Web bengali.cri.cn   
আগামী দশকে শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার সদস্যদের সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হবে
  2012-05-18 09:38:24  cri

সুপ্রিয় শ্রোতা, আপনারা শুনছেন চীন আন্তর্জাতিক বেতার থেকে প্রচারিত বাংলা অনুষ্ঠান। আপনাদের সঙ্গে আছি আমি ওয়াং ছুই ইয়াং জিনিয়া। আশা করি, আপনারা সবাই ভালো আছেন। সবাইকে একরাশ শুভেচ্ছা জানিয়ে এখন শুরু করছি 'চলতি প্রসঙ্গ'। প্রথম অংশে শুনবেন 'আগামী দশ বছরে শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার সদস্যদের সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হবে' শীর্ষক একটি নিবন্ধ।

শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার সদস্য দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী পরিষদ ১১ মে পেইচিংয়ে এক বৈঠকের আয়োজন করে। বৈঠকে বিভিন্ন পক্ষ জোর দিয়ে জানায় যে, আগামী দশ বছর হচ্ছে শাংহাই সহযোগিতা সংস্থা অর্থাত্ এস সি ও এবং এর সদস্য দেশগুলোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়। আসন্ন প্রেসিডেন্ট পর্যায়ের সম্মেলনে সংস্থার সদস্য দেশগুলো বিভিন্ন সহযোগিতা সম্পর্কিত দলিল স্বাক্ষর করবে। রাজনীতি, নিরাপত্তা ও অর্থনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরো ঘনিষ্ঠ হবে।

শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার ছয়টি সদস্য দেশ হচ্ছে চীন, রাশিয়া, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান ও উজবেকিস্তান। প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই এস সি ও'র নিরাপত্তা সহযোগিতা বেশ কার্যকর হয় বলে এ সংস্থা অন্য দেশগুলোর মনোযোগ আকর্ষণ করে। এর পর শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার সদস্য দেশগুলো অর্থনীতি ও বাণিজ্য, সাংস্কৃতি এবং আইন ও বিচারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছে। এর মধ্য দিয়ে এস সি ও একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্থায় পরিণত হয়েছে। চলতি বছর হচ্ছে শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার 'সুপ্রতিবেশীসূলভ বন্ধুত্ব বছর'।

শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার এ বছরের চেয়ারম্যান দেশ হিসেবে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়াং চিয়ে ছি ১১ মের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে তিনি গত বছরের কর্মকাণ্ডের ওপর আলোকপাত করেন, তিনি বলেন,

গত"এক বছরে বিভিন্ন পক্ষের অভিন্ন প্রচেষ্টায় 'সুপ্রতিবেশীসূলভ বন্ধুত্ব বছরের' ধারাবাহিক কর্মসূচি সাফল্য অর্জন করে। রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক সম্পদ সমৃদ্ধকরণ এবং অর্থনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার জোরদার হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে সংস্থার আরো বেশি উন্নয়নের একটি শুভ ভিত্তি তৈরি হয়েছে। চীন এটার উচ্চ পর্যায়ের মূল্যায়ন করে।"

এবারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পরিষদের বৈঠকের প্রধান দায়িত্ব ছিল সদস্য দেশগুলোর সহযোগিতা সম্পর্কিত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা; আরো বেশি ব্যবস্থা প্রণয়ন করা; আগামী জুন মাসে পেইচিংয়ে অনুষ্ঠয়ে এস সি ও-র প্রেসিডেন্ট পর্যায়ের সম্মেলনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা; এবং গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বিষয় ও আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়ে মত বিনিময় করা। এদিন বৈঠকের পর একটি সংবাদ সম্মেলনে ইয়াং চিয়ে ছি বলেন,

"আমরা একমত হয়েছি যে, নতুন হুমকি এবং নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ক্ষমতা বাড়াতে হবে; সংস্থার সংকট সতর্কাবস্থা এবং জরুরি অবস্থা মোকাবিলার ক্ষমতা পূর্ণাঙ্গভাবে গড়ে তুলতে হবে; সদস্য দেশগুলোর সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষা করতে হবে; এবং আর্থিক, জ্বালানিসম্পদ ও খাদ্যনিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট কারণে সদস্য দেশগুলোর ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস করতে হবে।"

ইয়াং চিয়ে ছি আরো বলেন, আগামী দশ বছর হচ্ছে এস সি ও এবং এর সদস্য দেশগুলোর এক গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়। সদস্য দেশগুলো একমত হয়েছে যে, এস সি ও-র একটি মধ্যমেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনা এবছরের পেইচিং শীর্ষ সম্মেলনে অনুমোদন করা হবে। এ শীর্ষ সম্মেলনে রাজনৈতিক, নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতা দলিল স্বাক্ষরিত হবে। ইয়াং জোর দিয়ে বলেন,

"পরিবর্তিত জটিল আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক পরিস্থিতিতে শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার উচিত ভালভাবে তার ভূমিকা পালন করা। সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে অভিন্ন প্রচেষ্টা নিয়ে চীন শাংহাই সহযোগিতা সংস্থাকে একটি কার্যকর আঞ্চলিক সহযোগিতা প্ল্যাটফর্ম এবং সদস্যের বন্ধুত্বপূর্ণ মিলনসূত্রে পরিণত করতে চায়।"

এবারের সম্মেলনে এস সি ও-র একটি বিশেষ হিসাব খোলা, একটি উন্নয়ন ব্যাংক বা অর্থনৈতিক ও ঋণদান প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে। (জিনিয়া ওয়াং)

আগামী দশকে শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার সদস্যদের সম্পর্ক বিষয়ক প্রতিবেদনটি এখানেই শেষ হচ্ছে।

সুপ্রিয় শ্রোতা, আপনারা শুনছেন চীন আন্তর্জাতিক বেতার থেকে প্রচারিত বাংলা অনুষ্ঠান। আপনাদের সঙ্গে আছি আমি ওয়াং ছুই ইয়াং জিনিয়া। আশা করি, আপনারা সবাই ভালো আছেন। এবারে শুনবেন 'চীন ও রাশিয়ার অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা নতুন দ্রুত উন্নয়নের পর্যায়ে পৌঁছেছে' শীর্ষক একটি প্রতিবেদন।

ভ্লাদিমির পুতিন ৭ মে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি প্রেসিডেন্ট পদে তৃতীয় মেয়াদ শুরু করেছেন। এ নতুন যুগে বিশ্বে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। চীন-রাশিয়া সম্পর্ক, বিশেষ করে দু'দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা, 'পুতিন তৃতীয় প্রজন্মে' একটি নতুন উন্নয়ন পর্যায় এসেছে। একজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, আর্থিক সংকটের প্রভাবের মধ্যে দু'দেশই আশা করে অর্থনৈতিক কাঠামো সুবিন্যস্ত করবে এবং তাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক একটি নতুন পর্যায়ে পৌঁছবে।

২০০০ সালে যখন পুতিন প্রথম বারের মতো রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, তখন চীন ও রাশিয়ার বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল মাত্র ৮বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১১ সালে দু'দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ৮০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। চীনের আধুনিক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ইনস্টিটিউটের রাশিয়া গবেষণালয়ের পরিচালক ফোং ইয়ু চুন এক সাক্ষাত্কারে বলেন, দশ বছরেরও বেশি সময়ের উন্নয়নের পর চীন ও রাশিয়ার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পরিবর্তন শুধু পরিমাণের দিক থেকে হয়নি, বাণিজ্যিক কাঠামোতেও হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বহুত্ববাদ উন্নয়ন দু'দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। এটি দু'দেশের অর্থনীতির দ্রুত উন্নয়নের পক্ষে কল্যাণকর। দু'দেশের সম্পর্কের নতুন যুগে রাশিয়ার বৈদেশিক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতার সম্ভাবনা প্রবল। পুতিন ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে দেওয়া এক ভাষণে বলেছিলেন, রাশিয়ার অর্থনীতির ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে তিনি অসন্তুষ্ট। তিনি আশা করেন যে, কয়েক বছরের মধ্যে অর্থনীতির বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হার ৬ শতাংশ থেকে ৭ শতাংশে পৌঁছবে। ফোং ইয়ু চুন বলেন, রাশিয়া যদি এ লক্ষ্যে পৌছতে চায়, তাহলে চীনের সঙ্গে সহযোগিতার আওতা আরো বাড়াতে হবে। তিনি আরো বলেন,

"প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর পুতিনের প্রধান কর্তব্য হচ্ছে রাশিয়ার অর্থনৈতিক কাঠামো পরিবর্তন করা। আরো বেশি বৈদেশিক পুঁজি, বিশেষ করে সরাসরি পুঁজি দরকার পুতিন সরকারের। এর সঙ্গে সঙ্গে চীনের অর্থনীতিও একটি পরিবর্তনের কাল কাটাচ্ছে। এ পরিবর্তনের প্রক্রিয়ায় দু'দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাণিজ্য থেকে পারস্পরিক পুঁজিতে পরিণত হবে।"

তবে চীন ও রাশিয়ার অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতায় মতভেদও রয়েছে। এর আগে নির্বাচনের সময় পুতিন বলেছিলেন, চীন ও রাশিয়ার অর্থনৈতিক কাঠামো এবং নিম্ন পর্যায়ের পারস্পরিক পুঁজি নিয়ে রাশিয়া অসন্তুষ্ট। ফোং বলেন,

"বর্তমানে চীন ও রাশিয়ার কৌশলগত দায়িত্ব হচ্ছে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সমাজিক ন্যায্যতা বাস্তবায়ন এবং জনগণের জীবিকার উন্নতি। তাই অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে দু'দেশের প্রধান কর্তব্য। ভবিষ্যতে দু'দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতা তাদের কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।"

শ্রোতা বন্ধুরা, 'আজকাল' অনুষ্ঠান এখানেই শেষ করছি। শোনার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আগামী সপ্তাহের একই সময় আবার আমরা আপনাদের সামনে হাজির হবো। যাই চিয়ান। (জিনিয়া ওয়াং)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040