে একটি আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন বিশেষ পর্যটন লাইন নির্মাণ করবেন তাঁরা। প্রতিনিধিদের স্বাক্ষরিত একটি সহযোগিতা চুক্তিতে জানা গেছে, 'রেশম পথ' বরাবর অবস্থিত শহরগুলো পর্যটন সম্পর্কিত সহযোগিতা জোরদার করবে, যাতে 'রেশম পথ'পর্যটন লাইন আন্তর্জাতিক আধুনিক পর্যটনের এক উজ্জ্বল পথে পরিণত হয়। চীন, রাশিয়া, ভারত ও ইতালিসহ ১২টি দেশের ২০টিও বেশি 'রেশম পথ' বরাবর অবস্থিত শহরের পর্যটন বিভাগ 'রেশম পথের আন্তর্জাতিক পর্যটন সহযোগিতা ইউনিয়ন' প্রতিষ্ঠা করেছে।

এ চুক্তির প্রতিপাদ্য হচ্ছে 'প্রজন্মের বন্ধুত্ব বজায় রাখা:এক সাথে সমৃদ্ধি সৃষ্টি'। এ বিষয়টি হচ্ছে এবারের ২০১২ 'রেশম পথ'শহরসমূহের মেয়র পর্যায়ের বৈঠকের এক প্রধান সাফল্য। এবারের বৈঠক হলো'রেশম পথ'বরাবর শহরগুলোর প্রতিনিধিদের প্রথম বৈঠক।

চীনের জাতীয় পর্যটন ব্যুরোর আন্তর্জাতিক বিভাগের উপ-পরিচালক চিয়াং সিন হং বলেছেন, তিনি আশা করেন যে, এই প্রাচীন রেশম পথ বর্তমানে বিভিন্ন দেশের সহযোগিতার একটি যোগসূত্রে পরিণত হবে।

সি আন শহর থেকে রেশম পথের শুরু । খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দি থেকে খ্রিষ্টিয় ষোড়শ শতক পর্যন্ত, পূর্ব ও পশ্চিমের সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক এবং প্রযুক্তিগত বিনিময়ের ক্ষেত্রে রেশম পথ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। বর্তমানে, রেশম পথে পুরাকীর্তি, প্রাচীন শহর, প্রস্তর গুহা ও পাহাড়ের ভিতর দিয়ে যাওয়া সুড়ঙ্গপথসহ বিশ্ব ইতিহাসের চিহ্নবাহী অনেক স্থান রয়েছে। এসব স্থানের অনেকগুলো ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের অন্তর্গত। এর সাথে রেশম পথ বরাবর অবস্থিত দেশ ও শহর সমূহের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বর্তমানে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন সম্পদ বলে বিবেচিত হচ্ছে। চীন একটি বৃহত্ পর্যটন দেশ হিসেবে, রেশম পথ বরাবর দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন পর্যটন দেশের সঙ্গে সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক এবং এ বিষয়ে সংলাপ চালাতে ইচ্ছুক।

কাজাখস্তানের আলমা আতা শহরের পর্যটন ব্যুরোর পরিচালক জুলামানোভ বাকিতহান বলেছেন, বর্তমানে কাজাখস্তান ও চীনের পর্যটন সহযোগিতার ফলাফল দৃশ্যমান হচ্ছে।,

প্রতিবছর ৫লাখ বিদেশি পর্যটক আলমা আতায় আসেন। এর মধ্যে চীনের পর্যটকও রয়েছেন । আমরা অনেক জনশক্তি ও পুঁজি নিয়ে অবকাঠামো প্রতিষ্ঠা করেছি। নতুন পথ, হোটেল, হেলথ রিসোর্ট এবং পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ করে বিভিন্ন দেশের পর্যটকদের আকর্ষণ করছি।

এবারের বৈঠকে অংশগ্রহণকারী দেশ রাশিয়ার উলান উদি শহরের ভাইস মেয়র সাঙাদিইয়েভ জানদ্রা এক সাক্ষাত্কারে বলেছেন, তাঁর লক্ষ্য হচ্ছে ভবিষ্যতে সি আন শহরের সঙ্গে সহযোগিতার জন্য চেষ্টা করা ।

আমরা আশা করি এবারে সি আন শহরের সঙ্গে সহযোগিতার সুযোগ খুঁজবো। আমরা বিশ্বাস করি যে বিভিন্ন শহরের নতুন বন্ধুদের সম্পর্কে জানবো। আমাদের চেষ্টার ফলে পারস্পরিক সহযোগিতার উন্নয়ন হলে আরো বেশি পর্যটক রাশিয়ার শহর সম্পর্কে জানবে।

বৈঠকে অংশগ্রহণকরীরা বিশ্বাস করেন যে, এবারের বৈঠকের মাধ্যমে রেশম পথ বরাবর অবস্থিত শহরসমূহের মধ্যে আন্তর্জাতিক পর্যটন সহযোগিতা জোরদার করা হবে। রহস্যময়, অদ্ভুত ও পবিত্র প্রাচীন রেশম পথ আধুনিক আন্তর্জাতিক পর্যটনের একটি উজ্জ্বল পথে পরিণত হবে।

(জিনিয়া ওয়াং/শান্তা)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040